পশ্চিমবঙ্গে শিশুকে গণধর্ষণ ও রাজনৈতিক চিত্র
গত ৭২ ঘণ্টায় পশ্চিমবঙ্গের উপর দিয়ে ভয়ংকর রাজনৈতিক ঘূর্ণিঝড় বয়ে গেছে। একদিকে সন্ত্রাসবাদ, অপরদিকে খুন, বোমা, পিস্তল, বন্দুক— কী নেই! মানুষ মারার উদ্দেশে প্রকাশ্যে দিনের আলোয় পুলিশকেও আক্রমণ করা হয়েছে। কলকাতা থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে কালিয়াগঞ্জ থান এলাকায় ১২ বছরের এক শিশুকে গণধর্ষণ ও হত্যা করে দুষ্কৃতিকারীরা পালিয়ে গেছে। এইসব এলাকায় বিক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ এতই ক্ষুব্ধ যে, তারা চোখের সামনে দেখেছে ধর্ষিতা নিহত মেয়েটিকে পুলিশ নির্মমভাবে টানতে টানতে নিয়ে গেছে। মৃত কিশোরীর দেহটি এত নির্মমভাবে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য টিভিতে দেখে মানুষ যারপরনাই ক্ষুব্ধ।
এক শ্রেণির পদস্থ আমলাদের বক্তব্য প্রথম মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার সাতদিনের মাথায় পুলিশ তৃণমূলের ১২ জন মাস্তানকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে আসে। ধর্ষিতা মৃত কিশোরীর ছবি দেখেই ওই এলাকার মানুষ আর মমতা ব্যানার্জির প্রতি ভরসা রাখতে পারছে না। একথা কেউ স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি। সন্ধ্যার মধ্যেই কালিয়াগঞ্জ থানা পুড়িয়ে দেওয়া হয়। টিভির পর্দায় যখন দেখা যাচ্ছে পুলিশকে মারধর করা হচ্ছে, চুল কাটিয়ে দেওয়া হচ্ছে, তখনো পুলিশ অনুরোধ করে বলছে, আমাদের মারবেন না। এতদিন দুনিয়াবাসী দেখত পুলিশ সাধারণ মানুষকে মারধর করছে। আর এখন মানুষ দেখছে তার উলটা চিত্র। চিত্রটি জলের মত পরিষ্কার।
বিকালের দিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তড়িঘড়ি করে সংবাদ সম্মেলন করে বলেছে, বিজেপি বিহার থেকে গুন্ডাদের ভাড়া করে নিয়ে এসেছিল। গোয়েন্দা পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছে, এই ঘটনা স্বাধীনতার আগে এবং স্বাধীনতার পরের ৭৫ বছরে কেউ দেখেনি। আর ঘটনাটিকে ফুলিয়ে দিতেই মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, তার কাছে ঘটনাটির ভিডিও ফুটেজ আছে।
অপরদিকে, বিরোধীদল বিজেপিও দাবি করেছে যে, তাদের কাছেও ভিডিও ফুটেজ আছে। তবে কার কাছে কী ফুটেজ আছে তা কেউই স্পষ্ট করেনি।
অপরাধীদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে ইতোমধ্যে মূল অভিযুক্ত ও তার বাবাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আরও দুই অভিযুক্ত পলাতক। অন্য দুই অপরাধীকে কেন ধরা গেল না সেই দাবি ও অপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে মিছিল শুরু করে আন্দোলনকারীরা ব্যারিকেড ও মূল ফটক ভেঙে থানায় প্রবেশের চেষ্টা করে। তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল ছোঁড়েন। পুলিশ পালটা লাঠি চালায়, কাঁদানে গ্যাস, জল কামান ইত্যাদি ব্যবহার করে। আন্দোলনকারীরা পাল্টা পুলিশকে মারধর করে দেয়ালের একাংশ ভেঙে ফেলে। থানার সামনে অস্থায়ী দোকান ও বাড়িতে হামলা চালায়। থানা চত্বরে পুলিশের বাজেয়াপ্ত করে আনা মোটরবাইক ও ছোট গাড়িতে ভাঙচুর করে। দমকলের একটি গাড়ি সেখানে গেলে তা ফিরিয়ে দেওয়া হয়। আন্দোলনকারীদের ইট পাটকেলে স্থানীয় জনগণ ও পুলিশসহ মোট ১৭ জন আহত হয়। হাসপাতালে তাদের চিকিৎসা চলছে।
পাল্টা পুলিশের বিরুদ্ধে লাঠি চালানোর অভিযোগ করেছিল বিজেপি। পরে কলকাতা থেকে তৃণমূলের তরফে বলা হয়, কিশোরীর মৃত্যু দুঃখজনক এবং বিজেপি পরিষ্কারভাবে হিংসা ছড়াচ্ছে। মানুষের সঙ্গে না পেরে তারা মরিয়া হয়ে পুলিশের উপর হামলা চালিয়েছে। থানা জ্বালিয়েছে। যারা এই কাজের সঙ্গে যুক্ত তাদের গ্রেপ্তার করাই উচিত। যারা ধারাবাহিকভাবে উসকানি-প্ররোচনা দিয়েছে তাদেরও গ্রেপ্তার করা উচিত।
আরএ/