মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫ | ১৬ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

দুর্ঘটনা ও ভিন্ন ভাবনা

‘বাস-ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ: চালকসহ নিহত ৮’, ‘রেলগেটে ট্রেন গুড়িয়ে দিল বাস: ৫ জনের মৃত্যু’, ‘ট্রাকের ধাক্কায় গুড়িয়ে গেল মাইক্রোবাস: ৪ যাত্রী হত’, ‘বাসের ধাক্কায় সিএনজি পিষ্ট: ৩ জনের মৃত্যু’, ‘বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে আরও ১ ছাত্রের মৃত্যু’, ‘নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাস খাদে: ২৫ জন আহত’!

এ ধরনের শিরোনাম পত্রিকায় নিয়মিত দেখে আমরা অভ্যস্ত। এতটাই অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি আমরা যে, পুরো খবরটুকু আর পড়িই না। কোথায় ঘটলো, দিনে না রাতে, এর বেশি আর হয়তো এগোই না। ছাত্র মারা গেলে সে কোন প্রতিষ্ঠানের, হয়তো বা সেটুকু পর্যন্তই পড়ি। আর এই যে কয়েকটি হেডলাইন উপরে লেখা হলো, এর শেষেরটির মতো কোনো হেডলাইন পত্রিকায় দেখলে আমরা আর পাত্তাই দেই না। ২৫ জন শুধু আহত, কেউ যখন মারা যায়নি, এটিকে আর তেমন বড় বা মারাত্মক কোনো দুর্ঘটনাই মনে করি না!

বাস্তবতা হলো–সড়ক বা রেলপথে যে কোনো দুর্ঘটনায় যত মানুষের মৃত্যু হয়, সাধারণত আহত হয় তারচেয়ে বেশি মানুষ। ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ নামক সংগঠনটির তথ্য অনুযায়ী, কেবল ২০২১ সালেই বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৪ হাজার ২৮৯টি, এতে মৃত্যুবরণ করেছে ৫ হাজার ৬৮৯ জন এবং আহত হয়েছে ৫ হাজার ৮০৫ জন। এগুলো শুধু কয়েকটি সংখ্যা বা পরিসংখ্যান নয়, এগুলো হাজার হাজার মানুষ, হাজার হাজার শোকার্ত পরিবার!

দুর্ঘটনায় আহতদের মধ্যে কারও ক্ষেত্রে হয়তো জখমের মাত্রা খুবই কম ঘটে, যা প্রাথমিক চিকিৎসাতেই সারিয়ে দেওয়া সম্ভব; কিন্তু সব মানুষ তো এতটা ভাগ্যবান নয়। হাত-পা ভেঙে গেলে সার্জারি-প্লাস্টার করে সেগুলোকেও সারিয়ে তোলা সম্ভব। সাময়িকভাবে হয়তো তারা কয়েক সপ্তাহ ভুগবে। এরপর আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে; কিন্তু হেড ইনজুরি, মেরুদণ্ডে ফ্র্যাকচার, ডিস্ক সরে যাওয়া, হাত বা পা অ্যাম্পুটেশন (সম্পুর্ণভাবে কেটে যাওয়া)–এমন জখমগুলো ঘটছে তো প্রতিদিনই। এই মানুষগুলোর কথা কি আমরা কখনও ভেবে দেখেছি? পত্রপত্রিকায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়া, দুর্ঘটনায় আহত এই মানুষদের নিয়ে ফলোআপ খবর কি প্রকাশিত হয়?

হয়। সেলেব্রিটি কেউ দুর্ঘটনায় আহত হলে ফলোআপ হয়। হাসপাতালের বাইরে থেকে রাত-দিন লাইভ টেলিকাস্টও হয়; কিন্তু আমজনতার কথা কেউ মনে রাখে না। এই মানুষদের বড় একটি অংশ হয়ে পড়ে শারীরিক প্রতিবন্ধী। একটি দুর্ঘটনার খেসারত বহন করতে হয় বাকি জীবনব্যাপী। চিকিৎসা খরচ তো আছেই, অনেকেই আবার চাকরি হারায়, আগের কাজে আর ফিরে যেতে পারে না, ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়, শারীরিক ও আর্থিকভাবে অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। অনেকেরই নামের আগে ‘ল্যাংড়া’ টাইপের একটি বিশেষণ যুক্ত হয়ে যায় বাকি জীবনের জন্য। যার ফলে শারীরিক সমস্যাটির পাশাপাশি মানসিক আঘাত পেতে হয় প্রতিনিয়ত। প্রতিবন্ধী হয়ে যাওয়া এমন নারীদের ক্ষেত্রে স্বামীর অন্যত্র চলে যাওয়াও প্রায় মামুলি একটি ঘটনা।

