সোবহানবাগ মসজিদ নির্মাণে বাড়ছে সময় ও ব্যয়
রাজধানীর সোবহানবাগের মসজিদকে নতুন করে নির্মাণের কাজ চার বছরেও শেষ হয়নি। এক দফা সময় বাড়িয়েও শেষ করা যায়নি। এখন পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি মাত্র ৩০ শতাংশ। এই অবস্থায় মসজিদটির নির্মাণ কাজ শেষ করতে আরও দুই বছর সময় বাড়ানো হচ্ছে। একইসঙ্গে বাড়ছে ব্যয়ও। ফলে ৫০ কোটি টাকার প্রকল্প এখন হয়ে যাচ্ছে প্রায় ৬১টি কোটি টাকা।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত সোবহানবাগ মসজদিকে আধুনিকায়ন ও দৃষ্টিনন্দন করতে ২০১৯ সালে একটি প্রকল্প নিয়েছিল গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন গণপূর্ত অধিদপ্তর।
পরিকল্পনা কমিশন ও গণপূর্ত অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, মিরপুর রোডে ধানমন্ডি ১৪ নম্বরে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী সোবহানবাগ মসজিদ ভেঙে নতুন করে নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। এরই অংশ হিসেবে মসজিদটির আধুনিকায়নে একটি সেমি-বেজমেন্টসহ ১০তলা ভবন করতে সরকার ২০১৯ সালের ১৪ মার্চে একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয়। আধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন মসিজিদ নির্মাণের লক্ষে প্রকল্পের শুরুতেই ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪৯ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালের ডিসেম্বরে।
সূত্র মতে, প্রকল্পের প্রধান প্রধান কাজের মধ্যে ছিল ১০ তলা মসজিদ ভবন নির্মাণ, অজুর স্থান, নির্মাণকাজ চলকালীন সময় মুসল্লিদের নমাজের জন্য একটি অস্থায়ী মসজিদ নির্মাণ, সেমি বেজমেন্টে একটি মাদ্রাসা, লিফট ও জেনারেটর স্থাপনসহ মসজিদের অন্যান্য কাজ। মসজিদটি নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে ৩ হাজার ৬৯৫ জন মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করার সুযোগ পাবেন।
কিন্তু সরকারের অন্যান্য উন্নয়ন প্রকল্পের মতো সোবহানবাগ মসজিদটির নির্মাণ কাজও নির্ধারিত সময়ে শেষ করা যায়নি। ফলে সময় এবং খরচ দুটিই বেড়ে যাচ্ছে। জানা গেছে, প্রথম দফায় এক বছর সময় বাড়ানো হয়। কিন্তু ওই সময়ের মধ্যেও মসজিদ নির্মাণের কাজটি শেষ হয়নি।
এই অবস্থায় আবারও প্রকল্পটি সংশোধনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। তাতে সময় এবং ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। সংশোধিত প্রস্তাবে সময় এবং ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এর ফলে ৪৯ কোটি ৭৭ লাখ টাকার প্রকল্প এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬০ কোটি ৯০ লাখ টাকায়। শতাংশের হিসেবে ব্যয় বাড়ছে ২২ দশমিক ৩৬ শতাংশ।
সংশোধিত প্রস্তাব অনুযায়ী, প্রকল্পের কাজ শেষ হবে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে। এই সময়ের মধ্যে অবশিষ্ট ৭০ শতাংশ কাজ শেষ করতে হবে।
সংশোধিত প্রকল্পে যেসব খাতে ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে ৬ হাজার ৫৫০ বর্গমিটারের ১০ তলা মসজিদ ভবন নির্মাণ। তাতে খরচ ধরা হয়েছে ৪১ কোটি ৩ লাখ টাকা। মসজিদের নির্মাণ কাজ চলাকালীন মুসল্লিদের নামাজ আদায়ের জন্য ৮৯০ বর্গমিটারের একটি অস্থায়ী মসজিদ নির্মাণে খরচ ধরা হয়েছে ৫ কোটি ৭ লাখ টাকা।
