পদ্মা সেতু থিম দিয়ে সাজানো মঠবাড়ীয়ার পূজা মণ্ডপ
পূজার বাদ্য বাজল বলে। মন্দিরগুলোতে শেষ মুহূর্তের টুকটাক কাজ চলছে। এই পূজাকে ঘিয়ে মানুষের মধ্যে থাকে নানান কৌতুহল। সেই কৌতুহলের জায়গা থেকে এবার বরিশালসহ দক্ষিাণাঞ্চলের মানুষ ভিন্ন আঙ্গিকের থিমে পূজা দেখতে পারবে। বরিশালের মঠবাড়ীয়ার রাজবাড়ীর দুর্গাপূজায় প্রতীকী ‘পদ্মা সেতু’ থিম দিয়ে সাজানো হয়েছে মন্দির প্রাঙ্গণ।
অন্যদিকে বঙ্গবন্ধুর মুরালও তৈরি করা হয়েছে। সেতুটির উপরে রয়েছে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযোদ্ধা কর্নারসহ বঙ্গবন্ধু ও তার কন্যা শেখ হাসিনাকে নিয়ে নানান আয়োজন। তবে এই পূজার উদ্যোক্তারা শুধু সাজসজ্জায় থেমে নেই কেবল! একই সঙ্গে একাধিক সামাজিক কাজকর্ম করবেন তারা। পূজায় অংশ নেওয়া দর্শনার্থী মায়েদের জন্য ব্রেস্ট ফিডিং কর্নারের মাধ্যমে প্রতিদিন সেনিটারি প্যাড বিতরণ করা হবে। এ ছাড়া দুঃস্থ, অস্বচ্ছল মেধাবীদের শিক্ষার্থীদের সহায়তার পাশাপাশি সমাজসেবামূলক বিভিন্ন কাজকর্ম চোখে পড়বে বলে জানা গেছে। এসব আয়োজন ঘিরে এরই মধ্যে স্থানীয় ও দূর-দূরান্তের মানুষের মধ্যে কৌতুহল সৃষ্টি হয়েছে।
প্রতি বছর মন্দিরটিতে সাড়ে ৩০০ প্রতিমা করা হলেও এবার প্রতিমা কমিয়ে ২৫০টি প্রতিমা নির্মাণ করা হয়েছে। অন্যদিকে থিম আইটেম বাড়ানো হয়েছে। এখানকার উদ্যোক্তারা দাবি করেছেন দক্ষিণবঙ্গের মধ্যে সব থেকে বড় দুর্গা পূজা এ বছর তারাই আয়োজন করতে যাচ্ছে। এবার দুর্গা পূজার প্রতিপাদ্য করা হয়েছে “আমার জীবন-আমার অধিকার, বাল্যবিয়ে রুখব এবার”। প্রতি বছরই নারী সমাজকে প্রাধান্য দিয়ে গড়ে তোলা হয় প্রতিমাগুলো।
বরিশালের পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার গুলিসাখালী ইউনিয়নের কবুতরখালী গ্রামের ‘রাজ মন্দিরে’ এ আয়োজন করেছেন শেবাচিমের সাবেক অর্থপেডিক্স বিশেষজ্ঞ ও বর্তমান বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের কনসালট্যান্ট ডা. সুদীপ কুমার হালদার এবং শেবাচিমের গাইনি বিশেষজ্ঞ ও সার্জন ডা. স্নিগ্ধা চক্রবর্তী। তাদের সঙ্গে আছেন একঝাঁক তরুণ-তরুণী, যারা এই আয়োজনকে সফল করতে দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, মন্দিরের প্রবেশ পথে লেখা রয়েছে ‘রাজ মন্দির’। এবার পাঁচটি গেট করা হয়েছে। এই রাজমন্দিরের বিশাল আঙিনা জুড়ে তৈরি করা হয়েছে দুর্গোৎসবের প্যান্ডেল। তাতে সারিবদ্ধভাবে নির্মাণ করা হয়েছে ২৫১ দেব-দেবীর প্রতিমা। এর মাধ্যমে চার হাজার বছরের পুরোনো পৌরাণিক কাহিনীকে তুলে ধরা হয়েছে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে সঠিক পথে অগ্রসরের তাগিদ দিতে দেশের গুণীজনদের ছবি ও বিভিন্ন উপদেশমূলক বাণী গ্রাম জুড়ে গাছের সঙ্গে টানানো হয়েছে। তাই প্রতি বছর এই উৎসবকে ঘিরে কবুতরখালীর হালদার বাড়িটি পর্যটন এলাকায় পরিণত হয়।
