অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে নির্বাচনের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো রোডম্যাপ না পাওয়ায় অসন্তুষ্ট বিএনপি।
বুধবার (১৬ এপ্রিল) প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে পৌনে দুই ঘণ্টা বৈঠক শেষে বেরিয়ে দুপুর ২টায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এ মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা দলীয় ফোরামে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।
এর আগে দুপুর ১২টায় প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের বৈঠক শুরু হয়।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, বৈঠকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল রয়েছেন। দলের অন্য সদস্যরা হলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাউদ্দিন আহমেদ ও ইকবাল মাহমুদ টুকু।
সাক্ষাতের আগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন বলেন, আমরা নির্বাচনের রোডম্যাপসহ বিভিন্ন ইস্যুতে আমাদের বক্তব্য প্রধান উপদেষ্টাকে জানাব।
গাইবান্ধা-২ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ সারোয়ার কবিরকে বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে দায়ের হওয়া দুই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
বুধবার (১৬ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে ৩টায় গাইবান্ধা সদর আমলী আদালতের বিচারক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন এই আদেশ দেন। এর আগে সারোয়ার কবিরের পক্ষে জামিনের আবেদন করা হলেও বিচারক তা নামঞ্জুর করেন।
গত মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) রাত ৯টার দিকে দিনাজপুর শহরের ঈদগাহ বস্তি এলাকার দীবা গার্ডেন নামক একটি বাসা থেকে সারোয়ার কবিরকে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। জানা গেছে, তিনি গত ১ মার্চ থেকে ওই বাসায় আত্মগোপনে ছিলেন। পরে তাকে কড়া নিরাপত্তায় দিনাজপুর থেকে গাইবান্ধা আদালতে হাজির করা হয়।
গত বছরের ৪ আগস্ট গাইবান্ধা জেলা বিএনপি ও যুবদলের কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় সদর থানায় দায়ের করা বিস্ফোরকদ্রব্য আইনের দুটি মামলায় তাকে অভিযুক্ত করা হয়।
তার আইনজীবী ও জেলা জজ আদালতের সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট নিরাঞ্জন কুমার ঘোষ বলেন, “এই দুই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে হাজির করা হলে আমরা জামিন চাই। কিন্তু আদালত তা নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আমরা উচ্চ আদালতে জামিন আবেদন করব।”
সারোয়ার কবির ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয়ী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এর আগে তিনি গাইবান্ধা সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদের স্পিকার শাহ আবদুল হামিদের নাতি।
ওয়াজ মাহফিলে না আসায় প্রখ্যাত ইসলামী বক্তা মাওলানা মুফতি মো. বজলুর রশীদ মিঞার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগে মামলা হয়েছে। মামলাটি করেছেন সাতক্ষীরার শ্যামনগরের নূরনগর রামচন্দ্রপুর আয়াতুন্নেছা হাফিজিয়া মাদরাসা ও এতিমখানা পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক জামায়ত আলী গাজী।
বুধবার (১৬ এপ্রিল) সাতক্ষীরা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (দ্বিতীয় আদালত) বিচারক রাফিয়া সুলতানা মামলাটি আমলে নিয়ে শ্যামনগর থানার ওসিকে আগামী ২৫ মে’র মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলায় বলা হয়, গত ৯ ও ১০ এপ্রিল ওই মাদরাসার মাঠে দুই দিনব্যাপী ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। দ্বিতীয় দিনের প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয় বগুড়ার কাহালু উপজেলার লোকনাথপুর গ্রামের বাসিন্দা মুফতি বজলুর রশীদ মিঞাকে।
চুক্তি অনুযায়ী তাকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা পারিশ্রমিকের বিনিময়ে আমন্ত্রণ জানানো হয়, যার মধ্যে ৮০ হাজার টাকা নগদ এবং ২০ হাজার টাকা বিকাশে অগ্রিম দেওয়া হয়।
তবে নির্ধারিত দিনে মাহফিলে না এসে তিনি কোনো ধরনের বার্তা না দিয়ে অনুপস্থিত থাকেন। তার না আসায় হতাশ ও ক্ষুব্ধ জনতা প্রায় দুই লাখ টাকার মাদরাসার আসবাবপত্র ভাঙচুর করে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।
পরবর্তীতে টাকা ফেরতের অনুরোধ করা হলে বাদীর দাবি অনুযায়ী বজলুর রশীদ মিঞা উল্টো হুমকি দেন খুন-জখমের, যা মামলার গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।
সাতক্ষীরা জেলা জজ কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট শেখ আজাহারুল ইসলাম মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, আদালত নিয়ম অনুযায়ী তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন, এখন বিষয়টি আইন অনুযায়ী চলবে।