দুরপাল্লার বাস বা ট্রাক চালকরা যে আয় করে, তাতে তাদের সংসার মোটামুটি চলে যায়; কিন্তু হঠাৎ দুর্ঘটনায় যদি এমন একজন চালক একটি বা দুটি পা হারান, নতুন করে তাদের আর কোনো পেশায় যাওয়ার সুযোগও থাকে না, পরিবারেরও পথে বসা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না। এই পরিবারগুলোর পুনর্বাসনের কথা কি আমরা ভেবেছি?

আজ থেকে তিন-চার দশক আগে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলো থেকে এ্যাম্পুটেশন করা রোগীর ছুটি দেওয়ার সময় যে সুপারিশ লিখে দেওয়া হতো, এখনও সেগুলোই দেওয়া হচ্ছে। স্টাম্পের যত্ন নিবেন, ক্রাচে ভর করে হাঁটবেন, ওষুধ নিয়মিত খাবেন, ক্ষত স্থানে ড্রেসিং করাবেন, ৭ দিন পরে এসে স্টিচ কেটে যাবেন ইত্যাদি। কৃত্রিম অঙ্গের পরামর্শও হয়তো দেওয়া হয়; কিন্তু পুর্ণবয়ষ্ক এই মানুষটিকে যে আবার নতুন করে একটি এক বছর বয়সের শিশুর মতো করে হাঁটা শিখতে হবে। সেটি কি সহজ কাজ? শিশুর হামাগুড়ি দেওয়া থেকে উঠে দাঁড়িয়ে হাঁটা শেখার মতো কিন্তু এটি নয়। একে তো অঙ্গহানির মানসিক যন্ত্রনা, তার উপর শরীরের ভার নিয়ে দাঁড়ানো বা হাঁটতে না পারার মানসিক যন্ত্রনা, চিকিৎসার আর্থিক ব্যয়, ভবিষ্যৎ কর্মজীবন বা আয়ের পথ, ইত্যাদি মানসিক অস্থিরতার কথা কি আমরা ভেবেছি? শারীরিক প্রতিবন্ধিতার পাশাপাশি মানসিক যন্ত্রণায় ভোগা এই মানুষদের কাউন্সেলিং-এর কথা কি আমরা ভাবি? দেশের হাসপাতালগুলিতে এই নব্য প্রতিবন্ধিতায় পড়া মানুষগুলোকে বাকী জীবনের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত করার মত প্রশিক্ষিত জনবল আছে কি?

আমাদের দেশের চিকিৎসাসেবা নিয়ে শত অভিযোগ এবং দুর্নাম থাকলেও বাস্তবতা হলো, আমাদের গড় আয়ু বেড়েছে, নবজাতক এবং ৫ বছর পর্যন্ত বয়সের শিশুমৃত্যুর হার দারুণভাবে কমে গেছে, মাতৃমৃত্যুর হারও কমেছে অনেক, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতেও অসংখ্য হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র নির্মান করা হয়েছে। টিকাদান কর্মসূচীতে আমরা বিশ্বের রোল মডেল। এগুলো অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু প্রতিবন্ধী মানুষের চিকিৎসাসেবা পাওয়া যায় কয়টি জায়গায়? একটি কৃত্রিম অঙ্গের জন্য টেকনাফ বা তেতুলিয়ার মানুষকেও কি এক ঢাকাস্থ পঙ্গু হাসপাতালেই আসতে হবে?

