কুষ্টিয়ায় শহরব্যাপী হঠাৎ রহস্যজনক ছাই!
কুষ্টিয়ায় শহরব্যাপী হঠাৎ রহস্যজনক ছাইয়ের প্রভাব দেখা দিয়েছে৷ গত দুইদিন ধরে শহরের বিভিন্ন এলাকায় আকাশ থেকে ছাই পড়েছে। বিভিন্ন বাড়ির ছাদে ও বারান্দায় ছাই পড়তে দেখা গেছে।
শুক্রবার (৭ জানুয়ারি) সন্ধ্যার আগে এবং শনিবার (৮ জানুয়ারি) দুপুরে এই ছাই আকাশ থেকে পড়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। তবে কোথা থেকে এই ছাই এসেছে তা এখনও জানা যায়নি।
কুষ্টিয়া শহরের হাউজিং এলাকায় বসবাসকারী মধুরিমা খন্দকার জানান, শুক্রবার (০৭ জানুয়ারি) বেলা ২-৩ টার দিকে তার বাসার ছাদে তিনি ছাই দেখতে পান। তবে এই ছাই কোথা থেকে এসেছে তা তিনি বলতে পারেননি।
থানাপাড়া এলাকার বাসিন্দা মাকসুদা শাপলা জানান, শনিবার (৮ জানুয়ারি) তার বাড়ির ছাদ এবং বারান্দা ছাইয়ে ভর্তি হয়ে গিয়েছিলো। পরে তিনি তা ঝাড়ু দিয়ে পরিস্কার করে ফেলেছেন।
কুষ্টিয়া শহরে বসবাসকারী সোহেল রানা ইমরান বলেন, 'আসরের পূর্ব মুহূর্তে এক অটো রিকশাচালক শহরের এনএস রোডে আমার বাড়ির সামনে সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এলাকা থেকে বড় মসজিদ পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে ও তার অটোরিক্সার কাঁচের ওপর আমাকে ছাই দেখিয়েছে। কোথা থেকে এলো জানতে চাইলে অটো রিকশাচালক বলেন, সে জানে না। এরপর আমি রহস্য করে বললাম তাহলে ছাই বৃষ্টি হয়েছে। এরপর আমি মসজিদে ঢুকে গেলাম। এখন দেখছি বিষয়টা সত্যি।'
মুনভি বিশ্বাস নামের একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘শনিবার আসরের সময় আমার বাসার ছাদে এবং বারান্দায় ছাই পড়েছিল। ভাবলাম হয়তো আশেপাশে কেউ আগুন জ্বালিয়েছে তাই হয়তো ছাই উড়ে আসছে।’
সাবিত বিন তায়েব নামের একজন মন্তব্য করেন, ইটভাটার ছাই হতে পারে৷
আব্দুর রশীদ বকুল নামের অপর একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ঘটনাটি শতভাগ সঠিক। আমার বাড়ির ছাদে ছাই উড়ে আসা দেখেছি। তবে কোনো উৎসের খোঁজ পায়নি।
মোহাম্মদ গোলাম কায়েস নামের একজন জানান, পদ্মার চর থেকে উড়ে আসতে পারে। হয়ত আগুন পোহানোর জন্য কাঁশবন কেটে আগুন ধরিয়েছিল।
এদিকে শহরে হঠাৎ এমন ছাই দেখতে পেয়ে জনসাধারণের মাঝে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। পড়ন্ত বিকেলে বিক্ষিপ্ত এই ছাই পড়াকে কেন্দ্র করে আতঙ্ক দেখা দেয় জনসাধারণের মধ্যে। এত ছাই কোথা থেকে এলো তা রীতিমত ভাবাচ্ছে এলাকাবাসীকে।
বাড়ির ছাদ, রাস্তা ও বারান্দার এই ছাই ঘিরে শহরবাসীর মাঝে কৌতুহল তুঙ্গে উঠেছে। সোস্যাল মিডিয়াতেও ছড়িয়ে গেছে সেই সমস্ত ছবি। মনে করা হচ্ছে এই ছাই শুধু শহরেই নয়, ছড়িয়ে পড়েছে বিস্তীর্ণ এলাকায়। যদিও আসল কারণ সম্পর্কে এখনও জানা যায়নি।
সাধারণত বড় কোনো জঙ্গল বা চাষের জমিতে আগুন লাগলেই এমনটি হওয়ার কথা। কিন্তু কুষ্টিয়া শহরের আশেপাশে কোনো জঙ্গল বা চাষের জমিতে আগুন লাগার মতো কোনো খবর পাওয়া যায়নি৷
এই বিষয়ে কুষ্টিয়া ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স দপ্তরের সহকারী পরিচালক মনোরঞ্জন সরকার জানান, শনিবার কুষ্টিয়া শহরের আশেপাশে কোথাও কোনো আগুন লাগার ঘটনা ঘটেনি। তবে ছাই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমার জানামতে সুগারমিল যে এলাকায় থাকে সেই সমস্ত এলাকায় এই ছাই পড়ে।’
কুষ্টিয়া চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আখলাছুর রহমান জানান, কুষ্টিয়া সুগারমিল এখনও চালু করা হয় নাই, বন্ধ আছে। অন্যদিকে কুষ্টিয়ার খাজানগরে প্রায় ৩৫০ হাসকিং মিলে ঝুঁকিপূর্ণ ও অনিরাপদ ড্রাম পদ্ধতির বয়লারে প্রতিদিন হাজার হাজার টন ধান সিদ্ধ করা হচ্ছে। খাজানগরের এসব হাসকিং মিলের প্রতিটিতে রয়েছে কমপক্ষে ১০০ মণ ধান ধারণক্ষমতা সম্পন্ন ৫/৭টি ধানের চাতাল। চাল উৎপাদনের জন্য সেদ্ধ ধানের যোগানে বয়লার অত্যাবশ্যকীয় যন্ত্র হিসেবে হাসকিং মিলগুলোতে ব্যবহৃত হচ্ছে।
এছাড়া কুষ্টিয়ায় ৫৫টি অটো রাইস মিল আছে। এই সমস্ত অটো রাইস মিল এবং হাসকিং মিল থেকেও পর্যাপ্ত পরিমাণ ছাই নির্গত হয় । বিশেষ করে অটো চালকলের বয়লার ক্রটিযুক্ত স্থাপনের কারণে অনেক বেশি পরিমাণ ছাই নির্গত হয়। এ বিষয়ে একাধিক অটো এবং হাসকিং চাল কল মালিকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অটো বা হাসকিং চাল কলের ছাই কুষ্টিয়া শহর পর্যন্ত যাওয়া অসম্ভব।
খুলনা উপ-প্রধান বয়লার পরিদর্শকের কার্যালয়ের উপ-প্রধান বয়লার পরিদর্শক প্রকৌ. মো. রোকনুজ্জামান বলেন, ‘আমরা বয়লারের নিরাপদ এবং মানসম্মত চালনা দেখভাল করি। মিল মালিকেরা চিমনিতে যদি এটাচমেন্ট ব্যবহার করেন তাহলে ছাই কম পরিমাণ নির্গত হয়।’
ছাই প্রসঙ্গে পরিবেশ অধিদপ্তর, কুষ্টিয়ার উপ-পরিচালক মোহাম্মদ আতাউর রহমান বলেন, ‘এই ধরনের কোনো খবর আমি পাইনি।’ চালকলের ছাই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী আমরা নিজস্ব ছাই রাখার জায়গা ছাড়া ছাড়পত্র দিই না। কিভাবে উড়লো, কোথায় উড়লো সেটা তো আমাদের জানতে হবে আগে।'
এসএ/এএন