সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫ | ১৫ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

" জিয়নকাঠি "

 ছেঁড়া অংশটা চুপটি করে মিলিয়ে গেল লুঙ্গির সুবঙ্কিম ভাঁজে। ভোরের মোলায়েম আলো পঙ্কিল প্রান্তর ছুঁয়ে দেখবার আগেই রাজহাঁসের মতো নিঃশব্দে মিলিয়ে পড়ে বাবা। একপায়ি থামে না, বাবাকে নিয়ে এগিয়ে চলে সন্তর্পণে। বহুদূর যায় একপায়ি। ওপারে গিয়ে জিরোয়। তীর্থের কাকের মতো অপলক চেয়ে থাকে ও। ওপারে ডানাকাটা নধরদেহী রাঙা মেঘেদের বাসা। বাবা কি তাহলে সকাল সকাল মেঘের বাড়ি যায়? ও ঠিক বুঝে না। তবে ফেরার সময় বাবার নিয়ে আসা হাওয়াই মিঠাইগুলোকে ওর কাছে মনে হয় রঞ্জিত বন্দী আপের মতো। রাতে ও মজা করে আপ খায় আর নিপুণ চাঁদ ও মেঘেদের সাথে কথা বলে বেড়ায়। ও ভাবে বাবা হয়তো আকাশ থেকে আপ পেড়ে আনে ওর জন্যে। তাই হয়তো রাতের আকাশে সাদা মেঘগুলোকে আর দেখা যায় না। সাদা মেঘকে ও বলে উড্ডীন আপ। ওর খুব ভালো লাগে আপ খেতে। খুব মিষ্টি, তুলোর মতো নরম; মুখে দিলেই হাওয়া।

 

শন শন শন হাওয়ায় উড়ে পাল। ময়ূরের মতো পেখম তুলে ঢেউয়ের চূড়ায় নেচে নেচে চলে একপায়ি। বাবার পালতোলা ছই নৌকোকে ও বলে একপায়ি। এক পা দিয়েই পানিতে হেঁটে বেড়ায় ও। সেগুন কাঠের কালামুখো বৈঠাই ওর পা। রাই দিঘির নির্মল জলের বুক কুড়িয়ে ও জলজ শাপলা তুলে আনে। শাপলা ফুলকে ও বলে কেউকেটা মরা সাপ। আর মরা সাপ দিয়েই যত্নকরে বাবার জন্য কণ্ঠমালা গেঁথে রাখে। গলদঘর্ম শরীরে বাড়ি ফিরতেই বাবার গলা জড়িয়ে ধরে টুপ করে পড়িয়ে দেয় শাপলার মালাটা। বাবার মুখ চুইয়ে পড়ে মুগ্ধতার লুকনো হাসি। ওদেরকে দেখে মৃদু হাসে আকাশের চাঁদ।

 

পাখির মতো কিচিরমিচির ভাষায় কথা বলে ও। রাতে ওকে আদর করে ঘুম পাড়িয়ে দেয় বাবা। মাঝেমধ্যে খুব বকেও দেয়। দুপুরে ঠিকমতো ভাত মুখে তুলে না। একেবারে ধান শালিকের মতো চিকনা হয়ে গেছে। মা'কে ও দেখেনি। অবশ্য তাতে ওর দুঃখ নেই। ও বলে, " আমার মা এবং বাবা, দুইডাই তুমি আব্বা। " নিজ হাতে ইলিশ মাছ বেছে খেতে পারে না ও। বাবা কাটা বেছে দিলে তবেই মুখে তুলে। এক নলা বাবার মুখে পুড়ে দিয়ে বলে, " হুদা আমারেই খাওয়াইবা, তুমিও খাও আব্বা।" প্রতিদিন বাবার জন্য বৈছা পুড়ে রাখে ও। বাবা আসলেই লাল লাল বৈছা দিয়ে বলে, " তোমার লইগ্যা পুইড়া রাখছি আব্বা। নেও খাও। " বাবা যখন জিজ্ঞেস করে, " কইত্তে পাইসস বৈছা? " ও হাসিমুখে বলে, " রাই দিঘির জলে ওড়না দিয়া ধরছি আব্বা। " ছোটছোট চিংড়ি মাছের দলকে ও বলে বৈছা মাছ। ইলিশ এবং বৈছা ওর খুব প্রিয়, বাবার ও।

