শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১২ পৌষ ১৪৩১
Dhaka Prokash
Header Ad

ব্যবসা গুটিয়েছে ১৭টি, ৪ প্রতিষ্ঠান পাচার করেছে ৩৬৯ কোটি টাকা

সম্ভাবনার ই-কমার্স, অর্থ আত্মসাতে সর্বনাশ

হৈচৈ ফেলে করোনাকালে আবির্ভাব হয় বেশ কয়েকটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের। কিন্তু তাদের বিদায়টা হয় ভর্ৎসনায়। ২০২১ সালে কয়েক হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে নিজেদের কার্যক্রম গুটিয়ে নিয়েছে ১৭টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান। এদের বিরুদ্ধে গ্রাহকরা মামলাও করেছেন। এসব মামলা তদন্ত শেষে চারটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে গ্রাহকের সাড়ে ৩০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের প্রমাণ পেয়ে মুদ্রা পাচার প্রতিরোধ আইনে মামলা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। অন্য ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান অব্যাহত রেখেছে সংস্থাটি।

নিরাপদ ডটকম: বছরের শুরুটা হয়েছিল নিরাপদ ডটকমের গ্রাহকদের অভিযোগ দিয়ে। সেলফোন বিক্রিতে পঞ্চাশ শতাংশেরও বেশি ডিসকাউন্ট দিয়ে সাড়া ফেলে দেয় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান নিরাপদ ডটকম। গ্রাহকদের অর্ডারের প্রথম দুটি চালান বুঝিয়ে দিতে পারলেও পরবর্তীতে তারা আর কোনো পন্য সরবরাহ করেনি। ফলে, গত জানুয়ারিতে নিরাপদ ডটকমের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করেন গ্রাহকরা। পরে অভিযোগ তদন্ত করে সত্যতা পায় পুলিশ। পরে গত ১১ জুলাই নিরাপদ ডটকমের প্রধান নির্বাহী শাহরিয়ার খানকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে অন্তত ২০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ গ্রাহকদের।

ইভ্যালি: দেশের ই-কমার্সের জগতে সবচেয়ে বড় আলোড়ন তৈরি করে ইভ্যালি। ২০০ থেকে ৩০০ শতাংশ পর্যন্ত মূল্য ছাড়ে পণ্য দিতে শুরু করা প্রতিষ্ঠানটি বিরুদ্ধে গ্রাহকদের বিস্তর অভিযোগ জমা হয় এ বছরে। মামলাও হয় বেশ কয়েকটি। পরে গত সেপ্টেম্বরে গ্রেপ্তার হন ইভ্যালির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ রাসেল। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ৪০৩ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে গ্রাহকদের।

ইভ্যালির বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলার এজাহারের বরাত দিয়ে গুলশান থানার পুলিশ জানায়, গ্রাহক আরিফ বাকের ও তার বন্ধুরা ইভ্যালির চমকপ্রদ বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে ওই প্রতিষ্ঠানে কিছু পণ্যের অর্ডার দেন। গত ২৯ মে থেকে ১৬ জুন পর্যন্ত আরিফ বাকের বিভিন্ন সময় পণ্যের মূল্য বাবদ ৩ লাখ ১০ হাজার ৫৯৭ টাকা অনলাইন ব্যাংকিং ও একটি ব্যাংকের কার্ডের মাধ্যমে পরিশোধ করেন। পণ্য ৭ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে দিতে ব্যর্থ হলে সম্পূর্ণ টাকা ফেরতের অঙ্গীকার করেছিল প্রতিষ্ঠানটি। সবশেষ ৫ সেপ্টেম্বর ইভ্যালির গ্রাহকসেবা শাখায় (কাস্টম কেয়ার সেন্টার) যোগাযোগ করে পণ্য পেতে ব্যর্থ হন তারা। এর আগে যতবার যোগাযোগ করা হয়, ততবারই তারা দেব-দিচ্ছি বলে টালবাহানা করে। ইভ্যালির সঙ্গে বিভিন্ন পদে যুক্ত হয়ে মামলার আসামী হয়েছেন অভিনেতা তাহসান, অভিনেত্রী মিথিলা এবং শবনম ফারিয়া।

ই-অরেঞ্জ: ইভ্যালির পরে ব্যাপক আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জ। প্রতারণামূলকভাবে ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তাহেরুল ইসলাম নামের এক গ্রাহক গত ১৭ আগস্ট একটি মামলা করেন। গুলশান থানায় করা ওই মামলায় ই–অরেঞ্জের মূল মালিক সোনিয়া মেহজাবিন, তার স্বামী পুলিশ কর্মকর্তা মাসুকুর রহমান, বীথি আকতার, সিইও আমানউল্লাহ চৌধুরী, প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা কাওসার আহমেদসহ প্রতিষ্ঠানটির সব মালিককে আসামি করা হয়। মামলার পরপরই গা-ঢাকা দেন প্রতিষ্ঠানটির অন্যতম কর্ণধার পুলিশ পরিদর্শক সোহেল রানা। পরে তিনি ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন।

