গবেষণা ক্ষেত্র
আমি সবসময় একটা জিনিস ভীষণভাবে খেয়াল করি যে, প্রেমিক প্রেমিকারা একে অপরের হাতটা সবসময় ধরে রাখে। আচ্ছা এটা কেন? হাত না ধরে রাখলে কি ছেলেটা পালাবে নাকি মেয়েটাকে কেউ তুলে নিয়ে যাবে? প্রশ্ন গুলো মাথার মধ্যে আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে কারণ প্রশ্নের উত্তর যদি সঙ্গে সঙ্গে মিটিয়ে না ফেলি তাহলে সেখান থেকে আরেক প্রশ্নের উদ্ভব হবে আমার মস্তিষ্কে। তাই ঠিক করলাম আজ পার্কে প্রেমিকের সামনে প্রেমিকাকে আর প্রেমিকার সামনে প্রেমিককে জিজ্ঞাসা করবো, এক অপরের হাত তারা কেন ধরে? খুঁজতে খুঁজতে অনেক কষ্টে একটা যুগল দেখলাম। সেখানে মেয়েটা ছেলেটার হাতটাকে এমন ভাবে শক্ত করে ধরেছে মনে হয় ছেলেটা হিলিয়াম গ্যাসে তৈরী, যেকোনো সময় উড়ে যেতে পারে। আমি দৌড়ে গিয়ে তাদের সামনে দাঁড়ালাম।
-আপনাদের সঙ্গে একটু কথা বলতে পারি? ছেলেটা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল-
-জ্বী বলুন।
-আসলে প্রশ্নটা আপুর কাছে। আপু আপনি ভাইয়ার হাতটা এত শক্ত করে ধরেছেন কেন? উনার হাঁটার অসুবিধাও তো হতে পারে? আর তা ছাড়া উনিও তো আপনাকে ভালই বাসে। আপনাকে রেখে তো আর চলে যাবে না।
আমার কথাটা শুনে প্রেমিক প্রেমিকা দু’জনেই বড় বড় চোখে তাকিয়ে ফেলল। মেয়েটা রেগে গিয়ে বলল-
-ও আমার বিএফ। ওর হাত আমি যেভাবে ইচ্ছা ধরব। আপনি বলার কে? এই তুমিও কিছু বলছো না কেন?
-আরে রাগ করো না। ভাই মনে হয় সিঙ্গেল। তাই এভাবে হাঁটার শান্তি সম্পর্কে জ্ঞান নাই। ভাই আপনি কি সিঙ্গেল? আমি তাদের দু’জনের কথা শুনে একটু ভেবে বললাম-
-আমি তো একাই আছি। আমার কোন ভাই বোন নেই।
-আরে ভাই আমি বলতেছি যে আপনি প্রেম করেন না?
-ওহ! না।
-তাহলে আপনি এই শান্তি থেকে দূরে আছেন।
এটা বলেই তারা চলে গেল। আমি তাদের দিকে তাকিয়ে আছি। মেয়েটা ছেলেটার হাতটা এখন আর ধরছে না। কিন্ত দুজনেই বার বার হাসি দিয়ে তাকাচ্ছে পিছনের দিকে। আমার শরীর কেমন যেন কাঁপছে। কেন কাঁপছে? এটা ভাবতেছি এমন সময় চা ওয়ালা তালেব মিয়া এসে বলল-
-ভাই আপনের ফোনে রিং অইতাছে। কল টা ধরেন।
আমি খেয়াল করলাম ফোনের ভাইব্রেশনের কারণেই আমার মনে হচ্ছিল শরীর কাপঁছে। ফোন রিসিভ করে বললাম-
-কে বলছেন?
-আমি তোর মামা বলছি। তোর ফোনে আমার নাম্বার সেভ করা নেই?
-আসলে কলটা কেটে যেত তাই খেয়াল না করেই রিসিভ করেছি।
-কোথায় তুই?
-আমি তো এখন পার্কে।
-এরকম দুপুরবেলা পার্কে কি তোর?
