একুশে বইমেলা তার নান্দনিকতা হারিয়েছে
একুশের বইমেলা বিগত তিন বছরের করোনার করাল গ্রাস অতিক্রম করে আবারও হচ্ছে। আমরা পূর্ণ উদ্যমে আমাদের প্রাণের বইমেলা উদযাপন করব আশা করেছিলাম। করোনা মহামারির পরে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের মধ্যে আরেকটি করালগ্রাস অর্থাৎ কাগজের আকাশছোঁয়া দাম। কখনো দ্বিগুণ কখনো তিনগুণ দামও বেড়েছে।
আমি মনে করি, একুশের বইমেলার প্রধান অনুষঙ্গ যেহেতু বই, সেই বই প্রকাশের ক্ষেত্রে প্রধান প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে কাগজের মূল্যবৃদ্ধি। দাম বৃদ্ধি হলে আমরা বর্ধিত দামে কাগজ কিনি। এই হিসাবে যদি বইয়ের দাম রাখি, তাহলে সেটি অনেক বেশি হবে, যেটি আমরা রাখতে চাই না। এত বেশি দামে আমরা বইয়ের দাম রাখার পক্ষপাতি নই। এক কথায় বলতে গেলে, অধিক হারে বইয়ের মূল্য বৃদ্ধি করার সুযোগ আমাদের কাছে নেই। সেক্ষেত্রে দামটিও একটি বিষয়। আমাদের জন্য দুঃখজনক হলো, প্রকাশকদের শুরুতেই এই প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়েছে। এতে হয়তো বইয়ের প্রকাশনা অল্প হলেও কমবে এবং কিছু বইয়ের দাম বাড়বে এবং সেটি হয়তো ২০ থেকে ২৫ শতাংশ বাড়বে।
আমার কথা হচ্ছে, সমন্বয়ের মধ্য দিয়েই আমাদের বইমেলাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। সেক্ষেত্রে পাঠক যেন বই বিমুখ না হয়ে পড়ে সেদিক আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব সহকারে নিচ্ছি। কারণ আমাদের উদ্দেশ্যই পাঠককে বইয়ের সঙ্গে সংযুক্ত রাখা। পাঠক যেন কোনোভাবেই বই থেকে দূরে সরে না যায়, বই বিমুখ হয়ে না পড়ে সেদিকটি আমরা সর্বোচ্চভাবে গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিয়েই বইয়ের দাম নির্ধারণ করে থাকি।
তবে আমি যদি আমার ব্যক্তিগত মতামত বলি, একজন সমালোচকের দৃষ্টিতে দেখি, কোভিডের সময়ও আমাদের বইমেলার যে নান্দনিকতা ছিল, সেটি অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে।
দ্বিতীয়ত হলো, বইমেলায় পাঠক আসছে ঠিকই, কিন্তু বই কিনছে কম। তৃতীয়ত, এবারের স্টলের বিন্যাসটি ভালো হয়নি। পাঠকের নির্দিষ্ট স্টল কিংবা প্যাভিলিয়ন খুঁজে পাওয়া কষ্টকর হচ্ছে। আমার নিজের যেহেতু প্যাভিলিয়ন বই বিক্রয়ের পরিমাণ গতবারের তুলনায় এবার অনেক কম, এক তৃতীয়াংশ। শিশু চত্বরটি একটি বিড়ম্বনার জায়গা হয়েছে মনে হয়েছে। যদিও সবমিলিয়ে আমাদের ইনভেস্ট হয়েছে কয়েকগুণ বেশি।
বইমেলা সবসময়ই অনিয়মের মধ্যেই থাকে। সবকিছু একইরকম নিয়মে থাকে না একথা ঠিক। কাজেই আমার মতে, এবারের বইমেলা খুব ভালো হবে এমনটি বলার সুযোগ নেই। কাগজের মূল্যবৃদ্ধি একটি বড় সংকটের সৃষ্টি করেছে। তবে আমরা যেহেতু সারা বছরই বই ছাপিয়ে থাকি, কাজেই আমাদের শুধুমাত্র বইমেলা নিয়ে চিন্তা করলে হবে না। আমাদের বই প্রকাশ বছরব্যাপীই হয়ে থাকে। তবে বইমেলা নিয়ে আমাদের উৎসাহ উদ্দীপনা অপেক্ষাকৃত বেশি থাকে। সেক্ষেত্রে আমাদের একটি প্রস্তুতি থাকে। আমার মতে এবারের বইমেলা ঘিরে যে প্রস্তুতি থাকার কথা ছিল, সেটিতে অন্যবারের তুলনায় যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে মনে হয়েছে।
জসিম উদ্দিন: প্রকাশক, কথাপ্রকাশ
এসএন