পোলিওর মতো একটি মারাত্মক রোগ, যা এক সময় লক্ষ লক্ষ শিশুর জন্য বিভীষিকা ছিল, তা নির্মূল হয়েছে বেশ কয়বছর আগেই। কিন্তু এই দেশেই চল্লিশোর্ধ বয়সের অসংখ্য মানুষ এখনও আছে, যারা শিশুবয়সে পোলিওতে আক্রান্ত হয়ে সারা জীবনের জন্য শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধিতা নিয়ে বেঁচে আছে। দেশের প্রতিটি জেলা বা উপজেলাতেই এমন অসংখ্য মানুষ পাওয়া যাবে, যাদের পোলিওর ফলে এক বা দুই পায়ে পেশীগুলো শুকিয়ে শক্ত হয়ে যাবার কারণে হাঁটতে প্রচন্ড কষ্ট হয়। কেউ হুইলচেয়ারে আবদ্ধ, কেউ ক্রাচে ভর করে, বা কেউ এখনও লাঠি ব্যবহার করে হাঁটতে পারে। পেশি শুকিয়ে যাবার ফলে অধিকাংশের ক্ষেত্রেই দুটি পা সমভাবে বড় হতে পারেনি বলে কোনো সহায়ক উপকরণ ব্যবহার করতে না হলেও খুঁড়িয়ে হাঁটতে হয়। পরিবার থেকে এই মানুষদের মধ্যে শিশুকালে যারা সহযোগিতা পেয়েছিল, তাদের অনেকেই লেখাপড়া সমাপ্ত করেছে, জীবনে প্রতিষ্ঠালাভও করেছে। সমস্যা হলো, এই মানুষদের এই পোলিও আক্রান্ত পায়ে যদি দুর্ঘটনায় কোনো ফ্র্যাকচার হয়, তার চিকিৎসা বা সার্জারী কিভাবে করতে হবে, সেই জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতাসম্পন্ন চিকিৎসক এই দেশে খুব বেশি নেই। ঢাকার একটি বা দুটি হাসপাতাল ছাড়া তাদের চিকিৎসার সুযোগ নেই।

প্রতিবন্ধী মানুষেরা বাংলাদেশেও কিন্তু আর ঘরে বসে নেই। তারা লেখাপড়া করছে, চাকরি করছে, ব্যবসা করছে। তাদেরও তো চলাফেরা করতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। একটু ভাবুন তো দুর্ঘটনায় পড়া একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মানুষের অসহায়ত্বের কথা। কোথায় তাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, কে নিয়ে যাচ্ছে, তাকে কেন বসিয়ে রাখা হচ্ছে, এর পর সে কোথায় যাবে, ইত্যাদি বিষয়গুলো নিয়ে তাকে সহযোগিতা করছে কে? ভাবুন তো একজন শ্রবণ-বাক প্রতিবন্ধী মানুষের কথা! হাসপাতালগুলোতে কতজন মানুষ ইশারা ভাষা বুঝে? অটিজম বৈশিষ্টসম্পন্ন বা বুদ্ধি প্রতিবন্ধী একটি শিশূ দুর্ঘটনায় বাবা-মা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে তাকে কীভাবে সামাল দেওয়া হবে, ভাবতে পারেন?

গত কয়েক দশকে সেতু, সড়ক ও মহাসড়কের প্রভূত উন্নতি এবং দেশে দ্রুতগামী বাস-ট্রাক আমদানি হবার ফলে সড়কে যানবাহনের গতি অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। কিন্তু বাড়েনি চালকের প্রশিক্ষণ। যার ফলে দুর্ঘটনাগুলো ঘটেই চলেছে। যারা নিয়মিত মহাসড়কে যাতায়াত করেন, তাঁরা নিশ্চয়ই সুনির্দিষ্ট কিছু ট্রান্সপোর্ট কোম্পানির নাম বলতে পারবেন, যাদের বাসগুলো বেপরোয়াভাবে চালানো হয়। এই কোম্পানিগুলো তাদের এত অসংখ্য বাসের জন্য এমন বেপরোয়া অসংখ্য চালক কোথায় পায়, এটি আসলেই ভাববার বিষয়। তবে শুধু চালকের দোষ ধরাও ঠিক নয়। সড়ক কখন ও কিভাবে হেঁটে পার হওয়া যাবে, সে ব্যাপারে আমরা পথচারীরাও বড়ই উদাসীন। শিশুদের শিক্ষাক্রমে যেমন এটি অনুপস্থিত, তেমন এ ব্যাপারে বড়দেরও সচেতনতা বাড়াবার ক্ষেত্রে তেমন উদ্যোগ নেই। তাই যখন ইচ্ছে তখন এক হাত তুলে সড়কের মাঝখানে আমরা নেমে পড়ছি। এভাবে রাস্তা পার হবার কারণে শহরগুলোতে বাড়াচ্ছি জ্যাম, আর মহাসড়কে হয় চাপা পড়ছি, বা আমাদের বাঁচাতে গিয়ে দ্রুতগামি বাস-ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনায় পড়ছে। দায় এসে পড়ছে কেবল ড্রাইভার বা মালিকের উপর।

