বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ | ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
Dhaka Prokash
Header Ad

প্রবীণ অধিকার ভাবনা

প্রবীণরা দূরে নয়- থাকুক পাশে

 

প্রবীণ জনগোষ্ঠী পরিবার ও সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আজকের এই সমাজ ও সভ্যতার মূল কারিগর প্রবীণ ব্যক্তিবর্গ। সভ্যতার বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে সমাজ কাঠামোর যেমন পরিবর্তন ঘটেছে তেমনি বয়স্ক জনসংখ্যার আকার ও পরিধি ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশ স্বাধীন করেছেন তখনকার তরুণেরা অর্থাৎ আজকের প্রবীণেরা। দেশকে সম্মানজনক অবস্থানে পৌঁছে দিয়েছেন প্রবীণেরা। বর্তমানে যারা দেশ পরিচালনা করছেন সেখানেও মূল দায়িত্বে রয়েছেন প্রবীণেরা। তারপরেও প্রবীণেরা বর্তমানে ভালো নেই। তারা পারিবারিক-সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা বা মর্যাদা থেকে বঞ্চিত। আমরা আমাদের নৈতিক, মানবিক ও সামাজিক মূল্যবোধের ফলে পারিবারিক বন্ধন দিন দিন দুর্বল হয়ে পড়ছে। এমনকি শারীরিক ও আর্থিকভাবে সক্ষম ব্যক্তিরা অক্ষম বা দুর্বল প্রবীণদের সাহায্যে তেমন এগিয়ে আসছেন না। ফলে অধিকাংশ প্রবীণ ব্যক্তি বিশেষ করে সহায় সম্পদহীন, আত্মীয়-স্বজনহারা বয়স্ক মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করতে বাধ্য হয়।

প্রতিটি দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বয়স্ক লোকের সংখ্যাও ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভবিষ্যতে মানুষের গড় আয়ু আরও বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে প্রবীণদের মধ্যে অতি প্রবীণ জনগোষ্ঠীর উপস্থিতি ক্রমান্বয়ে বাড়বে। এভাবে জন্মহার ক্রমান্বয়ে কমে যাওয়ার ফলে ২০৫০ সাল নাগাদ ষাটোর্ধ্ব প্রবীণের সংখ্যা ১৫ বছরের কম বয়সি শিশুদের চেয়ে বেশি হবে। জাতিসংঘের এক হিসাবে দেখা যায়, ২০২০ থেকে ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে ষাটোর্ধ্ব প্রবীণের সংখ্যা বাড়বে ২ দশমিক ৮ গুণ, সত্তরোর্ধ্ব প্রবীণের সংখ্যা বাড়বে ৩ দশমিক ৬ গুণ এবং ৮০ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সের প্রবীণের সংখ্যা বাড়বে ৪ দশমিক ৫ গুণ। নির্ভরশীল প্রবীণ জনগোষ্ঠীর ক্রমবর্ধমান ধারা জন্ম দিচ্ছে নতুন নতুন সমস্যা।

বাস্তবে অর্থনৈতিক, সামাজিক, মানসিক ও শারীরিক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হওয়া বয়স্কদের জন্য সুযোগ-সুবিধা প্রদানের জন্য বা তাদের অধিকার আদায়ের জন্য আইনি পদক্ষেপ প্রয়োজন। মাদ্রিদ ইন্টারন্যাশনাল প্ল্যান অব অ্যাকশন ফর দ্যা প্রটেকশন অব এল্ডারলি রাইটস-এর ভিত্তিতে ২০১৩ সালে পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ আইনটিও প্রণয়ন করা হয় যেখানে প্রবীণ পিতা-মাতার প্রতি ও পিতামাতার অবর্তমানে দাদা-দাদি ও নানা-নানিকে সন্তানের দেখভাল ও ভরণ-পোষণ করা আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

