পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রীকে হত্যা: মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়নি ৭ বছরেও
রওশন আরা বেগম
সাত বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো রওশন আরা বেগম (৬০) এবং গৃহকর্মীর সন্তান কল্পনা আক্তার (১১) হত্যাকাণ্ডের চূড়ান্ত বিচার হয়নি। সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অ্যাডিশনাল এসপি) আব্দুল কুদ্দুসের স্ত্রী রওশন আরা রাজধানীর উত্তর যাত্রাবাড়ীর কলাপট্টি এলাকার নিজ বাসায় গৃহকর্মীর সন্তানসহ খুন হয়েছিলেন ২০১৫ সালে। ওই বছরের ২৪ মার্চ সন্ধ্যায় গৃহকর্ত্রী রওশন আরা বেগম ও তাদের গৃহকর্মীর সন্তান কল্পনা আক্তারের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
দীর্ঘ সময়েও চূড়ান্ত বিচার না হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে নিহত রওশন আরা বেগমের যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ছেলে শেখ মোহাম্মদ আরিফুজ্জ্মান (আরিফ) বৃহস্পতিবার (২ জুন) ঢাকাপ্রকাশ’কে বলেন, তাদের ভাইবোনদের সবাই প্রবাসী। মা একা ঢাকার বাসায় গৃহকর্মী লাকি ও লাকির মেয়ে কল্পনাকে নিয়ে থাকতেন। একদিন গৃহকর্মী লাকির ছেলে মো. সাঈদ হাওলাদার ও মো. রিয়াজ বাসায় চুরি করছিল। তা দেখে ফেলায় গৃহকর্ত্রী রওশন আরা বেগমকে হত্যা করে সাঈদ ও রিয়াজ। হত্যা করার সময় তা দেখে ফেলে সাঈদের বোন কল্পনা (গৃহকর্মীর মেয়ে)। তখন কল্পনাকেও হত্যা করে সাঈদ ও রিয়াজ। আদালতে এসব প্রমাণিত হওয়ায় সাঈদ ও রিয়াজকে মৃত্যুদণ্ড দেন বিচারিক আদালত। আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই এবং তা দ্রুত কার্যকর চাই।
নিয়ম অনুসারে নিম্ন আদালতের দেওয়া মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার জন্য উচ্চ আদালতের অনুমোদন (ডেথ রেফারেন্স) লাগে। সে অনুসারে ডেথ রেফারেন্স মামলাটি হাইকোর্টে এসেছে। এ ছাড়া আসামিরাও জেল আপিল করেছেন।
গত ৩১ মে মামলাটি বিচারপতি শহিদুল করিম ও বিচারপতি মো. আক্তারুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চের কার্যতালিকায় ৫ নম্বরে ছিল। তবে গত দুই দিন ধরে মামলাটি হাইকোর্টের কার্যতালিকায় দেখাচ্ছিল না। এর পরিপ্রেক্ষিতে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বশির আহমেদ বৃহস্পতিবার (২ জুন) ঢাকাপ্রকাশ’কে বলেন, ‘সিনিয়র জাজ ছুটিতে আছেন, তাই এই দুই দিন দ্বৈত বেঞ্চটি এজলাসে বসেনি। আগামি রবিবার (৫ জুন) এই দ্বৈত বেঞ্চ এজলাসে বসবে। ওই দিন মামলাটি এই কার্যতালিকায় আসার কথা।’
এই মামলায় আসামিদের পক্ষে সরকারি খরচে রাষ্ট্র নিয়োজিত আইনজীবী মো. হাফিজুর রহমান খান। জানতে চাইলে তিনি ঢাকাপ্রকাশ’কে বলেন, আমি গত দেড় মাস ধরে অসুস্থ। আদালতে যাই না। এখন সুস্থতার দিকে আছি। তবে ডাক্তার আরও দুই সপ্তাহ বেড রেস্টে থাকতে বলেছেন। সে অনুসারে গতকাল (১ জুন) থেকে রেস্টে আছি। আশাকরি জুনের মাঝামাঝি থেকে আবার আদালতে যাব।
এর পরিপ্রেক্ষিতে তালিকায় থাকলেও মামলাটির শুনানি শুরু হবে কিনা তা আদালতের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে বলে জানান আইনজীবীরা।
প্রসঙ্গত, নিহত রওশন আরা বেগমের স্বামী আব্দুল কুদ্দুস সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অ্যাডিশনাল এসপি)। ১৯৯৬ সালে তিনি মারা যান। ‘বাবার প্রসাদ’ নামের উত্তর যাত্রাবাড়ীর কলাপট্টির ৫৬ নম্বর তিনতলা বাড়িটির মালিক প্রয়াত এএসপি আব্দুল কুদ্দস। এই দম্পতির তিন ছেলে ও দুই মেয়ে। তাদের মধ্যে চারজন যুক্তরাষ্ট্রে এবং একজন কানাডায় থাকেন। তিনতলা এক ইউনিটের বাড়িটির দ্বিতীয় তলায় রওশন আরা গৃহকর্মী লাকি ও লাকির মেয়ে কল্পনাকে নিয়ে থাকতেন।
এমএ/এনএইচবি/আরএ/