মহাসড়কের আসেপাশে পর্যাপ্ত ট্রমা সেন্টার গড়ে তোলা হয়নি, যেখানে দুর্ঘটনায় পড়ে আহত হওয়া মানুষদের দ্রুত নিয়ে যাওয়া সম্ভব। ম্যানেজমেন্ট করতে দেরি হয়ে যাবার কারণে রক্তক্ষরণেই হয়তো মারা যাচ্ছে মানুষ, অথবা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া অঙ্গের সংযোজন আর সম্ভব হয়ে উঠছে না। জীবন বাঁচাতে অ্যাম্পুটেশন করে ফেলতে হচ্ছে। বেড়ে যাচ্ছে প্রতিবন্ধী মানুষের সংখ্যা।

ভবন ধসে গিয়েই হোক, আর সড়কে-মহাসড়কেই হোক, যে কোনো দুর্ঘটনায় আপনা আপনিই লোক জড়ো হয়ে যায়। সাধারণ মানুষ এগিয়ে আসে নিঃস্বার্থভাবে দুর্ঘটনায় কবলিত মানুষদের উদ্ধার করে নিকটতম চিকিৎসাকেন্দ্র পর্যন্ত পৌঁছে দেয়ার জন্য। উন্নত দেশগুলোতে যেমন এটি হয়, আমাদের দেশেও এর ব্যতিক্রম তো হয়ই না, বরং জনসংখ্যার আধিক্যের কারণে বিপুল পরিমাণ মানুষ খুব অল্প সময়েই উদ্ধার কাজে নেমে পড়ে। এর উদাহরণ আমরা বারবার দেখেছি। এক রানা প্লাজা ধসের সময় কত হাজার সাধারণ মানুষ স্বেচ্ছায় জড়িত হয়েছিল, তার হিসেব করা যাবে না। তবে এটিতে একটি সমস্যাও আছে।

উন্নত দেশগুলোতে সাধারণ মানুষের মধ্যে দুর্ঘটনায় পড়া একজন বিপন্ন মানুষকে কিভাবে উদ্ধার করতে হবে, সে ব্যাপারে একটি বেসিক সচেতনতা আছে, যা আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে আমরা সৃষ্টি করতে পারিনি। দুর্ঘটনায় পড়া একজন মানুষকে উদ্ধার বা স্থানান্তর করতে হলে অবশ্যই তার ঘাড় এবং মাথাকে স্থির বা নিশ্চল করতে হবে। আমরা হয়তো চারজন আহত মানুষটির চার হাত-পা ধরে চ্যাংদোলা করে টেনে নিয়ে যাই, মাথা ঝুলতে থাকে। এটি যে কতটা বিপজ্জনক, আমরা হয়তো সেটি জানিই না। মানুষের মেরুদণ্ডের ৩৩টি হাড়ের প্রথম দুটির গঠন বাকীগুলো থেকে একেবারেই ভিন্ন। এ কারণেই আমরা আমাদের মাথা ডানে-বামে, উপর-নীচে নানাভাবে ঘুরাতে পারি। কিন্তু একটু এদিক সেদিক হঠাত চাপ পড়লে হাড়ের ভেতরে থাকা মেরুরজ্জু (স্পাইনাল কর্ড) ছিঁড়ে যেতে পারে, বা তার উপর অস্বাভাবিক চাপ পড়তে পারে, যার ফলে ঘাড়ের নিচ থেকে স্থায়ীভাবে প্যারালাইসিস হয়ে যেতে পারে। ঘাড় এবং মাথাকে স্থির না করে উদ্ধার করতে গেলে সামান্য অসাবধানতার কারণে উপকার করতে গিয়েও আমরা অনেক সময় মারাত্মক ক্ষতি করে ফেলছি। অথচ এ ব্যাপারে সচেতনতা বাড়ানো হচ্ছে না। সামান্য অসচেতনতার কারণে প্রতিবন্ধী মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।