মামলায় উল্লেখ করা হয়, গত ২৮ এপ্রিল থেকে নানা সময়ে বিভিন্ন ধরনের পণ্য কেনার জন্য টাকা দেওয়া হয়, যা একটি নির্দিষ্ট মেয়াদের পর সরবরাহ করার কথা ছিল। কিন্তু ই–অরেঞ্জ এক লাখ ভুক্তভোগীর সঙ্গে প্রতারণা করে যাচ্ছে। ভুক্তভোগীরা ই-অরেঞ্জের অফিসে গিয়ে পণ্য সরবরাহ চাইলে জানানো হয়, কিছুদিনের মধ্যে পাঠানো হবে। কিন্তু এখনো গ্রাহকরা পণ্য বুঝে পাননি।

ধামাকা শপিং ডটকম: ২০১৮ সালে শুরু হওয়া ‘ধামাকা ডিজিটাল’ ২০২০ সালে এসে ‘ধামাকা শপিং ডটকম’ নামে রূপান্তরিত হয়। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ইভ্যালি থেকে তিনজনকে অধিক বেতনে ধামাকায় নিয়ে আসেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) জসিম উদ্দিন চিশতি। বিভিন্ন ধরণের অফার দিয়ে আলোচনায় আসা ধামাকা শপিং ডটকমের বিরুদ্ধে ৭৫০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তুলে মামলা করে গ্রাহকরা। এসব মামলায় প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা টঙ্গী পশ্চিম থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. জাহিদুল ইসলাম জানান, গ্রাহকের ৭৫০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিলেও চিশতির ২৪০ কোটি টাকার সম্পদ পেয়েছে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।

রিং আইডি: ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান রিং আইডির পরিচালক মো. সাইফুল ইসলামকে গত ২ অক্টোবর গ্রেপ্তারের পর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) বলেছে, শুধু তিন মাসে রিং আইডি ২১৩ কোটিরও বেশি টাকা আমানতকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করেছে। রিং আইডি প্রথমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সাধারণ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। পরে তারা বিভিন্ন সেবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আমানতকারীদের থেকে বিনিয়োগ সংগ্রহ শুরু করে। তাদের প্রতিশ্রুত সেবার মধ্যে ছিল মূলত বৈদেশিক বিনিয়োগ ও কমিউনিটি জবস। করোনার সময়ও তারা অনুদান সংগ্রহ করে। কমিউনিটি জবস খাতে উপার্জনের লোভ দেখিয়ে শুধু মে মাসে রিং আইডি ২৩ দশমিক ৯৪ কোটি টাকা, জুন মাসে ১০৯ দশমিক ৯৩ কোটি টাকা এবং জুলাই মাসে ৭৯ দশমিক ৩৮ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। আইনি প্রক্রিয়া চলার সময় তারা যেন অবৈধভাবে অর্থ দেশের বাইরে পাচার করতে না পারে, সে জন্য ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ (ফ্রিজ) করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

কিউকম ডটকম: গত সেপ্টেম্বরে পাওনাদার ও গ্রাহকদের চাপ সামলাতে না পেরে ইভ্যালির মতো কার্যালয় বন্ধ করে দেয় আরেক ই-কমার্স সাইট কিউকম। ফেইসবুক লাইভে এসে অফিস বন্ধ করে বাসায় বসে কাজ করার ঘোষণা দেন প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তা ও সিইও রিপন মিয়া এবং তার সহযোগী সাবেক রেডিও জকি (আরজে) নিরব। এই সময়ে গ্রাহকদেরকে তাদের বাসাবাড়ির নিচে ভিড় না করার অনুরোধও করেন তারা। করোনা মহামারীকালে ই-কমার্সের প্রসার ঘটার পাশাপাশি বিভিন্ন সাইট খুলে প্রলোভন দেখিয়ে গ্রাহকদের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে তাদের বিরুদ্ধে। ইভ্যালির অনুকরণে যাত্রা শুরু করে কিউকমও গ্রাহকের চার শ’কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে অভিযোগ গ্রাহকদের।

