ভারত চাইলে আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই ফেরত দিতে পারে পি কে হালদারকে
রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে কোনো আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই ভারত পি কে (প্রশান্ত কুমার) হালদারকে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করতে পারে। এক্ষেত্রে যেসব আইনী কাঠামো ও চুক্তির কথা বলা হচ্ছে সেগুলোর দরকারই হবে না।
ভারতীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার বাংলাদেশর ওয়ান্টেড আসামি এবং ইন্টারপোলের রেড অ্যালার্ট জারি হওয়া আসামী গ্লোবাল ইসলামী (সাবেক এনআরবি গ্লোবাল) ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক পি কে হালদার গ্রেপ্তার হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে ৩৫টি মামলা আছে বাংলাদেশের আদালতে।
ভুয়া ৩০-৪০টি প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ জালিয়াতি করে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে পি কে হালদার হাতিয়ে নিয়েছেন ১০ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে অর্থপাচারের মামলাও চলমান।
শনিবার (১৪ মে) গ্রেপ্তার হওয়ার পর বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, অ্যাটর্নি জেনারেল ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান প্রায় একই কথা বলেছেন যে গণমাধ্যমের মাধ্যমে বিষয়টি জেনেছেন তারা। এখন ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে জানালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলছেন, ‘বন্দি বিনিময় চুক্তির মাধ্যমে ফিরিয়ে আনা যায়। তবে সেক্ষেত্রে পি কে হালদার ওখানেও যে জালিয়াতি করে প্যান কার্ড, আধার কার্ড বানিয়েছেন তার বিচার আগে হতে হবে। তারপরই ফেরত আনার বিষয় নিয়ে কথা হতে পারে।’
অন্যদিকে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন বলেছেন, আনুষ্ঠানিকভাবে জানতে পারলে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও দুদক চেয়ারম্যান প্রায় একই রকম কথা বলেছেন।
ভারত চাইলেই ফেরত দিতে পারে
কিন্তু কূটনীতিবিদদের অনেকেই বলছেন, এসব কোনো আনুষ্ঠানিকতার দরকারই হবে না যদি ভারতের রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকে। ভারত চাইলেই পি কে হালদারকে ফেরত দিতে পারে। আগে বুঝতে হবে ভারত এটা চায় কি না।
অতীতে বাংলাদেশও ভারতের অনেক ওয়ান্টেড আসামিকে এভাবেই ফেরত দিয়েছে। সেই প্রক্রিয়াটা হলো এমন যে কোনো একদিন দেখা যাবে যে বর্ডারে ঘোরাফেরা করছেন পি কে হালদার। বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে গ্রেপ্তার করল।
এভাবে অতীতেও অনেকবার এমন হয়েছে। ভারতের ওয়ান্টেড আসামী অনেক আছে যাদের এভাবে ফেরত দেওয়া হয়েছে। অরবিন্দ রাজখোয়া বা এমন অনেকের কথাই বলা যায়।
ভারতও এর আগে বাংলাদেশের সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে ফেরত দেওয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলার মৃত্যুণ্ডপ্রাপ্ত এবং ভারতে পালিয়ে থাকা আসামী বরখাস্তকৃত ক্যাপ্টেন আবদুল মাজেদকে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট একদিন শেষরাতে ঢাকার মিরপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। অথচ ২৫ বছর ধরে ভারতে পালিয়ে ছিলেন বঙ্গবন্ধুর খুনি মাজেদ।
জানতে চাইলে সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, বন্দি বিনিময় চুক্তি ছাড়াও ভারতের সঙ্গে আরেকটা চুক্তি আছে বাংলাদেশের। গুরুতর অপরাধ করে সীমান্ত পাড়ি দিলে সেই চুক্তি বলে আসামিকে ফেরত পাওয়া যায়। এই চুক্তিটি ২০১০ সালের।
এক প্রশ্নের জবাবে হুমায়ুন কবির বলেন, তবে যদি ভারতের রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকে তাহলে কোনো আনুষ্ঠানিকতার দরকার নাই। এর আগেও আমরা ভারতকে তাদের আসামিদের এমনভাবে ফেরত দিয়েছি। কোনো একদিন দেখা গেল পি কে হালদার বর্ডারে ঘোরাফেরা করছেন। বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে গ্রেপ্তার করে হেফাজতে নিতে পারে। এখন প্রশ্ন হলো ভারত দিতে চায় কি না।
আরইউ/এমএমএ/