বিশেষ প্রতিবেদন
‘আপত্তি’ সত্ত্বেও ডিসেম্বরেই চূড়ান্ত হতে পারে ড্যাপ
ডিসেম্বরে ঢাকার ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যান বা ড্যাপ (২০১৬-২০৩৫) ফাইনাল করার চাপ রয়েছে। যদিও খসড়া নিয়ে আপত্তিগুলোর সুরাহা এখনো হয়নি। প্রায় সব স্টেকহোল্ডারই খসড়া নিয়ে আপত্তি তুলেছেন। এ অবস্থায় আগামী ডিসেম্বরেই চূড়ান্ত হতে পারে ড্যাপ।
খসড়া ড্যাপে জলাভূমি ভরাট করে স্থাপনাা তৈরি, নদীর পাড়ে কারখানা করা এবং দখলদারদের বৈধতা দেওয়ার মতো অভিযোগ করেছেন স্টেকহোল্ডাররা। এ ছাড়া আবাসন ব্যবসায়ীরা বলছেন, খসড়া ড্যাপ যদি চূড়ান্ত হয় তাহলে ফ্ল্যাটের দাম ক্রেতাদের নাগালের বাইরে চলে যাবে।
প্রস্তাবিত ড্যাপে রাজধানীতে সর্বোচ্চ ভবন করা যাবে আটতলা–এমন বিধান রয়েছে। এই বিষয়টি নিয়ে বহু দেনদরবার করার পরও সুরাহা করা যায়নি।
চলতি ড্যাপের মেয়াদ ২০১৬ থেকে ২০৩৫ সাল পর্যন্ত; কিন্তু ড্যাপ ফাইনাল করতেই লেগে গেল ছয় বছর। খসড়া ড্যাপে ভূমি ব্যবহার নিয়ে নগরবিদরা হতাশা প্রকাশ করেছেন। প্রস্তাবিত পরিকল্পনায় আবাসিক এলাকা, কৃষি এলাকা, বনভূমি, মিশ্র ব্যবহারেরর এলাকা, উন্মুক্ত এলাকা, বাণিজ্যিক এলাকা এবং ভারি শিল্প এলাকা প্রস্তাব করা হয়েছে; কিন্তু জলাভূমি বা প্লাবন ভূমির কোনো উল্লেখ নেই।
এ ছাড়া ড্যাপের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় সিটি করপোরেশন না থাকায়ও ক্ষোভ রয়েছে। সম্প্রতি রাজধানীর একটি হোটেলে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) আয়োজিত এক গণশুনানিতে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের ভেতরে কাজ করতে হলে মেয়রকে প্রাধান্য দিয়েই কাজ করতে হবে। নারায়ণগঞ্জের যেসব অঞ্চলের দায়িত্বে রাজউক রয়েছে, সেসব অঞ্চলে দ্বৈত শাসন দেখা দিয়েছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) নগরায়ন ও সুশাসন বিষয়ক উপ-কমিটির যুগ্ম সচিব স্থপতি ইকবাল হাবিব ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘মাস্টার প্ল্যান অনেকবার তৈরি করা হয়েছে; কিন্তু এগুলো বাস্তবায়ন হয়নি। কারণ ড্যাপের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব স্টেকহোল্ডারের ঐকমত্যের ভিত্তিতে এটি বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না।’
ড্যাপ বাস্তবায়ন কর্তৃপক্ষ হিসেবে সিটি করপোরেশনকে গণ্য করলে ভালো হবে বলে মনে করেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। তিনি বলেন, ‘বাস্তবায়নের পথে নানারকম বিষয় আসতে পারে। এগুলো সংশোধন-পরিমার্জন করে এগিয়ে যেতে হবে।’
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘আর বিলম্ব না করে ডিসেম্বরের মধ্যে মাস্টারপ্ল্যানটির গেজেট করা দরকার। ২০ বছরের মাস্টারপ্ল্যান করতে ছয় বছর সময় নেওয়া যৌক্তিক মনে হয়নি। আর যাতে সময় নষ্ট না হয় সেদিকে মনোযোগ দিতে হবে।’
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্লাবন ভূমিকে মূল জলস্রোত ও সাধারণ জলস্রোত হিসেবে ভাগ করা হয়েছে। অনেকেরই অজানা সাধারণ জলস্রোত মানে সেখানে স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে। বিষয়গুলোর সুরাহা করেই ড্যাপ প্রণয়ন চান তারা।
প্রস্তাবিত ড্যাপ ও ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী, আটতলার উপর ভবন নির্মাণ করা যাবে না। ফলে আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাব বলছে, এর ফলে ফ্ল্যাটের দাম ৫০ শতাংশ বেড়ে যাবে।
সম্প্রতি ড্যাপের রিভিউ দাবি করে রিহ্যাব সভাপতি শামসুল আলামিন বলেন, ‘প্রস্তাবিত ড্যাপ ও ঢাকা ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী, ঢাকায় আট তলার ওপর ভবন নির্মাণ করা না গেলে ফ্ল্যাটের দাম ৫০ শতাংশ বেড়ে যাবে। পাশাপাশি বাড়িভাড়াও বাড়বে।’
তিনি জানান, রাজধানী ঢাকার রাজউক আওতাধীন এলাকায় ২১ লাখের বেশি স্থাপনা রয়েছে। এর মধ্যে আট তলার ওপরে স্থাপনা রয়েছে মাত্র শূন্য দশমিক এক ছয় শতাংশ।
ড্যাপ রিভিউ কমিটির সভাপতি স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম ২১ নভেম্বর গণশুনানিতে এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরা কেউ সুউচ্চ ভবনের বিপক্ষে নই; কিন্তু এটি করার জন্য নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।’
/আরইউ/এসএ/