এ বিষয়ে সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে এ সংক্রান্তে একটি বৈঠক হয়। বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের ই-কমার্স সেলের প্রধান অতিরিক্ত সচিব এএইচএম সফিকুজ্জামানের নেতৃত্বে সিআইডি, এসবি, বাংলাদেশ ব্যাংক, ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্ট ইউনিট, আইন মন্ত্রণালয়, কিউকম ও ফস্টারের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। কিউকমের পক্ষে তিনজন আইনজীবী এবং কারাগারে থাকা কোম্পানির চেয়ারম্যান রিপন মিয়ার একজন আত্মীয় উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের পরে সফিকুজ্জামান বলেন, কিউকমের ৩৯৭ কোটি টাকা আটকা আছে ফস্টারের কাছে। এর মধ্যে কিছু টাকা পাবে কিউকম এবং কিছু টাকা গ্রাহকের কাছে ফেরত যাওয়ার কথা। বৈঠকে আমরা বলে দিয়েছি, ফস্টার ও কিউকমের লোকজন বসে কোন পক্ষে কত টাকা যেতে পারে, সেটা যেন আগামী ১০ জানুয়ারির মধ্যে চূড়ান্ত করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দেওয়া হয়।

সিরাজগঞ্জশপ ডটকম: জেলা প্রশাসনের ‘লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট’এ প্রশিক্ষণ নিয়ে সিরাজগঞ্জের জুয়েল রানা গড়ে তোলেন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান সিরাজগঞ্জশপ ডটকম। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি ও ই-অরেঞ্জের মতো সিরাজগঞ্জশপ ডটকমও প্রায় সোয়া চার লাখ অর্ডারের বিপরীতে অগ্রিম ২০৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কালো তালিকাভুক্ত এই ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী পণ্য প্রদান ও টাকা রিফান্ডের পরও প্রতিষ্ঠানটির কাছে গ্রাহকদের পাওনা ২২ কোটি টাকা। গ্রাহকের এই অর্থ বকেয়া রেখেই প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার জুয়েল রানা আত্মগোপনে চলে যান।

দালাল প্লাস: ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় এবং ৩০ দিনের মধ্যে পণ্য সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে অগ্রিম অর্থ সংগ্রহ করে ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম দালাল প্লাস। এরপর মাসের পর মাস অপেক্ষা করেও পণ্য বুঝে পাননি গ্রাহকরা। অগ্রিম টাকা নিয়ে সময় মতো পণ্য ডেলিভারি না দেওয়া স্থানীয় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের তালিকা দীর্ঘতর হচ্ছে। সেই তালিকায় যুক্ত হয় দালাল প্লাসের নামও। প্রতিষ্ঠানটির মাত্র ছয় মাসের ব্যবধানে কয়েকশ কোটি টাকা তুলে নিয়েছে গ্রাহকের কাছ থেকে।

এর আগে দালাল প্লাসের কর্ণধাররাই রেক্স আইটি নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রতারণার হাট বসিয়েছিল। ওই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম পলাশ তিন ডজনেরও বেশি মামলার আসামি হয়ে জেল খাটেন। জেল থেকে ছাড়া পেয়ে পুরনো প্রতারণার কৌশল প্রয়োগ করেই নেপথ্যে থেকে গড়ে তোলেন দালাল প্লাস। বর্তমানে প্রায় লাখখানেক গ্রাহকের পণ্য বা টাকা বুঝিয়ে না দিয়েই অফিসের কার্যক্রম বন্ধ রেখেছেন তারা।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানায়, চলতি বছরের মার্চের শুরুতে প্রথম পণ্য বিক্রি শুরু করে দালাল প্লাস। যদিও প্রথম দিকে কোম্পানিটির নাম ছিল দালাল বাজার। এরপর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় দালাল। তবে বিভিন্ন অফার ও বিজ্ঞাপনে ব্যবহার করা হয় দালাল প্লাস। কোম্পানিটির ফেসবুক পেজ শুধু দালাল নামে রয়েছে। কলম্বাস, কমান্ডার, কমান্ডো, ঈগল, জলোচ্ছ্বাস, টর্নেডো, টাইফুন, কালবৈশাখী, তুফান- এমন চটকাদার নাম ব্যবহার করে অফার ঘোষণা শুরু করে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানটি। মোটরসাইকেল, মোবাইল ফোন, ফ্ল্যাট, গাড়ি থেকে শুরু করে কাঁচাবাজার পর্যন্ত বিক্রি করেন তারা। তবে বিভিন্ন পণ্যের বিজ্ঞাপন থাকলেও মোটরসাইকেল, টেলিভিশন, ফ্রিজ ও বিভিন্ন দামি পণ্যেরই ঘোষণা দেওয়া হতো নানা অর্ডারের।

এসপিসি ওয়ার্ল্ড: ২০২০ সালে নিজেদের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান দাবি করে যাত্রা শুরু করে এসপিসি ওয়ার্ল্ড এক্সপ্রেস। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে ছিলেন আল আমিন প্রধান। তিনি গত অক্টোবরে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) হাতে গ্রেপ্তার হন। এসময় সিআইডি জানায়, আল আমিন ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেডের টিম লিডার ও প্রশিক্ষক ছিলেন। নিজেদের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান দাবি করলেও তারা মূলত অনুমোদনহীন মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) ব্যবসা পরিচালনা করে এক কোটি ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছে।

