বছর জুড়ে অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব থাকবে
বৈশ্বিক অর্থনীতি এখন অনেক কিছুর সঙ্গেই সংযুক্ত। আমাদের দেশের অর্থনীতিও বৈশ্বিক অর্থনীতির সঙ্গে জড়িত। সেদিক চিন্তা করলে যেসব কারণে অর্থনীতি নিয়ে চিন্তার ব্যাপার আছে তা হলো, কোভিডের পরে রিকভারি চলছিল। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়ে যায়। তবে দাম বৃদ্ধি যে পুরোপুরি ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের জন্য তা নয়। কোভিড রিকভারি প্রসেসের মধ্য দিয়েই এরকম হয়েছে। সেই জায়গা থেকে এটি ধারাবাহিকভাবেই চলছে। সেই বিচারে নিজেদের অর্থনীতি নিয়ে বেশি ভাবতে হবে এজন্য যে, বিশ্বের অর্থনীতিতে একটি মন্দাভাব থাকবে। তবে বাজারগুলি যেহেতু আমাদের রপ্তানির প্রধান বাজার সেদিক থেকে আমাদের সচেতন ও চিন্তা ভাবনার দরকার আছে।
আমি বলব এখন পর্যন্ত আমাদের রপ্তানি বেশ ভালো। আমরা যদি এটি ধারাবাহিকভাবে চালিয়ে নিতে পারি, রপ্তানির দিক থেকে দুশ্চিন্তার কারণ হবে না। তবে অবশ্যই এই বাজারগুলি আমাদের পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে অর্থনীতি কোথায় যাচ্ছে। বৈশ্বিক অর্থনীতিতে একটি মন্দার আশঙ্কা বড় বড় অর্থনীতিবিদ অথবা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা করছে। কাজেই ২০২৩ এ একটি মন্দাভাব থাকবে। সেক্ষেত্রে এই অনিশ্চিত অবস্থায় আমাদের পণ্যের বাজার কেমন হবে সেটি সর্বোচ্চ সতর্কতায় রাখতে হবে।
আরও একটি সতর্কতার বিষয় হচ্ছে, এ বছর হচ্ছে নির্বাচনের বছর। যদিও নির্বাচনের তারিখ এখনো নির্ধারিত হয়নি। তবে বছরের শেষে অথবা আগামী বছরের শুরুর দিকে যেহেতু নির্বাচন হবে, তবে সারা বছর ধরেই তার প্রভাব কিন্তু অর্থনীতির মধ্যে পড়বে। সেটির একটি ইতিবাচক দিক হচ্ছে, নানান জিনিসের কেনা বেচা অথবা বাজার একটু সরগরম থাকে; বিশেষ করে মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়। উদাহরণস্বরূপ প্রিন্টিংসহ স্বল্প আয়ের মানুষের নানামুখি কর্মসংস্থান যেমন চায়ের স্টলের আড্ডা থেকে সবকিছুই অর্থনীতির অংশ হয়ে যায়; যেগুলো নির্বাচনের বছরগুলোতেই চাঙ্গা হয়।
আবার কিছু অনিশ্চয়তা আমরা দেখি যেটি অর্থনীতির জন্য সুফল বয়ে আনে না। আমার মতে, এ বছরে অর্থনীতির দিক থেকে একটি ইতিবাচক প্রভাব থাকবে। এবারের নির্বাচন গ্রামে-গঞ্জে সারা দেশেই ছোট ছোট উদ্যোক্তা তৈরি করবে। নির্বাচনকে ঘিরে যতধরনের পণ্য তার সঙ্গে ক্ষুদ্র ব্যবসা যুক্ত হবে। সেদিক থেকে বলা যায় যে, দেশের অর্থনীতি বেশ চাঙ্গা থাকবে। তবে বিশ্বব্যাপী মন্দার কারণে, মূল্যস্ফীতির বিষয়টি আমাদের জন্য বড় চিন্তার বিষয়।
২০২৩-এ আমি মনে করি, এটি এখন পর্যন্ত যে গতিতে কমছে, সেটি বেশ ধীরগতি। আগামীতে ধানের ফলন ও সাপ্লাই চেঞ্জ ইত্যাদি জায়গাগুলোতে আমাদের মনোযোগ রাখতে হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলো যেমন বন্যায় ফসল নষ্ট হয়, এসব ক্ষেত্রে আমাদের দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। অনেক ক্ষেত্রেই মানুষের সঞ্চয় কমে গেছে। বিশেষ করে নিম্নবিত্ত পরিবারে যারা নির্দিষ্ট আয়ে সংসার চালান, তারা চলছেন কিন্তু একটি চাপের মধ্যে আছেন। সেদিক বিবেচনায় মূল্যস্ফীতি বছর জুড়েই চিন্তার একটি ব্যাপার হবে।
সবকিছু মিলিয়ে আমি মনে করি, ২০২৩ সাল বাংলাদেশের জন্য একটি পরীক্ষার বছর, বিশেষ করে বিগত কয়েক বছরের উন্নয়নের ধারায় আমাদের শক্তিমত্তা কতটুকু? বিশ্বব্যাপী অর্থনীতিতে কিছুটা মন্দাভাব থাকলেও দরিদ্র-ধনী সবাই মিলে আমরা টিকে থাকতে পারি কীভাবে, সেদিক থেকে পরীক্ষার বছর। এই পরীক্ষায় ভালো ফল পেতে হলে আমাদের সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতকেও এ বিষয়ে আরও বেশি মনযোগী হতে হবে।
নাজনীন আহমেদ: অর্থনীতিবিদ
এসএন