মেধাবিকাশে সৃজনশীল বইপাঠের বিকল্প নেই
বইমেলা শুরু হয়েছে। বিগত কয়েক বছর যেহেতু বইমেলা হয়নি। করোনাসহ নানা ধরনের বৈশ্বিক বিপর্যয়ের কারণে মেলা আয়োজন বিঘ্নিত হয়েছে। যে কারণে এবারের বইমেলা ঘিরে সবারই উৎসাহ উদ্দীপনা বেশি। প্রসঙ্গত গত বছরও আমরা ভালোভাবেই বইমেলা উৎসব উদযাপন করেছি। এবারও আমরা মেলা ভালোভাবে শেষ করতে পারব সেই আশা পোষণ করি।
তবে এবছর একটি শঙ্কার কথা হচ্ছে, কাগজের দাম বেড়ে গেছে। দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। সেক্ষেত্রে বইয়ের দাম হয়তো ২৫ শতাংশ বেড়েছে। অন্যদিকে সরকারিভাবে সেরকম কোনো সহযোগিতার আশ্বাস আমরা পাইনি। তবে বিষয়টি নিয়ে সরকারের নীতি নির্ধারকেরা ভাববেন বলে আমরা আশাবাদী। এবারের স্টল বিন্যাসেও কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। পাঠক স্বল্প দূরত্বে স্টল ঘুরে দেখতে পারবেন। তবে আগের মতো হয়তো খোলামেলা পরিবেশ পাওয়া সম্ভব হবে না।
দিনদিন পাঠকের রুচিরও পরিবর্তন হচ্ছে। আমি বিষয়টিকে এজন্য ইতিবাচকভাবে দেখছি যে, কোয়ালিটি (মানসম্মত) বইয়ের সংখ্যা কিন্তু বাড়ছে। গল্প উপন্যাস কবিতার পাশাপাশি ফিকশন, নন ফিকশন বইয়ের চাহিদাও বাড়ছে। বই প্রকাশেও বেশ পরিবর্তন আসছে। অনেক নতুন প্রকাশক আসছেন। আমি মূলত হতাশার চেয়ে আশাকেই এগিয়ে রাখতে চাই। এতসব বৈশ্বিক বিপর্যয়ের মধ্যেও প্রকাশক বাড়ছে, লেখক বাড়ছে। কোভিড সময়টুকু বাদ দিলে সবইতো আশাব্যাঞ্জক। আগে যেখানে কত ছোট পরিসরে মেলা হতো এখন সেটি অনেক বড় পরিসরে হচ্ছে। বিস্তারিত হচ্ছে বইমেলা। তবে আমাদের বইয়ের বাজার এখনো বাংলা ভাষাভাষি মানুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। অর্থাৎ আমাদের মার্কেটটি এখনো লোকাল মার্কেটই বলতে হবে। কাজেই আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে আমাদের তুলনা করা এখনো আমরা সেখানে যেতে পারিনি।
ইংরেজি ভাষার প্রকাশক যারা, তাদের বাজার অনেক ব্যাপক। ইংরেজি ভাষার প্রকাশকরা পৃথিবীব্যাপীই বই বাজারজাত করে এবং ব্যবসাও করেন। আমাদের ভাষা আন্তর্জাতিক ভাষার স্বীকৃতি পেলেও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিস্তার লাভ করতে পারেনি। আমাদের সেই এক্সপোজার নেই এবং আমরা সেখানে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত নয়। খুব কম প্রকাশকই আছেন যারা হয়তো চেষ্টা করছেন। ভবিষ্যতের কোনোসময় হয়তো আমরা সেটি করতে সক্ষম হব।
প্রথমত আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি আমাদের বাইরের জগতের সঙ্গে মেল বন্ধন স্থাপনে সৃজনশীল বই পড়তে হবে। দিন দিন সবার মধ্যেই সেই বোধ সৃষ্টি হচ্ছে। আমাদের শুধু একাডেমিক বই পড়লেই হবে না মেধা বিকাশের পাশাপাশি আমাদের নিজেদের বিশ্ব অঙ্গনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলতে গেলে বই পড়তে হবে। বই পাঠের বিকল্প নেই। আমি মনে করি, আমরা সে পথেই এগোচ্ছি এবং আশা করি একদিন আমরা আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বিচরণ করতে সক্ষম হব।
দীপঙ্কর দাস: স্বত্ত্বাধিকারী বাতিঘর
এসএন