অর্থ আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়ার পর সিআইডির করা মামলায় বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানটির এমডি আল আমিন গ্রাহকের ৮২ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিয়ে নিজের নামে তিনটি প্রাইভেট কার কিনেছেন। এছাড়া সিটি ব্যাংকের একটি হিসাব থেকে গ্রাহকের ৩৫ লাখ টাকা তার স্ত্রী শারমিন আক্তারের অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করেছেন। এসপিসি ওয়ার্ল্ড এক্সপ্রেস লিমিটেড গত বছর জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছয়টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে অর্থ লেনদেন করে। এসব লেনদেন পর্যালোচনায় দেখা যায়, সেখানে মোট ২২ কোটি ৫ লাখ টাকা জমা হয়েছে। তোলা হয়েছে মোট ৪ কোটি ৭ লাখ টাকা।

টুয়েন্টিফোর টিকেটি ডটকম: বিমানের টিকিট বিক্রির নামে ৪ কোটি ৪৪ লাখ টাকা নিয়ে উধাও হয় অনলাইন টিকেটিং এজেন্সি টুয়েন্টিফোর টিকেটি ডটকম। তারা মূলত গ্রাহক ও ৬৭টি এজেন্টের কাছ থেকে এই টাকা আত্মসাৎ করে। গ্রাহকদের অভিযোগ অনুসন্ধান শেষে টুয়েন্টিফোর টিকেটি ডটকমের পরিচালক এম মিজানুর রহমান সোহেলের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের প্রমাণ পেয়ে মামলা করে সিআইডি। ওই মামলায় গত ১১ অক্টোবর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

তদন্তকারী সংস্থা জানায়, সাধারণত এয়ারলাইনসগুলো টিকিটের নির্ধারিত মূল্যে ৭ শতাংশ ছাড় দিয়ে থাকে। সেখানে টুয়েন্টিফোর টিকেট ডটকম ছাড় দিত ১২ শতাংশ। এই ছাড়ের কারণে অনেক এজেন্ট তাদের কাছ থেকে টিকিট কিনে গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করত। তাদের টিকিট নিয়ে গ্রাহক বিমানবন্দরে এসে জানতে পারেন, এই টিকিট বিক্রিই হয়নি।

র‌্যাপিড ক্যাশ: গত জুন মাসে র‍্যাপিড ক্যাশ অ্যাপ থেকে ২ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন সৈয়দ তানভীর হাসান নামের এক গ্রাহক। টাকা ফেরত দিতে দেরি করায় তাকে এবং পরিবারের সদস্যদের হুমকি দেয় ওই অ্যাপের লোকজন। এ ঘটনায় গত ২১ জুন গুলশান থানায় তিনি একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। জিডিতে উল্লেখ করেন, অ্যাপ কোম্পানি একপর্যায়ে তার শ্বশুরকে ফোন করে ৭৮ হাজার টাকা দাবি করে। সবশেষ তার স্ত্রীকে তুলে নেওয়ার হুমকি দেয়। পরে ওই জিডি তদন্তে নামে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তারা এই চক্রের দুইজন চীনা নাগরিক সহ ১২ জনকে গ্রেপ্তারের পর জানায়, এসব অ্যাপ চীন থেকে নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করা হয়। তাদের কার্যালয় রয়েছে রাজধানীর বারিধারা, বনানী, ধানমন্ডি ও মিরপুরে। তবে কার্যালয় ভাড়া নেওয়া হয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি, ফসলের বীজের ব্যবসাসহ বিভিন্ন ধরনের ব্যবসার কথা বলে। তাদের ফাদে পড়ে প্রতারিত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই স্বল্প আয়ের মানুষ, চাকরিপ্রার্থী ও ছাত্রছাত্রী।

সহজ লাইফ অ্যান্ড লাভলী লাইফ: নিজেদের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান দাবি করে যাত্রা শুরু করে সহজ লাইফ অ্যান্ড লাভলী লাইফ ডটকম। কিন্তু পরবর্তীতে তারা অনুমোদনহীন মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) ব্যবসা পরিচালনা করে কয়েক হাজার গ্রাহকের কোটি টাকা আত্মসাৎ করে। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তাহাজ্জুদ হোসেন এবাং পরিচালক মো. জামাল হোসেনসহ চার জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন ক্ষতিগ্রস্থ গ্রাহকরা। গত ১ অক্টোবর গাজীপুরের কাশিমপুর থানায় মামলা দায়েরের পর থেকে আত্মগোপনে চলে যান তারা।

