সঞ্চয় কমছে স্কুল ব্যাংকিংয়ে
শিক্ষার্থীরা প্রতি মাসে ব্যাংকে অল্প অল্প সঞ্চয় কমলেও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রভাবে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরে তা কম জমা করেছে। এপ্রিল থেকে জুনের তুলনায় অ্যাকাউন্ট ও সঞ্চয় উভয়ই কমেছে। তবে ৫৭টি ব্যাংকের মধ্যে সর্বোচ্চ সঞ্চয় জমা হয়েছে ডাচ বাংলা ব্যাংকে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সরকার শিক্ষার্থীদের সঞ্চয়মুখী করার যে উদ্যোগ নিয়েছে তা ধরে রাখতে হবে।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. মেজবাউল হক ঢাকাপ্রকাশ-কে জানান, সরকার বিভিন্নভাবে শিক্ষার্থীদের সুবিধা দিচ্ছে। তারই অংশ বিশেষ বাংলাদেশ ব্যাংকও তাদের ১০০ টাকার বিনিময়ে অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ দিয়েছে। সরকার থেকে তারা যে সুবিধা পাই সেখান থেকে কিছু সঞ্চয়ও করে বিভিন্ন ব্যাংকে। কিন্তু সম্প্রতি জীবন যাত্রার মান বৃদ্ধি পাওয়ায় হয়ত প্রথম প্রান্তিকে সঞ্চয় কম জমা হয়েছে।
এ ব্যাপারে অর্থনীতিবিদ ও সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, কয়েক মাস থেকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে জীবন যাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্যয় মেটাতে অনেকে সঞ্চয় ভেঙে ফেলছেন। তারই প্রতিফলন ঘটেছে শিক্ষার্থীদের জীবনে। এ জন্য তারা সঞ্চয় কম জমা করেছে। এ ব্যাপারে সরকারকে খেয়াল রাখতে হবে যে উদ্দেশে তাদের সুযোগ দেওয়া হয়েছে তা যেন স্বাভাবিক হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে জানা গেছে, বিভিন্ন ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলতে হাজার টাকা লাগলেও শিক্ষার্থীদের জন্য মাত্র ১০০ টাকার বিনিময়ে স্কুল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ দেওয়া হয়েছে এক যুগ আগে।
প্রতি প্রান্তিকে তাদের এই অ্যাকাউন্ট বৃদ্ধি পেলেও জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তাদের অ্যাকাউন্ট কমে গেছে দশমিক ২ শতাংশ। কারণ, এ প্রান্তিক পর্যন্ত খোলা হয়েছে ৩২ লাখ ১৭ হাজার ৪১৪টি। যা তিন মাস আগে ছিল ৩২ লাখ ১৮ হাজার ১৯৩টি। এসব অ্যাকাউন্টে তারা ২ হাজার ৩২২ কোটি টাকা জমা করেছে। জুন পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা তাদের হিসাবে সঞ্চয় জমা করেছিল ২ হাজার ৩৩৯ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গ্রামাঞ্চলে ৫০ দশমিক ৩৯ শতাংশ ও শহরে ৪৯ দশমিক ৬১ হিসাব খোলা হয়েছে।
সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নর ড.আতিউর রহমান শিক্ষার্থীদের ব্যাংক হিসাব খোলার উদ্যোগ নেন। প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকেই শিশুদের মধ্যে সঞ্চয়ের মনোভাব গড়ে তুলতে ২০১০ সালের ২ নভেম্বর স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বর্তমানে ৬১টি ব্যাংকের মধ্যে ৫৭টি ব্যাংক স্কুল ব্যাংকিং সেবা চালু করেছে।
এর মধ্যে ৫টি ব্যাংকেই ৫৫ দশমিক ৫৩ শতাংশ অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। এরমধ্যে ডাচ বাংলা ব্যাংকে সর্বোচ্চ ৬ লাখ বা ১৮ দশমিক ৬৬ শতাংশ। এ ব্যাংকের মাধ্যমে সঞ্চয় জমা হয়েছে ৫৯৩ কোটি টাকা বা ২৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ। এরপরই ইসলামী ব্যাংকে প্রায় ৫ লাখ অ্যাকাউন্টে ১৮৫ কোটি টাকা জমা হয়েছে। তারপর রয়েছে অগ্রণী ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া ও রূপালী ব্যাংক।
ওই প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, ঢাকা বিভাগে সর্বোচ্চ হিসাব খোলা হয়েছে প্রায় ৮ লাখ ২৬ হাজার, যা মোট হিসাবের ২৫ দশমিক ৬৬ শতাংশ। এসব ব্যাংক হিসাবে মোট সঞ্চয় জমা হয়েছে ১ হাজার ১৯ কোটি টাকা বা প্রায় ৪৩ দশমিক ৮৮ শতাংশ।
এরপর চট্টগ্রাম বিভাগে শিক্ষার্থীদের ব্যাংক হিসাব খোলা হয়েছে ৬ লাখ ৬৯ হাজার বা ২০ দশমিক ৭১ শতাংশ। এসব হিসাব নম্বরে সঞ্চয় জমা হয়েছে ৫৩৪ কোটি টাকা বা ২৩ শতাংশ। তৃতীয় স্থানে রাজশাহী বিভাগে প্রায় ৪ লাখ ৪৫ হাজার অ্যাকাউন্টে সঞ্চয় জমা হয়েছে ১৯০ কোটি টাকা বা ৮ দশমিক ২১ শতাংশ।
স্কুল ব্যাংকিংয়ের আওতায় ৬ থেকে ১৮ বছরের কম বয়সী আগ্রহী ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের মা-বাবা অথবা বৈধ অভিভাবকের সঙ্গে যৌথ নামে হিসাব খুলতে পারে। কোনো সার্ভিস চার্জ ছাড়াই ১০০ টাকার বিনিময়ে শিক্ষার্থীদের ব্যাংক হিসাব খোলার এই সুযোগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
জেডএ/এমএমএ/