মোড়লগঞ্চের পূজা দেখেই নিজ বাড়িতে দুর্গা পূজা করার উৎসাহ পান সুদীপ-স্নিগ্ধা দম্পতি। এর পর ২০১৬ সালে ৪০ প্রতিমা নিয়ে শুরু করেন পূজা। এ বিষয়ে ডা. সুদীপ হালদার ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘সাতক্ষীরার মৃৎশিল্পীর হাত দিয়েই ৪০ প্রতিমা নিয়ে পূজা শুরু। ৩৩৩টি প্রতিমা পর্যন্ত নির্মাণ করা হয়েছে। তবে এ বছর দেশের প্রেক্ষাপট ভালো না থাকায় প্রতিমার সংখ্যা কমিয়েছি। লক্ষ-লক্ষ মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয় এই উৎসব অঙ্গন। যার হিসাব রাখা বড় কঠিন। দুর্গা পূজাকে সব ধর্মের মিলনক্ষেত্র এবং সমাজের ইতিবাচক বিষয় তুলে ধরার চেষ্টা করছি। সেভাবেই মন্দির প্রাঙ্গন সাজানো হয়েছে। এবছর ২৫১ প্রতিমা এবং ৪০টি মন্দির এখানে নির্মাণ করা হয়েছে। এই প্রতিমাগুলো সনাতন ধর্মের ইতিহাস বলবে। এর মাধ্যমে মানুষ ও যুব সমাজকে সচেতন করার ইচ্ছা। আগামী ১ অক্টোবর পূজার কার্যক্রম শুরু হবে। তবে মন্দিরে নিরাপত্তার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে। তারা এখন থেকেই খোঁজখবর রাখছে। তবে এই আয়োজন উপভোগ করতে ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে সবাইকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তিনি।
চিকিৎসক স্নিগ্ধা চক্রবর্তী জানান, দুর্গা পূজা উপলক্ষে ষষ্ঠী থেকে নবমী পর্যন্ত প্রতিদিন দুপুরে চলে গণভোজ। এই ভোজে অংশ নেয় শতশত মানুষ। পূজা উপলক্ষে ভোজ করিয়ে তিনি ও পরিবারের সদস্যরা আনন্দ পান। তবে এবারের পূজা রাজ মন্দিরের মূল থিম,“আমার জীবন-আমার অধিকার, বাল্যবিয়ে রুখব এবার” এই স্লোগান দিয়ে সমাজের বাল্যবিয়ে বন্ধ হোক এবং মানুষ সচেতন হোক এটাই প্রত্যাশা তার।
বাড়ির চারপাশে চলছে শেষ মুহূর্তের আল্পনার কাজ। প্রতীমার কারিগররা তাদের হাতের নিপুণ ছোঁয়া আর রং-তুলির আঁচড়ে অপরূপ সাজে সাজাচ্ছেন প্রতিমাগুলো। খুলনা চারুকলা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মৃৎশিল্পে প্রশিক্ষণ পাওয়া সাতক্ষীরা জেলার প্রতিমা নির্মাণ শিল্পী শংকর মণ্ডলের হাতে সমস্ত প্রতিমা নির্মাণ করা হয়েছে। তিনি ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘চার-পাঁচ মাসের প্ররিশ্রম শেষে প্রতিমা নির্মাণ কাজ শেষ করেছি। এত বড় আয়োজন আমার জানা মতে বাংলাদেশে আর কোথাও হচ্ছে না। বড় একটি আয়োজনের সঙ্গে থাকতে পারার আনন্দ বলে বোঝানো সম্ভব নয়।’
মঠবাড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরুল ইসলাম বাদল ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘মন্দিরে সার্বিক নিরাপত্তা প্রদানের জন্য নির্ধারিত টহল পুলিশ, আনসার ও স্বেচ্ছাসেবকসহ অনান্য বিভাগের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর রয়েছে। ইতোমধ্যে মন্দিরে সিসি ক্যামেরা স্থাপনসহ পুলিশ পাহারা দেওয়া হচ্ছে। তবে পূজা চলাকালীন সড়কে যাতে যানজট না বাঁধে সেজন্যও ট্রাফিক পুলিশকে জানানো হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এসএন