২০১৩ সালে বাংলাদেশ প্রথম জাতীয় প্রবীণ নীতি তৈরি হয়। ২০১৫ সালে জাতীয় প্রবীণ নীতিমালা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কর্মপরিকল্পনা গৃহীত হয় এবং পরবর্তীতে ২০১৭ সালে ও ২০২০ সালে পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ বিধিমালার খসড়া প্রস্তুত করা হয়। এই বিধিমালা দেশের প্রবীণ ব্যক্তিদের কল্যাণে আইনের বাস্তবায়ন, তদারকি ও মূল্যায়নে বিভিন্ন পর্যায়ের কমিটি গঠন করেছে, যেমন- (১) প্রবীণ ব্যক্তিবিষয়ক জাতীয় কমিটি, (২) জেলা প্রবীণকল্যাণ কমিটি, (৩) থানা বা উপজেলা প্রবীণকল্যাণ কমিটি এবং (৪) পৌর ওয়ার্ড বা ইউনিয়ন প্রবীণকল্যাণ কমিটি। যদিও এসকল কমিটির কার্যক্রম এখনও দৃশ্যমান নয়। দেশে প্রবীণ অধিকার সুরক্ষায় ২০১৩ সাল থেকে বাংলাদেশে প্রবীণ অধিকার বিষয়ক নীতিমালা ও ভরণ-পোষণ আইন গৃহীত হলেও বাস্তবে প্রবীণ ব্যক্তিবর্গ তেমন কোনো সুফল ভোগ করতে পারছে না।

উন্নত দেশগুলোর তুলনায় স্বল্পোন্নত দেশে, বিশেষ করে বাংলাদেশে প্রবীণদের সংখ্যা, তাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা, তাদের প্রতি পরিবার ও সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি, মানবিক অধিকার এবং তাদের কল্যাণার্থে পরিচালিত সরকারি ও বেসরকারি কার্যক্রম প্রায় ভিন্ন ধরনের। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে উন্নত দেশের মতো সেবা কার্যক্রম বা ব্যবস্থা বর্তমানে প্রচলিত নেই। বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন সংস্থা প্রবীণদের কল্যাণে কিছু কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। সমাজে নানামুখী সমস্যা এবং সমস্যা সমাধানে করণীয় বিষয় সম্পর্কে গণসচেতনতা সৃষ্টিতে সম্প্রতি কিছুটা সামর্থ্য হলেও এ সকল কার্যক্রম প্রয়োজনের তুলনায় সীমিত এবং অপর্যাপ্ত। উন্নত বিশ্বের ন্যায় পর্যাপ্ত অবসরকালীন ভাতা, প্রবীণ আশ্রয় কেন্দ্র ইত্যাদি ব্যবস্থাও বাংলাদেশে প্রচলিত নেই। বাংলাদেশের ৮০ শতাংশেরও বেশি প্রবীণদের বসবাস গ্রামে। তারা প্রায় সকলেই দরিদ্র ও কৃষি কাজের সঙ্গে জড়িত। পেনশন, গ্রাচ্যুইটি, কল্যাণ তহবিল ইত্যাদি যেসব কর্মসূচি তা কেবল সরকারি ও কিছু কিছু ক্ষেত্রে বেসরকারি কর্মচারীরা অবসর গ্রহণের পর পেয়ে থাকেন। গ্রামীণ বিপুল পরিমাণ দরিদ্র প্রবীণদের জন্য কার্যত তেমন কোনো কর্মসূচি নেই। এছাড়া সরকার কর্তৃক সময়ে সময়ে পরিচালিত হয় আশ্রয়, খাদ্য, শিক্ষা, বিনোদন, পোশাক ইত্যাদি প্রয়োজন পূরণের নিমিত্তে কিছু কার্যক্রম। ক্রমবর্ধমান এ সামাজিক সমস্যা মোকাবেলার জন্য বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী ও জাতীয় উদ্যোগ বহু আগে থেকেই বিশ্বে শুরু হয়েছে।