- একটা গবেষণার কাজে এসেছি।
- থাক আর গবেষণা করতে হবে না। আমার বাসায় আয়।
-আমার গবেষণাতো এখনো শেষ হয়নি মামা।
-আমি আসতে বলেছি আয়।
মামা ফোন রেখে দিল। আমি কিছুই বললাম না। আমার গবেষণা শেষ না হলে আমি কোথাও যেতে পারব না। তাই আবার গেলাম অন্য একটা যুগলের কাছে। বাড়িতে এসে দেখি সবাই গোমড়া মুখে বসে আছে। চারদিকে ভাল করে খেয়াল করে দেখলাম মামাও এসেছে। আমি তেমন ভ্রুক্ষেপ না করে আমার রুমের দিকে পা বাড়ালাম।
-দাঁড়া এখানে। মামার ডাক শুনে দাঁড়ালাম। তারপর বললাম-
-জ্বী মামা।
-তোর আমার বাসায় যাওয়ার কথা ছিল।
-আসলে একটা কাজে আটকে গেছিলাম।
-কাল তুই সারাদিন বাড়িতে থাকবি। কোথাও যাবি না।
-আমার একটা জরুরি কাজ আছে। কথাটা শুনে মামা কিছুক্ষণ চুপ থেকে আম্মুকে বলল-
-আপা আপনার ছেলেকে কাল তালা দিয়ে হলেও আটকে রাখবেন।
আমি রুমে চলে গেলাম। মামা আমার রুমে এসে ঘুম থেকে উঠাল। বলল রেডি হতে। আমি ঘুমো চোখ নিয়ে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে একটা টি-শার্ট পরলাম। আর একটা কালো প্যান্ট। মামা আমাকে দেখে বলল-
-এসব কি পরেছিস? তোকে নিবোই না আমি। আমি মামাকে বললাম-
-ধন্যবাদ মামা। আমি ঘুমাতে যাই। উনি রেগে ধমক দিয়ে বলল-
-থাপ্পড় দিয়ে কান গরম করে ফেলব। ভাল জামা কাপড় পরে আয়।
আমি চুপচাপ ওয়াশ রুমে গিয়ে আয়নায় নিজেকে দেখলাম। অনেক দিন পর এত মনোযোগ দিয়ে নিজের মুখটা দেখছি। তারপর একটা সাদা কালারের শার্ট পরে নিলাম। নিজেকে তখন সাদাকালো টেলিভিশন মনে হচ্ছিল। তারপর মামার সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই উনি একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললেন। এ রকম দীর্ঘশ্বাস ফেলার কারণ বিরক্তি প্রকাশ। এরকমভাবেই মানুষ নীরব বিরক্তি প্রকাশ করে থাকে। তারপর বললেন-
-চল। আমি একটা বিশাল বাড়িতে প্রবেশ করলাম। মামা আমাকে ফিসফিস করে বললেন-
-এটা খুব ধনী ব্যক্তির বাড়ি।
সত্যিই এটা খুব বড় লোক মানুষের বাসা। চারদিকে অনেক কর্মচারী ঘর গুছানোর কাজে মহাব্যস্ত। আমার কেন জানি মনে হচ্ছে এই বাড়ির মালিকের কাছে আমরা আসিনি। মামা নিশ্চয়ই এখানকার কোনো কর্মচারীর কাছে এসেছেন। মনের সংশয় কাটানোটাই এখন আমার কাছে সবচেয়ে বেশি জরুরি। তাই মামাকে বলেই ফেললাম-
-মামা আমরা এখানকার কর্মচারীদের সঙ্গে দেখা করতে এখানে আসলাম কেন? কর্মচারীদের নিজের বাসায় গেলেই পারতাম।
-মামা আমার দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকালো। আর সঙ্গে সঙ্গে এক জন ভদ্রলোক এসে বলল-
-আরে আলমগীর। তুমি এসেছো তাহলে?
