বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ৬ ফাল্গুন ১৪৩১
Dhaka Prokash

দায়িত্বশীল পররাষ্ট্রমন্ত্রী এখন লাইমলাইটে

গত ২১ জানুয়ারি সিঙ্গাপুরে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. তৌহিদুল ইসলামের প্রশংসা করে বক্তব্য দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। তাকে তিনি ‘ভেরি গুড অফিসার’ ও ‘তুখোড় ছেলে’ বলেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ‘একটি দল তৌহিদুলের বিপক্ষে লেগেছে। তবে তিনি যতদিন (মন্ত্রী হিসেবে) আছেন, ততদিন তৌহিদুলকে ডিফেন্ড করে (আগলে রেখে) যাবেন।’

এই কথা বলার মধ্য দিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার মন্ত্রণালয়ের একজন ভালো অফিসারের কাজকে যেমন সমর্থন করেছেন তেমনি দায়িত্বশীল মন্ত্রীর পরিচয় দিয়েছেন। মন্ত্রী কেবল দল কিংবা সরকারের প্রতিনিধি নন তিনি তার মন্ত্রণালয়ের সকল কর্মকর্তার সহকর্মী- এই দৃষ্টিভঙ্গি নিঃসন্দেহে অগ্রগামী চিন্তা লালনকারীর দৃষ্টান্ত। এজন্য তার এ কথাগুলোও গুরুত্ববহ- ‘বর্তমানে সে (তৌহিদুল) আমাদের অ্যাম্বাসেডর ইন সিঙ্গাপুর। তাকে আমরা ভিয়েনাতে দিতে চাই। সেখানে মাল্টি ন্যাচারাল কাজ আছে আমাদের ধারণা। সারা দেশেই বোধ হয় এই ক্যারেক্টার, আমরা খালি (কেবল) মানুষকে নিচে নামানোর জন্য উঠেপড়ে লাগি। আর মিডিয়াও ওই লাইনেই আছে। উপরে উঠানোর চেষ্টা করে না, খালি নামানোর জন্য। আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনেক ডিপ্লোম্যাট আছে, আমাদের একজন ডিপ্লোম্যাট, হি (তৌহিদুল) ইজ সাকসেসফুল।’ একজন মেধাবী অফিসারের পক্ষ নেওয়ার এই দৃষ্টান্ত বিরল। এদেশে কারও সম্পর্কে মিডিয়া কোনো নেতিবাচক সংবাদ পরিবেশন করলেই মানুষ তাকে খারাপ ভাবতে শুরু করে। এজন্য মন্ত্রী মিডিয়া নিয়ে যৌক্তিক কথাই বলেছেন।

উল্লেখ্য, কূটনীতিক তৌহিদুল ইসলাম মেডিকেল ডাক্তার। তিনি ঢাকা থেকে এমবিবিএস পাস করেন ফার্স্ট ক্লাশ পেয়ে, তারপর যখন অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ পরীক্ষা দেন সেখানেও সারা দেশে ফার্স্ট, তার ব্যাচের ফার্স্ট বয় তিনি। অত্যন্ত ভালো, তুখোড় এই অফিসারকে এখন টেনে কীভাবে নামানো যায় সেই চেষ্টা করছে তার মন্ত্রণালয়ের লোকজন, তারই বন্ধুবান্ধবরা। এমনকি তার বিরুদ্ধে আগে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছিল তদন্তে তা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

প্রসঙ্গত বলতে হয় দেশ-বিদেশের মানুষ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেনকে স্পষ্টভাষী ও সত্যবাদী হিসেবে ভালো করেই জানেন এবং চিনেন। এজন্য তিনি যখন কারও পক্ষে কথা বলেন তখন ধরে নিতে হবে সেই বিষয়ে জেনে, শুনে ও বুঝেই বলেছেন। এজন্য তার উপর আস্থা তৈরি হয়েছে। তিনি এখন লাইমলাইটে। তার মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিযুক্ত অনেক রাষ্ট্রদূতকেই আমরা জানি ও চিনি। যেমন- কলকাতায় নিযুক্ত উপ-হাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াসও একজন সুযোগ্য ডিপ্লোম্যাট। আন্দালিব ইলিয়াসের সঙ্গে কথা বললেই বোঝা যাবে তিনি বিদেশে বসে দেশের জন্য কতটা আন্তরিক ও দেশের ইতিবাচক কাজের ধারা বাইরের দেশে তুলে ধরার জন্য কতটা নিবেদিত ও শ্রমনিষ্ঠ। তাকে নিয়োগ দেওয়ার কৃতিত্ব দিতে হবে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকেই।

২.

