ভয়ংকর হচ্ছে মাইক্রোপ্লাস্টিক, নজর নেই সরকারের
বাতাসে মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে মাইক্রোপ্লাস্টিক বা প্লাস্টিক কণা। এই প্লাস্টিক কণা মানবশরীরে ঢুকে সৃষ্টি করছে নানা রোগ। এটি মরণঘাতী হিসেবে আবির্ভূত হলেও সরকারের এদিকে নজর নেই বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
গবেষকরা বলছেন, পানি থেকে শুরু করে প্রতিদিনের খাবার-সবখানেই মিশে আছে এই মরণঘাতক মাইক্রোপ্লাস্টিক।চলতি বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় এমনই উদ্বেগজনক তথ্য জানানো হয়েছে।
গবেষকরা বলছেন, মানবসভ্যতার জন্য হুমকি হয়ে উঠবে এই প্লাস্টিক। নিত্যব্যবহার্য এই বস্তটি আরও উন্নত করে পচনশীল করা না গেলে মানবসভ্যতার জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন তারা। গবেষকদের সুপারিশ হলো, প্লাস্টিক যাতে পরিবেশের সঙ্গে মিশে যায় তেমন উপায় বের করতে হবে। না হলে এর ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।
প্লাস্টিকের আবিষ্কার ১৯৫০ সালে। ইংরেজ উদ্ভাবক আলেক্সান্ডার পার্কস প্লাস্টিক আবিষ্কারের পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৮৩০ কোটি মেট্রেক টন প্লাস্টিক উৎপাদিত হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৬৩০ কোটি মেট্রিক টন প্লাস্টিক পরিণত হয়েছে আবর্জনায়। মাত্র ৯ শতাংশ প্লাস্টিকের পুনর্ব্যবহার করা হয়। ১২ শতাংশ পুড়িয়ে ফেলা হয়। বাকি প্রায় ৮৯ শতাংশ প্লাস্টিক বর্জ্য হিসেবে রয়ে যায় প্রকৃতিতে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশে প্রতিদিন প্রায় ২৪৯ টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদন হয়। এটি ২০৫২ সালের মধ্যে বেড়ে প্রতিদিন ৪২৮ টনে গিয়ে দাঁড়াতে পারে। এসব বর্জ্যের মধ্যে সিঙ্গেল-ইউজ বোতল, বাসনকোসন, স্যাশে অন্যতম। এসব বর্জ্যের ৫৬ শতাংশই সংগ্রহ করা হয় না। এ কারণে বাংলাদেশ পরিণত হয়েছে প্লাস্টিক বর্জ্য অব্যবস্থাপনায় বিশ্বের শীর্ষ একটি দেশে।
প্লাস্টিক নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করছেন নাসার কোলাবরেটর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুস সালাম ও তার দল। তাদের গবেষণাতেই ধরা পড়ে শুধু পানিতেই নয় বাতাসেও ছড়িয়ে পড়ছে মারাত্মক প্লাস্টিক কণা।
ড. আব্দুস সালাম ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, এতদিন তেজস্ক্রিয় গ্যাস হাইড্রোকার্বনসহ বাতাসে নানারকম গ্যাস ও বস্তুকণার উপস্থিতি পাওয়া গেলেও এবারই প্রথম পাওয়া গেল প্লাস্টিক কণা। এগুলো অতিক্ষুদ্র।
খাবার ও শ্বাসনালীর মাধ্যমে এই প্লাস্টিক কণা মানবশরীরে ঢুকে সৃষ্টি করছে নানা জটিল রোগ এমনটা জানিয়ে ড. আব্দুস সালাম বলেন, রক্তের মধ্যে মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে। বাচ্চাদের সবচেয়ে হলিফুড যে মায়ের দুধ সেই দুধেও মাইক্রোপ্লাস্টিক পাচ্ছি। পরিবেশ দূষণ, খাদ্যে ভেজাাল আর এই মাইক্রোপ্লাস্টিকের ক্যানসার রোগীর সংখ্যাও দিনদিন বাড়ছে।
প্রতিকার হিসেবে মাস্ক পড়া, প্লাস্টিক বর্জ্য নির্দিষ্ট স্থানে ফেলা ছাড়াও নিত্য ব্যবহার্য্য পণ্যে এর ব্যবহার বন্ধ করার কথা উল্লেখ করেন ড. আব্দুস সালাম।
এ সম্পর্কে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম দূষণ রোধে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকেই দায়িত্ব নিতে বলছেন। তাই অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, তারা দূষণের জন্য দায়ী তাদের উপরই দূষণ রোধের দায়িত্ব দেওয়ার কথা বলাটা বোধ হয় হাস্যকর।
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে ডিএনসিসি মেয়র বলেন, বিশেষ করে বেভারেজ কোম্পানিগুলো কোমল পানীয় বিক্রি করে বিপুল পরিমাণ মুনাফা অর্জন করছে। তারা ব্যবসা করে পরিবেশের দূষণ করবে এটা হতে পারে না। প্লাস্টিক দূষণ রোধ করতে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকেই দায়িত্ব নিতে হবে। তবে জনগণকেও যত্রতত্র প্লাস্টিক বোতল ফেলা বন্ধ করতে হবে।
আরইউ/এমএমএ/