মামা আমার দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে লোকটার সঙ্গে কুশল বিনিময় করল। তারপর আমাকে পরিচয় করিয়ে দিল। আমরা গিয়ে সোফাতে বসলাম। মামা আমার পাশেই বসেছে। হঠাৎ মামা লোকটাকে বলল-
-শরীফ তোমার বাড়িটা কিন্তু খুব ভাল করেই সাজিয়েছো। শুনেই আমি মামার দিকে তাকালাম। তারপর ঐ লোকটার দিকে। মনেই হচ্ছে না মামার বন্ধুর বাড়ি এটা।
-তোমার মেয়েকে ডাকো। মামার কথা শুনে লোকটা ভিতরে গিয়ে একটা মেয়েকে নিয়ে আসলো। মেয়েটা সুন্দরী। কিন্তু আমাদের সামনে এভাবে আসার কারণটা জানতে মামাকে বললাম-
-মামা মেয়েটা এভাবে আমাদের সামনে বসে আছে কেন? মামা আমার কানের সামনে ফিসফিস করে বলল-
-তোর বিয়ে এ মেয়ের সঙ্গে হবে।
-বিয়ে?
-হুম। বিয়ে। যদি কিছু জানার ইচ্ছা থাকে জিজ্ঞাসা কর।
আমি মেয়েটার দিকে তাকালাম। মেয়েটা হাতের আঙ্গুল মোচড়াচ্ছিল। এ রকম করার কারণ হলো অস্বস্তি। আমি মেয়েটাকে সরাসরি বললাম-
-আপনি কি এই বিয়েতে রাজি না? কথাটা শুনে মেয়েটা আমার দিকে তাকাল আমিও তাকালাম। আর তখনি মেয়েটার বাবা বলল-
-আমার মেয়ে আমার কথা কখনো অমান্য করে না বাবা। মেয়েটা ব্যক্ত করতে না পারলেও ওর ভাবভঙ্গী দেখেই আমি বুঝতে পারছি ও রাজি না। কিন্তু আমি এমন ভাব করলাম যেন কিছুই বুঝিনি। আমি মামাকে বললাম-
-মেয়ে আমার পছন্দ হয়েছে। মামা খুশি হয়ে বলল-
-আলহামদুলিল্লাহ। সামনের সপ্তাহে তাহলে দিন তারিখ ঠিক করা হবে। আমরা তারপর বাসায় চলে আসলাম।
রাত বারোটা বেজে ছত্রিশ মিনিট। জানালার পাশে বসে আছি। হাতে একটা জ্বলন্ত সিগারেট। এই পর্যন্ত সাতটা সিগারেট শেষ করলাম। কিন্তু একটাতেও টান দেইনি। আমি সিগারেট খাই না। খেতে পারি না। কিন্তু চিন্তা করার সময় আমি হাতে সিগারেট রাখি। এটা হাতে থাকলে চিন্তায় গভীর ভাবে আচ্ছন্ন থাকতে পারি। হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠল। একটা অচেনা নাম্বার। রিসিভ করলাম। কানে দিয়ে বললাম-
-খুব দোটানায় ছিলেন। ফোন করবেন কি না ঠিক করতে পারছিলেন না। তাই না?
-চিনতে পারলেন কি করে?
-সিমটা আজই নিয়েছি। আর নাম্বারটা আপনার বাবার কাছে ছাড়া আর কারো কাছে নেই। এত রাতে নিশ্চয়ই আপনার বাবা আমাকে কল দিবেন না।
-বিরক্ত করলাম?
-যদি বলি বিরক্ত হওয়ার অপেক্ষায় ছিলাম?
-একটু কথা ছিল আপনার সঙ্গে।
-জানি। কলটা আপনি কথা বলার জন্যই করেছেন।
-কথাটা খুব জরুরি।
-বিয়েটা করব না আমি। ভয় পাবেন না।
-আপনি জানলেন কীভাবে আমি এটার জন্য কল দিয়েছি?
-আপনার আচরণ দেখে আমি তখনি বুঝতে পেরেছিলাম।
-তাহলে বললেন কেন আমাকে পছন্দ হয়েছে?
-সেটাই তো। বলেন তো কেন বলেছি?
-টাকা পয়সার জন্য।
-নাহ। একটা গবেষণা করার জন্য।
-গবেষণা?
-হুম।
-শুনেছি আপনি কিছুই করেন না। তাহলে কিসের গবেষণা করেন আপনি? আর কিছু করছেন না কেন?
