বুধবার, ২ এপ্রিল ২০২৫ | ১৯ চৈত্র ১৪৩১
Dhaka Prokash

নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে পর্যটন

সূচনা

জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১ তে নারীর অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতায়নের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে যে, নারী উন্নয়ন জাতীয় উন্নয়নের পূর্বশর্ত। সব ক্ষেত্রে নারীর সমসুযোগ ও সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে জাতীয় উন্নয়নকে নিশ্চিত করতে হবে। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে হলে প্রাথমিক ধাপ হিসেবে নারীর স্বাস্থ্য, শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, তথ্য ও প্রযুক্তিতে নারীকে পূর্ণ ও সমান সুযোগ এবং উপার্জন, উত্তরাধিকার, ঋণ ও অর্জিত সম্পদের ক্ষেত্রে নারীর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রদান করা অপরিহার্য। পর্যটনের সবগুলো ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখতে পারে। বিশেষত নারীর শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও উদ্যোক্তা সৃষ্টি, সামাজিক অবস্থান এবং নেতৃত্ব ও ক্ষমতায়ন— এই চারটি বিষয় পর্যটনের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা সম্ভব।

ক. নারীর পর্যটন শিক্ষা
বাংলাদেশসহ পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই নারীরা শিক্ষা গ্রহণে পিছিয়ে আছে। পর্যটনের মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণ ও পর্যটন বিষয়ে শিক্ষা গ্রহণ, এই দুটি বিষয় নারীদের শিক্ষার ক্ষেত্রে যুক্ত করা অপরিহার্য। শিক্ষা গ্রহণ ও প্রয়োগে নারীদের সমসুযোগ ও সমঅধিকার প্রদান করতে হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন অভীক্ষা (এসডিজি) বাস্তবায়নে পর্যটনের যে সব প্রতিশ্রুতি নির্ধারণ করা হয়েছে, সেখানে নারীর অংশগ্রহণ এবং ক্ষমতায়ন প্রধান। তাই নারীকে পর্যটনের মাধ্যমে প্রায়োগিক শিক্ষা ও পর্যটন শিক্ষায় শিক্ষিত করা জরুরি। অন্যদিকে অর্জিত শিক্ষার বাস্তবায়ন নারীর প্রতি বৈষম্য কমিয়ে তাদের উন্নতি ও বিশ্বব্যাপী ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করবে।

নারীর শৈশব ও কৈশোরে পারিবারিক পরিমণ্ডলে অন্যের সঙ্গে আচরণ, কথা বলার শিল্পমান, মত বিনিময়, খাবার প্রস্তুতি ও পরিবেশন কৌশল, ব্যক্তিগত হাইজিন, পোশাক-পরিচ্ছেদ তৈরি ও পরিষ্কার রীতি ইত্যাদি সবই অপ্রাতিষ্ঠানিক পর্যটন শিক্ষার অংশ। আবার পর্যটন পরিচালনা ও অনুশীলনের মাধ্যমে সামাজিক রীতি কৌশল, ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক শিক্ষা দান পরিচালনা করা উচিত। ফলে তা পরবর্তী জীবনে সামাজিক বন্ধন, রীতি, ঐতিহ্য ও সামাজিক পুঁজি ধরে রাখতে সাহায্য করবে। একইভাবে সাংস্কৃতিক অনুশীলনের মাধ্যমে অন্যের কাছে তুলে ধরাসহ শুদ্ধভাবে ধারণ করতে পারবে। পর্যটনের এই সব শিক্ষা অন্য বাহ্যিক সাংস্কৃতিক সংমিশ্রণে মূল চরিত্র নষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা করে। উল্লেখ্য যে, উৎকর্ষ সাধনের জন্য পর্যটন শিক্ষা ও অনুশীলন অব্যাহত রাখতে হবে।

অপ্রাতিষ্ঠানিক পর্যটন শিক্ষার পাশাপাশি নারীকে প্রাতিষ্ঠানিক পর্যটন শিক্ষার আওতায় আনা উচিত। মাধ্যমিক স্তর থেকে পর্যটনকে অন্য বিষয়ের অংশ হিসেবে পাঠ্যক্রমে যুক্ত করা যেতে পারে। উচ্চমাধমিক স্তরে ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি বিষয়ে অগ্রাধিকারভিত্তিতে নারীদের পাঠদান করা দরকার। উল্লেখ্য যে, পর্যটন শিক্ষা নারী-পুরুষে ব্যবধান কমায়।

নারীর পর্যটন শিক্ষা অর্থ হলো একটি সমাজ সৃজনশীলতা নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার প্রথম পদক্ষেপ। এতে সমাজ দৃঢ় ও কর্মমুখী হয়। দারিদ্র্য কেবল অর্থের অভাব নয়। পছন্দ, স্বীকৃতি ও অধিকারের অভাবও বটে। দারিদ্র্য আর্থিক শোষণের সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক শোষণও নিশ্চিত করে। তাই পর্যটনের মাধ্যমে শিক্ষা ও পর্যটন শিক্ষা নারীর দারিদ্র্য দূরীকরণের সঙ্গে সঙ্গে মর্যাদার জায়গাও ঠিক করে দিবে। জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১-তে বলা হয়েছে যে, দক্ষ মানব সম্পদ তৈরির পূর্বশর্ত শিক্ষা, স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ, মানসিক ও সাংস্কৃতিক বিকাশ। সরকার নারীকে দক্ষ মানব সম্পদে রূপান্তরের প্রচেষ্টায় শিক্ষা খাতকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে বলেও তাতে উল্লেখ রয়েছে।

খ. পর্যটনে নারীর কর্মসংস্থান ও উদ্যোক্তা সৃষ্টি
পৃথিবীতে উন্নয়নের মাধ্যম হিসেবে পর্যটন নারীর অংশগ্রহণকে স্বাগত জানিয়েছে। পর্যটন শিল্পে, বাণিজ্যে ও উন্নয়নে নারীর অংশগ্রহণ এখন সার্বিক উন্নয়নকে নিশ্চিত করেছে। নারীকে বাদ দিয়ে পর্যটন পরিচালনা অসম্ভব। কারণ সেবার প্রকার ও মানোন্নয়নের জন্য পর্যটনে নারীর অংশগ্রহণ অনিবার্য।

পর্যটনে নারীর অংশগ্রহণ পাঁচ ধরনের: কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে, উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে, পর্যটন শিক্ষায়, পর্যটনে নেতৃত্বদানে, পর্যটনে নীতি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে এবং স্থানীয় সম্প্রদায় ও নাগরিক সমাজ গঠনে।

অন্যদিকে, পর্যটন নারীর মর্যাদাপূর্ণ কাজের পরিবেশ তৈরি করে, পর্যটন ব্যবসায় নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন হয়, পর্যটনে নারী নেতৃত্ব প্রভাব বিস্তারে সক্ষম হয় এবং পর্যটন নারীদের মধ্যে ন্যায়বিচার ও একত্রে কাজ করার ক্ষমতা বাড়ায়। সমাজে নারীদের মধ্যে বহু ধরনের কাজের সুযোগ ও অধিক সংখ্যক পদ সৃষ্টি করে।

জাতিসংঘ বিশ্ব পর্যটন সংস্থা কর্তৃক প্রকাশিত গ্লোবাল রিপোর্ট অন উইমেন ইন ট্যুরিজম, ২য় সংস্করণে বলেছে যে, সারা পৃথিবীতে পর্যটনের নারীর অংশগ্রহণ মাত্র ১৪.৭ শতাংশ। ২০১৩ সালে সমগ্র পