রংপুরে শীতে আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে ৫৫ জন
ছবি সংগৃহীত
রংপুরে অতিরিক্ত ঠান্ডায় আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ হয়েছেন নিম্ন আয়ের অর্ধশতাধিক মানুষ। অনেকই এখন চিকিৎসা নিচ্ছেন রংপুর মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে। এদিকে আরও কয়েকদিন শীতের তিব্রতা বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
রংপুর নগরীর বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, গরম কাপড়ের অভাবে জবুথবু অবস্থা ছিন্নমূল মানুষের। একটু উষ্ণতার জন্য আগুনের কুন্ডলিই ভরসা নগরের বস্তিগুলোতে বসবাস করা হাজারো মানুষের। তাই খড়কুটো, প্লাস্টিকের স্যান্ডল বা পলিথিন কুড়িয়ে আগুন জ্বালিয়ে অনেকেই বসেছেন একটু উত্তাপের আশায়।
এদিকে চলতি বছরের শুরু থেকে আগুনে দগ্ধ হয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন প্রায় ৮০ জন মানুষ। যাদের মধ্যে ৫৫ জনই খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন। চিকিৎসকেরা বলছেন, অসাবধানতার কারণে দুর্ঘটনাগুলো ঘটছে। তারা সাধ্যমতো দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেয়ার চেষ্টা করছেন। পাশাপাশি রোগীদের আগুনের ব্যাপারে সচেতন করছেন।
আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি কয়েকজন রোগী ও স্বজনরা জানান, শীত থেকে বাঁচার জন্য আগুন পোহাতে ও গরম পানি ব্যবহার করতে গিয়ে দগ্ধ হন। আক্রান্ত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু।
হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি রংপুর নগরের মুন্সিপাড়া এলাকার আলেয়া বেগম। তিনি ১০ নম্বর শয্যায় চিকিৎসাধীন। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, আলেয়ার শরীরের নিচের অংশে প্রায় ৪৫ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে।
আলেয়ার স্বজনরা জানান, খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুন পোহানোর সময় হঠাৎ শরীরের পিছন থেকে শাড়িতে আগুন ধরে যায়। হাসপাতালের ১২ নম্বর শয্যায় যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন কুড়িগ্রামের আঞ্জুমান আরা।
বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের রেজিস্ট্রার ডা. শাহ মো. আল মুকিত বলেন, এখানে চিকিৎসাধীন রোগীর দুই তৃতীয়াংশই শীতে আগুন পোহাতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন। বর্তমানে হাসপাতালের বার্ন ইউনিটসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে।
চিকিৎসক ফারুক আলম জানান, গত কয়েকদিনে আগুনে পুড়ে ৫০ জনেরও বেশি মানুষ হাসপাতালে আসছেন। যাদের মধ্যে দু-তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এদের কারও কারও শরীরের ১০-৪০ শতাংশ আবার কারও ৪০-৬০ শতাংশ পুড়ে গেছে। তবে বেশির ভাগ দগ্ধ রোগী নিজেদের অসাবধানতাবশত দুর্ঘটনার শিকার হন। তাদের সাধ্য মতো চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে।
রংপুর সিভিল সার্জন ডা. মো. ওয়াজেদ আলী জানান, রংপুর অঞ্চলে শীত এলেই প্রতিবছর অগ্নিদগ্ধের ঘটনা বেড়ে যায়, রোগীর চাপ বাড়ে। বর্তমানে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। এসময়টায় শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও বাড়ে।বয়স্ক ও শিশুদের প্রতি বাড়তি যত্ন নিতে হবে। একইসাথে আগুন পোহাতে গিয়ে সাবধান থাকতে হবে।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গত ৫ দিন ধরে এই অঞ্চলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ করছে ৯ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। তাপমাত্রা আরও কমবে বলে আশঙ্কা স্থানীয় আবহাওয়া অফিসের।
রংপুর আবহাওয়া অফিস ইনচার্জ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, গত কয়েকদিন ধরে উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ধেয়ে আসা হিমেল বাতাসের কারণে এই অঞ্চলে শীত বেশি অনুভূত হচ্ছে। তাছাড়া কুয়াশার কারণে সূর্যের তাপ ভূপৃষ্ঠে না পৌঁছায় শীতের তীব্রতা বেড়েছে। আগামী এক সপ্তাহ এ আবহাওয়া বিরাজ করবে বলেও কানান তিনি। সরকারিভাবে রংপুরের আট উপজেলায় দরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ চলমান রেখেছে জেলা প্রশাসন।
রংপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান জানান, হিমালয়ের কাছাকাছি হওয়ায় যেহেতু রংপুরে ঠান্ডা বেশি অনুভূত হয়। তাই শীত নিবারণে আগে থেকেই প্রস্তুত আছে জেলা প্রশাসন। দুই ধাপে প্রায় ৫৮ হাজার মানুষকে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। এখনও কম্বল বিতরণ চলমান রয়েছে।