-নিজেকে বাচাচ্ছি।
-মানে?
-চাকরি কারা করে বলুন তো?
-যাদের টাকা দরকার।
-আমার বাবার সে টাকা আছে। আর আমি ছাড়া আর কেউ সে টাকার ভাগ নিতে আসবে না।তাই শুধু শুধু কষ্ট করে লাভ কী?
-হাহাহা।
-হাসছেন যে?
-না এমনি। কতদিন আপনার গবেষণা চলবে?
-সাতদিন। এই সাতদিন আপনি আমার প্রেমিকা হয়ে থাকবেন।
-গবেষণাগার কোথায়?
-আপাতত ধানমন্ডি লেকে।
-আচ্ছা কাল দেখা হচ্ছে।
প্রথম দিন-
ফোনে রিং হচ্ছে। আমি ঘুম থেকে উঠে রিসিভ করে বললাম-
-কে?
-আমি।
-ওহ। সরি আজ আমার এক জায়গায় যেতে হবে। আজ আপনার সঙ্গে দেখা করতে পারব না।
-কোথায় যাবেন?
-আমি বাতাসের মতো। কখন কোথায় যাই ঠিক নেই। রাখছি। ফোন রেখে দিলাম। আমি ঘুমাব এখন। ঘুম আমার কাছে এখন সব চেয়ে বেশি ইম্পর্টেন্ট।
দ্বিতীয় দিন-
-কেমন আছেন ভাই?
-আরে তালেব মিয়া। কেমন আছো?
-আমাগো আর থাহা। আছি আর কি। চা খাইবেন না?
-হুম। দাও দাও।
ও একটা কাপ ধুয়ে ফ্লাক্স থেকে চা বের করতে ব্যস্ত হয়ে গেল। আর আমি অপেক্ষা করছি একটা মেয়ের জন্য। লোকটা চায়ের কাপ এগিয়ে দিল। আমি চায়ে চুমুক দিচ্ছি আর ভাবছি আজ প্রথম আমি কোন মেয়ের জন্য অপেক্ষা করছি। চা শেষ করতেই মেয়েটা এসে সামনে দাঁড়াল।
-কাল আসলেন না কেন?
-কারণটা কাল বলেছিলাম।
-কেমন আছেন?
-ঘোলা!! চা খাবেন?
-খেতে পারি।
-তালেব মিয়া ওনাকে একটা চা দাও। তালেব মিয়া ওনাকে এক কাপ চা দিল। আমি বললাম-
-বসে খান। উনি চায়ে একটা চুমুক দিয়ে বলল-
-এটাই আপনার গবেষণাগার?
-হুম। পুরো পার্কটাই আমার জন্য গবেষণাগার।
-আপনি আমার নাম জানেন না?
-প্রয়োজন হয়নি তাই জানার চেষ্টা করিনি।
-মানে?
-আমার প্রয়োজনীয় ছাড়া তেমন কিছু আমার মস্তিষ্কে রাখি না। যেমন আমার যদি কোনো তথ্য এখন দরকার পরে তাহলে সেটা জানার আগ্রহ থাকে। আর আমি সেটা জানতে চাই তখন। প্রয়োজনীয়তা ফুরালে আমি সেটা আর দ্বিতীয় বার ভাবি না। আস্তে আস্তে সেটা আমার মাথা থেকে বিলুপ্ত হয়ে যায়। তবে আপনার নামটা আমার দরকার পরবে এখন। বলুন।
-আমি ময়ুরী।
-ওহ আচ্ছা। আর আমি হলাম কথাটা শেষ না করতেই ময়ুরী বলল-
-আপনি পোলেন। আমি জানি।
আমি একটা হাসি দিলাম। তারপর দেখলাম যে ময়ুরীর চা শেষ। তাই আমি তালেব মিয়া কে খুঁজতে চারদিকে একবার মাথাটা ঘুরালাম। দেখলাম দূরে তালেব মিয়া চা বিক্রি করছে। কাপটা নিতে ভুলে গেল। আমি উচ্চ স্বরে ডাকলাম-
-তালেব মিয়া!!! তালেব মিয়া আমার ডাক শুনে বলল-
-ভাইসাব আইতাছি। ময়ুরী বলল-
-ওনাকে চিনেন কীভাবে?