যেসব স্কুলে স্কাউটিং প্রোগ্রাম আছে, সেখানে স্কাউটসরা ছোটবেলা থেকেই এ ধরনের কিছুটা ধারণা পায়। দুটি লাঠি বা বাঁশ এবং দুটি শার্ট বা টি-শার্ট দিয়ে কত সহজে একটি স্ট্রেচার বানিয়ে ফেলা যায়! তবে এমন প্রশিক্ষিত মানুষের সংখ্যা তো খুব বেশি নয়। আমাদের দেশেই প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করার জন্য উপকূলীয় এবং বন্যাপ্রবণ জেলাগুলোতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে এবং রেড ক্রিসেন্ট বা অন্যান্য এনজিওদের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবী তৈরি করা হয়েছে। সাইক্লোনে মাত্র তিন-চার দশক আগেও যেখানে লক্ষাধিক মানুষ মারা যেত, সেটিকে ১০-এর নিচে নামিয়ে আনতে আমরা সক্ষম হয়েছি। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় আমরা বিশ্বের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছি। তাহলে যেসব ইউনিয়নের পাশ দিয়ে মহাসড়ক অবস্থিত, সেই ইউনিয়ন পরিষদগুলোকে সম্পৃক্ত করে একটি দেশব্যাপী সচেতনতা এবং প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম পরিচালনা করা কি খুবই অসম্ভব?

প্রতিটি দুর্ঘটনায় বেড়ে যাচ্ছে দেশে প্রতিবন্ধী মানুষের সংখ্যা! বাড়ছে তাদের বিপত্তি। দুর্ঘটনার দুটি দিক নিয়েই নতুনভাবে ভাবতে হবে।

এক মুঠ গুড়, এক চিমটি লবণ এবং আধা সের পানি–ডায়রিয়ার ব্যবস্থাপনায় আইসিডিডিআরবি উদ্ভাবিত ওরস্যালাইন বানাবার এই যুগান্তকারী সহজ পদ্ধতি দেশের সকল মানুষ জেনেছে হুমায়ুন আহমেদের জনপ্রিয় টিভি নাটকে আসাদুজ্জামান নুরের ডায়রিয়া রোগীর অভিনয়ের মাধ্যমে। দেশে এখনও তো জনপ্রিয় বহু অভিনেতা আছেন, যাদের নাটক সাধারণ মানুষ দেখবেই। তারাও কি পারেন না জনস্বার্থে তাদের নাটকগুলোতে জীবনরক্ষাকারী বা দুর্ভোগ কমানো যাবে, এমন কিছু মেসেজ সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে? টিভি চ্যানেলগুলোরও কি এই ব্যাপারে কোনো দায়িত্ব নেই?

লেখক: ডিস্যাবিলিটি এন্ড ডেভেলপমেন্ট কনসাল্ট্যান্ট

এসএ/

Header Ad
Header Ad

এই মুহূর্তে ইমরানকে দরকার পাকিস্তানের, মুক্তি ও সর্বদলীয় বৈঠক নিয়ে আলোচনা!

ছবি: সংগৃহীত

ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। এর মধ্যে সোমবার রাতেও দু’দেশের সেনাদের মধ্যে সীমান্তে গোলাগুলি হয়। এমন পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও কারাবন্দি নেতা ইমরান খানের মুক্তি দাবি করেছে প্রধান বিরোধী দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)।

পাকিস্তানি ইংরেজি দৈনিক দ্য ডন-এর বরাত দিয়ে মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) এমনটি জানানো হয়।

সোমবার সিনেটে পিটিআইর পক্ষ থেকে জানানো হয়, এ জাতীয় সংকটময় পরিস্থিতিতে সর্বদলীয় সম্মেলন (Multi-Party Conference) আহ্বান করা প্রয়োজন, যাতে দেশের রাজনৈতিক নেতারা একসঙ্গে বসে জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুতে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। এই বৈঠকে ইমরান খানের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে তার জেল থেকে মুক্তিরও দাবি জানানো হয়।

পিটিআইয়ের সিনেটর আলী জাফর বলেন, “রাজনৈতিক মতভেদ ভুলে এখন দেশের স্বার্থে ঐক্য প্রয়োজন। ইমরান খানের উপস্থিতি বিশ্বকে দেখাবে— পাকিস্তান ঐক্যবদ্ধ।” তিনি আরও বলেন, ইমরান যদি অংশ নেন, তাহলে তা হবে শক্তিশালী কূটনৈতিক বার্তা।

