বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ | ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
Dhaka Prokash
Header Ad

দুর্ঘটনা ও ভিন্ন ভাবনা

‘বাস-ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ: চালকসহ নিহত ৮’, ‘রেলগেটে ট্রেন গুড়িয়ে দিল বাস: ৫ জনের মৃত্যু’, ‘ট্রাকের ধাক্কায় গুড়িয়ে গেল মাইক্রোবাস: ৪ যাত্রী হত’, ‘বাসের ধাক্কায় সিএনজি পিষ্ট: ৩ জনের মৃত্যু’, ‘বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে আরও ১ ছাত্রের মৃত্যু’, ‘নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাস খাদে: ২৫ জন আহত’!

এ ধরনের শিরোনাম পত্রিকায় নিয়মিত দেখে আমরা অভ্যস্ত। এতটাই অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি আমরা যে, পুরো খবরটুকু আর পড়িই না। কোথায় ঘটলো, দিনে না রাতে, এর বেশি আর হয়তো এগোই না। ছাত্র মারা গেলে সে কোন প্রতিষ্ঠানের, হয়তো বা সেটুকু পর্যন্তই পড়ি। আর এই যে কয়েকটি হেডলাইন উপরে লেখা হলো, এর শেষেরটির মতো কোনো হেডলাইন পত্রিকায় দেখলে আমরা আর পাত্তাই দেই না। ২৫ জন শুধু আহত, কেউ যখন মারা যায়নি, এটিকে আর তেমন বড় বা মারাত্মক কোনো দুর্ঘটনাই মনে করি না!

বাস্তবতা হলো–সড়ক বা রেলপথে যে কোনো দুর্ঘটনায় যত মানুষের মৃত্যু হয়, সাধারণত আহত হয় তারচেয়ে বেশি মানুষ। ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ নামক সংগঠনটির তথ্য অনুযায়ী, কেবল ২০২১ সালেই বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৪ হাজার ২৮৯টি, এতে মৃত্যুবরণ করেছে ৫ হাজার ৬৮৯ জন এবং আহত হয়েছে ৫ হাজার ৮০৫ জন। এগুলো শুধু কয়েকটি সংখ্যা বা পরিসংখ্যান নয়, এগুলো হাজার হাজার মানুষ, হাজার হাজার শোকার্ত পরিবার!

দুর্ঘটনায় আহতদের মধ্যে কারও ক্ষেত্রে হয়তো জখমের মাত্রা খুবই কম ঘটে, যা প্রাথমিক চিকিৎসাতেই সারিয়ে দেওয়া সম্ভব; কিন্তু সব মানুষ তো এতটা ভাগ্যবান নয়। হাত-পা ভেঙে গেলে সার্জারি-প্লাস্টার করে সেগুলোকেও সারিয়ে তোলা সম্ভব। সাময়িকভাবে হয়তো তারা কয়েক সপ্তাহ ভুগবে। এরপর আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে; কিন্তু হেড ইনজুরি, মেরুদণ্ডে ফ্র্যাকচার, ডিস্ক সরে যাওয়া, হাত বা পা অ্যাম্পুটেশন (সম্পুর্ণভাবে কেটে যাওয়া)–এমন জখমগুলো ঘটছে তো প্রতিদিনই। এই মানুষগুলোর কথা কি আমরা কখনও ভেবে দেখেছি? পত্রপত্রিকায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়া, দুর্ঘটনায় আহত এই মানুষদের নিয়ে ফলোআপ খবর কি প্রকাশিত হয়?

হয়। সেলেব্রিটি কেউ দুর্ঘটনায় আহত হলে ফলোআপ হয়। হাসপাতালের বাইরে থেকে রাত-দিন লাইভ টেলিকাস্টও হয়; কিন্তু আমজনতার কথা কেউ মনে রাখে না। এই মানুষদের বড় একটি অংশ হয়ে পড়ে শারীরিক প্রতিবন্ধী। একটি দুর্ঘটনার খেসারত বহন করতে হয় বাকি জীবনব্যাপী। চিকিৎসা খরচ তো আছেই, অনেকেই আবার চাকরি হারায়, আগের কাজে আর ফিরে যেতে পারে না, ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়, শারীরিক ও আর্থিকভাবে অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। অনেকেরই নামের আগে ‘ল্যাংড়া’ টাইপের একটি বিশেষণ যুক্ত হয়ে যায় বাকি জীবনের জন্য। যার ফলে শারীরিক সমস্যাটির পাশাপাশি মানসিক আঘাত পেতে হয় প্রতিনিয়ত। প্রতিবন্ধী হয়ে যাওয়া এমন নারীদের ক্ষেত্রে স্বামীর অন্যত্র চলে যাওয়াও প্রায় মামুলি একটি ঘটনা।