-ওর ছেলেকে আমি পড়াই। সেই কারণেই পরিচয়। আমার কাছে টাকাও নেয় না।
-কিন্তু আজ তো আমাকেও খাইয়েছে। টাকা দেব আমি।
-দিবেন? দিন তাহলে। তালেব মিয়া চায়ের কাপ নিয়ে চলে যাচ্ছিল। আমি বললাম-
-দাঁড়াও। টাকাটা নিয়ে যাও।
-না না। আমি টাকা নিমু না।
-আরে মেমসাহেব খুব ধনী। সমস্যা নেই। নাও। ময়ুরী একটা পাঁচশো টাকার নোট বের করে দিল। তালেব মিয়া একটা হাসি দিয়ে বলল-
-আমার কাছে খুচরা নাই। আমি বললাম-
-রেখে দাও পুরোটা।
তালেব মিয়া পান খেয়ে দাঁতগুলো লাল করে ফেলেছে। আর সেই দাঁত গুলো বের করে একটা হাসি দিল আর আমার কানের কাছে এসে বলল-
-ভাইজান ভাবীটা কিন্তু মাশা আল্লাহ। অনেক সুন্দর।
-হাহাহা। যাও। তালেব মিয়া চলে যাবার পর ময়ুরী বলল-
-কী বলল লোকটা?
-আপনার নাকটা যদি বোঁচা না হতো তাহলে নাকি আপনাকে অনেক সুন্দর লাগতো।
-মানে? আমি সুন্দর না?
-ও তো সেটা বলেনি। ময়ুরী রাগে নাক ফুলিয়ে বলল-
-ওকে পাঁচশো টাকা দেওয়াটাই ভুল হইছে।
-আমার কাছে আপনাকে অনেক সুন্দর লাগে। যে কেউ প্রেমে পড়ে যাবে।
এটা শুনে ওর মুখে হাসি চলে আসলো। খুব খুশি হয়েছে তা বুঝা যাচ্ছে। মেয়েরা এরকমই। প্রশংসা করে তাদের মনে জায়গা করতে বিশাল এক হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে। তারপর আমি বললাম-
-পাঁচশো টাকা দিন তো।
-কেন?
-আপনার প্রশংসা করলাম। তালেব মিয়া প্রশংসা না করায় টাকা দেওয়াটাই ভুল মনে হচ্ছে আপনার। আর আমি প্রশংসা করলাম তাই আমাকে পাঁচশো টাকা দিলে নিশ্চয়ই খুব একটা খারাপ লাগবে না। তাই না?
এবার ময়ুরী হেসে ফেলল। খুব জোরে জোরে হাসল। আমিও হাসলাম ওর হাসি দেখে তবে দাঁত দেখিয়ে নয়। মুচকি হাসি যেটাকে বলে।
তৃতীয় দিন-
-আপনার গবেষণা কতটুকু এগোল?
-থেমে আছে।
-প্রেমিক প্রেমিকাদের হাত ধরা নিয়ে এত টেনশন করার কি আছে?
-আপনি জানলেন কি করে আমি হাত ধরা নিয়ে টেনশন করছি?
-মনে করে দেখেন তো আমাকে চিনতে পারছেন কি না?
-নাহ চিনি নাই।
-কিছুদিন আগে আপনি আমাকে আমার বিএফকে লেইকে প্রশ্ন করেছিলেন। আমি কেন তার হাত ধরে রেখেছি। দুদিন ইচ্ছা করেই বলিনি। ভাবছিলাম আমাকে চিনতে পারবেন। কিন্তু না।
-ওহ। হুম। মনে পরেছে। আপনার বিএফ কেমন আছে?
-ভাল। আচ্ছা আপনি আমাকে বিয়ে করতে চাচ্ছেন না কেন? আমি কি দেখতে খারাপ?
-আগে বলুন আপনার কাছে বিয়ে মানে কী?
