শীতের অতিথি অর্কিড কাঞ্চন
আমাদের বন-পাহাড়ে প্রায় ১৫ প্রজাতির কাঞ্চন দেখা যায়। অধিকাংশই সিলেট এবং চট্টগ্রামের বনে জন্মে। দুএকটি টাঙ্গাইল জেলার শালবনে পাওয়া যায়। তবে নগরউদ্যানে সাধারণত তিন ধরনের কাঞ্চন বেশি চোখে পড়ে- দেবকাঞ্চন, রক্তকাঞ্চন ও শ্বেতকাঞ্চন। এর মধ্যে সাদাকাঞ্চনের প্রস্ফুটন প্রায় বর্ষব্যপ্ত হলেও দেবকাঞ্চন হেমন্তে আর লালকাঞ্চন শীত-বসন্তে ফোটে। এই কাঞ্চনগুলোর মধ্যে বিশেষ সাদৃশ্য হলো এদের প্রস্ফুটন মৌসুম হেমন্ত থেকে শীতকাল পর্যন্ত বিস্তৃত। নভেম্বর মাসেও বান্দরবানের পাহাড়ে বনকাঞ্চন দেখেছি। তবে নানা কারণে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো এসব কাঞ্চন সংখ্যায় অনেক কমেছে। গবেষকদের হাতে পর্যাপ্ত তথ্য না থাকলেও কাঞ্চনের কয়েকটি প্রজাতি যে সঙ্কটাপন্ন তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
ইদানিং কাঞ্চনের এই সংক্ষিপ্ত তালিকায় যুক্ত হলো আরেকটি নতুন কাঞ্চন। কয়েকবছর ধরে বিক্ষিপ্তভাবে বিভিন্ন বাগানে শোভা পাচ্ছে এ গাছ। সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধ, সফিপুর আনসার একাডেমি ও জাতীয় সংসদভবন প্রাঙ্গণের পশ্চিমপাশে বিভিন্ন বয়সী গাছ চোখে পড়ে। দীর্ঘ ও অক্লান্ত প্রস্ফুটন ফুলটির দ্রুত বিস্তৃতির অন্যতম কারণ। আমাদের নগরউদ্যানে শীতের দৈন্যতা ঘোচাতে এই প্রজাতিটি বেশ যুৎসই হতে পারে। পুষ্পপ্রেমিকদের অনেকেই এফুল সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। এই লেখার মধ্য দিয়ে তাদের কৌতূহল কিছুটা হলেও মিটবে।
গাছটির ইংরেজি নাম হংকং অর্কিড ট্রি । প্রথমোক্ত কাঞ্চনগুলোর আদি আবাস ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ হলেও এর জন্মস্থান থাইল্যান্ড। সম্ভবত সংকর বা আবাদিত ধরনের ফুল। গাছের গড়ন, কাণ্ড, পাতা ও ডালপালার ক্ষেত্রে অন্যান্য কাঞ্চনের সঙ্গে খুব একটা তফাৎ নেই।
পত্রমোচি গাছ, উচ্চতা প্রায় ৮ মিটার, কাণ্ড নিচু, বহুশাখী, উপর ছত্রাকৃতি, বাকল ধূসর, অমসৃণ। পাতা চওড়া, পুরু ও অসম্পূর্ণভাবে সজোড়। দেখতে দুটো জোড়া দেওয়া পাতার মতো। এ কারণে অন্যান্য গাছ থেকে কাঞ্চনকে খুব সহজেই আলাদা করা যায়। ফুল বড়, ১২ সেমি চওড়া, লাল অথবা গোলাপি-বেগুনি। ডাল বা পত্রিকার সরু আগায় থোকায় থোকায় ফোটে। গন্ধহীন। অত্যন্ত আকর্ষণীয়। অনেকদিন সতেজ থাকে। প্রস্ফুটনকাল অক্টোবর থেকে মার্চ অবধি বিস্তৃত। ফল সীমের মতো চ্যাপ্টা, প্রথমে বাদামি-সবুজ, পরে গাঢ়-বাদামি। চাষ বীজ ও কলমে। রোদ পছন্দ। বাকল ট্যানিং, রঙ ও দড়ির উপকরণ। বীজ-তৈল সস্তা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার্য। শিকড় বিষাক্ত ও সর্পদংশনের প্রতিষেধক। হাঁপানি, ক্ষত এবং পেটের পীড়ায় গাছের নানা অংশ উপকারি।
লেখক: প্রকৃতি ও পরিবেশ বিষয়ক লেখক, সাধারণ সম্পাদক তরুপল্লব