দুরপাল্লার বাস বা ট্রাক চালকরা যে আয় করে, তাতে তাদের সংসার মোটামুটি চলে যায়; কিন্তু হঠাৎ দুর্ঘটনায় যদি এমন একজন চালক একটি বা দুটি পা হারান, নতুন করে তাদের আর কোনো পেশায় যাওয়ার সুযোগও থাকে না, পরিবারেরও পথে বসা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না। এই পরিবারগুলোর পুনর্বাসনের কথা কি আমরা ভেবেছি?

আজ থেকে তিন-চার দশক আগে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলো থেকে এ্যাম্পুটেশন করা রোগীর ছুটি দেওয়ার সময় যে সুপারিশ লিখে দেওয়া হতো, এখনও সেগুলোই দেওয়া হচ্ছে। স্টাম্পের যত্ন নিবেন, ক্রাচে ভর করে হাঁটবেন, ওষুধ নিয়মিত খাবেন, ক্ষত স্থানে ড্রেসিং করাবেন, ৭ দিন পরে এসে স্টিচ কেটে যাবেন ইত্যাদি। কৃত্রিম অঙ্গের পরামর্শও হয়তো দেওয়া হয়; কিন্তু পুর্ণবয়ষ্ক এই মানুষটিকে যে আবার নতুন করে একটি এক বছর বয়সের শিশুর মতো করে হাঁটা শিখতে হবে। সেটি কি সহজ কাজ? শিশুর হামাগুড়ি দেওয়া থেকে উঠে দাঁড়িয়ে হাঁটা শেখার মতো কিন্তু এটি নয়। একে তো অঙ্গহানির মানসিক যন্ত্রনা, তার উপর শরীরের ভার নিয়ে দাঁড়ানো বা হাঁটতে না পারার মানসিক যন্ত্রনা, চিকিৎসার আর্থিক ব্যয়, ভবিষ্যৎ কর্মজীবন বা আয়ের পথ, ইত্যাদি মানসিক অস্থিরতার কথা কি আমরা ভেবেছি? শারীরিক প্রতিবন্ধিতার পাশাপাশি মানসিক যন্ত্রণায় ভোগা এই মানুষদের কাউন্সেলিং-এর কথা কি আমরা ভাবি? দেশের হাসপাতালগুলিতে এই নব্য প্রতিবন্ধিতায় পড়া মানুষগুলোকে বাকী জীবনের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত করার মত প্রশিক্ষিত জনবল আছে কি?

আমাদের দেশের চিকিৎসাসেবা নিয়ে শত অভিযোগ এবং দুর্নাম থাকলেও বাস্তবতা হলো, আমাদের গড় আয়ু বেড়েছে, নবজাতক এবং ৫ বছর পর্যন্ত বয়সের শিশুমৃত্যুর হার দারুণভাবে কমে গেছে, মাতৃমৃত্যুর হারও কমেছে অনেক, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতেও অসংখ্য হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র নির্মান করা হয়েছে। টিকাদান কর্মসূচীতে আমরা বিশ্বের রোল মডেল। এগুলো অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু প্রতিবন্ধী মানুষের চিকিৎসাসেবা পাওয়া যায় কয়টি জায়গায়? একটি কৃত্রিম অঙ্গের জন্য টেকনাফ বা তেতুলিয়ার মানুষকেও কি এক ঢাকাস্থ পঙ্গু হাসপাতালেই আসতে হবে?