 

আমের থোকা থোকা বোল গুলো বড় হয়ে গেছে। বাতাসে সুমিষ্টঘ্রাণ। সাদা পায়রা পাখা মেলে হাওয়া খায় আকাশে। ও পায়রাকে বাবার কথা জিজ্ঞেস করে। পায়রাও ডানা ঝাপটিয়ে উত্তর দেয় কথার।
বাবা চলে গেলে তিন্নির সাথে ধাপ্পা খেলে ও। সাদা, সাদা নুড়ি পাথর দিয়ে খুব দ্রুত ধাপ্পা খেলতে পারে। তিন্নি বলে, ও নাকি ধাপ্পা খেলার রাণী। সেবার ধাপ্পা খেলতে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়েছিল কুন্তি। বাবা কাঁদতে কাঁদতে নিঃশেষ করে ফেলেছে চোখের জল। এ গায়ে ডাক্তার নেই। বড় নৌকায় করে ওপারে নিয়ে গিয়েছিল বাবা। অনেক দূরের নদীপথ। নীল পানির বিশাল জমিন। কিন্তু ফিরে আসার পর বাবাকে খুব বকেছে ও। ডাক্তার চিকিৎসা দেওয়ার সময় ও অজ্ঞানই ছিল। গায়ে আসতেই ও চোখ মেলে তাকায়। আর তাতেই মন খারাপ করে বসে পড়ে। বাবা ওকে মেঘের বাড়ি ঘুরিয়ে নিয়ে আসলো না কেন! সেজন্য খুব হেঁড়ে হয়েছিল ও। সেদিন খুব কেঁদেছিল বাবা। কিন্তু কুন্তি জানে না সেকথা।

 

বাবা ওকে ডাকে কুন্তি বুড়ি বলে। এগারো বছরের বাক্যবাগীশ মেয়ে কুন্তি। রাই দিঘির সাথে জমপেশ আড্ডা মারে ও। মেঘের সাথেও ভাব জমেছে ওর। ও কথা বলে জুনিপোকার সাথে। জুনিপোকাকে ও বলে মাডির তারা। আকাশে যেমন তারা মিটমিট জ্বলে, মাডিতে জ্বলে জুনিপোকা। প্লবগ ঘাসফড়িং আর কুতকুতে পানকৌড়ির সাথে গত বর্ষায় সই পেতেছিল ও। গত ঈদে ওর জন্যে বাবা খয়েরি রঙের ফ্রক এনেছিল। কতটাই না খুশি হয়েছিল কুন্তি। সেদিন ওর খুশি দেখে কে! বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলেছিল, " আমার আব্বা সবাইর সেরা আব্বা। " এদিকে দু'বছরের পুরনো সেই নীল লুঙ্গিটা আজও বাবার অঙ্গে শোভা পায়। লুঙ্গির ছেঁড়া অংশগুলোকে কিভাবে ভাঁজের মধ্যে লুকিয়ে ফেলতে হয়, তা বোধহয় বাবার চেয়ে ভালো কেউ জানে না।

 

একদিন বালিহাঁস খেতে চেয়েছিল কুন্তি। নদীর মাঝ থেকে এক ডুবে বালিহাঁস ধরে এনেছিল বাবা। রাজহাঁসের সাথে খুব বেশি জমে না ওর। রাজহাঁসকে ও বাবার ভয় দেখিয়ে বলে, " আর কোনদিন ঠোকর দিলে, আব্বারে দিয়া মাইর খাওয়ামু তোরে। " হস্তিমূর্খ রাজহাঁসও খুব ভয় পায় ওকে। ওর ধারে কাছেও আসে না আর। বাবা আম খায় না অথচ আম নাকি তার খুব প্রিয়। বাবাকে ও জোর করে আম খাওয়ায়, তা-ও একটার বেশি মুখে তুলে না। কিন্তু কুন্তি কি কখনো জানতে পারবে কাঁচামিঠা গাছের আম ওর খুব প্রিয় বলেই, মুখে তুলে না বাবা?

