ত্রাণ সহায়তা হ্রাস রোহিঙ্গা পরিস্থিতি জটিল করে তুলবে
২০১৭ সালে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর গণহত্যা ও ভয়াবহ দমন-পীড়ন থেকে রক্ষা পেতে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। বর্তমানে বাংলাদেশে ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্প ও ভাসানচরে বসবাস করছে। রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার পর থেকে জাতিসংঘ রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তার জন্য জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যানের (জেআরপি) আওতায় মানবিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা ও সংকটের কারণে দাতারা অনুদান কমিয়ে দেওয়ায় বিশ্ব খাদ্য সংস্থা (ডব্লিউএফপি) রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্যসহায়তা প্রায় ১৭ শতাংশ কমিয়েছে। রোহিঙ্গাদের খাবারের জন্য মাথাপিছু মাসিক বরাদ্দ ছিল ১২ ডলার, ১ মার্চ থেকে তা কমিয়ে ১০ ডলার করা হয়েছে। নতুন তহবিল জোগাড় না হলে আগামী দিনগুলোতে এই সাহায্যের পরিমাণ আরও কমতে পারে। ডব্লিউএফপি ত্রাণ সহায়তার জন্য এই বছর আন্তর্জাতিক দাতা গোষ্ঠীর কাছে সাড়ে ১২ কোটি ডলারের জরুরি তহবিল চেয়েছে। তহবিল সংকটের কারণে সুযোগ-সুবিধা আরও কমে যেতে পারে এই আশঙ্কায় রোহিঙ্গাদের দুশ্চিন্তা বাড়ছে।
খাদ্যসহায়তা কমে যাওয়ায় রোহিঙ্গাদের জীবনযাত্রা আরও কষ্টসাধ্য হবে। ক্যাম্পগুলোতে উপার্জনের কোনো বৈধ ব্যবস্থা না থাকায় ক্যাম্পে অবস্থানকারী রোহিঙ্গাদের এক অংশ মাদক চোরাচালান, অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়, মানব পাচার, চাঁদাবাজির মতো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত রয়েছে। বর্তমানে রোহিঙ্গা শিশু ও মহিলা মানব পাচারের শিকার হওয়ার উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে, যা আগামী দিনগুলোতে আরও বাড়তে পারে। বহু রোহিঙ্গা প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে সাগরপথে মালয়েশিয়া বা ইন্দোনেশিয়া যাওয়ার চেষ্টা করছে যা ভবিষ্যতে আরও বাড়বে। মানবিক সহায়তা হ্রাসের ফলে এসব অপরাধমূলক কাজে জড়িত হওয়ার প্রবণতা বাড়ার পাশাপাশি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সহিংসতা ও অস্থিরতা বাড়বে। রোহিঙ্গাদের অনেকে জীবিকার সন্ধানে নানাভাবে ব্যস্ত হয়ে পড়বে এবং তাদের ক্যাম্পের মধ্যে রাখা কঠিন হবে। রোহিঙ্গারা ক্যাম্প থেকে বের হয়ে কাজ খুঁজলে স্থানীয়দের জন্য সংকট তৈরি হবে। রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে পারস্পরিক সম্প্রীতি বাড়ানোর প্রচেষ্টা ব্যাহত হবে। ২০২২ সালের জেআরপিতে রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের মধ্যে সুসম্পর্ক স্থাপনের বিষয়টিতে জোর দেওয়া হলেও এ বছরের জেআরপির অগ্রাধিকার থেকে এটা বাদ দিতে হয়েছে।
২০২২ সালে জেআরপি’র চাহিদার বিপরীতে ৬২ শতাংশ সহায়তা এসেছিল যা আগের বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম। ২০১৭ সালে চাহিদার ৭৩ শতাংশ, ২০১৮ সালে ৭২, ২০১৯ সালে ৭৫, ২০২০ সালে ৬৫ এবং ২০২১ সালে চাহিদার ৭২ শতাংশ অর্থ সহযোগিতা পাওয়া গিয়েছিল। ২০২২ সালে মানবিক সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠানগুলো রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের মধ্যে সংঘাত ঠেকাতে কমিউনিটি সুরক্ষা ফোরাম, সংলাপ ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধির জন্য কাজ করেছে। তহবিল কমে যাওয়ার পরও জাতিসংঘ প্রকল্পগুলো বন্ধ না করে সাশ্রয়ীভাবে পরিচালনা করতে চাচ্ছে। সেইসঙ্গে রোহিঙ্গাদের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য প্রকল্প গ্রহণের মধ্য দিয়ে জাতিসংঘ চাচ্ছে যে প্রশিক্ষিত হয়ে তারা নিজেরাই যেন নিজেদের জীবিকার ব্যবস্থা করে।