পোলিওর মতো একটি মারাত্মক রোগ, যা এক সময় লক্ষ লক্ষ শিশুর জন্য বিভীষিকা ছিল, তা নির্মূল হয়েছে বেশ কয়বছর আগেই। কিন্তু এই দেশেই চল্লিশোর্ধ বয়সের অসংখ্য মানুষ এখনও আছে, যারা শিশুবয়সে পোলিওতে আক্রান্ত হয়ে সারা জীবনের জন্য শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধিতা নিয়ে বেঁচে আছে। দেশের প্রতিটি জেলা বা উপজেলাতেই এমন অসংখ্য মানুষ পাওয়া যাবে, যাদের পোলিওর ফলে এক বা দুই পায়ে পেশীগুলো শুকিয়ে শক্ত হয়ে যাবার কারণে হাঁটতে প্রচন্ড কষ্ট হয়। কেউ হুইলচেয়ারে আবদ্ধ, কেউ ক্রাচে ভর করে, বা কেউ এখনও লাঠি ব্যবহার করে হাঁটতে পারে। পেশি শুকিয়ে যাবার ফলে অধিকাংশের ক্ষেত্রেই দুটি পা সমভাবে বড় হতে পারেনি বলে কোনো সহায়ক উপকরণ ব্যবহার করতে না হলেও খুঁড়িয়ে হাঁটতে হয়। পরিবার থেকে এই মানুষদের মধ্যে শিশুকালে যারা সহযোগিতা পেয়েছিল, তাদের অনেকেই লেখাপড়া সমাপ্ত করেছে, জীবনে প্রতিষ্ঠালাভও করেছে। সমস্যা হলো, এই মানুষদের এই পোলিও আক্রান্ত পায়ে যদি দুর্ঘটনায় কোনো ফ্র্যাকচার হয়, তার চিকিৎসা বা সার্জারী কিভাবে করতে হবে, সেই জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতাসম্পন্ন চিকিৎসক এই দেশে খুব বেশি নেই। ঢাকার একটি বা দুটি হাসপাতাল ছাড়া তাদের চিকিৎসার সুযোগ নেই।

প্রতিবন্ধী মানুষেরা বাংলাদেশেও কিন্তু আর ঘরে বসে নেই। তারা লেখাপড়া করছে, চাকরি করছে, ব্যবসা করছে। তাদেরও তো চলাফেরা করতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। একটু ভাবুন তো দুর্ঘটনায় পড়া একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মানুষের অসহায়ত্বের কথা। কোথায় তাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, কে নিয়ে যাচ্ছে, তাকে কেন বসিয়ে রাখা হচ্ছে, এর পর সে কোথায় যাবে, ইত্যাদি বিষয়গুলো নিয়ে তাকে সহযোগিতা করছে কে? ভাবুন তো একজন শ্রবণ-বাক প্রতিবন্ধী মানুষের কথা! হাসপাতালগুলোতে কতজন মানুষ ইশারা ভাষা বুঝে? অটিজম বৈশিষ্টসম্পন্ন বা বুদ্ধি প্রতিবন্ধী একটি শিশূ দুর্ঘটনায় বাবা-মা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে তাকে কীভাবে সামাল দেওয়া হবে, ভাবতে পারেন?

গত কয়েক দশকে সেতু, সড়ক ও মহাসড়কের প্রভূত উন্নতি এবং দেশে দ্রুতগামী বাস-ট্রাক আমদানি হবার ফলে সড়কে যানবাহনের গতি অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। কিন্তু বাড়েনি চালকের প্রশিক্ষণ। যার ফলে দুর্ঘটনাগুলো ঘটেই চলেছে। যারা নিয়মিত মহাসড়কে যাতায়াত করেন, তাঁরা নিশ্চয়ই সুনির্দিষ্ট কিছু ট্রান্সপোর্ট কোম্পানির নাম বলতে পারবেন, যাদের বাসগুলো বেপরোয়াভাবে চালানো হয়। এই কোম্পানিগুলো তাদের এত অসংখ্য বাসের জন্য এমন বেপরোয়া অসংখ্য চালক কোথায় পায়, এটি আসলেই ভাববার বিষয়। তবে শুধু চালকের দোষ ধরাও ঠিক নয়। সড়ক কখন ও কিভাবে হেঁটে পার হওয়া যাবে, সে ব্যাপারে আমরা পথচারীরাও বড়ই উদাসীন। শিশুদের শিক্ষাক্রমে যেমন এটি অনুপস্থিত, তেমন এ ব্যাপারে বড়দেরও সচেতনতা বাড়াবার ক্ষেত্রে তেমন উদ্যোগ নেই। তাই যখন ইচ্ছে তখন এক হাত তুলে সড়কের মাঝখানে আমরা নেমে পড়ছি। এভাবে রাস্তা পার হবার কারণে শহরগুলোতে বাড়াচ্ছি জ্যাম, আর মহাসড়কে হয় চাপা পড়ছি, বা আমাদের বাঁচাতে গিয়ে দ্রুতগামি বাস-ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনায় পড়ছে। দায় এসে পড়ছে কেবল ড্রাইভার বা মালিকের উপর।

