কুড়িগ্রামে সংক্রান্তি এলে উরুন-গাইনের চাহিদা বাড়ে
কুড়িগ্রামে সংক্রান্তি ঘিরে বাঙালি হিন্দু পরিবারগুলোতে এক সপ্তাহ ধরে চলছে পিঠা উৎসব। এ সময় পিঠা তৈরির মূল উপাদান চাল গুড়া করতে বাঙালি সংস্কৃতির প্রায় হারিয়ে যেতে বসা ঐতিহ্যের অংশ উরুন-গাইনের কদর বাড়ে। যা মনে করে দেয় হারিয়ে যাওয়া অতীত।
পঞ্জিকা মতে গতকাল ছিল বাংলা মাস পৌষের শেষ দিন। এটি মকর সংক্রান্তি নামে পরিচিত। নানা আয়োজনে বাংলা হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ এ সংক্রান্তি উৎসব পালন করে। সাজ সাজ রব পড়ে প্রত্যেক বাড়িতে।
সকাল সকাল বিছানা ছেড়ে কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে গৃহিণীরা। বাড়ি-ঘর-দুয়ার ধুয়ে মুছে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করে উরুন-গাইনে চাল গুড়া করে। এর কিছু গুলিয়ে উঠোন-বাড়ি-ঘর-দুয়ার চিত্রিত করা হয়। তারপর ফুল দিয়ে খুঁটি সাজিয়ে পূজায় বসে। বসে গ্রামীণ গল্প- কেচ্ছার আসর। দিনের দ্বিতীয়ার্ধে শুরু হয় পিঠা-পুলি তৈরি। যা দিয়ে আপ্যায়িত হয় আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব। পিঠা তৈরির এ কার্যক্রম চলে সংক্রান্তির পরেও ২-৩ দিন। এরপর পরের বছরের জন্য স্বযত্নে তুলে রাখা হয় উরুন-গাইন।
আগে প্রতি গ্রামের প্রত্যেক বাড়িতে এটি পাওয়া যেত। এখন একেকটি গ্রামে এক-দুইটি পাওয়া যায়। বিশেষ প্রয়োজন বা সংক্রান্তি এলে কাড়াকাড়ি পড়ে।
নাগেশ্বরী উপজেলার সুখাতী উচ্চ বিদ্যানিকেতনের সহকারী শিক্ষিকা বিপ্লবী রানী বলেন, ‘আমাদের গ্রাম পৌরসভার পুর্ব সুখাতী সেনপাড়া গ্রামে আমি বিয়ের পরেও দেখেছি অনেক বাড়িতে উরুন-গাইন ছিল। এখন সবমিলিয়ে তা ২-৩ টি বাড়িতে আছে। আমরা রেখেছি। শুধু সংক্রান্তিতে চাল গুড়া নয়, অনেক কাজে লাগে।’
এ প্রসঙ্গে ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুল হানিফ সরকার জানান, আধুনিকতার ছোঁয়ায় মানুষের দৈনন্দিন কার্য সম্পাদনে অনেক যন্ত্রপাতির আবিষ্কারে বাঙালি ঐতিহ্যের উরুন-গাইনসহ অনেককিছু হারিয়ে গেছে। তবে এর আবেদন ফুরিয়ে যায়নি। এখনও কিছু বাড়িতে দেখেছি উরুন-গাইন। বিশেষ করে হিন্দু পল্লীতে অনেক বাড়িতে এখনেও উরুন-গাইনের প্রচলন আছে। একই অভিমত ব্যাক্ত করেন অনেকেই। শুধু গ্রামীণ বাংলার ঐতিহ্য নয় প্রয়োজনেই প্রতি বাড়িতে উরুন-গাইন রাখা দরকার।
এসিআর/এএন