ভালোবাসার টান
ইন্টারমিডিয়েটে পড়া নুপুর প্রেমে পড়ে রায়হানের। রায়হান ডিগ্রিতে পড়ে। দুজনের মাঝে গভীর সম্পর্ক। একে অপরকে না দেখে থাকতে পারে না। গোপন অভিসারে মিলিত হয়। বিষয়টা জানতে পারে নুপুরের বাবা। রায়হান খুব গরিব। বাবা দিন মজুর। এমন একটা হাভাতে ঘরের ছেলের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে, না তা কিছুতেই সম্ভব না। তাই তড়িঘড়ি করে মেয়ের বিয়ে দেন ব্যবসায়ী সবুজ শিকদারের সঙ্গে।
বধু বেসে চলে যায় নুপুর। স্বামী কক্ষে প্রবেশ করে। নুপুরের গায়ে হাত দিতে যায়। একি! নুপুর ঝাপটা দিয়ে তার হাত সরিয়ে দিয়ে কড়া ভাষায় বলল, ‘ডোন্ট টাচ মি’। সবুজ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, তোমায় টাচ করব না মানে, তুমি আমার বউ না? স্পষ্ট ভাষায় কোনো দ্বিধা ছাড়াই উত্তর দেয় নুপুর, ‘না আমি তোমার বউ না’। তাহলে কার বউ?
রায়হানের বউ। আমি তাকে ভালোবাসি। তাকে ছাড়া আমি অন্য কাউকে স্বামী হিসেবে মেনে নিতে পারব না। তাহলে আমাকে বিয়ে করলে কেন? বাবা জোর করে তোমার সঙ্গে আমার বিয়ে দিয়েছেন। আমি রাজি ছিলাম না।
এখন কী করবে? আমি রায়হানের কাছে ফিরে যাব।
শোন নুপুর, বিয়ের আগে এসব ভালোবাসাবাসি অনেক হয়। বিয়ের পর এসব মনে রাখতে নেই।তুমি আমার বিবাহিতা স্ত্রী। বিয়ের পর বউয়ের প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি হওয়াটা আল্লাহ পাকের দেওয়া নেয়ামত। আমি এ নেয়ামত থেকে তোমাকে বঞ্চিত করতে পারব না। তুমি আমার বউ, আমি তোমাকে ভালোবাসব। এসব ফালতু ভালোবাসা ভুলে যাও।
না আমি কিছুতেই রায়হানকে ভুলতে পারব না।
বললে হলো। এসো দুজন মিলে...।
নুপুরকে জড়িয়ে ধরতে চাইলে সে তাকে সরিয়ে দেয়। এমনি ধস্তাধস্তি ও সংগ্রামের মধ্যে পার হলো সারারাত। নুপুরকে ভালোবাসাতো দূরের কথা, টাচও করতে পারল না সবুজ। পরদিনও একই অবস্থা।
নুপুর ভুলতে পারছে না রায়হানকে। আর সবুজ নুপুরের ভালোবাসা পাওয়ার জন্য ব্যাকুল। রোজ রাতে তাদের মাঝে এক প্রকার যুদ্ধ চলে। সবুজ আর সহ্য করতে পারছে না। বাধ্য হয়ে শ্বশুরকে ফোন করে সবকিছু জানাই। শ্বশুর জামাইকে বুঝ-ভরসা দেয় ধৈর্য ধারণ করতে বলে।
সবুজের ধারণা সত্যি নুপুর একদিন তাকে ভালোবাসবে। রোজ রাতে বউকে বুঝায়, ভালোবাসতে চায়। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। নুপুর তাকে কাছে ঘেঁষতে দিচ্ছে না। এভাবে কেটে গেল বিশ দিন। নুপুরের মনে সবুজের প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি হলো না। তার হৃদয়ের সমস্ত আকাশ জুড়ে আছে রায়হান। সে রায়হানের কাছে ছুটে যায়। খবর পেয়ে ছুটে যান নুপুরের বাবা।
মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে কেঁদে বলেন, নুপুর তুই একি করলি। আমার মান-সম্মান ধুলায় মিশিয়ে দিলি। ফিরে চল মা স্বামীর কাছে। না বাবা আমি যাব না। আমি রায়হানের কাছে থাকব।
পাগলামী করিস না মা। এ সম্ভব না। লোকে শুনলে বদনাম রটাবে।আমি সমাজে মুখ দেখাতে পারব না।
তবুও আমি যাব না।তুমি চলে যাও।
বাবা অনেক বুঝাল মেয়েকে। কিন্তু মেয়ে কিছুতেই বাবার কথায় সাড়া দিল না। এবার বাবা কৌশলে তাকে রায়হানের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার কথা বলে বাড়ি নিয়ে আসে। তারপর স্বামী সবুজের হাতে তুলে দেয়। সবুজ তাকে বাড়ি নিয়ে যায়। নুপুরকে একান্ত আপন করে পাওয়ার জন্য জড়িয়ে ধরে। সে তাকে সরিয়ে দিয়ে বলে,
বলেছি না তুমি আমাকে ছোঁবে না। তবুও কাছে আসছ কেন?
