প্রশাসনের গুণগতমান বাড়ানো দরকার
বাংলাদেশে দুর্নীতি নতুন কোনো বিষয় না। এটি অনেকদিন থেকেই চলে আসছে। যেসব আইন-কানুন আছে, সেসব অনেক ক্ষেত্রেই ভালো; কিন্তু প্রয়োগের ক্ষেত্রে যথেষ্ট দুর্বলতা আছে। দুর্বলতার জায়গাগুলো ঠিক করে তা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে পরিপালন করতে হবে। যা আমরা করছি না। স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহি বৃদ্ধি করা গেলে এবং আইনের প্রয়োগ করা গেলেও দেশ থেকে দুর্নীতি কমে যাবে।
আমাদের যেমন বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠান আছে–এন্টিকরাপশন, মানি লন্ডারিংসহ বিভিন্ন ধরনের সংস্থা আছে। এগুলো প্রয়োগের ক্ষেত্রে আমরা যদি যথাযথ বাস্তবায়ন করতে পারি, তাহলে এর সমাধান সম্ভব হবে বলে আমি আশা করি। তখন দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকার মানও ভালো হবে। আমাদের স্কোরও ভালো করা সম্ভব হবে। এখানে স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট যারা আছেন, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ যারা আছেন, তাদেরও ভূমিকা আছে। আমাদের পার্লামেন্টের ভূমিকা আছে। নজরদারির ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক যেসব সংশ্লিষ্টতা আছে, সেগুলো বাস্তবায়নের দিক থেকে আরও মনযোগী হতে হবে।
সাধারণ জনগণ যারাই এটির সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হয়ে থাকেন, তাদেরও এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। তা ছাড়া সামাজিক অবস্থান নেওয়া দরকার। এটি একটি সামাজিক ‘অল অব সোসাইটি’ দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখার ব্যাপার। এগুলো যদি আমরা না করতে পারি, তাহলেই একটি একক সংস্থা অথবা সরকার দুর্নীতি সমস্যার সমাধান করতে পারবে বলে আমি মনে করি না। রাজনৈতিক অঙ্গীকার যেমন আছে, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা, আইনের প্রয়োগ যেমন দরকার আছে, দুর্নীতি দমন কমিশনকে আরও শক্তিশালী করারও প্রয়োজন আছে। সাধারণ জনগণের যে প্রতিবাদী ভূমিকা সেগুলোও শক্তিশালী করার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি। জনগণের কাছেও জবাবদিহির বিষয়টি স্পষ্ট নয়। এ বিষয়টি স্পষ্ট হওয়া উচিত।
সমস্যাটি যেহেতু শুধুমাত্র ঢাকা কেন্দ্রিক না, পুরো দেশেই দুর্নীতি হয়ে থাকে, তাই এর সমাধানও করতে হবে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে। এটি এককেন্দ্রিকভাবে সমাধান করা যাবে না। এখানে জনপ্রশাসনে যারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় আছেন, তাদেরও স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহির দরকার আছে। সরকার বিভিন্ন রকম সেবা দিয়ে থাকে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে।
সরকারের বিভিন্ন জনপ্রশাসনে মেধাভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া উচিত। একইসঙ্গে পদোন্নতি এবং কাজের ভিত্তিতে পুরস্কার এবং তিরস্কার এই পদ্ধতিতে আরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। তাদের সেবার গুণগতমান নিশ্চিত করা গেলে, সরকারের যেসব আইন আছে, সেগুলোও যদি বাস্তবায়ন করা হয়–বিকেন্দ্রিকরণের মধ্য দিয়েই এর সমাধান করতে হবে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো–ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের সুবিধাটি আমাদের নিতে হবে। তাহলে ফেস টু ফেস ইন্টারাকশনের মাধ্যমেই দুর্নীতির বড় অংশটি সংঘটিত হয়। সে ক্ষেত্রে ডিজিটাল মাধ্যমে যদি আমরা সার্ভিস দিতে পারি, তাহলে দুর্নীতির সুযোগ-সুবিধা অনেকটাই কমে যায়। কাজেই আমাদের ই-প্ল্যাটফর্মগুলোকে কাজে লাগাতে হবে সরকারের বিভিন্ন পরিষেবা প্রদানের ক্ষেত্রে। এই সুবিধা যদি আমরা নিতে পারি, তাহলে দুর্নীতির রাশ টেনে ধরা সম্ভব।
লেখক: অধ্যাপক এবং সম্মানীয় ফেলো (সিপিডি)
এসএ/