জানুয়ারিজুড়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর তৎপরতা সত্যিই প্রসংশার দাবি রাখে। আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিদেশিদের অতি উৎসাহ এবং এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে বিএনপি নেতাদের অরাজকতা সৃষ্টির পাঁয়তারা যখন উচ্চে তখন তিনি ১৪ জানুয়ারি বলেছেন, ‘আমরা একটা স্বচ্ছ, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে চাই। অন্যদের আমাদের গণতন্ত্র শেখানোর প্রয়োজন নেই। আমাদের গণতন্ত্র আছে, মানবাধিকার আছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে বিদেশিদের মতামতের প্রয়োজন নেই। এ দেশের নির্বাচন ভালো কী মন্দ হবে সেটা ঠিক করবে এ দেশের জনগণ। অন্য কেউ না। অন্য কেউ এটা নিয়ে কিছুই করতে পারবে না। বাংলাদেশের জনগণ এটা ঠিক করবে। তিনি একথাও স্মরণ করিয়ে দেন যে, আওয়ামী লীগ সরকার বুলেটের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেনি। বরং সব সময় স্বচ্ছ নির্বাচন করতে চায় আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ সরকারে এসেছে ব্যালটের মাধ্যমে। এজন্য যথাসময়ে নির্বাচন হবে। আওয়ামী লীগ এমন দল না যে, কোনো বড় দলকে নির্বাচন করতে দেবে না। সবাইকে নিয়ে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’ মন্ত্রীর এই কথাগুলো যে বিজ্ঞ এবং অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদের তা লেখাবাহুল্য।

এ ছাড়া তিনি বিদেশে বাংলাদেশি কূটনীতিকদের দেশের স্বার্থে কাজ করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন পহেলা জানুয়ারিতে। বিশেষত দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও বানোয়াট তথ্য দিলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে বিদেশে দায়িত্বরত বাংলাদেশের কূটনীতিকদের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি সাংবাদিকদের আরও জানান, ‘মিথ্যা তথ্য ও অপপ্রচাররোধে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি এটা নিয়ে কাজ করবে। প্রকৃত তথ্য ও ঘটনা তুলে ধরবে।’

নিজের দেশের মর্যাদা ও সার্বভৌম রক্ষায় ড. মোমেন সব সময় সোচ্চার। গত বছরের ডিসেম্বরে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে কোনো দেশের মাথা ঘামানোর দরকার নেই বলে মন্তব্য করেছিলেন তিনি। তবে বন্ধু রাষ্ট্রগুলো কোনো প্রস্তাব দিলে গুরুত্বসহকারে দেখা হবে বলে জানান তিনি। তার মতে, ‘আমাদের গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে কোনো পরামর্শ বা মাতব্বরি করার সুযোগ নেই। কারণ ১৯৭১ সালে এসবের জন্য ৩০ লাখ লোক রক্ত দিয়েছেন।’ দেশের বিষয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত হস্তক্ষেপ নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা চাই না আমেরিকা-রাশিয়া কেউ আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাবে। আমরা চাই প্রতিটা দেশ জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী চলবে। আমাদের দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কেউ নাক গলাক সেটা আমরা চাই না।’