-বিয়ে মানে এমন একটা সম্পর্ক যেটা আজীবন থাকে। সুখে দুঃখে একে অপরের পাশে থেকে এগিয়ে চলা। ভালোবাসায় ভরিয়ে রাখা দুজন দুজনকে।
-তাহলে আপনি দেখতে খারাপ অথবা সুন্দর হলেই বা কী? আপনার কথায় তো সুন্দর হওয়ার ব্যাপারটা বললেন না।
-আপনি কি জানেন আপনি খুব বেশি ভালো মানুষ?
-আজ জানলাম। আচ্ছা আপনার বিএফ জানে আপনি আমার সঙ্গে আছেন? আর সাতদিনের জন্য যে আমার প্রেমিকা হয়েছেন?
-সেটা না হয় পরেই বলব। আগে বলুন কেমন মেয়ে পছন্দ আপনার? আমি মাথাটা একটু চুলকাতে চুলকাতে বললাম-
-যে মেয়ে পার্কে আমার হাত ধরে হাঁটবে। আমি মাঝে মাঝে হঠাৎ করেই ওর হাত থেকে ছুটে দৌড়ে লুকিয়ে যাব। ও আমাকে খুঁজে বের করে আমার হাতটা আরও শক্ত করে ধরবে যেন আমি পালাতে না পারি। কিন্তু আমি আবার পালাব। ময়ুরী হাসতে হাসতে বললৃ
-আর কেমন কেমন গুণ থাকতে হবে?
-রান্না ভাল জানতে হবে। যে আমাকে আমার পছন্দের রান্না করে খাওয়াবে। তবে তা খুউউব অল্প হতে হবে।
-অল্প কেন?
-মজাদার খাবার অল্প খেতে হয় তাহলে বেশ সুস্বাদু লাগে।
-আর কী কী?
-যে আমাকে রাগাতে পারবে।
চতুর্থ দিন-
আমি আর ময়ুরী হাঁটছি। হঠাৎ ময়ুরী আমার হাতটা ধরল। আমি হাতটা ছাড়িয়ে নিলাম। ময়ুরী বলল-হাতটা ছেড়ে দিলেন কেন?
-আপনার বিএফ যদি দেখে রাগ করবে।
-আপনি তো এখন আমার বিএফ। অন্তত সাতদিনের জন্য।
ময়ুরী আবার আমার হাতটা ধরল। খুব শক্ত করে ধরল। আমার ইচ্ছা হচ্ছে হাতটা ছেড়ে দৌড়ে গিয়ে কোথাও লুকাতে। কিন্তু হাতটা ছাড়তে পারছি না। এটা কেমন যেন এক আকর্ষণ। ঠিক এই কারণেই প্রেমিক প্রেমিকারা হাত ধরে রাখে বুঝতে পারলাম।
পঞ্চম দিন-
আজ ময়ুরীর হাতে একটা ছোট বক্স। এতটাই ছোট যে যেগুলো দিয়ে বাচ্চারা হাড়ি পাতিল খেলে। আমি বললাম
-এটাতে কী?
-এটাতে বিরিয়ানি। আপনার জন্য।
-এত ছোট বক্সে করে বিরিয়ানি কেন?
-আপনিই তো বললেন আপনার ভালবাসার মানুষের আপনার পছন্দের খাবার অল্প করে খাওয়াবে।
-কিন্তু আপনি তো কথাটা না শুনেই ময়ুরী একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলল
-আমিতো আপনার প্রেমিকা।
-ধন্যবাদ।
-প্রেমিকা হওয়ার জন্য?