বাংলাদেশে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে সমাজসেবা অধিদপ্তর দরিদ্র বিধবা, প্রবীণ, দুঃস্থ ও প্রতিবন্ধী নারীদের জন্য বিভিন্ন ধরনের সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণমূলক প্রোগ্রামসমূহ এবং আশ্রয়কেন্দ্র পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে। এসব প্রোগ্রাম ব্যতীত প্রবীণ ব্যক্তিদের স্বার্থ সংরক্ষণ ও কল্যাণের জন্য অন্য কোনো সামাজিক ও অর্থনৈতিক সেবামূলক কার্যক্রম গৃহীত হয়নি। স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে সর্বপ্রথম সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে ১৯৯৮ সাল থেকে শুধু দরিদ্র প্রবীণদের জন্য ‘বয়স্ক ভাতা’ কার্যক্রম গৃহীত হয়েছে।

উল্লেখ্য, ইতোমধ্যেই সরকার ৩০ হাজার ভাতা ভোগকারীকে ডিজিটালি ভাতা পরিশোধ করেছে এবং অন্যান্য ভাতাভোগীর তথ্য ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের (ইউডিসি) মাধ্যমে সংগ্রহ করা হচ্ছে। ২০২১-২২ অর্থ বছরে এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে ৩৪৪৪.৫৪ কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থ বছরে ৫৭ লক্ষ ১ হাজার বয়স্ক ব্যক্তিকে জন প্রতি মাসিক ৫০০ টাকা হারে ভাতা প্রদান করা হচ্ছে। এটি অত্যন্ত প্রশংসনীয় উদ্যোগ হলেও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, বর্তমানে ষাটোর্ধ্ব প্রবীণদের মাত্র এক-চতুর্থাংশ এই সুবিধা ভোগ করছেন। এমনকি চরম দরিদ্র প্রবীণদের মধ্যেও ভাতাভোগীর সংখ্যা মাত্র এক-তৃতীয়াংশ। বর্তমান বাজারদর এবং প্রবীণদের প্রয়োজনের প্রেক্ষাপটে ভাতার পরিমাণ মাসিক ৫০০ টাকা খুবই কম। তারপরও এই সামান্য আর্থিক সহায়তা ভাতাভোগী প্রবীণদের অনেক স্বস্তি এবং সহায়তা দিয়ে থাকে। তাই প্রবীণকল্যাণ নিশ্চিতে ‘বয়স্ক ভাতার’ পরিধি এবং পরিমাণ দুটোই বৃদ্ধির দাবি রাখে।

অন্যদিকে সমাজ ও রাষ্ট্র সমৃদ্ধির বিনির্মাতারা আজ সমাজ থেকে বিতারিত হয়ে ঠাঁই হয়েছে প্রবীণ আশ্রয় কেন্দ্রে (বৃদ্ধাশ্রম), যদিও আইন অনুযায়ী পিতা-মাতার অনুমতি ব্যতীত সন্তানরা পিতা-মাতাকে কোনো আশ্রয় কেন্দ্রে বা অন্য কোনো স্থানে পৃথকভাবে রাখতে পারবে না। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ঢাকা, সিলেট, রাজশাহী, বাগেরহাট, চট্টগ্রাম ও বরিশালে ৬টি প্রবীণ নিবাস রয়েছে। সারা দেশে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে প্রায় ৩২টিরও বেশি বৃদ্ধাশ্রম রয়েছে। স্বেচ্ছাসেবী সমাজকল্যাণ সংস্থাসমূহ (রেজিস্ট্রেশন ও নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাদেশ, ১৯৬১ (বাংলা) এবং স্বেচ্ছাসেবী সমাজকল্যাণ সংস্থাসমূহ (রেজিস্ট্রেশন ও নিয়ন্ত্রণ) বিধি, ১৯৬২ অনুযায়ী এসকল বৃদ্ধাশ্রম প্রতিষ্ঠিত হয়।

অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে, প্রবীণদের জন্য এসকল আশ্রয় কেন্দ্র বা বৃদ্ধাশ্রম গঠন করার কোনো আইন এখনো তৈরি হয়নি। এ সকল কেন্দ্রে আপনজনহীন প্রবীণদের একেকটি জীবন যেন একেকটি নির্মমতার গল্প। এসকল বৃদ্ধাশ্রমের কার্যক্রমের তদারকি ও নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারের কোনো কোনা নীতিমালা বা বিধি বা রেগুলেটরি বোর্ড নেই। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এ প্রতিষ্ঠানের জন্য আরও অধিক সহযোগিতার হাত প্রসারিত করলে এ জাতীয় সংগঠন আরও বিকশিত হতে পারে। অবশ্যই সরকারকে এ লক্ষ্যে একটি নীতিমালা ও কৌশলপত্র প্রণয়ন করতে হবে। পাশাপাশি, প্রবীণদের অধিকার, স্বার্থ এবং সার্বিক কল্যাণ সংশ্লিষ্ট সরকারি ও স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রমগুলো সমগ্র বাংলাদেশে সম্প্রসারিত করা প্রয়োজন।