কোভিড-১৯, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, তুরস্ক-সিরিয়ায় ভূমিকম্প, সর্বপরি বিশ্বজুড়ে চলমান অর্থনৈতিক মন্দা পরিস্থিতির কারণে উন্নত দেশগুলোও সমস্যার মধ্যে আছে এবং তাদের ত্রাণ তহবিলে চাপ বাড়ছে। এর ফলে সামনে দিনগুলোতে ত্রাণ সহায়তা আরও কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এই বাস্তবতায় ইউএনএইচসিআর তহবিল জোগাড়ে তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে ও ভবিষ্যতে আরও দক্ষতার সঙ্গে কার্যকরভাবে খরচ কমিয়ে তাদের কর্মসূচিগুলো সফলভাবে বাস্তবায়ন করবে বলে তাদের মতামত ব্যক্ত করেছে। রোহিঙ্গাদের জন্য দাতাদের সহায়তা কমে যাওয়ায় জাতিসংঘ নিজস্ব তহবিল থেকে প্রায় ৯০ লাখ ডলার বরাদ্দ করেছে। ইউএনএইচসিআর, জাতিসংঘ অভিবাসন সংস্থা (আইওএম), জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ), জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ), ইউএন উইমেন ও ডব্লিউএফপি এই ছয়টি সংস্থা কক্সবাজার ও ভাসানচরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে এ অর্থ দিয়ে তাদের নিজস্ব সহায়তা কার্যক্রম শুরু করেছে।
ইউএনএইচসিআর রোহিঙ্গাদের মানবিক চাহিদা মেটাতে চলতি বছর ৮৭৬ মিলিয়ন ডলার অর্থ সহায়তার আহ্বান জানিয়েছে। কক্সবাজার ও ভাসানচরে আশ্রিত রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের খাদ্য, বাসস্থান, স্বাস্থ্যসেবা, সুপেয় পানি, সুরক্ষা পরিষেবা, শিক্ষা, জীবিকার সুযোগ ও দক্ষতা উন্নয়নমূলক কাজের মাধ্যমে সহায়তা দেওয়া এই পরিকল্পনাটির মূল লক্ষ্য। ইউএনএইচসিআরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, বাংলাদেশ সরকারের নেতৃত্বে এ বছর মানবিক কার্যক্রমের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে।
রোহিঙ্গাদের মধ্যে ৭৫ শতাংশের বেশি নারী ও শিশু এবং এই জনগোষ্ঠী লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা ও শোষণের ঝুঁকিতে রয়েছে যা দিন দিন বাড়ছে। ক্যাম্পে অর্ধেকেরও বেশি রোহিঙ্গার বয়স ১৮ বছরের নিচে এবং তাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। খাদ্যের বরাদ্দ কমে যাওয়ায় আগামীতে আরও অপুষ্টি, স্বাস্থ্য সমস্যা, শিশুদের লেখাপড়া থেকে বাদ পড়া, বাল্যবিবাহ, শিশুশ্রম ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা বেড়ে যাবে। এসব নিয়ন্ত্রণে রাখতে জীবন রক্ষাকারী ও জীবন যাপনের জন্য সহায়তাগুলো চালু রাখতে মানবিক ও আর্থিক সহায়তা চলমান রাখা জরুরি।
সুইডেন সরকার রোহিঙ্গাদের জন্য ৭৯ মিলিয়ন ক্রোনা বা ৭.৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তা ঘোষণা করেছে। এই অনুদানের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের রান্নার জন্য পরিচ্ছন্ন জ্বালানি, কক্সবাজারের পরিবেশ উন্নয়ন এবং শরণার্থী ও স্থানীয় বাংলাদেশিদের দক্ষতা ও উন্নয়নমূলক কাজ করা হবে। ২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের আসার পর কক্সবাজারের বনভূমির একটি বড় অংশ উজাড় হয়ে গিয়েছিল। বর্তমানে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর আশপাশের জায়গাগুলোতে পুনরায় সবুজায়ন ও বনায়ন হচ্ছে। ২০১৯ সালে আইওএম এর নেতৃত্বে শুরু হওয়া এই কার্যক্রমে সুইডেন প্রথম থেকেই সহায়তা দিয়ে আসছে, বর্তমানে সুইডেন ও কানাডা এই কার্যক্রমে সহায়তা দিচ্ছে। দক্ষিণ কোরিয়া রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের জন্য বাস্তুচ্যূত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন ছাড়া বিকল্প কোনো পথ নেই বলে মনে করে। দক্ষিণ কোরিয়া কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের রক্ষায় এ পর্যন্ত ২৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি সহায়তা দিয়েছে এবং চলমান এই সংকটে তাদের এই মানবিক সহায়তা অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে।