বিভিন্ন তলায় মুসল্লিদের উঠানামার জন্য ৩টি লিফট কেনারও সিদ্ধান্ত হয়। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। সার্বক্ষনিক বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে ১০০০ কেভিএর এক সেট বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশন স্থাপনের আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি কিনতে এক কোটি ৩০ লাখ টাকাও বরাদ্দ রাখা হয়। ১৫০ কেভিএর জেনারেটর কিনতে ব্যয় ধরা হয় ৫২ লাখ টাকা।
এ ছাড়া, ২৫৫ টনের এয়ারকুলার কিনতে সাড়ে ৩ কোটি টাকা, ২ সেট মোটরপাম্পের জন্য জন্য ১০ লাখ টাকা, অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে ৩ কোটি টাকা এবং ১৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪০টি সিসি ক্যামেরা কেনারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ কারণে বিভিন্নখাতে প্রায় ৫০ লাখ থেকে খরচ বাড়িয়ে ৬০ কোটি ৯০ লাখ টাকা ধরা হয়েছে।
প্রকল্পের সংশোধিত প্রস্তাবনাটি যাচাই করতে পরিকল্পনা কমিশনে সম্প্রতি প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় কিছু ব্যাপারে আপত্তি করে তা সংশোধন করতে বলা হয়েছে। গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হলে চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হবে বলে সূত্র জানায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক ও নির্বাহী প্রকৌশলী শাহ আলম ফারুক চৌধুরী ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই মসজিদে নামাজ পড়তেন। এ জন্য সরকার মসজিদটি আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু স্থপতি কোম্পানি থেকে নকশা পেতে অনেক দেরি করেছে। নকশা পাওয়া গেছে প্রকল্প অনুমোদনের আড়াই বছর পর ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে। এ ছাড়া, মসজিদ কমিটিও জায়গা হস্তান্তরে দেরি করেছে। এ জন্য কাজ শুরু করতে দেরি হয়েছে। লে-আউটে মসজিদ প্রতিষ্ঠাতার কবরের জায়গায় মসজিদের স্থান পড়ে যায়। এজন্য আবার সংশোধন করতে সময় লেগেছে। এভাবে বিভিন্ন কারণে দেরি হওয়ায় প্রকল্পটি সংশোধন করে সময় বাড়ানো হচ্ছে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে পিডি বলেন, মূল প্রকল্প থেকে কিছু অঙ্গের পরিমাণ ও খরচ কম-বেশি হওয়ায় প্রকল্পটি সংশোধন করতে হচ্ছে। এজন্য খরচও বাড়ছে। পরিকল্পনা কমিশনে ডিপিপি পাঠিয়েছি। পিইসি সভা হয়েছে। কিছু ব্যাপারে সংশোধন করতে বলা হয়েছে। তা করা হচ্ছে।
কাজের সর্বশেষ অগ্রগতি সম্পর্কে তিনি বলেন, মসজিদটি আধুনিকায়নের ফলে সড়কের জায়গা বাড়ছে এক লেন। এতে ১৫ ফুট বেশি চওড়া হবে মিরপুর সড়কের এই জায়গাটি। মসজিদটি দৃষ্টিনন্দন করতে নানান কাজের কারণে সময় লাগছে। বর্তমানে কাজের বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে ৩০ শতাংশ।
উল্লেখ্য, ১৯৩৭ সালে দশমিক ৩৫ একর জমির উপর মরহুম আলহাজ্ব মাওলানা মোহাম্মদ আবদুস সোবহান এই মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন। পরে ১৯৮২ সালে ৫তলা ভিত্তির উপর ৪র্থ তলা মসজিদ নির্মাণ করা হয়। সেখানে একটি মাদ্রাসাও রয়েছে।
এনএইচবি/এমএমএ/