বউ, আমি যে তোমার ভালোবাসা ছাড়া থাকতে পারব না।
কিন্তু আমিতো তোমাকে ভালোবাসি না।তবুও জোর করছ কেন?
বউ দেখে নিও, রায়হানের চেয়ে তোমাকে আমি আরও বেশি ভালোবাসব। শুধু একবার ভালোবাসার সুযোগ দাও।
না তোকে আমি ঘৃণা করি। তুই আমার কাছে ঘেঁষবি না।
সবুজ আর থেমে থাকতে পারল না। ক্ষুব্ধ হয়ে উঠল। চোখ রাঙিয়ে বলল, শোন নুপুর, আমি অনেক সহ্য করেছি। আর না। তুই আমার না হলে আর কারও হবি না। আজ তোকে আমি ছাড়ব না।দেখি কে ঠেকায়।
এক প্রকার জোর করে সে তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করতে চায়। নুপুর বাধা দেয়। সে কষে দেয় এক চড়। তারপর এলোপাতাড়ি কিল, ঘুষি মারতে লাগল। নুপুর কাত হয়ে বিছানায় পড়ে যায়। অজ্ঞান হয়ে যায়। সবুজ ভয়ে তাকে ছেড়ে দেয়। তালা বন্ধ করে দেয়। জ্ঞান ফেরার পর বলে, যেদিন তুই আমাকে ভালোবাসবি, সেদিন এ দরজা খুলব। এর বাইরে না।
তুইও মন দিয়ে শোন, জোর করে, মারপিট করে, বন্দী করে কখনো ভালোবাসা পাওয়া যায় না।ভালোবাসা সম্পূর্ণ অন্তরের অনুভূতি। তা অন্তর দিয়ে অনুভব করতে হয়। আমি মরে গেলেও তোকে ভালোবাসব না।
নুপুর কিন্তু থেমে নেই। বের হওয়ার চেষ্টা...। শেষে গভীর রাতে জানালা ভেঙ্গে রায়হানের কাছে ছুটে যায়। তাকে দেখে রায়হান বলে, নুপুর তুমি আবার কেনো এলে। চলে যাও।
না আমি যাব না।
অযথা জেদ করো না। তোমার বাবা আবার এসে তোমাকে নিয়ে যাবে।
আমি সেই সময় আর তাকে দেব না। আমরা এখনি বিয়ে করব। তুমি বিয়ের ব্যবস্থা কর।
না আমি পারব না।আমার ভয় করে। তোমার বাবা আবার যদি কিছু করে বসে।
রায়হান ভয় করলে চলবে? আমি তোমার ভালোবাসা ছাড়া বাঁচতে পারব না। তোমার মতো অন্তরের অনুভূতি দিয়ে এত ভালো কেউ আমাকে বাসবে না। তোমার অন্তরের ছোঁয়া যে আমার অন্তরে লেগে গেছে। তাই বারবার তোমার ভালোবাসার টানে ছুটে আসি। তবুও যদি না কর, আমি আত্মহত্যা করব। তবুও ওর কাছে ফিরে যাব না। না নুপুর তা কর না। আমি এখনি বিয়ের ব্যবস্থা করছি।
ঠিক সেই মূহূর্তে উপস্থিত হলো সবুজ শিকদার ভিলেন বাহিনী নিয়ে। নুপুরকে নিশানা করে গুলি করল। নুপুরের বক্ষভেদ করল। তাকে বাঁচাতে সামনে দাঁড়াল রায়হান। তাকেও রেহায় দেওয়া হলো না। গুলি তারও বক্ষভেদ করল। দুজনে কাত হয়ে মাটিতে পড়ে গেল। তখনি সবুজ বলল,
বলেছি না তুই আমার না হলে আর কারও হবি না।
কাতরাতে কাতরাতে উত্তর দিলো নুপুর, আমাদের এ জনমে মিলন না হোক,পর জনমে তো হবে। নুপুর আর কথা বলতে পারল না।মারা গেল। পাশাপাশি দুটো লাশ পড়ে রইল। দু পরিবারের লোকজন কান্নায় ভেঙে পড়ল। পুলিশ সবুজকে ধরে নিয়ে গেল।