জানুয়ারিতেই ‘লাইমলাইটে পররাষ্ট্রমন্ত্রী’ এই শিরোনামে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। ১৮ জানুয়ারি একটি জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল লিখেছে, ‘ক্ষমতাসীন সরকারের গঠিত ২০১৯ সালের মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্যে সবচেয়ে ব্যর্থ মনে করা হতো পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনকে। এর অন্যতম কারণ হলো ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর র‌্যাবের উপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আরোপ। অভিযোগ রয়েছে কতগুলো ভিত্তিহীন প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র র‌্যাবের উপর এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। আর এ ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোনো উদ্যোগ ছিল না বলেই অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যথাযথ তৎপরতা না থাকার কারণে কোনো একটি গোষ্ঠী লবিস্ট নিয়োগ করে র‌্যাবের উপর এই মার্কিন নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আসে। র‌্যাবের উপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং তার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বহীনতাকে দায়ী করা হতো। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের জন্য নানাভাবে সমালোচিত হয়েছিলেন। যেমন- ‘অন্যান্য দেশের তুলনায় আমরা বেহেশতে আছি’, ‘আমি ভারতে গিয়ে বলেছি, শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখতে হবে।’ এ ধরনের মন্তব্যের জন্য তিনি সারা বছরজুড়ে সমালোচিত হয়েছিলেন। কিন্তু ২০২৩ সালের শুরুতে তিনি পাশার দান উল্টে দিলেন এবং এখন সফল মন্ত্রীদের তালিকা করলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এর নামই প্রথমে আসে।’

এই ভূমিকা দেওয়ার পর নিউজ পোর্টালটি দেশপ্রেমিক এই মন্ত্রীর বিভিন্ন অবদানকে তুলে ধরে। যেমন- সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা সফরে করে গেছেন মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক মার্কিন অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু। তার এই সফরের আগে নানা জল্পনা-কল্পনার কথা শোনা গিয়েছিল। বিশেষ করে ২০২২ সালের ৭ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন দূতাবাস বিবৃতি দিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে। এরপর ১৪ ডিসেম্বর শাহীনবাগে মার্কিন দূতাবাস পিটার ডি হাস এর যাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে টানাপোড়েন দেখা দেয়। ফলে ডোনাল্ড লু’র ঢাকা সফরের আগে নানা ধরনের জল্পনা-কল্পনার গুঞ্জন উঠে। গুঞ্জন উঠেছিল ঢাকার উপর আবার নতুন করে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার। কিন্তু ডোনাল্ড লু’র ঢাকা সফরে তেমন কোনো কিছুই হয়নি। বরং তিনি ঢাকা সফরে এসে বলেছেন, ‘আমি বাংলাদেশে এসেছি, আমাদের দুই দেশের বন্ধুত্বকে শক্তিশালী করতে।’ লু আরও বলেন, ‘র‌্যাব নিয়ে ভালো আলোচনা হয়েছে। আপনারা যদি হিউম্যান রাইটস ওয়াচের সবশেষ প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখেন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ স্বীকৃতি দিয়েছে, আমরা স্বীকৃতি দিয়েছি। খুব চমৎকার কাজ হয়েছে। তারা ল’ এনফোর্সমেন্ট এবং মানবাধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেছে। সন্ত্রাস প্রতিরোধে তারা ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে।’ জিএসপি সুবিধার বিষয়ে ডোনাল্ড লু বলেন, ‘জিএসপি সুবিধার বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ কিছু দেশ অপেক্ষায় রয়েছে। আমরা যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের অনুমতির অপেক্ষায় রয়েছি। জিএসপি সুবিধা চালু হলে প্রথমে বাংলাদেশ এই সুবিধা পাবে।’

অর্থাৎ ডোনাল্ড লু’র সফরের আগে নানা ধরনের গুঞ্জন শোনা গেলেও সেগুলোর কোনোটাই হয়নি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং তার মন্ত্রণালয়ের সক্রিয় ভূমিকার জন্যই বাংলাদেশ সম্পর্কে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ধারণা পাল্টেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। আর এর পেছনে কৃতিত্ব রয়েছে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের।

৩.