 

টনটন গাড়ি খুব পছন্দ ওর। গত দুদিন ধরে বাবার সাথে একটা কথাও বলে না ও। কতবার করে বাবাকে বলেছে পিঙ্গল রঙের টনটন গাড়িটা আনতে, তবুও আনে না বাবা। এ গায়ে টনটন গাড়ি পাওয়া যায় না। প্রধান বাড়ির মেয়ে রিনুর হাতে টনটন গাড়ি দেখে, ওর মনেও টনটন গাড়ি নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর স্বাধ জাগে। কি সুন্দর নহবতের শব্দ করে সে গাড়ি- টন টনা টন টন। কিন্তু বাবা ওর জন্য টনটন গাড়ি আনে না। খুব দামি যে। কিন্তু ও বুঝে না। ওর টনটন গাড়ি চাই তো চাই। ওপারে নিমতলি বাজারে টনটন গাড়ি পাওয়া যায়। নিমতলি বাজার অনেক দূরের পথ। কিন্তু বাবার কাছে টাকা নেই যে। তবুও বাবা ওকে নিরাশ করে না। তিনদিন পর বাবা ঠিকই নিয়ে আসে টনটন গাড়ি। টনটন গাড়ি পেয়ে ও খুশি হয়ে জড়িয়ে ধরে বাবাকে। আর বলে, " আমার আব্বা ভালা, আমার আব্বা ভালা। " কিন্তু পরক্ষণেই বাবার হাতে চোখ পড়তেই হেঁড়ে হয়ে উঠে ওর মনটা। ও কথা বলে না বাবার সাথে। বাবা ওকে বুকে টেনে নিয়ে বলে, " কি অইছে মা? তুই খুশি হছ নাই? " " তুমি আংটি বেইচা আমার লইগ্যা টনটন গাড়ি কেন আনছ আব্বা? তুমি কি মনে করছ আমি বুঝি না! " " আনটি দিয়া কি করমু রে মা, আমার কুন্তি বুড়ির মুহে আসি না থাকলে! " " আমারে তুমি এ-তো কেন ভালোবাস গো আব্বা! " " মাইয়ারে ভালোবাসমু না তো কারে বাসমু। " ও খাইয়ে দেয় বাবাকে। আর গল্প জুড়ে দেয় সারারাত ভর। বাবাও গল্প শুনে হাসে আর ঘুম পাড়িয়ে দেয় ওকে।

 

ও ঘুমিয়ে পড়ে, সাথে বাবাও। সকালে ঘুম ভাঙতেই দেখে বাবা নেই। কাজে চলে গেছে। শ্রাবণের মেদুর বিকেলে আকাশপটে রংধনু দেখে ও অভিভূত হয়। রংধনুকে ও বলে, সাতরঙা ট্যাংড়া লাইন, ঠিক মনিবুবুর চোখের মতো ত্যারচা। মনিবুবু খুব আদর করে ওকে। মনিবুবু ওর চেয়ে পাঁচ বছরের বড়। ওকে কাঁচা আম খেতে দেয়, নৌকায় করে ঘুরতে নিয়ে যায়। মনিবুবুর সাথে ও মাছ ধরতেও বের হয়। কখনো বা শালুক তুলে আনে। একবার শালুক তুলতে গিয়ে পায়ে খুব ব্যথা পেয়েছিল কুন্তি। তাই বাবা ওকে আর শালুক তুলতে দেয় না। তবুও লুকিয়ে লুকিয়ে মনিবুবুর সাথে ও শালুক তুলতে যায়। মনিবুবুকে বলে, " আব্বারে কইয়ো না মনিবুবু, এই তোমার পায়ে পরি, কানে ধরি। "

 