অন্যদিকে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করে মুফতি বজলুর রশীদ বলেন, "আমি স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণে ওই সময়ে অপারেশন করিয়ে বিশ্রামে ছিলাম। আমাকে না জানিয়ে বিকাশে ২০ হাজার টাকা পাঠানো হয়েছিল। এছাড়া ৮০ হাজার টাকা নগদ দেওয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।"
কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলা-দুই বছর আগেও ছিল দরিদ্র তালিকায় শীর্ষে। এ উপজেলার খুব কমসংখ্যক শিক্ষার্থী রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পড়তে যায়। তাদের মধ্যে বড় একটি অংশ থেকে যায় রাজিবপুরেই এবং ভর্তি হয় স্থানীয় কলেজগুলোতে। এদের মধ্যে প্রায় ৯৫ শতাংশ শিক্ষার্থী দরিদ্র পরিবারের। এসব শিক্ষার্থীর স্থানীয় কলেজগুলোর মধ্যে প্রথম পছন্দ রাজিবপুর সরকারি কলেজ। আর এই সুযোগটাই কাজে লাগাচ্ছেন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. আমজাদ হোসেন।
এক সময় দুর্নীতির আখড়া হিসেবে পরিচিত ছিল কলেজটি। সরকারি হওয়ার পরও দুর্নীতিবাজদের থাবা থেকে রেহাই পায়নি প্রতিষ্ঠানটি। সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের ইনকোর্স পরীক্ষার ফি প্রথমে নির্ধারণ করা হয়েছিল - ছেলেদের জন্য ১৭৬০ টাকা এবং মেয়েদের জন্য ১৪০০ টাকা। শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদের মুখে ৭ এপ্রিল তা কমিয়ে আনা হয় ছেলেদের জন্য ১৩০০ টাকা এবং মেয়েদের জন্য ১০০০ টাকায়। অথচ সরকারি নির্ধারিত ফি মাত্র ৩০০ টাকা।
ইসরাত জাহান আঁখি নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, “পরীক্ষার ফি বেশি হওয়ায় আমরা আন্দোলন করি, পরে স্যাররা ফি কমিয়ে দেন। তবে শুরুতে কয়েকজন আগের নির্ধারিত ফি-ই দিয়েছে।”
সুজন মিয়া ও হারুন-অর-রশিদ নামের দুই শিক্ষার্থী বলেন, “সরকারি কলেজে এত ফি ধরায় আমরা হতাশ। যদি সরকারি কলেজেই এমন ফি হয়, তাহলে প্রাইভেট কলেজে পড়াই ভালো। আমরা চাই সরকারি কলেজ সরকারি নিয়মে চলুক এবং নির্ধারিত ফি-ই আদায় করা হোক।”
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের জারিকৃত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির পর বার্ষিক ও দ্বাদশ শ্রেণির নির্বাচনী পরীক্ষা নেওয়া যাবে। এর বাইরে কোনো পরীক্ষার কথা বলা হয়নি। কিন্তু নিয়মবহির্ভূতভাবে একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে 'মূল্যায়ন পরীক্ষা'র নামে জনপ্রতি ৫০০ টাকা করে আদায় করেছেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, “ভর্তি হওয়ার পরপরই আমাদের পরীক্ষা নেওয়া হয়। অনেকেই তখন বই-ই কিনে উঠতে পারেনি। এখন বুঝতে পারছি, শুধু টাকা আদায়ের জন্যই এ পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল।”
ডিগ্রি তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী হারুন-অর-রশিদ বলেন, “আমি ভর্তি হওয়ার পর থেকে যতগুলো পরীক্ষা দিয়েছি, প্রায় সবকটিতে ১ হাজার টাকার বেশি ফি দিতে হয়েছে। সরকারি কলেজে এত টাকা দিয়ে পড়াশোনা করা আমাদের সাধ্যের বাইরে। আমরা চাই, সরকারি নির্ধারিত ফি অনুযায়ী কলেজ পরিচালিত হোক।”
ছবি : ঢাকাপ্রকাশ
অভিযোগ রয়েছে, রাজিবপুর সরকারি কলেজ ফান্ডের প্রায় ৪ লাখ টাকা উত্তোলন করে কোনো কাজ না করেই আত্মসাৎ করেছেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আমজাদ হোসেন এবং কয়েকজন অসাধু শিক্ষক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, “দীর্ঘদিন হলো ৪ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে, কিন্তু কোনো কাজই শুরু হয়নি। অধ্যক্ষ নিজের ইচ্ছামতো কলেজ পরিচালনা করছেন।”
সরকারি পরীক্ষার ফি যেখানে ৩০০ টাকা, সেখানে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে ১০০০ থেকে ১৩০০ টাকা। এ বিষয়ে বৈধ কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। তিনি যে হিসাব উপস্থাপন করেছেন, সেখানে বলা হয়েছে-পরীক্ষার ফি ২৫০ টাকা, পুনঃভর্তি ৩০ টাকা, বেতন (৩০×১২) ৩৬০ টাকা, অত্যাবশ্যকীয় খরচ ৪৬০ টাকা এবং সেশন ফি ২০০ টাকা, মোট ১৩০০ টাকা। তবে শিক্ষার্থীদের দেওয়া রশিদে কোনো খাতের উল্লেখ নেই।
সাক্ষাৎকারে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আমজাদ হোসেন বলেন, “৪ লাখ টাকার বিষয়টি প্রশাসনিক ব্যয়। পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে কেনাকাটার জন্য ব্যয় করা হয়েছে। তবে ব্যয়ের কোনো কাগজ তিনি দেখাতে পারেননি। কাগজপত্র সম্পর্কে বলেন, ‘কাজের চাপ বেশি, পরীক্ষা চলছে-এই মুহূর্তে দেওয়া সম্ভব না।’”
অতিরিক্ত ফি আদায়ের বিষয়ে তিনি বলেন, “পরীক্ষার ফি ২৫০ টাকা। এখানে ১২ মাসের বেতন, অত্যাবশ্যকীয় ফি যোগ হয়েছে। কম্পিউটার অপারেটর মনোয়ার, বাংলা ও ইংরেজি শিক্ষক-তাদেরও সম্মানী দিতে হয়।”
নিয়মবহির্ভূত পরীক্ষার বিষয়ে তিনি বলেন, “সব শিক্ষকের মতামতের ভিত্তিতে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে।”