মূলত পররাষ্ট্রমন্ত্রী অধ্যাপক ড. এ কে আব্দুল মোমেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেখানো পথে চলে নিজের মন্ত্রণালয়কে ঢেলে সাজিয়েছেন। নিজের দেশকে নিয়ে সর্বদা কেবল গর্ব করেন না, বরং তিনি কাজ দিয়ে মানুষের মূল্যায়ন করে দায়িত্ব নিয়ে কথা বলেন ও তার নিজের অফিসারদের নির্দেশনা দিয়ে সুরক্ষা করেন। ড. মোমেনের মতো মন্ত্রী আছেন বলেই এদেশের ভাবমূর্তি বিশ্ববাসীর কাছে আরও বেশি উজ্জ্বল হচ্ছে। বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে পরিচিত করার পেছনে যেমন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনন্য অবদান রয়েছে তেমনি দেশের এই সাফল্যকে ধরে রাখা ও এগিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। এই কাজটি সুচারুভাবে সম্পাদিত হচ্ছে কেবল একজন যোগ্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী আছেন বলেই।

ড. মিল্টন বিশ্বাস: অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান, বাংলা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এবং বঙ্গবন্ধু গবেষক। 

এসজি

Header Ad
Header Ad

অবশেষে সরিয়ে দেওয়া হলো মাউশির বিতর্কিত ডিজিকে

অধ্যাপক ড. এহতেসাম উল হক ও মাউশির লোগো। ছবি: সংগৃহীত

শিক্ষক নেতাদের আন্দোলন ও গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক (ডিজি) পদ থেকে অধ্যাপক ড. এহতেসাম উল হককে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি শিক্ষা ক্যাডারের ১৪তম বিসিএসের কর্মকর্তা এবং পটুয়াখালী সরকারি কলেজের অধ্যাপক ছিলেন।

বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সম্প্রতি তার বিতর্কিত কার্যক্রম নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর তাকে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করে মাউশিতে সংযুক্ত করা হয়েছে। এদিকে, নতুন মহাপরিচালক হিসেবে অধ্যাপক মুহাম্মদ আজাদ খানকে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের উপসচিব মো. মাহবুব আলম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে, অধ্যাপক মুহাম্মদ আজাদ খানের এই দায়িত্ব কেবল সাময়িক, যা পদোন্নতি হিসেবে গণ্য হবে না। পরবর্তীতে নিয়মিত নিয়োগের মাধ্যমে মহাপরিচালক নিয়োগ হলে এই চলতি দায়িত্ব বাতিল হয়ে যাবে।

অধ্যাপক এহতেসাম উল হকের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। এর আগে তিনি বরিশাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ থাকাকালীন শিক্ষার্থীদের ওপর নিপীড়ন চালানোর অভিযোগে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন। অভিযোগ রয়েছে, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের তথ্য তিনি পুলিশের কাছে সরবরাহ করেছিলেন।

২০২৩ সালের ৫ আগস্ট তার অপসারণের দাবিতে কলেজের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করে। দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তার অপসারণের দাবি জানায় শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ২০২১ সালের জুন মাসে বরিশাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে যোগদানের পর থেকে তিনি নানা অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা চালিয়ে যান। তিনি বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের তৎকালীন মেয়র এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আত্মীয় সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর ঘনিষ্ঠ ছিলেন।

অভিযোগ রয়েছে, অধ্যক্ষ থাকাকালীন তিনি শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতেন এবং আন্দোলনে অসহযোগিতা করতেন। এমনকি কলেজের গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করতেন, যা তার শ্বশুরবাড়ির লোকজনও ব্যবহার করতেন। তিনি কলেজের বিদ্যুৎ ব্যবহার করে নিজের বাসায় গ্রিল নির্মাণসহ অন্যান্য কাজ করিয়েছেন। কেউ প্রতিবাদ করলে চাকরি খেয়ে ফেলার হুমকি দিতেন এবং বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন (এসিআর) খারাপ করে দেওয়ার ভয় দেখাতেন। এছাড়া, চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতন না দিয়ে বিদায় করে দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

ডিজি পদ থেকে এহতেসাম উল হককে অপসারণের খবরে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, একজন বিতর্কিত ব্যক্তি শিক্ষাখাতের এত বড় দায়িত্বে থাকতে পারেন না। তার অপসারণের মাধ্যমে প্রশাসনের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার প্রতি সরকারের সদিচ্ছার প্রতিফলন ঘটেছে।