প্রবীণ অধিকার রক্ষায় কোনো আইন নেই। তবে সময় এসেছে প্রজন্মকে সঠিক পরামর্শ ও দিক নির্দেশনা দিয়ে সকল বয়সীদের জন্য উপযোগী এক সুন্দর বিশ্ব গড়ে তোলার। এ গুরুদায়িত্ব দেশের সকলকেই নিতে হবে। প্রবীণ জনগোষ্ঠীর বার্ধক্যের জীবন যেন স্বস্তিময় হয় সেজন্য সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে উদ্যোগ ও আইন কাঠামো তৈরি করতে হবে। সকল হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি ও প্রবীণদের চিকিৎসার সুবিধার্থে সকল হাসপাতলে পৃথক ‘জেরিয়েট্রিক বিভাগ’ স্থাপন এবং যতদ্রুত সম্ভব ‘স্পেশালাইজড জেরিয়েট্রিক হাসপাতাল’ নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। শিশু, যুব, মহিলা ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের ন্যায় পৃথক ‘প্রবীণ মন্ত্রণালয়’ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সকল প্রবীণদের জন্যে মর্যাদাপূর্ণ, অধিকারভিত্তিক এবং সমান উপভোগ্য পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।

জাপানের সমাজ ও সরকারের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে তারা তাদের দেশের প্রবীণদের ‘জীবন্ত শিল্প’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন ও কত বেশি সুযোগ-সুবিধা ও মর্যাদা দিচ্ছেন। প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত বা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রবীণদের যেভাবে সুযোগ-সুবিধা এবং মর্যাদা দেওয়া হয়- বাংলাদেশ কিন্তু তার ধারে কাছেও নেই। এত অবদানের পরেও দেশের প্রবীণ জনগোষ্ঠী কেনইবা এত অবহেলিত, বঞ্চিত ও কষ্টে থাকবেন? বিষয়টি সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে গভীরভাবে ভাবতে হবে।

পাশাপাশি জনমিতিক পরিবর্তন, আন্তর্জাতিক স্থানান্তর, আধুনিকায়ন, ভিন্ন সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ ইত্যাদির প্রভাবে বাংলাদেশে প্রবীণরা যেন কোনো অংশে অরক্ষিত, অসহায় ও বিচ্ছিন্ন না হয়ে পড়ে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। প্রবীণদের প্রতি বর্তমান সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি ও মনোভাব নৈতিক এবং মানবিক করতে হবে। প্রতিক্ষেত্রেই যেন প্রবীণদের অক্ষম, অসুস্থ, দুর্বল ও পরনির্ভরশীল হিসেবে গণ্য না করা হয়। পারিবারিক ক্ষেত্রে প্রবীণ স্বজনদের কিছুটা দেখভাল ও সেবা পরিচর্যার দৃষ্টিতে দেখা হলেও সামজিক ক্ষেত্রে তাদের প্রতি বৈষম্যময় আচরণ কমে যেত। সরকারি ও বেসরকারিভাবে প্রবীণদের বয়স্ক ভাতা, বৃদ্ধাশ্রম, চিকিৎসাসেবা ও অন্যান্য সামাজিক সুরক্ষার ব্যবস্থা জরুরি ভিত্তিতে গ্রহণের উদ্যোগ নিতে হবে। তরুণ প্রজন্মকে বার্ধক্য সম্পর্কে যথাসময়ে অবহিত, সচেতন আর সার্বিকভাবে প্রস্তুত করতে হবে। আজকের নবীনরাই আগামী দিনে প্রবীণ হবে। তাহলে কেবল বর্তমান প্রবীণরাই নয়, আগামী দিনের প্রবীণদেরও জড়িত করা যাবে। আর এতে করে সমাজ হবে সকল বয়সি প্রবীণদের জন্য সমান উপযোগী।