সেদিন আম পাড়তে গিয়ে পিছল গাছের উপর থেকে পড়ে বুকে খুব ব্যথা পায় ও। বাবা ওকে আম গাছে উঠতে বারবার মানা করেছে। কিন্তু ও শুনে না বাবার কথা। এদিকে বাবা জানেও না সেকথা। জানতে পারলে খুব বকবে হয়তো। তাই ও বাবাকে কিছু বলে না। সকাল থেকে আকাশের অবস্থাটাও ভালো না। ঝড় আসতে পারে যেকোন সময়। রেডিওতে শুনেছে ঝড় নাকি দুর্নমিতভাবে ধেয়ে আসছে মেঘের বাড়ি চিঁড়ে। সকাল থেকেই গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি আর ঝড়ো বাতাসের প্রকোপ। বাবাও কাজে যায়নি আজকে। ঝড়ের সময় এপার থেকে ওপারে নৌকা চলে না।

 

বিকেলে হঠাৎই রক্তবমি শুরু করে কুন্তি।
ছোটবেলায় বুকে খুব ব্যথা পেয়েছিল একবার। গাছ থেকে পড়ে গিয়ে আবারও সেখানটায় মারাত্মক ব্যথা পেয়েছে। বমির সাথে সাথে কাতর কণ্ঠে ও বলে উঠে, " আমার খুব কষ্ট অইতাছে আব্বা। মইরা যামু আমি। আমি মইরা যামু। কষ্ট আর সহ্য অয় না আব্বা। " ঝড়ের সাথে সাথে বাড়ছে কুন্তির আর্ত অসহায় চিৎকারও। ঝড়ের শব্দে নির্বাপিত হচ্ছে ওর আর্তনাদ। ভয় পেয়ে যায় বাবা। কি করবে এই দমকা ঝড়ের সময়। বাবা আযান দিতে থাকে খুব জোরে জোরে। পাশের বাড়ির মল্লিক চাচা কত বাঁধা দিলো, এই ঝড়ের সময় ওপারে যাইস না। কিছুখনের মাঝেই সুস্থ হয়ে উঠবে ও। কিন্তু কথা শুনে না বাবা। মেয়ের আর্ত চিৎকার আর সহ্য হয় না তার। ঝড় কিছুটা কমতেই বৃষ্টিকে বিদীর্ণ করে মেয়েকে নৌকায় তুলে বেড়িয়ে পড়ে শহরের উদ্দেশ্যে। ওপারেই শহর, ডাক্তার আছে বড়বড়। ডাক্তারের কাছে গেলেই সুস্থ হয়ে উঠবে কুন্তি। কুন্তির মুখ চুইয়ে রক্ত পড়ছে অঝোরে। মাঝপথে আবারও শুরু হয় তীব্র ঝড়। ঝড়ের বিপরীতে বৈঠা দিয়ে নিজের সর্বশক্তি দিয়ে নৌকা বাইতে থাকে বাবা। আর আল্লাহ, আল্লাহ করতে করতে বলে, " এইতো মা, আর কতক্ষণ, এরপরই ডাক্তারের কাছে যাইতাছি। ভালা হইয়া যাবি মা, ভালা হইয়া যাবি। " কিন্তু কুন্তির ব্যথা কমে না; কমে না ঝড়ও। ঝড়ের বেগের সাথে বাবা একা পারে না কিন্তু হারও মানে না।

 