Header Ad
Header Ad

২০১৮ সালের নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা ৩৩ ডিসি ওএসডি

ছবি: সংগৃহীত

২০১৮ সালের বিতর্কিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ৩৩ জন জেলা প্রশাসককে (ডিসি) বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে। বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত ছয়টি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিতর্কিত নির্বাচনে জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালনের কারণে এই কর্মকর্তাদের ওএসডি করা হয়েছে। এর আগে একই কারণে আরও ১২ জন কর্মকর্তাকে ওএসডি করা হয়েছিল।

ওএসডি হওয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের পরিচালক (যুগ্মসচিব) কবীর মাহমুদ, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পরিচালক (যুগ্মসচিব) মো. মাহমুদুল আলম, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক (যুগ্মসচিব) মো. আবুল ফজল মীর, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের সদস্য-পরিচালক (যুগ্মসচিব) মঈনউল ইসলাম, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য (যুগ্মসচিব) মো. ওয়াহিদুজ্জামান, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (সংযুক্ত) এ কে এম মামুনুর রশিদ এবং বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (বাপবিবো) সদস্য (যুগ্মসচিব) ড. কে এম কামরুজ্জামান সেলিম।

এছাড়া তালিকায় রয়েছেন নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব কাজী আবু তাহের, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সদস্য (যুগ্মসচিব) মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্মসচিব (সংযুক্ত) আনার কলি মাহবুব, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সদস্য (যুগ্মসচিব) সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের পরিচালক মো. মতিউল ইসলাম চৌধুরী, কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব সাবিনা ইয়াসমিন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আতাউল গনি এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব (সংযুক্ত) আবু আলী মো. সাজ্জাদ হোসেন।

এছাড়া, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব এ জেড এম নুরুল হক, বাংলাদেশ রাবার বোর্ডের পরিচালক (যুগ্ম-সচিব) এস এম আজিয়র রহমান, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সচিব (যুগ্ম-সচিব) মো. মাসুদ আলম সিদ্দিক এবং সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের যুগ্ম-সচিব গোপাল চন্দ্র দাশসহ আরও বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা রয়েছেন।

প্রসঙ্গত, বিতর্কিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই ওই সময়ের রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ভূমিকা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। এবার সেই নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা কর্মকর্তাদের পর্যায়ক্রমে ওএসডি করা হচ্ছে বলে মনে করছেন প্রশাসনিক বিশ্লেষকরা।

Header Ad
Header Ad

ট্রাম্পের বিস্ফোরক দাবি: চলমান যুদ্ধের সূচনা ইউক্রেনই করেছিল

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য ইউক্রেনকেই দায়ী করে নতুন বিতর্ক উসকে দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মার্কিন রাজনীতিতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ সমর্থক হিসেবে পরিচিত ট্রাম্প এবার ইউক্রেনের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন। তিনি দাবি করেছেন, চলমান যুদ্ধের সূচনা ইউক্রেনই করেছিল।

মঙ্গলবার (স্থানীয় সময়) ফ্লোরিডার মার-আ-লাগোতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির প্রতি কঠোর মনোভাব প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ইউক্রেনে একটি নতুন নির্বাচন হওয়া উচিত। বিশ্লেষকদের মতে, এটি জেলেনস্কিকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনারই ইঙ্গিত।

ট্রাম্প আরও বলেন, ইউক্রেনে দীর্ঘদিন ধরে কোনো নির্বাচন হয়নি এবং সেখানে সামরিক আইন চলছে। তার দাবি, জেলেনস্কির জনপ্রিয়তা মাত্র চার শতাংশে নেমে গেছে, আর দেশটি ধ্বংসের পথে। যদিও যুদ্ধকালীন সময়ে নির্ভরযোগ্য জনমত জরিপ পাওয়া কঠিন, তবে বিভিন্ন প্রতিবেদনে দেখা গেছে, জেলেনস্কির জনপ্রিয়তা ট্রাম্পের দাবির মতো এতটা কমেনি।