জাতীয় প্রবীণ নীতিমালা ২০১৩ ও পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ আইন ২০১৩ প্রণয়ন করা হলেও প্রবীণদের জন্য সামাজিক কল্যাণমূলক কর্মপরিকল্পনার অভাব এবং আইনি সীমাবদ্ধতার কারণে এ সকল পদক্ষেপ যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে না, যদিও সর্বক্ষেত্রেই কর্তৃত্ব এখনো প্রবীণদের হাতে। নাগরিক হিসেবে প্রবীণ ব্যক্তিগণ পূর্ণ অধিকার, সার্বিক নিরাপত্তা এবং মর্যাদা পাওয়ার অধিকারী। এই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে প্রবীণ জনগোষ্ঠীর কল্যাণ ও অধিকার সুরক্ষার বিষয়টি সুপরিকল্পিতভাবে নিশ্চিত করতে হবে।

ড. নাহিদ ফেরদৌসী: অধ্যাপক (আইন), বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়

এসএন

Header Ad

‘দেশের মানুষ এখনো কোনো রাজনৈতিক দলকেই বিশ্বাস করতে পারে না’

ছবি: সংগৃহীত

দেশের জনপ্রিয় নির্মাতা আশফাক নিপুন। কাজের পাশাপাশি সামাজিক মাধ্যমেও বেশ সরব তিনি। কথা বলেন নানা ইস্যু নিয়ে। সেই ধারাবাহিকতায় সরকার পতনের পর অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠনেও বিভিন্ন সময় নিজের আকাঙ্ক্ষা, প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন। পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশ্যেও বিভিন্ন বার্তা দিয়েছেন। এবার এমনি একটি বার্তায় দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি জনগনের আস্থার বিষয়ে আক্ষেপ জানালেন এই নির্মাতা।

বুধবার (২০ নভেম্বর) আশফাক নিপুন তার ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে লেখেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সর্বস্তরের ছাত্র এবং সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছিল, বাসায় বসে বসে দোয়া করেছিল, যার যা সামর্থ্য দিয়ে সহায়তা করেছিল। কারণ, তারা দেখেছিল লড়াইটা আওয়ামী ফ্যাসিস্ট শাসক বনাম সাধারণ ছাত্র-জনতার। এটাও অস্বীকার করার কোনো উপায় নাই যে এই আন্দোলন বেগবান করতে বিরোধী সকল দলের কর্মীদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তাদের সংগ্রামও গত দেড় দশকের। কিন্তু এটা যদি শুধুমাত্র রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার লড়াই হতো তাহলে সাধারণ মানুষ এই লড়াই থেকে দূরে থাকত। সেই প্রমাণ বিগত ১৫ বছরে আছে।

‘দেশের মানুষ এখনো কোনো রাজনৈতিক দলকেই বিশ্বাস করতে পারে না’

কারণ হিসেবে তিনি বলেন, দেশের সাধারণ মানুষ এখনো দেশের কোনো রাজনৈতিক দলকেই পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারে না। এটাই বাস্তবতা। এই বাস্তবতা মেনে সকল রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত কীভাবে সাধারণ জনগণের ভেতর নিজের দলের প্রতি আস্থা তৈরি করা যায় সেই বিষয়ে নিরলস কাজ করা। এই আস্থা ক্ষমতায় গিয়ে অর্জন করা সম্ভব না। কারণ, সাধারণ মানুষ আজীবন এস্টাবলিশমেন্টের বিপক্ষে। এই আস্থা অর্জন করতে হয় ক্ষমতা বলয়ের বাইরে থেকেই।

