টাকা দিয়ে গণতন্ত্র কেনা যায় না
ধর্মের নামে বজ্জাতি বেশিদিন চলে না। সদ্য সমাপ্ত পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতের তিনটি বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন হয়। তিনটিতেই কংগ্রেস জয়ী হয়েছে। দাদা ও দিদিকে বুঝিয়ে দিয়েছেন টাকা দিয়ে গণতন্ত্র বেশিদিন কেনা যায় না— যা তারা দীর্ঘদিন করে এসেছেন। জেলায় জেলায় হিন্দু-মুসলমান হাত ধরাধরি করে রাস্তায় নেমে পড়েছেন। বলছেন, দিদি আর না। অনেক ঠকিয়েছেন আমাদের। এবার আমাদের মতো করে আমাদের চলতে দিন। আমরা ভারতের গণতন্ত্র রক্ষা করবোই। এই তিনটি নির্বাচনের ফলাফল সেটিই দেখিয়ে দিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থাকে নষ্ট করে দিয়েছে। বর্তমান প্রজন্মকে ভাবতে হচ্ছে তারা কোথায় গিয়ে লেখাপড়া শিখবে?
পশ্চিমবঙ্গের স্যার দিদির ফলাফল দেখে বলতে শুরু করেছেন কংগ্রেস ও সিপিএম জোট বেঁধে তাকে হারিয়ে দিয়েছে। এই জোটকে নীতিবিহীন জোট বলেছেন মমতা। থেমে নেই কংগ্রেস সিপিএমও। সিপিএম এর সাধারণ সম্পাদক মুহম্মদ সেলিম পাল্টা জবাব দিয়েছেন। ১৯৯৭ সালে দিদি কংগ্রেস থেকে বেড়িয়ে গিয়ে বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আদভানির সঙ্গে সখ্য করে বিপুল পরিমাণ টাকার বিনিময়ে কংগ্রেস ছেড়ে গিয়েছিলেন। সেদিন তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছিলেন শুধু আদভানি নয়, আমেরিকান গোয়েন্দা চক্রও। পরবর্তী নির্বাচনগুলোতে তাকে অর্থ, ভুয়া ভোট, নাগরিকত্বের লোভ দেখিয়ে বাংলাদেশের জামাত-বিএনপি নেতারা সহযোগিতা করেছিলেন। এটি অভিযোগ নয়, ষোল আনা সত্যি। এ সব তথ্য তুলে ধরেছেন মোহম্মদ সেলিম। তারা একটির পর একটি প্রশ্ন তুলেছেন, একটির পর একটি জাতীয় ইস্যুতে দাদা দিদিকে তুলোধুনো করছেন গত আট বছর ধরে।
সংঘ পরিবারের প্রধান কলকাতায় এসে মধ্যরাতে দিদির সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এ সব নিয়ে তৃণমূল ও বিজেপি বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছেন। সম্প্রতি আদানি কাণ্ডে দেশের রাজনৈতিক দল আন্দোলন শুরু করেছে তখন তৃণমূল সাংসদরা কক্ষ ত্যাগ করে চলে যায়। আদভানির সঙ্গে গোপন চুক্তি করে অনেক টাকার বিনিময়ে কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন মমতা ব্যানার্জি। তখনকার পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু সাংবাদিকদের বৈঠকে বলেছিলেন, বর্বর ও খুনিদের ডেকে এনে ধ্বংসের পথে রাজ্যকে ঠেলে দেওয়া গণতন্ত্রকামী মানুষ কখনো মেনে নেবে না।
ভারতে একটি প্রচলিত নিয়ম আছে। যেকোনো রাজনৈতিক দলকে চাঁদা দেওয়ার জন্য নির্বাচনী বন্ড ছাড়া হয়। এই বন্ড কালো টাকা সাদা করার উদ্দেশে মোদীর আমলেই চালু হয়েছে। এ সময় তৃণমূলের আয় আগের তুলনায় বহুলাংশে বেড়ে গেছে। তৃণমূলের আয়ের ৯০ শতাংশ এর বেশি আসে এই বন্ড থেকে। অরুণ জেটলি অর্থমন্ত্রী থাকাকালে নরেন্দ্র মোদী সরকার নির্বাচনী বন্ড শুরু করে। সেসময় তৃণমূল দাবি করেছিল এই বন্ডে আরও স্বচ্ছতা আনা হোক। কারণ এই ব্যবস্থা পুরোটাই গোপন এতে কোনো সন্দেহ নেই।
সুখরঞ্জন দাশগুপ্ত: ভারতের সিনিয়র সাংবাদিক
আরএ/