প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর ছিল পারস্পরিক বোঝাপড়ার
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সদ্য সমাপ্ত ভারত সফরকে কূটনৈতিক ও পারস্পরিক বোঝাপড়ার সফর হিসেবেই দেখছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এই সফরে বড় কোনো চুক্তি হবে এমন আভাস ছিল না। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে আস্থা বাড়ানোই ছিল মূল উদ্দেশ্য।
সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে কানেকটিভিটি, দেশটি থেকে অস্ত্র কেনা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সহযোগিতা, বাংলাদেশে খাদ্যদ্রব্য পাওয়ার নিশ্চয়তার বিষয়গুলো উঠে এসেছে। পাশাপাশি বাংলাদেশের উপর চীনের ‘প্রভাব’ নিয়েও ভারতের পক্ষ থেকে উদ্বেগ জানানো হয়েছে।
কূটনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, বিশেষ করে ভারতের পক্ষ থেকে ব্যাপক উদ্বেগ ছিল বাংলাদেশে উপর ‘চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব’ নিয়ে। বিষয়টি নয়াদিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রাও সাংবাদিকদের বলেছেন।
দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের পর বাংলাদেশে চীনা উপস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের বিনয় মোহন কোয়াত্রা সরাসরি জবাব না দিয়ে বলেন, ভারতের আগ্রহ ও উদ্বেগ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।
সফরকালে যে ৭টি সমঝোতা সই হয়েছে সেগুলো খুবই গতানুগতিক এবং কোনো চমক নেই বলেও মনে করেন কূটনীতিকরা। তবে এগুলো দরকার ছিল বলেও মনে করেন তারা। তারা বলছেন, বিষয়গুলো ভবিষ্যতে আরও পরিষ্কার হবে যখন আরও স্টেটমেন্ট পাওয়া যাবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, বড় কোনো চুক্তির আভাস ছিল না। এটি ছিল আস্থা ও বোঝাপড়ার সফর।
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, দু'দেশের সমস্যাগুলো সহজে সমাধান হবে, এমনটা না ভাবাই ভালো। সেসব প্রতিশ্রুতি এসেছে সেগুলো পূরণ হতেও সময় লাগবে। সফরটিকে আমাদের সেভাবেই দেখতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের পরিচালক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, যেসব সমঝোতা সই হয়েছে সেগুলোর চমক না থাকলেও প্রয়োজনীয়। তবে চুক্তির বাইরে যে আলোচনা হয় সেটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
বর্তমানে বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হলো রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ তার ‘বন্ধু’দের আচরণে হতাশ। চীন, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন মিয়ানমারের সঙ্গে ব্যবসা বাড়িয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বিভিন্ন সময় সাংবাদিকদের বলেছেন, গত ৫ বছরে ১৫ গুণ থেকে ২০০ গুণ পর্যন্ত ব্যবসা বেড়েছে উল্লিখিত দেশগুলোর। এককভাবে যুক্তরাজ্যের সঙ্গেই মিয়ানমারের ব্যবসা বেড়েছে ২০০ গুণ।
ভারতীয় কর্মকর্তারাও বিভিন্ন সময় তাদের দেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে পাঠাচ্ছে। অনেক রোহিঙ্গা ভারত থেকে সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার সময় বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) হাতে ধরাও পড়েছে।
এমন অবস্থার মধ্যেও হাসিনা-মোদি বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে ভারত। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন।
বৈঠক শেষে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রা বলেন, ভারত চায় রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসন হোক। ভারত সহযোগিতা করছে এবং ভবিষ্যতেও করবে।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ভারতের ভূমিকা প্রসঙ্গে ড. ইমতিয়াজ আহমেদ ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, চীন একটা মধ্যস্থতা করছে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে। কারণ দুটি দেশের সঙ্গেই চীনের সম্পর্ক ভালো।
ভারতের সঙ্গেও বাংলাদেশ-মিয়ানমারের ভালো সম্পর্ক এমন মন্তব্য করে ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, চীন যেহেতু সফল হয়নি, ভারত এমন উদ্যোগ নিয়ে সফল হলে তাদের স্ট্যাটাসও অনেক বেড়ে যাবে।
এনএইচবি/এসজি