এমপি আনার হত্যাকাণ্ড, জড়িত শিলাস্তির মিলেছে অজানা পরিচয়
ছবি: সংগৃহীত
ভারতের কলকাতায় ঝিনাইদহ-৪ (কালীগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারকে নৃশংসভাবে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দেশ ও দেশের বাইরে বইছে নানা আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় একের পর এক নানা অজানা তথ্য বের হয়ে আসছে। ইতোমধ্যে হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত বেশ কয়েকজন আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে গ্রেফতারকৃত একজনের নাম শিলাস্তি রহমান।
তিনি টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার ধবুরিয়া ইউনিয়নের পাইসানা গ্রামের আরিফুর রহমানের মেয়ে। ইতোমধ্যে তাকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। শিলাস্তিরা দুই বোন। তারমধ্যে শিলাস্তি বড় ও তার ছোট বোনের নাম সুবাহ। তাদের কোন ভাই নেই। শিলাস্তির বাবা আরিফুর রহমান একজন জুট ব্যবসায়ী।
শিলাস্তির বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, শিলাস্তিদের টিনের ঘরে তালা ঝুলছে। টিনের ঘরের পাশেই নির্মাণ করা হয়েছে দো-তলা একটি বাড়ি। তবে বাড়ির ভেতরে নেই কোন আসবাবপত্র। দীর্ঘদিন ধরে বাড়িতে কেউ না থাকায় আর্বজনা পড়ে রয়েছে ঘরে ও বাইরে।
তবে এলাকার কেউ তাকে চেনেন না। এসময় পাশের ঘর থেকে বেড়িয়ে আসেন শিলাস্তির চাচাতো দাদা সেলিম মিয়া।
শিলাস্তির পরিচয় ও তার বিষয়ে জানতে চাইলে চাচাতো দাদা বীর মুক্তিযোদ্ধা সেলিম মিয়া জানান, শিলাস্তির চাচাতো দাদা বীরমুক্তিযোদ্বা সেলিম মিয়া। এই সেলিম মিয়া শিলাস্তির বাবা আরিফুর রহমানের বাবার ছোট ভাই। শিলাস্তি রহমানের গ্রামের বাড়িতে সরজমিনে গিয়ে এই তথ্য পাওয়া যায়।
সেলিম মিয়া জানান, শিলাস্তিরা ছোট বেলা থেকেই ঢাকার উত্তরায় বসবাস করে আসছে। ওরা মাঝে মধ্যে গ্রামের বাড়িতে আসলেও দু’একদিন থেকে আবার চলে যেত। কারো সাথেই তেমন কোন কথাবার্তা হতো না।
তিনি বলেন, শিলাস্তির চলাফেরা উচ্ছৃঙ্খল এবং বাড়ির বাইরে দিনের পর দিন সময় কাটানোর কারণে তাদের সঙ্গে কথা বলা বাদ দিয়েছি আমি ও আমার পরিবারের লোকজন। মাঝে এলেও শিলাস্তির যে ড্রেসআপ তা দেখে মনে হত কোটিপতি। এসে বাড়িতে বসেই সবার সামনে সিগারেটও খায়তো। আমি বাঁধা দিলে শুনতো না। পরে বাঁধা দেওয়া বাদ দিয়েছি।
সেলিম মিয়া আরও বলেন, এমপি আনার হত্যার ঘটনাটি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর জানতে পারি শিলাস্তি ওই ঘটনায় জড়িত। এনিয়ে আমরাও বিব্রত অবস্থায় আছি। আমার নাতি শিলাস্তি অপরাধ করলে আমরাও তার বিচার চাই এবং সে অপরাধী হলে তার সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করছি।
স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, শিলাস্তি ও তার পরিবার ঢাকায় বসবাস শুরু করে দীর্ঘদিন যাবৎ। তারা কেউ এখানে আসে না। শিলাস্তি রহমানের দাদার সম্পত্তি তার বাবা আরিফুর রহমান বিক্রি করে ঢাকায় চলে যায়।
নাগরপুর ধুবরিয়া ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান খান বলেন, তারা অনেক আগে থেকেই ঢাকায় থাকে। সঠিক কেউ বলতেও পারে না যে শিলাস্তি কোথাকার। এখন আমরা জানতে পারলাম যে তার বাড়ি নাগরপুরে। গতকাল পর্যন্তও জানতাম না।
নাগরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি জসিম উদ্দিন বলেন, আমি এখনো কোন তথ্য পায়নি তার বিষয়ে। জানলে জানাতে পারবো।
গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য চুয়াডাঙ্গার দর্শনার গেদে সীমান্ত দিয়ে ভারতে যান ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম। তিনি পশ্চিমবঙ্গে বরাহনগর থানার মণ্ডলপাড়া লেনে গোপাল বিশ্বাস নামে এক বন্ধুর বাড়িতে ওঠেন। পরদিন ডাক্তার দেখানোর কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন। এরপর থেকেই রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হন সে।
এরপর বাড়ি থেকে বের হওয়ার পাঁচদিন পর গত ১৮ মে বরাহনগর থানায় আনোয়ারুল আজিমের নিখোঁজের বিষয়ে একটি জিডি করেন বন্ধু গোপাল বিশ্বাস। এরপর হঠাৎ গত ২২ মে খবর ছড়ায় কলকাতার পার্শ্ববর্তী নিউটাউন এলাকায় একটি আবাসিক ভবনে আনার খুন হয়েছেন। ঘরের ভেতর পাওয়া গেছে রক্তের ছাপ। তবে সেখানে তার মরদেহ মেলেনি।
এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে বাংলাদেশ পুলিশ শিমুল ভূইয়া, তানভীর ভূইয়া ও শিলাস্তি রহমানকে গ্রেফতার করে। গত শুক্রবার ২৪ মে তাদের ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। গণমাধ্যম সূত্রে গ্রেফতারকৃত এই শিলাস্তিকে দিয়েই এমপি আনারকে ভারতের কলকাতা নেওয়ার ফাঁদ পাততে পারেন খুনের মাস্টারমাইন্ড আক্তারুজ্জামান শাহীন। এছাড়া এই শাহীনের খপ্পরে পড়ে শিলাস্তি চলে যান অন্ধকার জগতে।মার্কিন পাসপোর্টধারী শাহীন দেশে এলেই ঘুরে বেড়াতেন তার সঙ্গে।