আনন্দেরবাজার: ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আনন্দেরবাজার ডটকমের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ এনে গত ৬ অক্টোবর গুলশান থানায় মামলা করেন গ্রাহকরা। মামলার আসমি করা হয় মাহমুদুল হক খন্দকার ও অজ্ঞাত আরও একজনকে।

থলে ডটকম ও ইউকম ডটকম: দুই নামে পরিচালিত হলেও থলে ডটকম এবং ইউ ডটকমের মালিকানা ও অপারেশনাল কার্যক্রম পরিচালনায় ছিলেন একই ব্যাক্তিরা। প্রতিষ্ঠান দুটির হেড অব অপারেশনস নজরুল ইসলাম, হিসাব রক্ষক সোহেল হোসেন, ডিজিটাল কমিউনিকেশন অফিসার তারেক মাহমুদ অনিক, সেলস এক্সিকিউটিভ মুন্না পারভেজ ও সুপার ভাইজার মাসুম হাসান। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান দুটি বিশাল মূল্যছাড়ে টিভি, ফ্রিজসহ বিভিন্ন ধরণের ইলেক্ট্রনিক পণ্য বিক্রির অফার দিয়ে গ্রাহকের অর্থ আত্মসাত করে। এ ঘটনায় প্রতিষ্ঠান দুটির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ক্যান্টনমেন্ট থানায় কয়েকজন ভুক্তভোগী মামলা করেন। মামলায় তাদের বিরুদ্ধে আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়। পরে তাদের গ্রেপ্তার করে সিআইডি।

আলিফ ওয়ার্ল্ড: ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান হিসেবে যাত্রা শুরু করা আলিফ ওয়ার্ল্ডের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ এনে মামলা করেন ক্ষতিগ্রস্থ গ্রাহকরা। গত ১০ অক্টোবর বনানী থানায় মামলাটি নথিভুক্ত হয়। মামলা আসামি করা হয় রাশেদুল ইসলাম রাইওন, মিজানুর রহমান, সাজ্জাদ, সাইফ ও অজ্ঞাত আরও একজনকে।

আলেশা মার্ট: গ্রাহকের অর্থ আত্মসাৎ করে সর্বশেষ নিজেদের কার্যক্রম বন্ধ করা ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আলেশা মার্ট। যদিও গত ২ ডিসেম্বর নিরাপত্তাহীনতার কারণ দেখিয়ে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আলেশা মার্টের অফিশিয়াল কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানটি তাদের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে জানায়, ‘অনাকাঙ্খিত ও নিরাপত্তাজনিত কারণবশত আলেশা মার্ট-এর সমস্ত অফিসিয়াল কার্যক্রম আজ থেকে পরবর্তী নির্দেশনা দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।

এরআগে, ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি অনলাইনে পণ্য বিক্রির কার্যক্রম শুরু করে আলেশা মার্ট। পণ্য দেওয়ার নাম করে তারা সংগ্রহ করেছে গ্রাহকের কোটি কোটি টাকা। পরে অনেক গ্রাহককে পণ্য বুঝিয়ে দেয়নি বলে অভিযোগ ওঠে। অভিযোগকারী গ্রাহকরা বলছেন, বিনিয়োগের টাকা কিংবা পণ্য এখন কিছুই তারা পাচ্ছেন না। আলেশার দেওয়া চেকও ব্যাংক থেকে ফেরত আসছে বলে গ্রাহকরা অভিযোগ করছেন।

ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আলেশা মার্টে বিশেষ মূল্যছাড়ে মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রির ৫ দফা ক্যাম্পেইন চালানো হয়। এসব ক্যাম্পেইনে পণ্যের অর্ডার দেন ৪৫ হাজার গ্রাহক। চার দফায় ক্যাম্পেইনের পণ্য ডেলিভারিও দেওয়া হলেও পঞ্চম দফায় সাত হাজার ৩০০ গ্রাহকের অর্ডারের পণ্য দিতে পারেনি এ প্রতিষ্ঠান। এসব অর্ডারের বিপরীতে গ্রাহকদের অন্তত ২০০ কোটি টাকা আটকে গেছে এখানে। পরে সরকারের কাছে কার্যকরী মূলধন সুবিধা হিসেবে ৩০০ কোটি টাকার অর্থ সহায়তা চেয়ে চিঠি দেয় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আলেশা মার্ট। গত ৫ ডিসেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে দেয়া পৃথক দুটি চিঠিতে প্রতিষ্ঠানটি উল্লেখ করে, গ্রাহকদের অর্থ ফেরত দিতে এবং কার্যক্রম পুনরায় শুরু করতেই এই অর্থ সহায়তা চায় তারা। পরে অবশ্য সরকারের পক্ষ থেকে এই অর্থ সহায়তা দেয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দেয়া হয় প্রতিষ্ঠানটিকে। এরপর থেকে তাদের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