পিটিআই নেতা শিবলি ফারাজ আরও একধাপ এগিয়ে ইমরান খানকে টেলিভিশনে ভাষণ দেওয়ার অনুমতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তার দাবি, ইমরান টিভির মাধ্যমে জনগণকে মিনার-ই-পাকিস্তানে জমায়েত হওয়ার এবং ওয়াগা সীমান্তে পদযাত্রা করার ডাক দিলে এক কোটির বেশি মানুষ সাড়া দেবে।

তার ভাষায়, “শুধু জনগণের প্রকৃত প্রতিনিধি ভারতকে যথাযথ বার্তা দিতে পারেন।”

ক্ষমতাসীন পাকিস্তান মুসলিম লীগ (নওয়াজ) বা পিএমএল-এন–এর সিনেটর ইরফানুল হক সিদ্দিকী ভারতের প্রতি কঠোর সমালোচনা করে বলেন, “পেহেলগামের হামলা আসলে একটি ফলস ফ্ল্যাগ অপারেশন— যা ভারতের নিজস্ব সংস্থারই পরিকল্পিত, পাকিস্তানকে হেয় করার উদ্দেশ্যে।”

তিনি বলেন, পাকিস্তান বরাবরই সন্ত্রাসবাদের শিকার, বরং ভারত এখন নাৎসি চিন্তাধারায় বিশ্বাসী সরকার দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে।

পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী করেছে। যদিও পাকিস্তান এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং বলছে, তারাই বরং দীর্ঘদিন ধরে চরমপন্থী হামলার শিকার। দুই দেশের মধ্যে এই উত্তেজনা বিশ্ব রাজনীতিতেও উদ্বেগ তৈরি করেছে। বিশ্লেষকদের মতে, পরিস্থিতি যুদ্ধাবস্থার দিকে গড়াতে পারে।

Header Ad
Header Ad

টাঙ্গাইলে এলজিইডিতে দুদকের অভিযানে অর্থ আত্মসাতের পাওয়া গেছে প্রমাণ

ছবি : ঢাকাপ্রকাশ

প্রকল্প বাস্তবায়ন না করেই বিভিন্ন প্রকল্পের বরাদ্দকৃত অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে টাঙ্গাইল এলজিইডিতে অভিযান পরিচালনা করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এই অভিযানে তারা বিভিন্ন প্রকল্পের নামে আসা বরাদ্দকৃতের অর্থ আত্মসাতসহ নানা অনিয়ম, দুর্নীতির প্রাথমিত প্রমাণ পেয়েছেন।

মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) দুপুরে টাঙ্গাইল এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ কামরুজ্জামানের উপস্থিতিতে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। 

প্রাথমিকভাবে অভিযোগের দুদক জানায়, বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে নানাবিধ অনিয়ম ও দুর্নীতি, একাধিক প্রকল্পের কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন না করেই বিধিবহির্ভূতভাবে অগ্রিম বিল উত্তোলন, এলজিইডি'র তত্ত্বাবধানে গ্রাম-গঞ্জের রাস্তা এবং ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণকাজে নিম্নমাণের সামগ্রী ব্যবহার ও কাজের গুণগতমান বজায় না রাখা এবং উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে এলজিইডির বিভিন্ন কর্মকর্তাগণ কর্তৃক নানাবিধ অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে অভিযান পরিচালনা করা হয়।

টাঙ্গাইল দুদকের সহকারী পরিচালক মো. নুর আলম জানান, দুদকের প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশ মোতাবেক টাঙ্গাইল এলজিইডিতে আমরা অভিযান পরিচালনা করেছি। অভিযানে প্রাথমিকভাবে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। সেগুলো সরেজমিনে মাঠ পর্যায়ে গিয়ে যাচাই-বাছাই করব এবং পরে এ বিষয়গুলো কমিশনকে জানাবো।

তিনি আরও জানান, একদিনে জেলার সবগুলো উপজেলায় যাওয়া সম্ভব না। তাই পরবর্তীতে অন্যান্য উপজেলাগুলোতে অভিযান পরিচালনা করা হবে।

Header Ad
Header Ad

লক্ষাধিক নতুন রোহিঙ্গাকে আশ্রয়ের অনুরোধ জানাল জাতিসংঘ

ছবি: সংগৃহীত

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান সহিংসতার কারণে নতুন করে বাস্তুচ্যুত প্রায় ১ লাখ ১৩ হাজার রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশকে অনুরোধ জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রেফিউজি রিলিফ অ্যান্ড রিপ্যাট্রিয়েশন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।

