সম্ভাবনার নতুন দুয়ার পদ্মা সেতু-১২
সেতু উদ্বোধনের আগেই ‘সমন্বয়’ হবে পরিবহন ভাড়া
পদ্মা সেতু নিয়ে এখন দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের মাঝে বিরাজ করছে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস-আনন্দ। সেই উচ্ছ্বাসে কিছুটা হলে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে গাড়ির ভাড়া নিয়ে। দফায় দফায় টোল গুণতে হবে পদ্মার উপর দিয়ে চলাচলকারী দক্ষিণও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলগামী যাত্রা ও পণ্যবাহী পরিবহনকে। পদ্মা সেতু ছাড়াও এক্সপ্রেসওয়ের দুই পাশে এবং মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারেও টোল দিতে হবে যানবাহনগুলোকে। ফলে আশঙ্কা করা হচ্ছে যাত্রী ও পণ্যবাহী যানবাহনের ভাড়া অনেক বেশি বেড়ে যাওয়ার ।
এ অবস্থায় পদ্মা সেতু চালু হওয়ার আগেই যানবাহনের ভাড়া ‘সমন্বয়’ করতে চাইছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতিও চায় সেতু উদ্বোধনের আগেই সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে ভাড়ার সমন্বয় করা হোক।
বিআরটিএ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ফেরির ভাড়ার চেয়ে পদ্মা সেতুর টোল যেহেতু বেশি তাই ভাড়া বাড়তে পারে। কিন্তু এটিই শেষ কথা নয়। কারণ, এই সেতুর কারণে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অধিকাংশ জেলার দূরত্ব রাজধানীর সঙ্গে কমবে। তাই টোল বেশি হলেও এই দিক বিবেচনায় ভাড়া কমারও সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে শুধুমাত্র পদ্মা সেতুর টোল হলে বিষয়টা একরকম হত। কিন্তু সেতুর পাশাপাশি এক্সপ্রেসওয়েতেও টোল দিতে হবে। এ কারণে ভাড়া কমার সম্ভাবনা খুবই কম। অবশ্য সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন পণ্য পরিবহনের খরচ বেশি বেড়ে যাবে।
এই অবস্থায় পদ্মা সেতু চালুর আগেই যানবাহনের ভাড়া সমন্বয় করা হবে বলে জানিয়ে বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহামস্মদ মজুমদার। তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর কারণে অনেক রুটের দূরত্ব কমবে। তাই ভাড়া কমতেও পারে।
টোল দিতে হবে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতেও
বিআরটিএ চেয়ারম্যান ভাড়া কমতে পারে বললেও বাস্তবে তেমন সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। কারণ পদ্মা সেতুর টোলের পাশাপাশি যানবাহনগুলোকে টোল দিতে হবে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারের জন্য। তাই ভাড়া কমার সম্ভাবনা নাই। বরং বাড়ার সম্ভাবনাই বেশি।
আগামী ২৫ জুন সকাল ১০টায় বহুল্র প্রতিক্ষীত পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর পরই যানবাহনের জন্য সেতু খুলে দেওয়া হবে।
সম্প্রতি সেতুর টোল নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। পদ্মা সেতুর নির্ধারিত টোলের হার হচ্ছে, মোটরসাইকেলের জন্য টোল দিতে হবে ১০০ টাকা এবং প্রাইভেট কার ও জিপের জন্য ৭৫০ টাকা। মাঝারি বাসের জন্য ২ হাজার টাকা, বড় বাসের জন্য ২ হাজার ৪০০ টাকা টোল নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া মিনিবাসকে দিতে হবে ১ হাজার ৪০০ টাকা এবং মাইক্রোবাসকে দিতে হবে ১ হাজার ৩০০ টাকা।
৫ টন পর্যন্ত ট্রাকের জন্য টোল নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৬০০ টাকা, ৫ থেকে ৮ টনের ট্রাকের জন্য ২ হাজার ১০০ টাকা, ৮ থেকে ১১ টনের ট্রাকের জন্য ২ হাজার ৮০০ টাকা, বড় ট্রাকের জন্য (থ্রি এক্সেল পর্যন্ত) ৫ হাজার ৫০০ টাকা এবং টেইলারের জন্য ৬ হাজার টাকা টোল নির্ধারণ করা হয়েছে।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) এক সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে পদ্মা সেতু দিয়ে প্রতিদিন ২৪ হাজার যানবাহন চলবে। এর মধ্যে রয়েছে ৮ হাজার ২৩৮টি বাস, ১০ হাজার ২৪৪টি ট্রাক, এবং ৫ হাজারের বেশি মাইক্রোবাস ও ব্যক্তিগত গাড়ি।
এই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, প্রতিবছর যানবাহনের সংখ্যা ৭-৮ শতাংশ হারে বাড়বে। সেক্ষেত্রে ২০৫০ সাল নাগাদ সেতুটি দিয়ে প্রতিদিন ৬৭ হাজার বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চলবে।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) সূত্র জানায়, ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের টোল নির্ধারণের বৈঠক হবে ৭ জুন। তারপরই জানা যাবে এক্সপ্রেসওয়ের টোল কত হবে।
মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারেও আছে টোল
পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকায় ঢুকতে এবং বের হতে হলে টোল দিতে হবে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারেও। এই টোলের পরিমাণও নিতান্ত কম নয়।
মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে টোলের পরিমাণ-ট্রেইলার ৩৫০ টাকা, ট্রাক ৩০০ টাকা, বাস ২৭৩ টাকা, ট্রাক (চার চাকা) ২৭৩ টাকা, মিনি বাস ১৭৩ টাকা, পিকআপ ৬০ টাকা এবং মাইক্রোবাস ৬০ টাকা।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্ল্যাহ ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, সরকারের কাছে আমরা আবেদন করেছি ভাড়া সমন্বয় করার জন্য। যেসব বাস পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুট হয়ে চলে সেগুলোও যদি পদ্মা সেতু দিয়ে চলার কারণে দূরত্ব কমে তাহলে ভাড়া কমাতেও আপত্তি নেই আমাদের।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব খন্দকার মোজাম্মেল হক চৌধুরী ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, সরকার জনগণকে কর দেয়। তাই টোল আদায়ের কোনো যৌক্তিকতা নাই।
এক্সপ্রেসওয়ে চালুর পর বাস ও মিনিবাসে ট্রিপ সংখ্যা বেড়েছে জানিয়ে মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, এখন টোল দিতে হলে মালিকরা ভাড়ার সঙ্গে সমন্বয় করবে। কাজেই শেষ বিচারে যাত্রীদেরই পকেট কাটা হবে।
আরইউ/এনএইচবি/এমএমএ/