চার ই-কমার্স আত্মসাৎ করেছে ৩৬৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা:
পুলিশ জানায়, অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ এনে ১৭টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করেছে গ্রাহকরা। এসব মামলায় আসামি করা হয় ১২৫ জনকে। এসব মামলা তদন্তে গিয়ে ইতিমধ্যেই চারটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে গ্রাহকের অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের প্রমাণ পেয়েছে সিআইডি। পরে তাদের পক্ষ থেকে ওই চারটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সর্বমোট ৩৬৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে মামলা করা হয়। এরমধ্যে ধামাকা শপিং ডটকমের বিরুদ্ধে ১১৬ কোটি টাকা, ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে ২৩২ কোটি টাকা, এসপিসি ওয়ার্ল্ডের বিরুদ্ধে দেড় কোটি টাকা এবং টুয়েন্টিফোর টিকেটি ডটকমের বিরুদ্ধে ২০ কোটি টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পেয়ে মামলা করেছে সিআইডি।

সিআইডির মিডিয়া উইংয়ের প্রধান ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল কালাম আজাদ ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, গ্রাহকদের করা মামলাগুলো তদন্তে গিয়ে অর্থ আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়ার পর ধামাকা শপিং ডটকম, ই-অরেঞ্জ, এসপিসি ওয়ার্ল্ড এবং টুয়েন্টিফোর টিকেটি ডটকমের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। অভিযোগ আসা অন্য ই-কমার্সগুলোর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান অব্যাহত রয়েছে। অনুসন্ধান শেষে অর্থ আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধেও মুদ্রা পাচার প্রতিরোধ আইনে মামলা করা হতে পারে।

এদিকে, দেশের ই-কমার্স সেক্টরের সাম্প্রতিক সময়ে সৃষ্ট নানা সমস্যার পরিপ্রেক্ষিতে নতুন আইন ও নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ সৃষ্টি না করে প্রচলিত আইন সংশোধন ও মনিটরিংয়ের দাবি জানিয়েছে ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের সংগঠন ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদ তমাল ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, বেশ কিছু ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে চটকদার অফার দিয়ে গ্রাহকদের অর্থ আত্মসাৎ করেছে। আবার কিছু ই-কমার্সের টাকা পেমেন্ট গেটওয়ে সিসটেমে আটকে রয়েছে। দ্রুত এসব টাকা ছাড়ের ব্যবস্থা করে ই-কমার্স ক্ষাতকে ঘুরে দাড়ানোর সুযোগ সৃষ্টি করার পাশাপাশি যেসব ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের অর্থ আত্মসাৎ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।

/এএস

Header Ad
Header Ad

দুর্নীতিবাজদের ফাইলগুলো পুড়ে গেছে : রুহুল কবির রিজভী

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। ছবি: সংগৃহীত

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, শেখ হাসিনার পরিবারের সদস্যদের দুর্নীতির অনুসন্ধান শুরু হওয়ার পরই সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা রহস্যজনক। শুক্রবার রাজধানীর কাকরাইলের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে জাতীয়তাবাদী ৮৮ এসএসসি ব্যাচ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

রিজভী অভিযোগ করেন, সচিবালয়ের মতো নিরাপদ সরকারি দপ্তরে আগুনে ভস্মীভূত হয়ে গেছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ফাইল। এর মধ্যে রয়েছে দুর্নীতির অভিযোগে আলোচিত সাবেক কেবিনেট সচিবের ফাইল, যার ওপর তদন্ত চলছিল। তিনি প্রশ্ন করেন, “শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠজনদের ফাইল তলব করার পরপরই কেন এমন ঘটনা ঘটল? এটি নিছক দুর্ঘটনা নয়, বরং পরিকল্পিত।”

তিনি আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার স্বৈরাচারের দোসরদের চিহ্নিত করে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। শেখ হাসিনার সহযোগীদের প্রশাসনে বসিয়ে গণতন্ত্র রক্ষার বিপ্লবকে ব্যর্থ করার চেষ্টা চলছে। যারা অতীতে গণতন্ত্র রক্ষায় আন্দোলন করেছে, তাদের বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষ তৈরি করার চেষ্টা হচ্ছে।

রিজভী বলেন, নির্বাচন গণতন্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনকে উপেক্ষা করে সংস্কারের কথা বলছে। তিনি অভিযোগ করেন, “এটি মঈনুদ্দিন-ফখরুদ্দিন আমলের ষড়যন্ত্রের মতো। জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচনই গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি। আনুপাতিক হারে নির্বাচন জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়, কারণ এটি জটিল এবং সরাসরি ভোটাধিকারের বিরোধী।”

