জ্বালানি সংকট সমাধানে সরকারের কূটনীতি জোরদার
বর্তমানে সারাবিশ্ব এক কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। দেশের বিদ্যমান সংকট মোকাবিলায় জ্বালানি কূটনীতি জোরদার করেছে সরকার। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো ছাড়াও ব্রুনাই, চীন, রাশিয়া, ভারত, নেপাল, ভূটান ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে জ্বালানি সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করছে বাংলাদেশ।
এ বছরের সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময়ও দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকে জ্বালানি সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হয়। ভারত বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রপ্তানি করতে রাজি হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
ইতিমধ্যে নেপাল ৪০-৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত। যদিও নেপালে বাংলাদেশেরই বিদ্যুৎ রপ্তানি করার কথা ছিল।
গত ১৬ অক্টোবর ব্রুনাইয়ের সুলতান হাসানাল বলকিয়াহ ঢাকা সফর করেন। সুলতানের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকে দীর্ঘ মেয়াদী জ্বালানি সহযোগিতার বিষয়টি নিয়ে দুই দেশ ঐক্যমতে পৌছছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
এ লক্ষ্যে সমঝোতা স্মারকও সই হয়েছে। বাংলাদেশের জ্বালানির ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে একটি স্থিতিশীল ও আঞ্চলিক জ্বালানি রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে ব্রুনেই তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) ও পেট্রোলিয়ামজাত পণ্য রপ্তানির বিষয়ে রাজি হয়েছে।
সম্প্রতি ঢাকায় নিযুক্ত সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত এসা ইউসুফ এসা আলদুহাইলান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সৌদি রাষ্ট্রদূতের কাছে জ্বালানি সহযোগিতা চান।
কাতারের শ্রমমন্ত্রী ড. আলী বিন সাঈদ বিন স্মাইখ আল মারি গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী এলএনজি খাতে কাতারের সহযোগিতা চান। কাতারের মন্ত্রী এ সময় জানান, জ্বালানি ও চিকিৎসা খাতে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে চায় কাতার।
এদিকে, ইউরোপের দেশ ফিনল্যান্ড বাংলাদেশকে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে সহযোগিতা করতে চায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে এ বিষয়ে সম্প্রতি আগ্রহের কথা জানান বাংলাদেশে নিযুক্ত ফিনল্যান্ডের অনাবাসিক রাষ্ট্রদূত রিভা কোউকু রন্ডে।
রাশিয়া থেকে তেল আমদানির বিষয়টি নিয়েও ভাবছে বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর এ বিষয়ে কিছু অগ্রগতিও হয়েছে। ইতিমধ্যে রাশিয়ার তেলের নমুনাও বাংলাদেশে এসেছে।
সম্প্রতি জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং জানান, জ্বালানি সঙ্কট সমাধানে বাংলাদেশ চীনের সহযোগিতা চেয়েছে। যদি বাংলাদেশ তেমন কোনো জরুরি অবস্থায় পড়ে, চীন বসে থাকবে না। অবশ্যই বাংলাদেশকে সহযোগিতা দেবে।
ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লেভারলির সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনের ফোনালাপ হয় গত ১০ অক্টোবর। এ সময় দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী অন্য আলোচনার পাশাপাশি অগ্রাধিকার ভিত্তিকে জ্বালানি সংকট নিয়েও কথা বলেন।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গেও বিভিন্ন সময় জ্বালানি সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করেছে বাংলাদেশ। এ অবস্থায় নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ইইউ। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ইইউ ঋণ দিতে চায় বলেও সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
জ্বালানি কূটনীতি জে্ারদার প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বাংলাদেশ সরকার চেষ্টা করছে। আমরা আগেভাগেই পদক্ষেপ নিচ্ছি, যাতে কোনো ঝামেলায় না পড়ি।’
জানতে চাইলে সাবেক রাষ্ট্রদূত এম. হুমায়ুন কবির ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, বর্তমান সংকট তো বেশ চরম আকার ধারণ করেছে। এ অবস্থায় চেষ্টা করে দেখতে তো সমস্যা নাই। যেহেতু বিদ্যুৎ-জ্বালানির সঙ্গে জীবনযাপনের সবকিছুই নির্ভরশীল। তাই এক্ষেত্রে তো চেষ্টা করতেই হবে।
সাবেক এই রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘সবচেয়ে ভালো ফল সম্ভবত দেখা যাচ্ছে ব্রুনাইয়ের সঙ্গে আলোচনায়। আরও ভালো কিছু হবে বলেই আশা করি। তবে জ্বালানি কূটনীতি জোরদার করলেও টাকা দিয়েই তো কিনতে হবে। এবং সেই টাকা তো বাংলাদেশি টাকা দিলে হবে না। ডলার দিয়ে কিনতে হবে। কিন্তু এখন তো ডলারের সংকট।’
এম. হুমায়ুন কবির আরও বলেন, ‘তারপরও বর্তমানে যে জ্বালানি কূটনীতি জোরদার করা হয়েছে সেটিকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখি। আগে হয়তো এক বছর মেয়াদি পরিকল্পনা করতে হতো এখন হয়তো তিন মাস মেয়াদি পরিকল্পনা করতে হবে। চেষ্টা করতে তো দোষ নাই।’
অবশ্য জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. বদরুল ইমাম বলছেন ভিন্ন কথা। তিনি ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ’এখন জরুরি ভিত্তিতে গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রমে জোর দিতে হবে। অনেক আগেই এমনটা করা উচিত ছিল। তাহলে আজ এত খারাপ অবস্থা হতো না।’
আরইউ/এমএমএ/