শৈলকুপায় নির্বাচনী সহিংসতায় দুইজন নিহত
কল্লোল খোন্দকার এবং আব্দুর রহিম। ছবি: ঢাকাপ্রকাশ
ঝিনাইদহের শৈলকুপায় আওয়ামী লীগ নেতাদের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে নির্বাচনী সহিংসতায় শনিবার দুই জন খুন হয়েছেন। পৌর এলাকায় মহিদুল নামে এক পৌর কর্মচারীকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয়েছে। টান টান উত্তেজনা ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ দুই রাউন্ড সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছে।
শনিবার পৃথক দুই ঘটনায় নিহতরা হলেন, শৈলকুপার সারুটিয়া ইউনিয়নরে কৃষ্ণনগর গ্রামের আব্দুর রহিম ও একই উপজেলার বড়বাড়ি বগুড়া গ্রামের কল্লোল খোন্দকার। এই নিয়ে নির্বাচনী সহিংসতা ও দলীয় কোন্দলে শৈলকুপায় ৬ জন খুন হলেন।
নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা নিয়ে একের পর এক হত্যাকাণ্ড, ভাংচুর লুটপাট ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতিতে উদ্বিগ্ন হয়ে আছেন সেখানকার মানুষ। কোনোভাবেই এই নৃশংসতা রোধ করা যাচ্ছে না। প্রতিদিন কোনো না কোনো গ্রামে সামাজিক আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বড়বাড়ি বগুড়া গ্রামের আকবর খোন্দকারের ছেলে কল্লোল খোন্দকার শনিবার দুপুরে মাঠে পেয়াজ রোপন করতে যান। এ সময় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত চেয়ারম্যান যুবলীগ নেতা শফিকুল ইসলাম শিমুলের সমর্থকরা তার ওপর হামলা চালায়। হামলায় গুরুতর আহত হন আরও দুইজন। প্রায় দুই কিলোমিটার দাবড়িয়ে কল্লোল খোন্দকারকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
নিহত কল্লোল বগুড়া ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নজরুল ইসলামের সমর্থক ছিলেন বলে পুলিশ জানায়।
খুনের ঘটনায় নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম শিমুল বলেন, ‘বগুড়া মাঠে যে ব্যক্তিরা কল্লোলকে খুন করেছে তারা বগুড়া ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ নেতা মুকাব্বির হোসেন মুকার কর্মী ও স্থানীয়ভাবে তার গ্রুপের মাতুব্বর।’ এ ঘটনায় তার কোনো সমর্থক জড়িত নয় বলে তিনি দাবি করেন।
শৈলকুপার সারুটিয়া ইউনিয়নের কৃষ্ণনগর গ্রামের আব্দুর রহিম চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। গত ২৩ ডিসেম্বর নৌকার বিদ্রোহী টিপুর সমর্থকরা কুপিয়ে তাকে জখম করে। মুমূর্ষু অবস্থায় রহিমকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে ১৬ দিন পর শনিবার সকালে তার মৃত্যু ঘটে।
পুলিশ জানায় ঘটনার দিন আব্দুর রহিম বাড়ি ফিরছিলেন। এ সময় কাতলাগাড়ি বাজারের নিকটবর্তী কৃষ্ণনগর গ্রামের আনোয়ার মেম্বরের বাড়ির কাছে পৌঁছালে তাকে কুপিয়ে জখম করে।
শনিবার সন্ধার দিকে শৈলকুপার চর আউশিয়া গ্রামে আওয়ামী লীগের মেয়র আজম ও ইকু শিকদার গ্রুপের বিবাদের জের ধরে পৌরসভার কর্মচারী মহিদুল ইসলাম মহিত নামে এক যুবককে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। তিনি চর আউশিয়া গ্রামের শরাফ উদ্দীন ওরফে সরোয়ারের ছেলে।
পুলিশ জানায় গত ১৭ ডিসেম্বর শৈলকুপা শহরে আওয়ামী লীগের মেয়র গ্রুপের হামলায় কবিরপুর গ্রামের আহত স্বপন শেখ ৩১ ডিসেম্বর মারা যান। এ ঘটনার জের ধরে শনিবার মহিদুলকে ইকু শিকদার গ্রুপের সমর্থকরা কুপিয়ে জখম করে।
শৈলকুপা থানার সেকেন্ড অফিসার আমিরুজ্জামান আমির জানান, আওয়ামী লীগের একটি গ্রুপ পৌরসভায় হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও একটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় এক কর্মচারীকে পেয়ে কুপিয়ে জখম করে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দুই রাউন্ড সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে বলে সেকেন্ড অফিসার স্বীকার করেন।
শৈলকুপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘উপজেলার বগুড়া মাঠে পেঁয়াজ ক্ষেতে কল্লোল খোন্দকার নামে একজনকে কুপিয়ে আহত করে প্রতিপক্ষরা। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন। এ বিষয়ে থানায় মামলা না হলেও পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু করেছে।’
উল্লেখ্য নির্বাচনী সহিংসতা ও আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দলে স্বপন শেখ, কল্লোল খোন্দকার, হারান মন্ডল, জসিম উদ্দীন, অখিল কুমার সরকার ও আব্দুর রহিমসহ ৬জন খুন হলেন।
/এএন