নওগাঁয় ‘যৌক্তিক’ বেঁধে দেয়া মূল্যে বাজারে মিলছে না কোনো পণ্য
ছবি : ঢাকাপ্রকাশ
বাজারে ২৯টি নিত্যপণ্যের ‘যৌক্তিক’ মূল্য নির্ধারণ করেছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য নির্ধারণ এবং বাজারে ব্যবসায়ীদের আনুষ্ঠানিকভাবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রচারের পরেও রবিবার (১৭ মার্চ) নওগাঁর জেলা শহরের বিভিন্ন বাজারে গিয়ে দেখা যায় বেঁধে দেয়া মূল্যে মিলছে না নিত্যপণ্য। প্রায় সব পণ্যের দামই তাদের দেয়া ‘যৌক্তিক’ মূল্যের চেয়ে বেশি। বাজার ঘুরে দেখা মেলে অব্যবস্থাপনার এই চিত্রের।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তর নতুন এই দাম তিনটি স্তরে নির্ধারণ করে দেয়। একটি পণ্য উৎপাদক পর্যায়ে সর্বোচ্চ দাম, পাইকারি বাজারে এবং ভোক্তাপর্যায়ে খুচরা দাম কতো হবে সেটা নির্ধারণ করা হয়। অধিদপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কৃষি বিপণন আইন ২০১৮-এর ৪ (ঝ) ধারার ক্ষমতাবলে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর কৃষিপণ্যের যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি মুগডালের দর বেঁধে দিয়েছে ১৬৫.৪১ টাকা, অথচ বাজারে মুগডাল বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা, মাসকালাইর দর বেঁধে দিয়েছে ১৬৬.৫০ টাকা, বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা। ছোলার বেঁধে দেয়া দর ৯৮.৩০ টাকা; বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা, ভালোমানের মসুরডালের বেঁধে দেয়া দর ১৩০.৫০ টাকা; বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা, মোটা মসুর ডালের বেঁধে দেয়া দর ১০৫.৫০ টাকা; বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা, খেসারি ডালের বেঁধে দেয়া দর ৯২.৬১ টাকা; বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা। মাছ-মাংসের মধ্যে পাংগাস মাছের বেঁধে দেয়া দর ১৮০.৮৭ টাকা; বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকা, কাতল মাছের বেঁধে দেয়া দর ৩৫৩.৫৯ টাকা; বাজারে আকারভেদে বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৪৩০ টাকা, গরুর মাংসের বেঁধে দেয়া দর ৬৬৪.৩৯ টাকা; বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকা, ছাগলের মাংসের বেঁধে দেয়া দর ১০০৩.৫৬ টাকা; বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১০০০ থেকে ১০৫০ টাকা, ব্রয়লার মুরগির বেঁধে দেয়া দর ১৭৫.৩০ টাকা; বাজারে বিক্রি হচ্ছে২০০ টাকা, সোনালী মুরগির বেঁধে দেয়া দর ২৬২ টাকা; বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২৮০থেকে ২৮৫ টাকা এবং ডিমের (প্রতি পিস) বেঁধে দেয়া দর ১০.৪৯ টাকা, বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকায়।
বেঁধে দেয়া দরে নিত্যপণ্য বিক্রি না করা প্রসঙ্গে ব্যবসায়ীরা সেই পুরনো অজুহাতই দিচ্ছেন। বলছেন, পাইকারি বাজারেও বেঁধে দেয়া দর কার্যকর নয়। বেশি দামে তাদের পণ্য কিনতে হচ্ছে।
তাই খুচরায় যে দর বেঁধে দেয়া হয়েছে সেই দরে বিক্রি করলে ব্যবসায় ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে তাদের।
নওগাঁ পৌর মুরগী বাজারের কুদ্দুস বলেন, ব্রয়লারের দাম ১৭৫ টাকা বেঁধে দিয়েছে শুনেছি। কিন্তু আমাদের তো কিনতেই হয় ১৮০ টাকা কেজিতে। তাহলে কীভাবে আমরা ১৭৫ টাকা বিক্রি করবো। ১৮০ টাকা দিয়ে কেনার পর আমাদের আরও খরচ যোগ হয়। ২০০ টাকা বিক্রি না করলে লাভ থাকবে না।
বড় বাজার আলতাফ স্টোরের আলতাফ হোসেন বলেন, আমরা কখনই বেশি দামে বিক্রি করি না। পাইকারি বাজারে যে অনুযায়ী কিনি সেই অনুযায়ী সীমিত লাভ করে বিক্রি করি। মূল্য যদি কার্যকর করতে হয় তাহলে আগে পাইকারি বাজারে করতে হবে।
এ ছাড়া মসলা, সবজি ও অন্যান্য কৃষিপণ্যের মধ্যে প্রতি কেজি দেশি পিয়াজের বেঁধে দেয়া দর ৬৫.৪০ টাকা; বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা, দেশি রসুনের বেঁধে দেয়া দর ১২০.৮১ টাকা; বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা, আমদানিকৃত আদার বেঁধে দেয়া দর ১৮০.২০ টাকা; বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২১০ থেকে ২২০ টাকা, শুকনো মরিচের বেঁধে দেয়া দর ৩২৭.৩৪ টাকা; বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৪১০ থেকে ৪৫০ টাকা, কাঁচা মরিচের বেঁধে দেয়া দর ৬০.২০ টাকা; বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের বেঁধে দেয়া দরে বাঁধাকপি, ফুলকপি ও মিষ্টিকুমড়া কেজি দরে যথাক্রমে ২৮.৩০ টাকা, ৩০ টাকা ও ৪০ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও বাজারে কেজি দরে এসব বিক্রি করতে দেখা যায়নি। পিস হিসেবে বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা, ফুলকপি ৫০ থেকে ৬০ টাকা ও মিষ্টিকুমড়া কেটে ছোট ছোট পিস হিসেবে বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা। আর বেগুন প্রতি কেজি বেঁধে দেয়া দর ৪৯.৭৫ টাকা; বাজারে বিক্রি হচ্ছে, ৬০ টাকা, শিমের বেঁধে দেয়া দর ৪৮ টাকা; বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা, আলুর বেঁধে দেয়া দর ২৮.৫৫ টাকা; বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা, টমেটোর বেঁধে দেয়া দর ৪০.২০ টাকা; বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা।
সবজি বিক্রেতা খোরশেদ আলম ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণ করে বড় ব্যবসায়ীরা। তারা আড়তে যে দামে পণ্য ছাড়ে আমরা সেই দরে কিনি। তাদের সঙ্গে দর কষাকষি করার সুযোগই নাই। আমাদের এখানে দর যাচাই করে লাভ নাই।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের প্রতি কেজি চিড়ার বেঁধে দেয়া দর ৬০ টাকা; বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা, সাগর কলার হালি ২৯.৭৮ টাকা; বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকা, বেসনের বেঁধে দেয়া দর ১২১.৩০ টাকা; ভালোটা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা, জাহিদি খেজুরের বেঁধে দেয়া দর ১৮৫.০৭ টাকা; বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকার বেশি।