আন্দোলনে কৃষক নেতারা এখনও অনড়
দুঃখ প্রকাশেই কি কৃষক আন্দোলনের ইতি? মোদি সরকার কৃষি আইন চালু করার পরেই তা প্রত্যাহারের দাবিতে কৃষকরা এক বছর ধরে যে ঐক্যবদ্ধ আপসহীন লড়াই চালিয়েছেন তার সামনে নতি স্বীকার করেছেন প্রধানমন্ত্রী। দেশজুড়ে কৃষকদের বিক্ষোভের মুখে পড়েও মোদি সরকার এতদিন অনড় ছিল, অবশেষে শুক্রবার তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণায় স্বভাবতই খুশি হয় কৃষকেরা। কিন্তু কৃষক নেতারা নিজেদের আন্দোলনে এখনও অনড়। প্রসঙ্গত,প্রধানমন্ত্রীর কৃষি বিল প্রত্যাহারের দিনই সংযুক্ত কিষাণ মোর্চার তরফে প্রধানমন্ত্রীকে মনে করিয়ে দিয়ে বলা হয় যে, বিগত বছর ধরে তাদের লাগাতার আন্দোলন কেবল তিন কৃষি আইন প্রত্যাহারেই সীমাবদ্ধ নয়। সমস্ত কৃষি পণ্য এবং সব কৃষকদের নুন্যতম সহায়ক মূল্যের গ্যারান্টির দাবিও তারা জানিয়ে এসেছেন।
অতএব, সরকারকে ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের গ্যারান্টি দিতে আইন প্রণয়ন করতে হবে। আন্দোলনকারীরা সংযুক্ত কিষাণ মোর্চার ছাতার তলায় দাঁড়িয়ে দাবি করেছে, কেবল মুখে কৃষি আইনগুলি প্রত্যাহার নয়, আইনমাফিক পদক্ষেপ করতে হবে সরকারকে। অর্থাৎ কৃষি আইন সংক্রান্ত একাধিক বিষয়ে আলোচনা বাকি রয়েছে। কৃষক নেতারা রবিবার এ বিষয়ে নিজেদের মধ্যে বৈঠক করেন।
কৃষকদের জেদের কাছে মোদি নতি স্বীকার করলেও মনে করার কারণ নেই যে, তারা মনেপ্রাণে খুশি। প্রসঙ্গত, শুক্রবার গুরুনানক জয়ন্তীর দিন সকালবেলা জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে মোদি দেশবাসীর কাছে দুঃখ প্রকাশ করে তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্তের কথা জানালেও কৃষক নেতা রাকেশ টিকায়েত দলের তরফ থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন,যতদিন পর্যন্ত কৃষি আইন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যাহার করে নেওয়া হচ্ছে ততদিন সিঙ্ঘু সীমান্তে কৃষকরা একইভাবেই বিক্ষোভ চালিয়ে যাবেন। রোববার তাদের সেই সিদ্ধান্তেই অনড় থাকলেন বিক্ষোভরত কৃষকরা। সিঙ্ঘু সীমান্তে একটি সাংবাদিক সম্মেলন করে কৃষক নেতা বলবির সিং রাজুওয়াল ফের কৃষক নেতা রাকেশ টিকায়েতের কথার পুনরাবৃত্তি করে জানান যতদিন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে কৃষি আইন প্রত্যাহার করে নেওয়া হচ্ছে এবং কেন্দ্রের তরফ কৃষকদের অন্যান্য দাবিদাওয়া মেনে না নেওয়া হচ্ছে ততদিন তারা এইভাবেই আন্দোলন জারি রাখবেন।উল্লেখ্য কৃষি আইন প্রত্যাহার ছাড়াও কৃষকদের তরফ থেকে আরও কিছু দাবিদাওয়া ছিল।
উল্লেখা,কৃষকরা যে তিনটি আইনের বিরোধিতায় আন্দোলন শুরু করেছিলেন, তার মধ্যে ফার্মারস প্রডিউস ট্রে এন্ড কমার্স আইন ২০২০।উপযুক্ত মুল্যে ফসল সংগ্রহ নিশ্চিত করতে নূন্যতম সমর্থন মূল্যের বা এমএসপি এবং প্রচলিত খাদাশস্য সংগ্রহ ব্যবস্থা অব্যাহত রাখার জন্য একটি বিল আকারে লিখিত আশ্বাসেরও দাবি করেন। এপিএমসি বা মাণ্ডি বাবস্থা যাতে সুরক্ষিত থাকে তার জন্যও কৃষক সংগঠনগুলি দাবি জানায়।এর পাশাপাশি কৃষকদের দাবি বিদুৎ সংশোধনী বিল প্রত্যাহার করা। কারণ তাঁরা মনে করেন যে এই আইনের কারণে বিনামুলো বিদ্যুৎ পাবেন না। এছাড়া খড় পোড়ানোর জন্য জরিমানা ও জেলের মেয়াদ রাখা যাবে না। কৃষকদের দাবি স্বামীনাথন কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী।স্বামীনাথন কমিশনের রিগোটে বলা হয় যে সরকারকে উৎপাদনের ওজনযুক্ত গড় খরচের থেকে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ বেশি এমএমপি বাড়াতে হবে।
কৃষকদের দাবি কেন্দ্রীয় সরকারকে এমএসপি নুন্যতম মুল্যের উপরে একটি আইন প্রণয়ন করতে হবে। অন্যদিকে গত এক বছরে আন্দোলন চলাকালীন বহু কৃষকের বিরুদ্ধে আইপিসির একাধিক ধারায় মামলা করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারকে সেই সমস্ত মামলা প্রত্যাহার করে নিতে হবে। কেন্দ্র সরকার যতদিন না পর্যন্ত কৃষকদের এইসব দাবি না মেটাচ্ছে ততদিন তারা আন্দোলন থেকে সরছেন না।
প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পরও কৃষকদের যৌথ মঞ্চ সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা রোববার বৈঠকের পর জানিয়েছে,আগে ঠিক হয়ে থাকা কোনো কর্মসূচির কোনো পরিবর্তন আপাতত হচ্ছে না। অর্থাৎ, এই মাসে লখনৌতে কিষাণ মহাপঞ্চায়েত, দিল্লিতে জমায়েত ও সংসদ অভিযানের বিষয়ে তারা যে কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন,তা বহাল থাকছে। এমনকি দিল্লি সীমান্তের বিক্ষোভ আন্দোলনে জায়গা থেকেও তারা সরছেন না। আসলে মোদি কৃষি আইন প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা করলেও তা কীভাবে বাস্তবারয়িত হবে সেকথা জানান নি। ফলে সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপ কি হয় সেদিকে তারা নজর রাখছেন।