মহাসড়কের আসেপাশে পর্যাপ্ত ট্রমা সেন্টার গড়ে তোলা হয়নি, যেখানে দুর্ঘটনায় পড়ে আহত হওয়া মানুষদের দ্রুত নিয়ে যাওয়া সম্ভব। ম্যানেজমেন্ট করতে দেরি হয়ে যাবার কারণে রক্তক্ষরণেই হয়তো মারা যাচ্ছে মানুষ, অথবা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া অঙ্গের সংযোজন আর সম্ভব হয়ে উঠছে না। জীবন বাঁচাতে অ্যাম্পুটেশন করে ফেলতে হচ্ছে। বেড়ে যাচ্ছে প্রতিবন্ধী মানুষের সংখ্যা।

ভবন ধসে গিয়েই হোক, আর সড়কে-মহাসড়কেই হোক, যে কোনো দুর্ঘটনায় আপনা আপনিই লোক জড়ো হয়ে যায়। সাধারণ মানুষ এগিয়ে আসে নিঃস্বার্থভাবে দুর্ঘটনায় কবলিত মানুষদের উদ্ধার করে নিকটতম চিকিৎসাকেন্দ্র পর্যন্ত পৌঁছে দেয়ার জন্য। উন্নত দেশগুলোতে যেমন এটি হয়, আমাদের দেশেও এর ব্যতিক্রম তো হয়ই না, বরং জনসংখ্যার আধিক্যের কারণে বিপুল পরিমাণ মানুষ খুব অল্প সময়েই উদ্ধার কাজে নেমে পড়ে। এর উদাহরণ আমরা বারবার দেখেছি। এক রানা প্লাজা ধসের সময় কত হাজার সাধারণ মানুষ স্বেচ্ছায় জড়িত হয়েছিল, তার হিসেব করা যাবে না। তবে এটিতে একটি সমস্যাও আছে।

উন্নত দেশগুলোতে সাধারণ মানুষের মধ্যে দুর্ঘটনায় পড়া একজন বিপন্ন মানুষকে কিভাবে উদ্ধার করতে হবে, সে ব্যাপারে একটি বেসিক সচেতনতা আছে, যা আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে আমরা সৃষ্টি করতে পারিনি। দুর্ঘটনায় পড়া একজন মানুষকে উদ্ধার বা স্থানান্তর করতে হলে অবশ্যই তার ঘাড় এবং মাথাকে স্থির বা নিশ্চল করতে হবে। আমরা হয়তো চারজন আহত মানুষটির চার হাত-পা ধরে চ্যাংদোলা করে টেনে নিয়ে যাই, মাথা ঝুলতে থাকে। এটি যে কতটা বিপজ্জনক, আমরা হয়তো সেটি জানিই না। মানুষের মেরুদণ্ডের ৩৩টি হাড়ের প্রথম দুটির গঠন বাকীগুলো থেকে একেবারেই ভিন্ন। এ কারণেই আমরা আমাদের মাথা ডানে-বামে, উপর-নীচে নানাভাবে ঘুরাতে পারি। কিন্তু একটু এদিক সেদিক হঠাত চাপ পড়লে হাড়ের ভেতরে থাকা মেরুরজ্জু (স্পাইনাল কর্ড) ছিঁড়ে যেতে পারে, বা তার উপর অস্বাভাবিক চাপ পড়তে পারে, যার ফলে ঘাড়ের নিচ থেকে স্থায়ীভাবে প্যারালাইসিস হয়ে যেতে পারে। ঘাড় এবং মাথাকে স্থির না করে উদ্ধার করতে গেলে সামান্য অসাবধানতার কারণে উপকার করতে গিয়েও আমরা অনেক সময় মারাত্মক ক্ষতি করে ফেলছি। অথচ এ ব্যাপারে সচেতনতা বাড়ানো হচ্ছে না। সামান্য অসচেতনতার কারণে প্রতিবন্ধী মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।