তুরস্কভিত্তিক রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আনাদোলু এজেন্সিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মিজানুর রহমান জানান, ইউএনএইচসিআরের পক্ষ থেকে সম্প্রতি পাঠানো একটি চিঠিতে বাংলাদেশের প্রতি এ অনুরোধ জানানো হয়েছে।

তিনি বলেন, “নতুন আসা রোহিঙ্গাদের অনেকেই কক্সবাজারের সীমান্তবর্তী এলাকায় অস্থায়ী তাঁবু, স্কুল ও মসজিদে আশ্রয় নিয়েছে। এখন ইউএনএইচসিআর চায়, এদেরকে শরণার্থী শিবিরে স্থানান্তর করা হোক।”

গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, নতুন আসা এই রোহিঙ্গাদের পরিবার সংখ্যা প্রায় ২৯ হাজার ৬০৭টি, যার মধ্যে গত সপ্তাহেই ১ হাজার ৪৪৮টি পরিবার নাফ নদী পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।

কমিশনার মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, “নতুন রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার বিষয়ে এখনো সরকার কোনো আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নেয়নি। কারণ, বারবার নতুন শরণার্থী গ্রহণ করলে পুনর্বাসন ও প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া জটিল হয়ে পড়বে।”

মিয়ানমারের জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে চলমান লড়াইয়ে ‘আরাকান আর্মি’ রাখাইন রাজ্যের সীতওয়ে ব্যতীত অধিকাংশ অঞ্চল নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। এর ফলে রাখাইনে মানবিক সংকট আরও ঘনীভূত হয়েছে এবং রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নতুন করে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

২০১৭ সালের আগস্টে আরসা কর্তৃক পুলিশের ওপর হামলার জেরে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রাখাইনের রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর দমন-পীড়ন চালায়। তখন প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। বর্তমানে কক্সবাজারের বিভিন্ন শিবিরে প্রায় ১৫ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছে, যা বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী বসতি।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

এই মুহূর্তে ইমরানকে দরকার পাকিস্তানের, মুক্তি ও সর্বদলীয় বৈঠক নিয়ে আলোচনা!
টাঙ্গাইলে এলজিইডিতে দুদকের অভিযানে অর্থ আত্মসাতের পাওয়া গেছে প্রমাণ
লক্ষাধিক নতুন রোহিঙ্গাকে আশ্রয়ের অনুরোধ জানাল জাতিসংঘ
ডাকাত দেখে আতঙ্কে অসুস্থ গৃহকর্তা, পানি খাইয়ে সেবা করল ডাকাতরা, পরে লুট
‘মানবিক করিডর’ নিয়ে নানা প্রশ্ন : স্পষ্ট করলেন প্রেসসচিব
ভারতীয় ড্রোন ভূপাতিত করল পাকিস্তান সেনাবাহিনী
মাদরাসার শিক্ষকদের জন্য বড় সুখবর
দীপ্ত টিভির সংবাদ কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা
সব রুফটপ রেস্তোরাঁর ট্রেড লাইসেন্স বাতিল
মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে পুলিশের প্রতি প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান
নিলামে তুলেও এস আলম গ্রুপের সম্পত্তি বিক্রি করতে পারছে না ব্যাংকগুলো
সেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই চার বছর পর সাদমানের সেঞ্চুরি
স্টারলিংকের লাইসেন্স অনুমোদন প্রধান উপদেষ্টার, মাসিক খরচের বিষয়ে যা জানা গেল!
রাখাইনের সঙ্গে মানবিক করিডরের বিষয়টি স্পষ্ট করুন: জামায়াত আমির
প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা পাচ্ছেন দশম গ্রেড, সহকারী শিক্ষক ১২তম
এনসিপির সঙ্গে আমার কোনো ধরনের সম্পর্ক নেই: উমামা ফাতেমা
আওয়ামী লীগ সরকার পুলিশকে দলীয় বাহিনীতে পরিণত করেছিল: প্রধান উপদেষ্টা
আত্মসমর্পণ করলেন তারেক রহমানের খালাতো ভাই
চার শতাধিক যাত্রী নিয়ে ঢাকা ছাড়ল বছরের প্রথম হজ ফ্লাইট
রাখাইনে মানবিক করিডর দেওয়া নিয়ে আলোচনা করা উচিত ছিল: ফখরুল