কেন ইলিশের রাজ্যে ক্রেতাদের হাহাকার
পায়রা-বিষখালী-বলেশ্বর।উপকূলীয় বরগুনা জেলা তথা বাংলাদেশের অন্যতম ইলিশের ভান্ডার। মৌসুমে এই তিন নদী ও মোহনায় প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ে। স্বাভাবিক ভাবেই ক্রেতাদের কাছে নদীর ইলিশের চাহিদা একটু বেশিই। কিন্ত আকাশচুম্বি দামের কারণে বরগুনার বাসিন্দাদের কাছে বরগুনার ইলিশই কিনে খাওয়া দুষ্কর। এ নিয়ে স্থানীয় ক্রেতাদের অভিযোগ, এক শ্রেণির অসাধু মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণেই ইলিশের এত দাম।
দেশের বৃহত্তম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র পাথরঘাটার বিক্রয় ও বিপনন কর্মকর্তা মো. রিপন মিয়া জানান, ১২০০ থেকে ১৪০০ গ্রাম ওজনের প্রতি কেজি ইলিশ সর্বনিম্ম ১ হাজার ৩৭৫ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা, ১ কেজি সাইজের ইলিশ প্রতি কেজি সর্বনিম্ম ১ হাজার ১২৫ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, ৭০০ গ্রাম থেকে ৯০০ গ্রাম পর্যন্ত ওজনের ইলিশ সর্বনিম্ম ১ হাজার ৫০ থেকে ১ হাজার ১৫০ টাকা এবং ৫০০ গ্রাম সাইজের ইলিশের কেজি সর্বনিম্ম ৮০০ থেকে সর্বোচ্চ ৮৭৫ টাকা কেজি পাইকারি বিক্রি হয়। এই দামে ইলিশ আরৎদার ও পাইকাররা কিনে নিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় চালান করে দেন।
পাথরঘাটা বিএফডিসি পাইকার সমিতির সভাপতি মো. সাফায়েত হোসেন মুন্সি বলেন, বিএফডিসি অকশন শেড থেকে ইলিশ কেনার পর আমরা প্রতি দেড় মন (৬০ কেজি) ইলিশের আরতদারি বাবদ ৪০০ টাকা নেই। এরপর চালানের জন্য (দেড়মন ইলিশের জন্য) ককশিড প্রস্তত করতে বরফ, বস্তা ও শ্রমিক খরচ বাবদ ককশিডে পাইকারি ৩০০ টাকার বরফ, শ্রমিক বাবদ ৩৪০ টাকা মোট ৭০০ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়।
এরপর পরিবহনে প্রতিটি ককশিডের জন্য খুলনা পাঠাতে ৩০০ টাকা ও ঢাকার জন্য ৪০০ টাকা খরচ হয়। অর্থাৎ বিএফডিসি থেকে কেনার পর প্রতি দেড়মন ইলিশ চালান করতে প্রায় এক হাজার টাকা খরচা হয়। এরপর খুলনা বা ঢাকার আরতে পৌঁছার পর সেখানের আড়ৎদাররা শতকরা ৩ টাকা কমিশন নিয়ে বাজারে ইলিশ ছাড়েন।
সাফায়েত মুন্সি আরো বলেন, কোনো ক্রেতা চাইলেই বিএফডিসি থেকে সরাসরি মাছ কিনতে পারবেন না। কারণ এখানে ইলিশ আসার পরই চালানের জন্য ইলিশ কিনে নেয় পাইকার আরৎদাররা। কেউ ইলিশ নিতে চাইলে পাইকার ও আড়ৎদারদের কাছ থেকে কিনতে হবে। যদি পাইকার বা আড়ৎদাররা বিক্রি না করতে চান তবে কেউ কিনে নিতে পারবেনা।
তিনি বলেন, কিছু খুচরা পাইকার আড়ৎ থেকে মাছ কিনে নিয়ে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করেন। কিন্ত স্থানীয় পাইকারদের কাছ থেকে আড়ৎদারি কমিশন ও চালানের খরচা হিশাব করে দাম ধরে বিক্রি করা হয়। ফলে স্থানীয় বাজারেও ঢাকা বা খুলনার চেয়ে কম দামে ইলিশ কিনতে পারেনা ক্রেতারা।
পাথরঘাটা বিএফডিসি আড়ৎদার সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর জমাদ্দার। মনপ্রতি ৪০০ টাকা কমিশন নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার না করে তিনি এর পক্ষে যৌক্তিকতা তুলে ধরে বলেন, আমরা বছরের পর বছর লাখ লাখ টাকা ট্রলারে দাদন দিয়ে রাখি। ওই টাকার বিপরীতে আমরা মনপ্রতি ৪০০ টাকা করে আড়ৎদারি রাখি।
জেলা মৎস্যজীবি সমিতির সভাপতি আ. খালেক বলেন, পাইকার আড়ৎদারদের সিন্ডিকেটের কারণে ইলিশ ন্যয্য দামে স্থানীয়রা কিনে খেতে পারেনা। তিনটি নদী ও বঙ্গোপসাগরের মোহনাসহ এলাকার সব মাছ বিএফডিসি পাথরঘাটায় অবতরণ হয়। বিএফডিসিতে অবতরণ হওয়া ইলিশের একটি অংশ বাধ্যতামূলকভাবে সরাসরি ক্রেতাদের কাছে বিক্রির নিয়ম করা হলে এই সমস্যা আর থাকবেনা। আমার দাবি, সরকার এই প্রস্তাব অবশ্যই গুরুত্বসহ বিবেচনায় নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহন করবে।
দেশের বৃহত্তম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র বিএফডিসি পাথরঘাটার ব্যবস্থাপক লে. এম লুৎফর রহমান (বিএন) বলেন, মাছ অবতরণের পর অকশন শেডে নিলাম হয়। পাইকাররা নিলামে ইলিশ কিনে নেয়। আমরা শুধু হিশাব রাখি কত টন ইলিশ অবতরণ হয় ও কত টাকার ইলিশ বিক্রি হয়। সেই হিশাবে আমরা সকারের পক্ষে রাজস্ব আদায় করে থাকি।
আমরা শুধু এখানে অবতরণ ও বিপনের কাজ করি, বাজার আমাদের নিয়ন্ত্রন নয়। তবে বিএফডিসিতে অবতরণ হওয়া ইলিশের একটি অংশ বাধ্যতামূলক ভাবে সরাসরি ক্রেতাদের কাছে বিক্রির যদি বিধান করা হয় তবে স্থানীয় ক্রেতারা ইলিশ ন্যয্যমূল্যে কিনে খেতে পারতেন বলে তিনি জানান। এ বিষয়ে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব রাখবেন বলেও জানান তিনি।
এএজেড