যেসব স্কুলে স্কাউটিং প্রোগ্রাম আছে, সেখানে স্কাউটসরা ছোটবেলা থেকেই এ ধরনের কিছুটা ধারণা পায়। দুটি লাঠি বা বাঁশ এবং দুটি শার্ট বা টি-শার্ট দিয়ে কত সহজে একটি স্ট্রেচার বানিয়ে ফেলা যায়! তবে এমন প্রশিক্ষিত মানুষের সংখ্যা তো খুব বেশি নয়। আমাদের দেশেই প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করার জন্য উপকূলীয় এবং বন্যাপ্রবণ জেলাগুলোতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে এবং রেড ক্রিসেন্ট বা অন্যান্য এনজিওদের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবী তৈরি করা হয়েছে। সাইক্লোনে মাত্র তিন-চার দশক আগেও যেখানে লক্ষাধিক মানুষ মারা যেত, সেটিকে ১০-এর নিচে নামিয়ে আনতে আমরা সক্ষম হয়েছি। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় আমরা বিশ্বের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছি। তাহলে যেসব ইউনিয়নের পাশ দিয়ে মহাসড়ক অবস্থিত, সেই ইউনিয়ন পরিষদগুলোকে সম্পৃক্ত করে একটি দেশব্যাপী সচেতনতা এবং প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম পরিচালনা করা কি খুবই অসম্ভব?

প্রতিটি দুর্ঘটনায় বেড়ে যাচ্ছে দেশে প্রতিবন্ধী মানুষের সংখ্যা! বাড়ছে তাদের বিপত্তি। দুর্ঘটনার দুটি দিক নিয়েই নতুনভাবে ভাবতে হবে।

এক মুঠ গুড়, এক চিমটি লবণ এবং আধা সের পানি–ডায়রিয়ার ব্যবস্থাপনায় আইসিডিডিআরবি উদ্ভাবিত ওরস্যালাইন বানাবার এই যুগান্তকারী সহজ পদ্ধতি দেশের সকল মানুষ জেনেছে হুমায়ুন আহমেদের জনপ্রিয় টিভি নাটকে আসাদুজ্জামান নুরের ডায়রিয়া রোগীর অভিনয়ের মাধ্যমে। দেশে এখনও তো জনপ্রিয় বহু অভিনেতা আছেন, যাদের নাটক সাধারণ মানুষ দেখবেই। তারাও কি পারেন না জনস্বার্থে তাদের নাটকগুলোতে জীবনরক্ষাকারী বা দুর্ভোগ কমানো যাবে, এমন কিছু মেসেজ সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে? টিভি চ্যানেলগুলোরও কি এই ব্যাপারে কোনো দায়িত্ব নেই?

লেখক: ডিস্যাবিলিটি এন্ড ডেভেলপমেন্ট কনসাল্ট্যান্ট

এসএ/

Header Ad

খালেদা জিয়ার সঙ্গে কুশল বিনিময় করলেন মাহফুজ-আসিফ-নাহিদ

ছবি: সংগৃহীত

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে কুশল বিনিময় করেছেন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম।

বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) বিকেলে সেনাকুঞ্জে সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে তাদের এ কুশল বিনিময় হয়।

সেনাকুঞ্জে খালেদা জিয়া পৌঁছালে উপস্থিত সবাই তাকে স্বাগত জানান। অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৩ সমন্বয়ক ও সরকারের উপদেষ্টা তার পাশে এসে দাঁড়ান এবং শারীরিক খোঁজখবর নেন। এ সময় খালেদা জিয়া তাদের অভিনন্দন জানান এবং দেশকে এগিয়ে নিতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার পরামর্শ দেন।

এ সময় এই ৩ উপদেষ্টা বিএনপি চেয়ারপারসনের কাছে দোয়া চান এবং সরকারের সংস্কার কাজে তার সর্বাত্মক সহযোগিতা চান।

এদিকে সেনাকুঞ্জে গেলে খালেদা জিয়ার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্ত্রী খালেদা জিয়া এখানে এসেছেন। একযুগ তিনি আসার সুযোগ পাননি। আমরা গর্বিত এই সুযোগ দিতে পেরে। দীর্ঘদিনের অসুস্থতা সত্ত্বেও বিশেষ দিনে সবার সঙ্গে শরিক হওয়ার জন্য আপনাকে আবারও ধন্যবাদ। আপনার আশু রোগমুক্তি কামনা করছি।