কোনমতে নৌকা নিয়ে ওপারে চলে আসে বাবা। বাবার হাত পা ফুলে গেছে সর্বশক্তি দিয়ে দাঁড় টানতে টানতে। অভুক্ত শরীরে দুইঘণ্টা নৌকা চালিয়ে এপারে ডাক্তারের কাছে নিয়ে এসেছে মেয়েকে। ঝড় কমে গেছে আগের চেয়ে। কুন্তিকে কোলে নিয়ে ডাক্তারখানায় নিতেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে ও। বাবা ডাক্তারের পায়ে পড়ে বলতে থাকে, " আমার মাইয়া রে বাঁচান ডাক্তার সাহেব, আমার মাইয়া রে বাঁচান। " কিছুক্ষণ পর ডাক্তার ফিরে এসে বলে, তাড়াতাড়ি ও পজিটিভ রক্তের প্রয়োজন। বাবা এবং মেয়ের রক্তের গ্রুপ একই। ক্লান্ত শরীরেই রক্ত দিতে উদ্যত হয় বাবা। কিন্তু ডাক্তার বলে উঠে, " এরকম পরিশ্রান্ত শরীরে রক্ত দেওয়া আপনার জন্য মারাত্মক বিপদজনক। " কিন্তু পাগল হয়ে গেছে বাবা। তার মুখে একটাই কথা, " আমার মাইয়ারে বাঁচান। আমার মাইয়ারে বাঁচান। " ডাক্তারের কথা অমান্য করেই অভুক্ত শরীরে দুই ব্যাগ রক্ত দিয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে বাবা। রক্ত দেওয়ার ঘণ্টা খানেক পর চোখ মেলে তাকায় কুন্তি। কিন্তু আসেপাশে তাকিয়ে দেখে বাবা নেই। ও বাবাকে খুঁজতে থাকে অবিশ্রান্তভাবে। পাশের রুমে নিভৃতে বাবাকে শুয়ে থাকতে দেখে ও কাঁদতে থাকে হাউমাউ করে আর বলতে থাকে, " কতা কও আব্বা, কতা কও আব্বা। " কিন্তু কথা বলে না বাবা। পশ্চিম দিগন্তের মেঘগুলো মিলিয়ে পড়ছে কাঁদতে কাঁদতে, দিগন্তে আলোক সমারোহ ক্রমশ সংকোচিত হচ্ছে; নামছে চির আঁধার। উঁচু তালগাছগুলোর মাথায় সূর্যের আলো চিকচিক করে ডুবে গেলো। বিরান আকাশের মেঘ চিঁড়ে ওঠার সময় কাঁদতে কাঁদতে সায়ংকালীন চাঁদ বলে উঠে, " মেয়ের জীবনের তরে নিজের জীবনকে বানাইলো যে নৌকার লাঠি, জীবনের বিনিময়ে জীবন দিয়া মেয়েরে দিয়া গেলো জিয়নকাঠি! "

 শিক্ষার্থী, পশুপালন অনুষদ
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ-২২০২


ডিএসএস/

Header Ad
Header Ad

ঢাকায় অটোরিকশা ও চার্জিং স্টেশন বন্ধে ডিএনসিসির অভিযান শুরু হতে যাচ্ছে

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ জানিয়েছেন, রাজধানীর প্রধান সড়কগুলো থেকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা সরাতে শিগগিরই অভিযান চালানো হবে। শনিবার (২৬ এপ্রিল) মিরপুর পল্লবীতে রাস্তা, ফুটপাত ও নর্দমা নির্মাণ কাজের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

এজাজ জানান, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) ইতোমধ্যে অবৈধ অটোরিকশা তৈরির ওয়ার্কশপ ও চার্জিং স্টেশনের তালিকা প্রস্তুত করেছে। তালিকাভুক্ত স্থাপনাগুলোর বিরুদ্ধে শিগগিরই যৌথ অভিযান চালানো হবে।

এছাড়া, ডিএনসিসি প্রশাসক আবাসিক এলাকাগুলোতে অবৈধ অটোরিকশা ও বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধে বাড়ির মালিক সমিতিগুলোকেও সক্রিয় ভূমিকা রাখতে আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে তিনি জলাধার রক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করে নাগরিকদের জমি কেনার আগে মৌজা ম্যাপ যাচাই করার অনুরোধ জানান।

পল্লবীর ইস্টার্ন হাউজিং এলাকার উন্নয়নের বিষয়ে তিনি বলেন, সাতটি প্যাকেজে রাস্তা, নর্দমা ও ফুটপাত নির্মাণ শেষ হলে এলাকাটির জলাবদ্ধতা কমবে এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হবে। পাশাপাশি বর্ষায় বড় গাছ লাগিয়ে এলাকা সবুজায়নের উদ্যোগ নেয়ারও আহ্বান জানান তিনি।

উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ডিএনসিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।

