শুল্ক কমলেও কমেনি চালের দাম
ভরা মৌসুমেও কমছে না চালের দাম। দাম কমাতে সরকার চালের আমদানির উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক কমিয়ে দিয়েছে। তাও এক সপ্তাহ আগে। সরকারের বিভিন্ন সংস্থা বাজারে অভিযান চালিয়ে অবৈধভাবে মজুদকারিদের জেল জরিমানা করছে। তারপরও বাজার অস্থির। দাম কমছে না। কোন লক্ষণও দেখা যাচ্ছেনা। ভোক্তারাও সুফল পাচ্ছেন না সরকারের এসব উদ্যোগের। অর্থাৎ সরকারের কোন চেষ্টার প্রভাবই বাজারে পড়ছে না।
সরকারি প্রতিষ্ঠান খোদ ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবির তথ্যও বলছে মাসের ব্যবধানে কমেনি চালের দাম। বরং বেড়েছে। মিনিকেট চালে এক মাস আগে ছিল ৫৮ থেকে ৬৮ টাকা। বর্তমানে ৬৪ থেকে ৮০ টাকা। দাম বেড়েছে ১৪ শতাংশ। এক মাস আগে মাঝারি চালের (পাইজাম) কেজি ছিল ৪৬ থেকে ৫৬ টাকা। বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে। বেড়েছে ১০ শতাংশ। আর মোটা চাল এক মাস আগে ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা বিক্রি হলেও বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৪৮ থেকে ৫২ টাকা। এই চালে দাম বেড়েছে আট শতাংশ।
দুই দিন (২৭ ও ২৮ জুন) সোম ও মঙ্গলবার রাজধানীর কৃষিমার্কেট, কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে চালের বাজারের অস্থিরতার চিত্র পাওয়া গেছে।
অটো রাইস মিল মালিকরা বলছেন, বাজারে ধানের দাম বেশি। কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান সব ধান কিনে মজুদ করে নিচ্ছে। তাই চালের দাম বাড়ছে।
অন্যদিকে মিলমালিকরা করপোরেট ব্যবসায়ীদের দোষারোপ করলেও করপোরেটরা বলছেন, বাজারের ১০ শতাংশও তাদের দখলে নেই। আগোরা, স্বপ্ন, মেঘনা, ইস্পাহানি, আকিজ গ্রুপ, ইউনিমার্টসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানও চালের ব্যবসা করেছে।
মঙ্গলবার (২৮জুন) কৃষিমার্কেটে গিয়ে সরেজমিনে দেখা যায়, বাজারে চালের কোনো অভাব নেই। প্রায় সব দোকানে থরে থরে সাজানো চালের বস্তা। কিন্ত দামে কোনো কমতি নেই। দাম কেন কমছে না জানতে চাইলে সাহারা রাইস এজেন্সির শিমুল ঢাকাপ্রকাশ-কে জানান, ‘সরকার ভ্যাট কমিয়েছে চালে। এটা শুনেছি। তারপরও কমছে না। দাম আগের মতোই আছে। মিনিকেট ৬৪ থেকে ৬৮ টাকা কেজি, ২৮ চাল ৫০-৫২ টাকা ও মোটা চাল ৪৭ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, আমারও প্রশ্ন কেন কমছে না। মনে হয় ডলারের দাম বেশি হওয়ার কারণে কমছে না। কারণ আমদানি করতে হলে ডলার দিতে হয়।
সেই একই চাল পাশের দোকানসহ বিভিন্ন দোকানে খুচরা পর্যায়ে কেজিতে ৪ থেকে ৬ টাকা বেশি দামে বিক্রি করতে দেখা গেছে। তারা বলছেন, পুঁজি লাগিয়ে লাভ করতে হবে না? তাই বিভিন্ন কারণে খুচরা পর্যায়ে একটু বেশি দামে চাল বিক্রি করা হচ্ছে।
সোমবার কারওয়ান বাজারেও দেখা যায়, প্রায় প্রত্যেক দোকানেই চালের পর্যাপ্ত মজুদ আছে। তারপরও খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, আগের দামেই চাল বিক্রি হচ্ছে। কমেনি, বাড়েনি।
আল্লাহর দান রাইস এজেন্সির আব্দুল আওয়াল ঢাকাপ্রকাশ-কে জানান, ‘আগের দামেই চাল বিক্রি করা হচ্ছে। বাড়েনি, কমেনি। মিনিকেট ৬৫-৬৮ টাকা কেজি, নাজিরশাইল ৬৫-৮৫টাকা, ২৮চাল ৫০-৫৫ টাকা ও মোটা স্বর্ণা চাল ৪৫-৪৭ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। কবে দাম কমবে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এলসি খুললে সেই চাল আসতে ১০ দিন লাগতে পারে। তখন হয়ত কমবে। তবে দেশি চালের দাম কমছে না।’
রাজধানীর চালের আরেক মোকাম বাদামতলী বাজারেও থরেথরে সাজানো চালের বস্তা। তারপরও আগের দামে তারা বিক্রি করছেন চাল। জানতে চাইলে বাদামতলী চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. নিজামউদ্দিন ঢাকাপ্রকাশ-কে জানান, ‘সরকার শুল্ক কমালেও সেই চাল আসেনি। তাই চালের দামও কমেনি। আগের মতোই মিনিকেট ৬৬ টাকা, ২৮ চাল ৫০ টাকা ও মোটা চাল ৪০-৪২ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। কিন্তু সেই চাল ৪ থেকে ৬টাকা বেশি দামে বিক্রি করছে খুচরা বিক্রেতারা। আগে মিল থেকে চাল পাওয়া না গেলেও বর্তমানে কোনো সংকট নেই। চাহিদা মতো পাওয়া যাচ্ছে।’
চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধান-চালের অবৈধ মজুতদারির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়ার পর খাদ্য মন্ত্রণালয় ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর অভিযানে নামে। মূল্য তালিকায় অসঙ্গতি ধরা পড়ায় মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের এসএম রাইস এজেন্সি ও আনোয়ার ট্রেডার্সসহ একাধিক প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়।
একইসঙ্গে সরকার চালের আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ কমিয়ে দেয়। খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের ঘোষণার পর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে ২৩ জুন চাল আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক কমিয়ে এক প্রজ্ঞাপন জারি করে।
এতে বলা হয়, আমদানি বাড়িয়ে চালের দাম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় সরকার। এর অংশ হিসেবে চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহার করেছে। এতদিন সবমিলে চাল আমদানিতে শুল্ক ছিল ৬২ শতাংশ। অর্থাৎ ১০০ টাকার পণ্য আনতে সরকারকে কর দিতে হতো ৬২ টাকা। এখন ২৫ শতাংশ কমানোর কারণে সরকারকে ৩৭ টাকা। আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত শুল্ক কমানোর আদেশ কার্যকর থাকবে।
জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব এ এইচ এম শফিকুজ্জামান বলেন, ‘কোনো গোষ্ঠী চালের বাজার অস্থির করার চেষ্টা করেছে। কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, এবার ২ কোাট সাত লাখ টন ধান উৎপাদন হয়েছে। তা এই কয় দিনেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি চালের দাম ৪৪ শতাংশ বেড়েছে। চালের কেজিতে ৮-১০ টাকা বাড়ানো হয়েছে ধানের ভরা মৌসুমে। তাই তেলের মতো চাল মিলমালিকদেরও অর্ডার নেওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে চাল সরবরাহ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
এনএইচবি/এএস