এছাড়া, ইউক্রেনের নির্বাচন প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, "তারা কি জনগণের মতামত নিয়েছে? তারা আলোচনার টেবিলে বসতে চায়, কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে সেখানে কোনো নির্বাচন হয়নি।"

প্রসঙ্গত, ইউক্রেনে ২০২৪ সালের এপ্রিলে নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও দেশটির সংবিধান অনুযায়ী, যুদ্ধকালীন সময়ে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন সম্ভব নয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের এই মন্তব্য কৌতুকপূর্ণ, কারণ তিনি নিজেই ২০২০ সালের মার্কিন নির্বাচনের ফলাফল মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন।

ট্রাম্প আরও দাবি করেন, ইউক্রেন চাইলে যুদ্ধ বন্ধ করতে পারতো এবং তাদের উচিত ছিল রাশিয়ার সঙ্গে সমঝোতায় যাওয়া। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এর অর্থ হলো—ইউক্রেনকে হয় রাশিয়ার মিত্র সরকার গঠনের প্রস্তাবে রাজি হতে হতো, নয়তো প্রতিরোধ ছেড়ে দিয়ে আত্মসমর্পণ করতে হতো।

বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের সাম্প্রতিক অবস্থান ইঙ্গিত দেয় যে, তিনি পুনরায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে ইউক্রেনকে সমর্থন না দিয়ে বরং রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটি বিতর্কিত শান্তিচুক্তির দিকে এগোতে পারেন, যা পুতিনের জন্য বড় ধরনের কূটনৈতিক জয় হিসেবে বিবেচিত হবে।

সূত্র: সিএনএন

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

অবশেষে সরিয়ে দেওয়া হলো মাউশির বিতর্কিত ডিজিকে
২০১৮ সালের নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা ৩৩ ডিসি ওএসডি
ট্রাম্পের বিস্ফোরক দাবি: চলমান যুদ্ধের সূচনা ইউক্রেনই করেছিল
ডিবির সাবেক প্রধান হারুনের ১০০ বিঘা জমি, ৫ ভবন ও ২ ফ্ল্যাট ক্রোকের নির্দেশ
দিল্লির নতুন মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন রেখা গুপ্তা, বিজেপির সিদ্ধান্তে চমক
একুশের প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতির শহীদ মিনারে না যাওয়ার আহ্বান
নামাজি জীবনসঙ্গী খুঁজছেন আইশা খান
গাইবান্ধায় গাঁজাসহ আটক এএসআইকে কারাগারে প্রেরণ
উপদেষ্টাদের মিটিংয়ে কোন প্রটোকলে গিয়েছিলেন হাসনাত-পাটোয়ারী: ছাত্রদল সেক্রেটারি
সরকারে থেকে ‘নতুন দল’ গঠন করলে মেনে নেওয়া হবে না: মির্জা ফখরুল
হোস্টিং সামিট ২০২৫ অনুষ্ঠিত
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির উদ্বোধনী ম্যাচে পাকিস্তানকে ৩২১ রানের বড় লক্ষ্য দিলো নিউজিল্যান্ড
বৈষম্যবিরোধী নামধারী শীর্ষ নেতার নির্দেশে কুয়েটে ছাত্রদলের ওপর হামলা: রাকিব
যান্ত্রিক ত্রুটিতে আবারও বন্ধ বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র
কুবিতে ছাত্র সংসদের দাবিতে মানববন্ধন ও সন্ত্রাসবিরোধী বিক্ষোভ মিছিল
২২০ জনকে নিয়োগ দেবে সমরাস্ত্র কারখানা, এসএসসি পাসেও আবেদন
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে ২ দিনব্যাপি খামারি প্রশিক্ষণ
সবার সাত দিন কারাগারে থাকা উচিত: আদালতে পলক
বিপ্লবী সরকারের ডাক থেকে সরে এলেন কাফি  
নাঈম ভাই হেনা কোথায়?: ‘তুই অনেক দেরি করে ফেলেছিস বাপ্পা’