Header Ad
Header Ad

চাঁদা না দিলে রেলের কমান্ড্যান্টকে বদলির হুমকি দিলেন দুই সমন্বয়ক

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকার রেলওয়ে নিরাপত্তাবাহিনীর কমান্ড্যান্টের কাছে চাঁদা দাবী করার অভিযোগ উঠেছে দুই ছাত্র প্রতিনিধির বিরুদ্ধে। চাঁদা না দিলে রেলের কমান্ড্যান্টকে বদলির হুমকিও দেয়া হয়েছে।সম্প্রতি তাদের কথোপকথনের একটি কল রেকর্ড ফাঁস হয়েছে।

অভিযুক্তরা হলেন রেলপথ মন্ত্রনালয়ের ছাত্র প্রতিনিধি মেহেদী হাসান এবং রেজাউল করীম। 

ভাইরাল হওয়া ওই কল রেকর্ড থেকে জানা যায়, রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর চট্টগ্রাম বিভাগের কমান্ড্যান্ট মো. শহীদ উল্লাহর কাছে ১০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে তাকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দেয় ওই ২ সমন্বয়ক। তবে এটি করবে না যদি বর্তমানে ঢাকায় কর্মরত রেলওয়ে নিরাপত্তাবাহিনীর কমান্ড্যান্ট মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম তাদের দাবীকৃত টাকা তাদের বুঝিয়ে দেয়।

এ বিষয়ে কমান্ড্যান্ট শফিকুল ইসলামের সাথে এর আগেও বেশ কয়েকবার আলোচনা হয়েছিল ওই দুই সমন্বয়কের।

রেকর্ডে শোনা যায়- কমান্ড্যান্ট শফিকুল ইসলাম ছাত্র প্রতিনিধি মেহেদী হাসানকে বলছেন, ‘‘আমি তো ওইদিন আপনার সামনেই বললাম কোর্টের মধ্যে থেকে যে টাকাটা জমা হয় ওইটা তোলার জন্য। ওইটা না হলে দুই লাখ টাকা দিতে পারবো না, আমার কোন ইনকাম সোর্সও নাই। কমান্ড্যান্ট মো. শহীদ উল্লাহর যেহেতু বলছে তার কাছ থেকে দশ লাখ টাকা নিয়া নেন। সে মাত্র গেছে।’’

ছাত্র প্রতিনিধি মেহেদী বলছে, না। ‘‘সমস্যা নেই আপনার সাথে যে কথা হয়েছে নির্জন (রেজাউল ইসলামের ডাক নাম) ভাইয়ের, ওইটা দিলেই হবে। তাহলে ওইটা হচ্ছে কবে? কালকে?’’

শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘কোর্ট থেকে টাকাটা উঠানোর সাথে সাথে আমি দিয়ে দিবো। যদিও আমার কষ্ট হইতেছে। কারণ এর বাইরে তো আমার কাছে টাকা নেই।’’

এরপর মেহেদী ফোন ধরিয়ে দেয় আরেক ছাত্র সমন্বয়ক রেজাউলকে, ফোন দিয়ে বলে শফিক ভাই কথা বলবে। এরপর মেহেদী তার মুঠোফোনটি রেজাউলকে দিয়ে দেয়।

এ সময় শফিকুল ইসলাম রেজাউল করীমকে বলেন, ‘‘ভাই কালকে তো আপনার রেস্ট হাউজে গেলাম। গিয়ে বললাম না, আমি কি কালকে আসবো? কোর্টের বেঞ্চ সহকারী বললো আমি লিখে একাউন্টে পাঠাইছি। আমি জানাবো, জানালে আপনি আসবেন, আজকে এখনো জানায়নি কোর্টে যাওয়ার জন্য। জানাইলে আমি আসবো।’’

ছাত্র সমন্বয়ক রেজাউল বলছে- ‘‘এখন ভাই আপনি দেখেন , ওইটা আমার কাছে কিছু বইলেন না। কোন বিষয় কি করবেন। সেইটা আপনার বিষয়। আপনি যেমন বলেছেন সেইটাই করা হয়েছে। এখন কিভাবে কি করবেন সেটা আপনার বিষয় ?’’