Header Ad

দেশের বাজারে আবারও বাড়ল স্বর্ণের দাম

ছবি: সংগৃহীত

আবারও স্বর্ণের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। এবার ভরিতে ১ হাজার ৯৯৪ টাকা বাড়িয়ে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ১ লাখ ৩৯ হাজার ৪৪৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা আজকেও ছিল এক লাখ ৩৭ হাজার ৪৪৯ টাকা।

বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) সন্ধ্যায় এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে বাজুস। শুক্রবার (২২ নভেম্বর) থেকেই নতুন এ দাম কার্যকর হবে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের (পিওর গোল্ড) মূল্য বেড়েছে। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় স্বর্ণের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।

নতুন দাম অনুযায়ী, প্রতি ভরি ২২ ক্যারেটের স্বর্ণের দাম পড়বে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৪৪৩ টাকা। এ ছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ৩৩ হাজার ৯৮ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ১৪ হাজার ৮৬ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৯৩ হাজার ৬৭৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বাজুস আরও জানায়, স্বর্ণের বিক্রয়মূল্যের সঙ্গে আবশ্যিকভাবে সরকার-নির্ধারিত ৫ শতাংশ ভ্যাট ও বাজুস-নির্ধারিত ন্যূনতম মজুরি ৬ শতাংশ যুক্ত করতে হবে। তবে গয়নার ডিজাইন ও মানভেদে মজুরির তারতম্য হতে পারে।

স্বর্ণের দাম কমানো হলেও দেশের বাজারে অপরিবর্তিত রয়েছে রুপার দাম। দেশে ২২ ক্যারেটের এক ভরি রুপা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৫৭৮ টাকায়। এ ছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ২ হাজার ৪৪৯ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ২ হাজার ১১১ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি রুপা বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫৮৬ টাকায়।

এর আগে, সবশেষ গত ১৯ নভেম্বর দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম সমন্বয় করেছিল বাজুস। সে সময় টানা চার দফা কমার পর ভরিতে ২ হাজার ৯৪০ টাকা বাড়িয়ে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ১ লাখ ৩৭ হাজার ৪৪৯ টাকা নির্ধারণ করেছিল সংগঠনটি।

এ ছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ৩১ হাজার ১৯৭ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ১২ হাজার ৪৫৩ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৯২ হাজার ২৮৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। যা কার্যকর হয়েছে গত ২০ নভেম্বর থেকে।

এ নিয়ে চলতি বছরে এখন পর্যন্ত দেশের বাজারে ৫১ বার স্বর্ণের দাম সমন্বয় করা হয়েছে। যেখানে ৩০ বার দাম বাড়ানো হয়েছে, আর কমানো হয়েছে ২১ বার।

Header Ad

‘দেশের মানুষ এখনো কোনো রাজনৈতিক দলকেই বিশ্বাস করতে পারে না’

ছবি: সংগৃহীত

দেশের জনপ্রিয় নির্মাতা আশফাক নিপুন। কাজের পাশাপাশি সামাজিক মাধ্যমেও বেশ সরব তিনি। কথা বলেন নানা ইস্যু নিয়ে। সেই ধারাবাহিকতায় সরকার পতনের পর অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠনেও বিভিন্ন সময় নিজের আকাঙ্ক্ষা, প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন। পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশ্যেও বিভিন্ন বার্তা দিয়েছেন। এবার এমনি একটি বার্তায় দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি জনগনের আস্থার বিষয়ে আক্ষেপ জানালেন এই নির্মাতা।

বুধবার (২০ নভেম্বর) আশফাক নিপুন তার ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে লেখেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সর্বস্তরের ছাত্র এবং সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছিল, বাসায় বসে বসে দোয়া করেছিল, যার যা সামর্থ্য দিয়ে সহায়তা করেছিল। কারণ, তারা দেখেছিল লড়াইটা আওয়ামী ফ্যাসিস্ট শাসক বনাম সাধারণ ছাত্র-জনতার। এটাও অস্বীকার করার কোনো উপায় নাই যে এই আন্দোলন বেগবান করতে বিরোধী সকল দলের কর্মীদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তাদের সংগ্রামও গত দেড় দশকের। কিন্তু এটা যদি শুধুমাত্র রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার লড়াই হতো তাহলে সাধারণ মানুষ এই লড়াই থেকে দূরে থাকত। সেই প্রমাণ বিগত ১৫ বছরে আছে।

‘দেশের মানুষ এখনো কোনো রাজনৈতিক দলকেই বিশ্বাস করতে পারে না’

