এবার রেকর্ড বোরো উৎপাদনের সম্ভাবনা
এবার বোরোর রেকর্ড পরিমাণ উৎপাদনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। কোনোরকম প্রাকৃতিক দুর্যোগ না ঘটলে এবং যথাসময়ে ফসল ঘরে তুলতে পারলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি বোরো ফসল কৃষকের ঘরে উঠবে বলে আশা করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এবং কৃষকরা।
কৃষি বিভাগের প্রত্যাশা এবারের চালের উৎপাদন হতে পারে দুই কোটি ১৩ লাখ ৪১ হাজার টন। চাল আকারে বোরো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে দুই কোটি নয় লাখ ৫১ হাজার টন। আর বোরো ফসল কৃষকের গোলায় আসতে শুরু করলে বাজারেও চালের দামের উপর প্রভাব পড়বে। কমে আসবে চালের দাম।
বোরোতে ফসলের উৎপাদন বাড়াতে সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ে নানামুখী উদ্যোগ এবং তৎপরতার কারণে চলতি বোরো মৌসুমে ধানের আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।
কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক শনিবার ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, আমরা আশাবাদি কোনোরকম প্রতিকূলতা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবার বোরোতে যে আবাদ হয়েছে তাতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা নানাভাবে কৃষককে প্রণোদনা দিয়েছি। ধানের দাম বেড়েছে। চাষীরাও আগ্রহী হয়েছেন। মাঠ পর্যায়ে আমাদের কৃষি বিভাগের তৎপরতাও ছিল। সব মিলিয়ে আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে।’
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘একটা বিষয় তো খুবই পরিষ্কার। প্রতিবছর আমাদের দেশে ২০ থেকে ২৫ লাখ নতুন মুখ আসছে। পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে এত নতুন মুখ আসে না। এই যে প্রতিবছর নতুন মুখ আসছে তাদের মুখে তো খাবার দিতে হবে। কিন্তু আমাদের কৃষি জমি কমে যাচ্ছে। এই অবস্থায় আমরা খাদ্য শস্যের উৎপাদন বাড়াতে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছি। নতুন নতুন জাত উদ্ভাবন করা হচ্ছে।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০২১-২২ মওসুমে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৪৮ লাখ ৭৩ হাজার হেক্টর জমিতে। আর আবাদ হয়েছে ৪৯ লাখ ৬৩ হাজার হেক্টর জমিতে। আবাদ বেড়েছে প্রায় দুই শতাংশ জমিতে।
আবাদকৃত বোরো ফসলের মধ্যে হাইব্রিড জাতের ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১২ লাখ ৩৭ হাজার হেক্টর এবং উচ্চ ফলনশীল ধানের আবাদের লক্ষ্য ছিল ৩৬ লাখ ১৬ হাজার হেক্টর। বাকিটা স্থানীয় জাত। এর মধ্যে হাইব্রিড চাল ৬০ লাখ ৮৮ হাজার হেক্টর এবং উচ্চ ফলনশীল জাতের চাল এক কোটি ৪৮ লাখ ২৬ হাজার টন। হেক্টর প্রতি গড় ফলন ধরা হয়েছে ৪ দশমিক ৩০ টন।
কৃষি বিভাগ বলছে, চলতি মওসুমে হাইব্রিড ধানের আবাদ বেড়েছে প্রায় ১০ শতাংশ। এ মৗেসুমে আবাদ হয়েছে ১৩ লাখ ৩১ হাজার হেক্টর জমিতে। আর লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১২ লাখ ৩৭ হাজার হেক্টর জমি।
অপরদিকে আবাদ কমেছে উচ্চ ফলনশীল জাতের ধানের। ৩৬ লাখ ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও আবাদ হয়েছে ৩৬ লাখ ১১ হাজার হেক্টরে। অর্থাৎ আবাদ প্রায় এক শতাংশ কমেছে।
একইভাবে স্থানীয় জাতের ধানের আবাদও প্রায় ১০ শতাংশ কমেছে। তবে স্থানীয় জাতের ধানের আবাদ কমলেও এসব জমিতে চাষ হয়েছে হাইব্রিড জাতের ধান।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, বোরো আবাদে সরকার ব্যাপক প্রণোদনা দিয়েছে। একইসঙ্গে কৃষককে ধানের উচ্চ মূল্য দিয়েছে। এ দুটি কারণে কৃষকরাও অন্য বছরের তুলনায় চলতি বোরো মৌসুমে আবাদ করেছেন বেশি।
সরকার চলতি রবি মৌসুমে (২০২১-২০২২) বোরো ধানের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকদের মধ্যে বিনামূল্যে বীজ ও সার সহায়তা দেয়। এরমধ্যে ৬ লাখ কৃষককে ৫ কেজি করে বীজ, ১০ কেজি করে ডিএপি এবং ১০ কেজি করে এমওপি সরবরাহ করে সরকার।
চলতি বোরো মেীসুমে কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে বীজ সহায়তা প্রণোদনার অংশ হিসেবে দেশের ৬৪ জেলায় ১৫ লাখ তিন হাজার মেট্রিক টন বীজ বিতরণ করা হয়েছে। যার আর্থিক মূল্য ৬৯ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এই সহায়তার কারণে অন্য বছরের তুলনায় চলতি মৌসুমে হাইব্রিড ধানের আবাদ বেড়েছে।
কৃষি বিভাগের প্রত্যাশ, এবারের বোরোর যে বাম্পার আবাদ হয়েছে তাতে ফলনও হবে বাম্পার। প্রাকৃতিক দুর্যোগ অর্থাৎ ঝড়, অতিবৃষ্টি, আগাম বন্যা না হলে কৃষকের ঘরে ঘরে উৎসব হবে। এখন শুধু অপেক্ষা ফসল ঘরে উঠার। এপ্রিলের শেষ নাগাদ কৃষকের গোলায় ফসল উঠবে।
এনএইচবি/এমএমএ/