নিপুন আরও লিখেন, অরাজনৈতিক সরকার দিয়ে দীর্ঘদিন দেশ চালানো যেমন কাজের কথা না ঠিক তেমনি রাজনৈতিক সরকার হতে চাওয়া সকল রাজনৈতিক দলগুলোর বোঝা উচিত মুক্তিযুদ্ধের পরে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় গণঅভ্যুত্থান সংগঠিত হয়েছে সকল প্রকার পূর্বানুমান (যেমন- বর্ষাকালে আন্দোলন হয় না, নির্বাচনের আগেই কেবল জোরেশোরে আন্দোলন হয়, ঘোষণা দিয়ে বিরোধী সকল পক্ষ আন্দোলনে শামিল না হলে সফল হয় না) অগ্রাহ্য করেই। সেটা সম্ভব হয়েছে সাধারণ মানুষের ন্যায্যতার আকাঙ্ক্ষা থেকেই।

সবশেষ এই নির্মাতা লিখেছেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সাধারণ মানুষের এই আকাঙ্ক্ষার দুই পয়সার দাম দেন নাই। সাধারণ মানুষের এই আকাঙ্ক্ষা, ইচ্ছা আর দেশপ্রেমকে পুঁজি করে অরাজনৈতিক এবং রাজনৈতিক যারাই রাজনীতি রাজনীতি খেলতে চাইবে, তাদের দশাও কোন একসময় যেন পলাতক শেখ হাসিনার মতো না হয়, সেই বিষয় নিশ্চিত করতে হবে তাদেরকেই।

Header Ad

‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে’: প্রধান উপদেষ্টা

ফাইল ছবি

জুলাই-আগস্টের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) বিকেলে ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে সশস্ত্র বাহিনী দিবস ২০২৪ উপলক্ষে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, জুলাই-আগস্ট ছাত্র জনতার বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে আমরা নতুন বাংলাদেশের সূচনা করেছি। এ নতুন দেশে আমাদের দায়িত্ব সকল মানুষকে এক বৃহত্তর পরিবারের বন্ধনে আবদ্ধ করা। কেউ কারো উপরে না, আবার কেউ কারো নিচেও না, এই ধারণা আমরা আমাদের জাতীয় জীবনে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই।

তিনি বলেন, নতুন বাংলাদেশ গড়ার যে সুযোগ ছাত্র-জনতার সাহস ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে সম্প্রতি আমরা অর্জন করেছি, সেটাকে কাজে লাগিয়ে আমাদের সুন্দর ও সমৃদ্ধশালী ভবিষ্যৎ গড়তে হবে। বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহিদ, আহত এবং জীবিত ছাত্র-জনতার কাছে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকতে চাই। যে সুযোগ তারা আমাদের দিয়েছে, তার মাধ্যমে আমাদের দেশকে পৃথিবীর সামনে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী দেশে পরিণত করতে আমরা শপথ নিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, ছাত্র আন্দোলনে জীবন উৎসর্গ করে যারা দেশ গঠনের সুযোগ করে দিয়েছে জাতি তাদের সারা জীবন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।

বক্তব্য শেষে সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন প্রধান উপদেষ্টা। পরে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

Header Ad

নওগাঁ শহরে শৃঙ্খলা ফেরাতে বিশেষ অভিযান শুরু

ছবি: সংগৃহীত

নওগাঁ শহরে যানযট নিরসন ও শৃঙ্খলা ফেরাতে জেলা প্রশাসন, পুলিশ, পৌর কর্তৃপক্ষ ও রিকশা মালিক-শ্রমিকদের যৌথ উদ্যোগে বিশেষ অভিযান শুরু হয়েছে। এতে শহরে শৃঙ্খলা ফিরবে বলে আশাবাদ ব্যাক্ত করেছেন স্থানীয় কর্মকর্তারা।

বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) অভিযানের উদ্বোধন করেন নওগাঁ পৌরসভার প্রশাসক ও স্থানীয় সরকারের উপ পরিচালক টি.এম.এ মমিন। এ সময় নওগাঁ জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট জিয়া উদ্দিন, নওগাঁ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন, নওগাঁ জেলা ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক আফজাল হোসেন ও অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।