রিজভী আরও বলেন, যারা গণতন্ত্রের জন্য জীবন দিয়েছে, তাদের অবদানের প্রতি সম্মান জানিয়ে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের রায়কে গুরুত্ব দিতে হবে। তিনি অন্তর্বর্তী সরকারকে সতর্ক করে বলেন, গণতন্ত্র রক্ষার স্বার্থে জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ করতে হবে এবং কোনো ষড়যন্ত্রমূলক পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকতে হবে।

Header Ad
Header Ad

শনিবার যেসব এলাকায় বিদ্যুৎ থাকবে না

ছবি: সংগৃহীত

সিলেট নগরীর ২৫ এলাকায় শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকবে। বিদ্যুৎ বিভাগ জানিয়েছে, জরুরি মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত এবং কিছু এলাকায় সকাল ৮টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হবে।

এ বিষয়ে সিলেট বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-২ এর প্রকৌশলী শামস-ই-আরেফিন বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) এক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছেন।

বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ১১ কেভি মুক্তিরচক ও ধোপাদিঘীরপাড় ফিডারের আওতাধীন এলাকাগুলোতে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকবে। এই এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে মেন্দিবাগ, নোয়াগাঁও সাদিপুর, বোরহানউদ্দীন রোড, কুশিঘাট, মীরেরচক, মুক্তিরচক, মুরাদপুর, পীরেরচক, উপশহর রোড, সোবহানীঘাট বিশ্বরোড, ডুবড়ী হাওর, সবজিবাজার, ফুলতলী মাদরাসা, হাফিজ কম্প্লেক্স, নাইওরপুল পয়েন্ট, ওসমানী শিশু পার্ক, ধোপাদিঘীরপাড় ও আশপাশের এলাকা।

অন্যদিকে, ১১ কেভি সোবহানিঘাট ও কালিঘাট ফিডারের আওতাধীন এলাকাগুলোতে সকাল ৮টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকবে। এই এলাকাগুলো হলো কাস্টঘর, চালিবন্দর, আমজাদ আলী রোড, মহাজনপট্টি, লালদিঘীরপাড়, হকার্স মার্কেট, বন্দরবাজার রোড, জেল রোড এবং আশপাশের অঞ্চল।

বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কাজ শেষ হলে নির্ধারিত সময়ের আগেই বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনরায় চালু করা হবে। সাময়িক এ অসুবিধার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে বিভাগটি এবং গ্রাহকদের সহযোগিতা কামনা করেছে।

Header Ad
Header Ad

গুম অবস্থায় ভারতের কারাগারে যাওয়ার লোমহর্ষক বর্ণনা সুখরঞ্জন বালির

সুখরঞ্জন বালি। ছবি: সংগৃহীত

২০১২ সালের ৫ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জামায়াত নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য দিতে এসে নিখোঁজ হন পিরোজপুর জেলার ইন্দুরকানি উপজেলার উমেদপুর গ্রামের বাসিন্দা সুখরঞ্জন বালি।

দীর্ঘ পাঁচ বছর পর ভারত থেকে মুক্তি পেয়ে দেশে ফিরে তিনি নিজের ওপর ঘটে যাওয়া ভয়াবহ অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। তার এই অভিজ্ঞতা বাংলাদেশে গুম, নির্যাতন এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের এক মর্মস্পর্শী উদাহরণ।

২০১২ সালের ৫ নভেম্বর সকালে ঢাকার আদালতে যাওয়ার সময় সুখরঞ্জন বালিকে অপহরণ করা হয়। তিনি জানান, সাদা পোশাকধারী ব্যক্তিরা তাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে একটি অচেনা স্থানে নিয়ে যায়। চোখ বেঁধে তাকে অন্ধকার একটি ঘরে আটকে রাখা হয়। সেখানে তাকে মাঝে মাঝে খাবার দেওয়া হলেও কোনো আলো-বাতাস প্রবেশ করতে পারত না।

এরপর তাকে আরেকটি ঘরে নিয়ে যাওয়া হয় যেখানে জোরপূর্বক সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হয়। তিনি জানান, তাদের প্রস্তাবে রাজি না হলে তাকে শারীরিক নির্যাতন, বৈদ্যুতিক শক এবং ভয়াবহ মানসিক যন্ত্রণা দেওয়া হয়।

অপহরণের কয়েকদিন পর তাকে বিজিবি ও পুলিশের সহায়তায় ভারতের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)-এর হাতে তুলে দেওয়া হয়। বিএসএফ তাকে প্রচণ্ড মারধর করে এবং উত্তর চব্বিশ পরগণার স্বরূপনগর থানায় হস্তান্তর করে। সেখান থেকে তাকে বশিরহাট ও পরবর্তীতে দমদম কারাগারে পাঠানো হয়।