কারণ হিসেবে তিনি বলেন, দেশের সাধারণ মানুষ এখনো দেশের কোনো রাজনৈতিক দলকেই পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারে না। এটাই বাস্তবতা। এই বাস্তবতা মেনে সকল রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত কীভাবে সাধারণ জনগণের ভেতর নিজের দলের প্রতি আস্থা তৈরি করা যায় সেই বিষয়ে নিরলস কাজ করা। এই আস্থা ক্ষমতায় গিয়ে অর্জন করা সম্ভব না। কারণ, সাধারণ মানুষ আজীবন এস্টাবলিশমেন্টের বিপক্ষে। এই আস্থা অর্জন করতে হয় ক্ষমতা বলয়ের বাইরে থেকেই।

নিপুন আরও লিখেন, অরাজনৈতিক সরকার দিয়ে দীর্ঘদিন দেশ চালানো যেমন কাজের কথা না ঠিক তেমনি রাজনৈতিক সরকার হতে চাওয়া সকল রাজনৈতিক দলগুলোর বোঝা উচিত মুক্তিযুদ্ধের পরে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় গণঅভ্যুত্থান সংগঠিত হয়েছে সকল প্রকার পূর্বানুমান (যেমন- বর্ষাকালে আন্দোলন হয় না, নির্বাচনের আগেই কেবল জোরেশোরে আন্দোলন হয়, ঘোষণা দিয়ে বিরোধী সকল পক্ষ আন্দোলনে শামিল না হলে সফল হয় না) অগ্রাহ্য করেই। সেটা সম্ভব হয়েছে সাধারণ মানুষের ন্যায্যতার আকাঙ্ক্ষা থেকেই।

সবশেষ এই নির্মাতা লিখেছেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সাধারণ মানুষের এই আকাঙ্ক্ষার দুই পয়সার দাম দেন নাই। সাধারণ মানুষের এই আকাঙ্ক্ষা, ইচ্ছা আর দেশপ্রেমকে পুঁজি করে অরাজনৈতিক এবং রাজনৈতিক যারাই রাজনীতি রাজনীতি খেলতে চাইবে, তাদের দশাও কোন একসময় যেন পলাতক শেখ হাসিনার মতো না হয়, সেই বিষয় নিশ্চিত করতে হবে তাদেরকেই।

Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

খালেদা জিয়ার সঙ্গে কুশল বিনিময় করলেন মাহফুজ-আসিফ-নাহিদ
দেশের বাজারে আবারও বাড়ল স্বর্ণের দাম
‘দেশের মানুষ এখনো কোনো রাজনৈতিক দলকেই বিশ্বাস করতে পারে না’
‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে’: প্রধান উপদেষ্টা
নওগাঁ শহরে শৃঙ্খলা ফেরাতে বিশেষ অভিযান শুরু
২০২৬ সালের মাঝামাঝিতে নির্বাচন হতে পারে: উপদেষ্টা সাখাওয়াত
সেনাকুঞ্জে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে খালেদা জিয়ার শুভেচ্ছা বিনিময়
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত ৫ জনকে রোবটিক হাত উপহার
সেনাকুঞ্জের পথে খালেদা জিয়া
সুযোগ পেলে শেখ হাসিনার পক্ষে মামলায় লড়ব: জেড আই খান পান্না
নির্বাচন কমিশন গঠন, সিইসি হলেন অবসরপ্রাপ্ত সচিব নাসির উদ্দীন
ডিএনএ টেস্টের ফলাফল: ভিনিসিয়ুসের পূর্বপুরুষ ছিলেন ক্যামেরুনের
জামিন পেলেন সাংবাদিক শফিক রেহমান
বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে আসা সেই শাহজাহান ওমর গ্রেপ্তার
মিরপুর ও মহাখালীতে অটোরিকশা চালকদের সেনাবাহিনীর ধাওয়া
‘শেখ হাসিনা এখনও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী’, এমন কথা বলেননি ট্রাম্প
লেবাননে ৮ শতাধিক ইসরায়েলি সেনা নিহত
ভারতে সাজাভোগ শেষে দেশে ফিরল ২৪ বাংলাদেশি কিশোর-কিশোরী
ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে অবরোধ করে ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের বিক্ষোভ
গাজায় ইসরায়েলের হামলায় আরও ৮৮ ফিলিস্তিনি নিহত