এদিকে ফাঁস হওয়া কল রেকর্ড সম্পর্কে জানতে চাইলে কমান্ড্যান্ট মো. শফিকুল ইসলাম বলেন- হ্যাঁ, ওই কল রেকর্ডটি আমাদের। আমাকে কমলাপুর রেস্ট হাউজে ডেকে নিয়ে ৫ লক্ষ টাকা চেয়েছিলো ছাত্র প্রতিনিধি রেজাউল।

তিনি আরো বলেন, রেজাউল আমাকে বলেছিলো উপদেষ্টাকে আমরা যা বলি, উপদেষ্টা তাই শোনে। চট্রগ্রামে উপদেষ্টা যখন গিয়েছিলো তখন কমান্ড্যান্ট শহীদুল্লাহ শহীদ ঢাকায় আসার জন্য আমাদের কাছে ১০ লক্ষ টাকা অফার করেছে। আপনি ৫ লক্ষ টাকা দিলে আপনাকে ঢাকাতে রাখবো। না হয় শহীদুল্লাহকে নিয়ে আসবো।

তিনি আরো বলেন, ‘আমি এই ঘটনার স্বাক্ষী প্রমান রাখার জন্য প্রথমে রাজি হয়ে যাই, এক লক্ষ টাকা বলি এবং পরে দুই লক্ষ টাকা বলি। যোগাযোগ দীর্ঘায়িত করি তথ্য প্রমানের জন্য। আর এই রেকর্ডটি আমিই করি এবং অফিসিয়াল হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে দেই। আজ (মঙ্গলবার) ডিজি মহোদয়ের সাথে সাক্ষাত করে আইনগত ব্যবস্থা নিবো।’

এই ব্যাপারে জানতে অভিযুক্ত ছাত্র প্রতিনিধি মেহেদী ও রেজাউলের মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও তাদের সাথে যোগাযোগ সম্ভব হয়নি।

চাঁদা দাবির বিষয়ে ছাত্র প্রতিনিধি আশিকুর রহমানের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমরা সকলেই একটি টিমে কাজ করি। আমি চাঁদা চেয়েছি এমন প্রমাণ কেউ দিতে পারবে না। আমি মেহেদী ও রেজাউলের সাথে জড়িত নই।

তবে কমান্ড্যান্ট মো. শফিকুল ইসলাম জানান- ‘আশিকুর রহমান, মেহেদী ও রেজাউলের যোগসাজসে এই চাঁদা দাবি করা হয়েছে।’

সংবাদ সূত্র:রেল নিউজ ২৪

Header Ad
Header Ad

বলিউডে সেনারা হিরো, বাস্তবে কেন জিরো ভারতীয় বাহিনী!

ছবি: সংগৃহীত

বলিউডের অ্যাকশনধর্মী সিনেমায় ভারতীয় সেনারা সবসময়ই বিজয়ী। কখনো পাকিস্তানি ঘাঁটি ধ্বংস, কখনো আফগানিস্তানে অভিযান—সবখানেই তারা অবিশ্বাস্য দক্ষতায় জয়ী। তবে বাস্তবতা যে এতটা সহজ নয়, তা কাশ্মীরে সাম্প্রতিক হামলায় আবারও স্পষ্ট হলো।

এই হামলায় প্রাণ হারিয়েছে অন্তত ২৬ জন। অথচ হামলা ঠেকাতে বা প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি ভারতীয় সেনারা। হামলার জন্য কোনো পূর্ণাঙ্গ তদন্ত ছাড়াই পাকিস্তানকে দায়ী করে নিজেদের ব্যর্থতা আড়াল করার চেষ্টা করছে তারা। ঘটনাটির রেশে সীমান্তে দুদেশের মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে, ভারী অস্ত্রসহ মোতায়েন করা হয়েছে সেনা, মাঝেমধ্যেই হচ্ছে গোলাগুলি।

নেটিজেনরা বলিউড সিনেমার বাহাদুর সেনাদের সঙ্গে বাস্তবের ব্যর্থ ভারতীয় সেনাদের তুলনা করে রীতিমতো ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করছে। সিনেমার মতো বাস্তবে অজয় দেবগান বা অক্ষয় কুমারের মতো নায়কোচিত সেনা যে নেই, তা এখন স্পষ্ট।