২০১৭ সালের আগস্ট থেকেই জাপান বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের সহায়তার ব্যাপারে সমর্থন জানিয়ে আসছে। বাংলাদেশের কক্সবাজার ও ভাসান চরে রোহিঙ্গা ও আশ্রয়দাতা জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার উন্নয়ন এবং আশ্রয়কেন্দ্রের উন্নয়নে আইওএমকে ৫.৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাপান সরকার। জাপান রোহিঙ্গাদের দ্রুত মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনসহ টেকসই সমাধানের জন্য কাজ চালিয়ে যাবে। রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের উন্নত জীবনযাত্রা নিশ্চিতে আইওএমসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে জাপান সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে এর ফলে উভয় জনগোষ্ঠীর জীবন মানের উন্নতি হবে। কক্সবাজার ও ভাসান চরে এই সহায়তা আরও ভালো বসতি, সুরক্ষা ও জীবিকার সুযোগ প্রদান নিশ্চিত করবে।
জাপান এই অর্থায়নের মাধ্যমে আইওএম ও অন্যান্য জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর পাশাপাশি বাংলাদেশের এনজিওগুলোতে ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি সহায়তা দিয়েছে। রোহিঙ্গাদের প্রয়োজনীয় সুরক্ষা ও মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখতে ২২ ফেব্রুয়ারি জাপান সরকার ও ইউএনএইচসিআরের মধ্যে ৪.৫ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। জাপান রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবর্তন এবং তাদের জীবনমানের উন্নয়নে ইউএনএইচসিআরসহ অন্যান্য সেবাদানকারী সংস্থার সঙ্গে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।
ভাসানচরে জাপানের এই সহায়তা ইউএনএইচসিআরকে রোহিঙ্গাদের শিক্ষা ও জীবিকার সংস্থানবিষয়ক কার্যক্রম সম্প্রসারণে সাহায্য করবে। এই অনুদানের মাধ্যমে মিয়ানমারের পাঠ্যক্রম বাস্তবায়নে আরও বেশি রোহিঙ্গা শিক্ষক ও কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে এবং রোহিঙ্গাদের পেশাগত ও অন্যান্য দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করা হবে। জাপান সরকার ইউএনএইচসিআর ও বাংলাদেশে জাতিসংঘের অন্যান্য সংস্থা ও এনজিওগুলোকে ২০৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি সহায়তা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গাদের জন্য ২৬ মিলিয়ন ডলারের নতুন মানবিক সহায়তা ঘোষণা করেছে। মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশসহ এই অঞ্চলের বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য এই অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। এই সহায়তাসহ ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে রোহিঙ্গাদের দেওয়া মার্কিন সহায়তার মোট পরিমাণ হলো ২১০ কোটি ডলার।
স্বল্পোন্নত দেশগুলোর পঞ্চম জাতিসংঘ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রোহিঙ্গা সংকট থেকে বিশ্বের মনোযোগ কমে যাওয়ায় রোহিঙ্গা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে বলে তার মত ব্যক্ত করেন। বিশ্ব সম্প্রদায়ের দৃষ্টি এখন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের দিকে। রোহিঙ্গা সমস্যা আলোচনায় থাকলেও মিয়ানমার প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে কোনো ইতিবাচক পদক্ষেপ না নেওয়ায় সমস্যা সমাধানে কোনো অগ্রগতি হচ্ছে না। কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরগুলোর অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। রোহিঙ্গারা সেখানে মাদক, অস্ত্র, মানব পাচারসহ বিভিন্ন ধরনের অপকর্মে জড়িত, তারা নিজেদের মধ্যেও সংঘাতে লিপ্ত রয়েছে। বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন ত্বরান্বিত করতে জি২০ নেতাসহ বিশ্ব সম্প্রদায়কে সহায়তার আহ্বান জানিয়েছে। রোহিঙ্গাদের দীর্ঘস্থায়ী অবস্থান গোটা অঞ্চলজুড়ে বিপর্যয়ের পাশাপাশি গুরুতর নিরাপত্তা সংকট তৈরি করছে এবং তারা যেকোনো সময় সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলোর একটি সম্ভাব্য টার্গেটে পরিণত হতে পারে।
দীর্ঘ দিন ধরে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অবস্থান করছে এবং প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া এখনো আশার আলো দেখছে না। বর্তমানে তাদের অনেকে জীবিকার তাগিদে ও প্রলোভনে পড়ে নানা ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে যাচ্ছে। এর সঙ্গে মানবিক সহায়তা কমতে থাকলে সেটা মৌলিক চাহিদা পূরণের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে। এই অবস্থায় বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকলে স্বাভাবিক নিয়মেই তারা অবৈধ পথে সেসব চাহিদা পূরণ করতে চাইবে যা কখনোই কাম্য নয়। যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে কাজের সুযোগ তৈরি করে দেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে উদ্যোগ নেওয়ার চেষ্টা করছে। রোহিঙ্গারা কাজের সুযোগ পেলে শিবিরের বাইরে যাওয়ার দরকার হবে না। তাদের কর্মসংস্থান ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য কী করা যায় তা তারা বিবেচনা করে দেখবে।
উল্লিখিত সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য মানবিক ও আর্থিক সহায়তা প্রদানকারী সংস্থাগুলোকে তাদের কর্মপদ্ধতি কিছুটা পুনঃবিন্যাস করতে হতে পারে। কক্সবাজারে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রশাসনিক খরচ কমিয়ে আনার জন্য যতটা সম্ভব স্থানীয়ভাবে ব্যবস্থাপনা পরিচালনার উদ্যোগ নিতে হবে। বাংলাদেশের স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে যুক্ত করার মাধ্যমে এই খরচের সাশ্রয় করা যেতে পারে। চলমান পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে জরুরি ভিত্তিতে একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন করা প্রয়োজন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে জীবন রক্ষাকারী ও জীবন যাত্রায় সহায়তাকারী প্রকল্পগুলোতে অর্থায়ন চালু রাখতে হবে। নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।
রোহিঙ্গাদের মৌলিক চাহিদা মেটানোর জন্য কর্ম সংস্থান সৃষ্টি ও প্রশিক্ষণবিষয়ক প্রকল্প হাতে নিতে হবে ও অর্থায়ন করতে হবে। সহিংসতা, মাদক, অস্ত্র চোরাচালান রোধে মিয়ানমারের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। ক্যাম্পের নিরাপত্তা জোরদার ও সার্বক্ষণিক নজরদারির ব্যবস্থা করতে হবে। নতুন দাতা ও মানবিক সহায়তাদানকারী সংস্থাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে নতুন উৎস সন্ধানের মাধ্যমে মানবিক সহায়তা চলমান রাখতে হবে। ভাসানচরে রোহিঙ্গা স্থানান্তরের প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশকে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানে ব্যবস্থা নিতে হবে। সবশেষে,রোহিঙ্গাদের দ্রুত মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের মধ্যেই এই সমস্যার প্রকৃত সমাধান রয়েছে এবং তা নিশ্চিত করতে হবে।
হাসান মো. শামসুদ্দীন: ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এবং মিয়ানমার ও রোহিঙ্গাবিষয়ক গবেষক।
এসএন