অভিযান শুরুর পর থেকেই শহরের বরুনকান্দি, মশরপুর, তাজের মোড় ও কালীতলাসহ মোট ৮ টি প্রবেশদ্বারে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। চেক পোষ্টগুলোতে ২ জন পুলিশ সদস্য, ২ জন ছাত্র সমন্বয়ক, ৪ জন রোভার স্কাউট সদস্য ও ২ জন রিকশা মালিক শ্রমিক প্রতিনিধিসহ মোট ১২ জন করে কাজ করছেন।

পৌর প্রশাসক জানান, নওগাঁ শহরে বৈধ যানবাহনের সংখ্যা ৪ হাজার। কিন্তু প্রতিদিন পার্শবতী বিভিন্ন এলাকা থেকে অন্তত ১০ হাজার রিকশা, ব্যাটারী চালিত অটো রিকশা ও ইজিবাইক শহরে প্রবেশ করে। এতে তীব্র যানযট ও জন মানুষের ভোগান্তি তৈরী হয়। এই দূর্ভোগ লাঘোবে জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল আউয়াল ও পুলিশ সুপার কুতুব উদ্দিনের দিক নির্দেশনায় যানবাহন নিয়ন্ত্রনসহ বিশেষ অভিযানের সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়। বৈধ চালকদের চিহ্নিত করতে তাদের মাঝে পরিধেয় বিশেষ ধরনের জ্যাকেট প্রদান করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

নওগাঁর পুলিশ সুপার কুতুব উদ্দিন বলেন, নওগাঁ শহরের যানযট দীর্ঘদিনের সমস্যা। পরিকল্পিত ভাবে এই সমস্যা দূর করতে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগের উদ্যোগে পৌর কর্তৃপক্ষ ও রিকশা মালিক শ্রমিক নেতৃবৃন্দদের সমন্বয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে স্থানীয় বাসিন্দা ও বিভিন্ন ষ্টেক হোল্ডারদের পরামর্শ নিয়ে একটি কর্ম পরিকল্পনা গ্রহক করা হয়েছে।

এ বিষয়ে নওগাঁর জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল আউয়াল বলেন, অভিযান সফল ভাবে বাস্তবায়ন হলে শহরে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। জনগন এর সুফল পাবেন। সকলকে এই কার্যক্রমে সহযোগিতা প্রদানের আহবান জানান তিনি।

Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

‘দেশের মানুষ এখনো কোনো রাজনৈতিক দলকেই বিশ্বাস করতে পারে না’
‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে’: প্রধান উপদেষ্টা
নওগাঁ শহরে শৃঙ্খলা ফেরাতে বিশেষ অভিযান শুরু
২০২৬ সালের মাঝামাঝিতে নির্বাচন হতে পারে: উপদেষ্টা সাখাওয়াত
সেনাকুঞ্জে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে খালেদা জিয়ার শুভেচ্ছা বিনিময়
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত ৫ জনকে রোবটিক হাত উপহার
সেনাকুঞ্জের পথে খালেদা জিয়া
সুযোগ পেলে শেখ হাসিনার পক্ষে মামলায় লড়ব: জেড আই খান পান্না
নির্বাচন কমিশন গঠন, সিইসি হলেন অবসরপ্রাপ্ত সচিব নাসির উদ্দীন
ডিএনএ টেস্টের ফলাফল: ভিনিসিয়ুসের পূর্বপুরুষ ছিলেন ক্যামেরুনের
জামিন পেলেন সাংবাদিক শফিক রেহমান
বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে আসা সেই শাহজাহান ওমর গ্রেপ্তার
মিরপুর ও মহাখালীতে অটোরিকশা চালকদের সেনাবাহিনীর ধাওয়া
‘শেখ হাসিনা এখনও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী’, এমন কথা বলেননি ট্রাম্প
লেবাননে ৮ শতাধিক ইসরায়েলি সেনা নিহত
ভারতে সাজাভোগ শেষে দেশে ফিরল ২৪ বাংলাদেশি কিশোর-কিশোরী
ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে অবরোধ করে ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের বিক্ষোভ
গাজায় ইসরায়েলের হামলায় আরও ৮৮ ফিলিস্তিনি নিহত
সাবেক এমপি শাহজাহান ওমরের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর
১২ বছর পর সেনাকুঞ্জে যাচ্ছেন খালেদা জিয়া