সম্ভাবনার নতুন দুয়ার পদ্মা সেতু-৭
টোল আদায়ে কোরিয়া ও চীনের কোম্পানি
পদ্মা সেতু চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দুই প্রান্তের টোল প্লাজায় মোট ১২টি বুথ বা কাউন্টারে টোল আদায় করা হবে। এর মধ্যে মাওয়া প্রান্তে থাকবে ছয়টি ও জাজিরা প্রান্তে থাকবে ছয়টি। তবে আরও কয়েকটি বুথ বা কাউন্টারের কাঠামো থাকবে। প্রয়োজন অনুসারে সেগুলো চালু করা হবে।
পদ্মা সেতু প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, টোল প্লাজার কাউন্টারগুলোর জন্য ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১২টি আধুনিক মেশিন নিয়ে আসা হয়েছে। এগুলো শিগগিরই বসানো হবে। সেতু চালুর আগেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। তবে পদ্মা সেতুর টোল প্লাজায় আপাতত ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে টোল প্রদান করে পার হবে যানবাহন।
জানা গেছে, পাঁচ বছরের জন্য পদ্মা বহুমুখী সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ ও টোল আদায়ের দায়িত্ব পেয়েছে যৌথভাবে কোরিয়া ও চীনের দুটি কোম্পানি। কোম্পানি দুটি হলো কোরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে করপোরেশন (কেইসি) এবং চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড (এমবিইসি)। কোম্পানি দুটি এ জন্য পাবে ৬৯২ কোটি ৯২ লাখ টাকা।
সেতু সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কেইসি ও এমবিইসি শিগগিরই সেতুর টোল প্লাজার দায়িত্ব বুঝে নেবে। তারপর থেকে তারা টোলপ্লাজার বুথগুলোকে কিভাবে আধুনিক করা যায় তা নিয়ে কাজ করবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেতুর নির্মাণকাজের সঙ্গে যুক্ত একজন কর্মকর্তা জানান, এখন পর্যন্ত যতটুকু সিদ্ধান্ত তা হচ্ছে, আপাতত পুরোনো পদ্ধতিতে অর্থাৎ ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে টোল আদায় করা হবে। একই সঙ্গে সহজে টোল আদায়ের জন্য আধুনিক প্রযুক্তি সমৃদ্ধ ফাস্ট ট্র্যাক বুথ স্থাপনের কাজ চলবে।
সেতু বিভাগের একটি সূত্র জানিয়েছে, ডিজিটাল পদ্ধতিতে ফাস্ট ট্র্যাকের মাধ্যমে মাত্র দুই থেকে তিন সেকেন্ডের মধ্যে রেক্টর রিফলেক্টিভ আইডেন্টিফিকেশনের (আরএফআডি) মাধ্যমে টোল আদায়ের ব্যবস্থা থাকবে। তবে এটি প্রথমে হয়তো পরীক্ষামূলকভাবে টোল প্লাজার একটি বা দুটি বুথ বা কাউন্টারে চালু করা হবে। এক্ষেত্রে ওই বুথ বা কাউন্টার দিয়ে গাড়ি পার হওয়ার সময় গতি কমিয়ে পার হবে। তখন উপরে থাকা ক্যামেরা গাড়ির গ্লাসে থাকা আরএফআইডি ক্যাচ করবে। এর কিছুক্ষণের মধ্যে সংশ্লিষ্ট গাড়ি চালক বা মালিকের মোবাইলে একটি ম্যাসেজ যাবে টাকা পরিশোধের। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট গাড়ি মালিকের নগদ, বিকাশ, রকেট ও ব্যাংক হিসেব থেকে টাকা কেটে নেওয়া হবে।
অবশ্য পদ্মা সেতুর সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, এ মুহূর্তে এই পদ্ধতি চালু করা হয়তো সম্ভব হবে না। তবে এগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। টোল আদায়কারী প্রতিষ্ঠান কেইসি কাজ শুরু করার পর বুঝা যাবে এই প্রক্রিয়া কবে নাগাদ চালু করা যাবে।
অবশ্য সেতু বিভাগের অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, ইতিপূর্বে যমুনা সেতুতে এই পদ্ধতি চালু করা হলেও সেটি খুব একটা কার্যকর হয়নি। কারণ অধিকাংশ গাড়ি চালক বা মালিক এ বিষয়ে এখনও অভ্যস্ত হয়ে উঠেননি।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সমীক্ষা অনুসারে, ২০২২ সালে পদ্মা সেতু দিয়ে ২৪ হাজার বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চলাচল করবে। আর বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের (বিবিএ) একটি প্রাক্কলনে বলা হয়েছে, একই বছরে প্রতিদিন ৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা টোল আদায় হবে পদ্মা সেতু থেকে।
বহুল আকাঙ্ক্ষিত পদ্মা সেতু আগামী ২৫ জুন যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। বহুমুখী এই সড়ক ও রেল সেতুর দূরত্ব ছয় দশমিক ১৫ কিমি। এই সেতুর মাধ্যমে দেশের তিন বিভাগের ২১ জেলা মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হবে।
এনএইচবি/এপি/এসজি/