-না বিরিয়ানির জন্য।
ষষ্ঠ দিন-
আজ অনেকক্ষণ হলো পার্কে ময়ুরীর জন্য অপেক্ষা করছি। ওর আসার কোনো খবরই নাই। ফোনে চার্জ আছে কিন্তু টাকা নাই। তাই কল দিতে পারছি না। কেমন যেন রাগ হচ্ছে আমার। আমি কারও উপর খুব সহজে রাগ করি না। কিন্তু ময়ুরীর উপর রাগ হলো। কিন্তু কেন? মানুষের তো সমস্যা থাকতেই পারে। এটা ঠিক ও আসবে বলেছে। কিন্তু আসেনি। এতে আমার এত রাগ হচ্ছে কেন? কি হচ্ছে এসব? এসব ভাবতেই দেখলাম কে যেন পিছন থেকে ডাকছে-
-পোলেন সাহেব। আমি মাথা ঘুরিয়ে দেখি ময়ুরী। তারপর ও বলল-
-রাগাতে পারলাম, তাই না? আমি একটা হাসি দিয়ে মাথা নাড়ালাম।
সপ্তম দিন-
ময়ুরীর সঙ্গে একটা ছেলে এসেছে। ওর বিএফ। আমাকে দেখে লোকটা বলল-
-আপনার গবেষণা কেমন চলল? আমি একটা হাসি দিয়ে বললাম-
-গবেষণা শেষ হয়নি এখনো! তবে আপনার প্রেমিকা হেল্প করাতেই অনেকটা হয়েছে। ময়ুরী তারপর বলল-
-ও আমার বন্ধু। বিএফ না।
-মানে? আমার মানে শুনে ময়ুরীর সঙ্গের ছেলেটা বলল-
-জ্বী ভাই। ও আমার ফ্রেন্ড। খুব ভালো ফ্রেন্ড। ওইদিন ও এমনিতেই আমার হাতটা ধরেছিল আর তখনি আপনি এসে বললেন আমার প্রেমিকার সঙ্গে কথা বলবেন। তাই ও ফাজলামো করেছিল।
-ওহ। আচ্ছা ময়ুরী আমি যাই। আর কাল এঙ্গেজমেন্টে আমি যাব না। আপনার সঙ্গে আর কথা হবে না মনে হয়।
-চলে যাবেন?
-হুম।
এটাই বলেই চলে আসলাম। ভাবতেই অবাক লাগছে ওর সঙ্গে কাটানো ছয়টা দিন কতই মধুর ছিলো। এখন নিজের উপর রাগ হচ্ছে কেন যে প্রথমদিন ওর সঙ্গে দেখা করলাম না? আজ সকাল ভোরেই আমি বাসা থেকে চলে এসেছি। আমার গবেষণাগারে। আজকে আমি যদি ময়ুরীদের বাড়িতে না যাই তাহলে বিয়েটা ভেঙে যাবে। কিন্তু আমার খারাপ লাগছে কেন? আমি যেরকম মেয়ে পছন্দ করি ময়ুরী সেই গুণ গুলোর অধিকারী। মাঝে মাঝে মনে হচ্ছে নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারছি। এটাই কি ভালবাসা? না না। আমার এসব ভাবলে হবে না। এখন আমার মস্তিষ্ক কোন চিন্তাতে ব্যস্ত রাখতে হবে। যেমন, গাছের পাতা গুলো যদি ডালার মতো হতো আর ডালা গুলো যদি পাতার মতো হতো তাহলে কেমন হতো? এসব ভাবতে ভাবতেই দেখলামকে যেন আসছে। দূর থেকে মুখটা বুঝা যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে ময়ুরী। এটাই হ্যালোসিনেশন। ময়ুরী আর আসবে না এখানে। কিন্তু একটু পর খেয়াল করে দেখলাম এটা ময়ুরীই। ও আমার সামনে এসে বলল-
-এখানে বসে বসে সুন্দরী সুন্দরী মেয়ে দেখলেই গবেষণার নামে কথা বলতে চান। তাই না?
-মানে? কি বলছেন এসব? আবোলতাবোল বলবেন না।
-উঠুন। আপনাকে আমিই বিয়ে করব। তারপর আপনাকে গবেষণা করে দেখব আপনার আসল মতলব কী। উঠুন।
ও আমার হাত ধরে হাটছে। হাতটা খুব শক্ত করে ধরেছে। ছুটে যেতে চাইলেও পারব না। এটাই গবেষণার ফলাফল। কি হচ্ছে এসব কিছুই বুঝতে পারছিনা। ময়ুরীর মুখে কেমন যেন দুষ্টুমির হাসি। আচ্ছা এ হাসি দিয়ে ও কী বুঝাচ্ছে?