আয়কর রিটার্ন প্রস্তুত প্রসঙ্গে আমাদের করণীয়
আয়কর বিভাগে চাকরি করা কালে অনেক সময় সম্মানীত করদাতাদের আয়কর নির্ধারণ, আয়কর মামলা নিষ্পত্তি কিংবা অনুমোদনকালে বহু করদাতার আয়কর রিটার্নে নানাবিধ ভুল লক্ষ্য করেছি। অনেক সময় করদাতাদের অনুমোদিত প্রতিনিধি বা ট্যাক্স কলসালটেন্টদের সঙ্গে এ সব ত্রুটির বিষয়ে মনোমালিন্যও হয়েছে। তখন সব কারণ বুঝতে পারতাম না।
এখন আয়কর বিভাগ থেকে অবসরের পর ট্যাক্স কলসালটেন্ট হিসাবে নিজের অফিস পরিচালনা করতে গিয়ে বুঝতে পারছি কেন করদাতারা বা তাদের মনোনীত প্রতিনিধিরা আয়কর রিটার্ন পূরণের সময় এতো বড় ভুল করতেন।
সম্প্রতি বেশ কিছু ব্যক্তি করদাতা ও কোম্পানি করদাতার আয়কর মামলার আইনানুগ পরামর্শ দিতে গিয়ে বুঝতে পারলাম এ দেশের বহু মানুষ নিজের আয় নিয়ে সচেতন থাকলেও তাদের উপার্জিত অর্থের সঠিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে তারা মোটেও সচেতন নন।
একটা উদাহরণ দিলেই বিষয়টি পরিষ্কার হবে সবার কাছে। যেমন ধরুন— আপনি যদি হার্টের ব্লকের সমস্যায় থাকেন এবং আপনার পরিচিত কোনো একজন নার্স যদি সাক্ষাৎ করে আপনাকে বলেন যে, তিনি একজন বিশেষজ্ঞ হার্ট সার্জনের সাথে দীর্ঘ ১৫ বছর অপারেশন থিয়েটারে কাজ করেন। বহু রোগীর অপারেশন করতে তিনি দেখেছেন। তিনি সেই অভিজ্ঞতার আলোকে আপনার হার্টের অপারেশন করে দিতে চান স্বল্প খরচে। কোনো সমস্যা হবে না।
আপনি কি তাতে রাজী হবেন? নিশ্চয়ই বলবেন যে আপনি তাতে রাজী নন। আয়কর রিটার্ন প্রস্তুতকরণের বিষয়টিও তেমনই। কিন্তু অনেকে তা মানতে চান না কিংবা বুঝতে চান না। তারা খুব কম খরচে এমন একজনকে দিয়ে আযকর রিটার্ন প্রস্তুত করে জমা দেন যে সে আসলে একজন নার্স। একজন নার্স খুবই অভিজ্ঞ কিন্তু তিনি তো হার্ট সার্জারি করার মত কাজ করতে পারেন না..।
পরিণতি কি হয়? এক সময় রিটার্নটির নানা ভুলের কারণে তা অডিটের আওতায় আসে এবং করদাতার দারুণ মানসিক যন্ত্রনার পাশাপাশি আর্থিক জরিমানার সম্মুখীন হন। এটি তিনি যখন বুঝতে পারেন ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে।
সম্প্রতি এমনই কয়েকটি কর মামলার আপিল/ট্রাইব্যুনাল করতে গিয়ে নিজের কাছে নিজে অপ্রস্তুত হলাম। আগে যদি একজন দক্ষ আইনজীবী বা আয়কর উপদেষ্টার মাধ্যমে রিটার্নটি প্রস্তুত করা হতো তাহলে করদাতার অনেক অর্থ সাশ্রয় হতো আইনানুগভাবেই।
আয় ব্যয়ের হিসাব যথা নিয়মে ও আয়কর আইন মোতাবেক প্রস্তুত করা সব নাগরিকের পক্ষে সম্ভব নয়। সারা বিশ্বে তাই হয়। যিনি এসব আইন জানেন তাকে দিয়েই এ কাজটি সম্পন্ন করা বুদ্ধিমানের কাজ। এ ক্ষেত্রে কৃপণতা করে আইন নাজানা কারো সাহায্য নেওয়া বোকামি। এর জন্য পরবর্তীতে বিশাল জরিমানা গুনতে হয়। মানসিক অশান্তির কথা বাদই দিলাম।
আয়কর রিটার্ন যারা সঠিকভাবে বা নির্ভুলভাবে প্রস্তুত করেন তারা বছরে ৩৬০ দিনই নিশ্চিন্তে ব্যবসা বা পেশার কাজ করে থাকেন। আর যারা তা করেন না তারা সারা বছরই মানসিক যন্ত্রণা ভোগ করে থাকেন।
মো. বজলুল কবির ভূঞা: সাবেক কর কমিশনার, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও নির্বাহী পরিচালক, সেন্টার ফর ট্যাক্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ
আরএ/