দমদম কারাগারে পাঁচ বছর কারাবাসের সময় বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা তার সাক্ষাৎকার নেয়। ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের আদেশে ২০১৮ সালে তিনি মুক্তি পান এবং দেশে ফিরে আসেন।

সুখরঞ্জন বালির অভিযোগ অনুযায়ী, বাংলাদেশ পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ তাকে অপহরণ করে এবং বিজিবি’র সহায়তায় বিএসএফের কাছে হস্তান্তর করে। তিনি বলেন, "বাংলাদেশের একজন নাগরিককে রাষ্ট্রীয় বাহিনী কিভাবে অন্য একটি দেশের বাহিনীর হাতে তুলে দেয়?"

বিএসএফের হাতে নির্যাতনের দাগ এখনো তার শরীরে দৃশ্যমান। তিনি জানান, দমদম কারাগারে থাকা অবস্থায় তার পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার সহায়তায় তার মুক্তির ব্যবস্থা করেন।

দেশে ফিরে আসার পর তিনি পিরোজপুরে নিজের গ্রামে ফিরে যেতে সাহস পাননি। নিরাপত্তার কারণে বাগেরহাটে আত্মীয়দের আশ্রয়ে দিন কাটিয়েছেন। তিনি দাবি করেন, গুম এবং পাঁচ বছরের কারাবাসের কারণে তিনি শারীরিক ও মানসিকভাবে স্বাভাবিক জীবনযাপনে অক্ষম হয়েছেন।

২০১৮ সালে মুক্তির পর তিনি রাষ্ট্রের কাছে বিচার ও ক্ষতিপূরণ দাবি করেন।

২০২৪ সালের আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত গুম-সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ১,৬৭৬টি গুমের অভিযোগ জমা পড়েছে। এর মধ্যে অনেকগুলো অভিযোগে তৎকালীন সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশনার প্রমাণ পাওয়া গেছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এক ভাষণে বলেন, "গুম কমিশনের প্রতিবেদন মানুষ মানুষের প্রতি কী পরিমাণ নৃশংস হতে পারে তার দলিল।" তিনি আরও বলেন, "গুমের শিকার ব্যক্তিদের ভয় আজও কাটেনি।"

 

 

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

দুর্নীতিবাজদের ফাইলগুলো পুড়ে গেছে : রুহুল কবির রিজভী
শনিবার যেসব এলাকায় বিদ্যুৎ থাকবে না
গুম অবস্থায় ভারতের কারাগারে যাওয়ার লোমহর্ষক বর্ণনা সুখরঞ্জন বালির
শেখ হাসিনাকে ‘নারী’ বলতে রাজি নন মৎস্য উপদেষ্টা
সূর্যের সবচেয়ে কাছে মানুষের তৈরি যান
বর্তমান সরকার রিজার্ভ বাড়িয়েছে, ব্যাংক সেক্টর সচল করছে: জামায়াত আমির
বাংলাদেশ জটিল রাজনৈতিক সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে : মির্জা ফখরুল
সংবিধান সংস্কারে রাজনৈতিক দলের সংকল্প জরুরি: অধ্যাপক আলী রীয়াজ
চলতি বছরের বিজিবি-বিএসএফ বৈঠক হচ্ছে না
ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে নিহত সবাই একই পরিবারের
ইউসুফ (আঃ)- এর সমাধিতে নিয়ে গেল ইসরায়েলি সেনারা
ইন্টারপোলের রেড নোটিশে ৬৩ বাংলাদেশি: অপরাধীদের ধরতে আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আজমীর বরখাস্তের আদেশ বাতিল
মাহফিলে আজহারী উঠবেন রাতে, দুপুরেই ভরে গেছে ময়দান
ইসরায়েলি হামলায় অল্পের জন্য প্রাণে বাঁচলেন ডব্লিউএইচও প্রধান
থাইল্যান্ডে নিখোঁজ হওয়া বাংলাদেশিকে পাওয়া গেল থাই নারীর সঙ্গে হোটেলে  
হাসিনার দোসররা সচিবালয়ে পরিকল্পিতভাবে অগ্নিকাণ্ড করেছে: শাকিল উজ্জামান
ভারতে ইসকন মন্দিরে চিন্ময়ের আইনজীবীর বৈঠক
ভোটার হওয়ার বয়স ১৭ বছর নির্ধারিত হওয়া উচিত: ড. মুহাম্মদ ইউনূস  
নির্বাচনে অংশ নিতে খালেদা জিয়ার আইনগত কোনো বাধা নাই