কেবল স্থলবাহিনী নয়, বিমানবাহিনীর ব্যর্থতাও হাস্যরসের জন্ম দিয়েছে। কাশ্মীর হামলার পর পাকিস্তানে হামলা চালাতে গিয়ে ভারতীয় বিমানবাহিনী ভুল করে নিজের দেশের একটি বাড়ির ওপর হামলা চালায়। এই ঘটনার ভিডিও ও প্রতিবেদন সামাজিকমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে, যেখানে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে ভারতীয় বাহিনী।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, হামলার পূর্বাভাস থাকা সত্ত্বেও ভারতীয় সেনারা যথাসময়ে পদক্ষেপ নেয়নি। হামলার ২০ মিনিট পর তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছায়, তখন হামলাকারীরা নিরাপদে পালিয়ে যায়।

২০১৯ সালের ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার সময় মিগ-২১ নিয়ে পাকিস্তানে ঢুকে পড়া ভারতীয় পাইলট অভিনন্দন বর্তমানের ঘটনাও আবার আলোচনায় এসেছে। সেবার তার বিমান ভূপাতিত হয় এবং তাকে আটক করে পাকিস্তান পরে ফিরিয়ে দিয়েছিল।

নেটিজেনরা বলছেন, বলিউডের সিনেমার কল্প-কাহিনীর সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। যুদ্ধ লাগলে তা হবে সমান শক্তির লড়াই, সিনেমার মতো একপাক্ষিক নয়। অধিকাংশই আবার যুদ্ধের বিপক্ষে মত দিয়েছেন, মানবিক বিপর্যয়ের ভয় দেখিয়ে শান্তির পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।

বলিউডের রঙিন পর্দায় ভারতীয় সেনারা 'অপরাজেয়' হলেও বাস্তবে কাশ্মীর হামলার ব্যর্থতা প্রমাণ করেছে, বাস্তব যুদ্ধ সিনেমার গল্পের চেয়ে অনেক বেশি কঠিন এবং অপ্রত্যাশিত।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

ঢাকায় অটোরিকশা ও চার্জিং স্টেশন বন্ধে ডিএনসিসির অভিযান শুরু হতে যাচ্ছে
চাঁদা না দিলে রেলের কমান্ড্যান্টকে বদলির হুমকি দিলেন দুই সমন্বয়ক
বলিউডে সেনারা হিরো, বাস্তবে কেন জিরো ভারতীয় বাহিনী!
কুমিল্লায় বজ্রপাতে স্কুলছাত্রসহ নিহত ৪
মে মাসে শেখ হাসিনার বিচার শুরু হচ্ছে: প্রধান উপদেষ্টা
ঢাকাসহ সারাদেশে বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে
সবাই মিলে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করাই লক্ষ্য: আলী রীয়াজ
ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ
কাশ্মীর সীমান্তে ভারত-পাকিস্তানের ফের গোলাগুলি
টস হেরে ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ, একাদশে ৩ পরিবর্তন
দেশে ফিরেছেন প্রধান উপদেষ্টা
টটেনহামকে উড়িয়ে প্রিমিয়ার লিগের চ্যাম্পিয়ন লিভারপুল
শেখ হাসিনাকে ‘চুপ’ রাখতে পারবেন না মোদি
রেফারির কাছে ক্ষমা চাইলেন মাদ্রিদের ডিফেন্ডার আন্তনিও রুদিগার
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীন শিক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা উপহার দিলেন ছাত্রদল নেতা
দুর্নীতির অভিযোগ তুলে দুই উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি
নওগাঁয় গ্রাহকের আমানতের টাকা ফেরত না দেওয়ায় জাতীয় পার্টি’র নেতাকে গণধোলাই
পাকিস্তানের পাশাপাশি বাংলাদেশকেও পানি না দেওয়ার আহ্বান বিজেপি এমপির
এসআই নিয়োগের ফলাফল প্রকাশ, ৫৯৯ জনকে প্রাথমিক সুপারিশ
হাকিমপুরে গরীবের চাল ছাত্রলীগ নেতার গুদামে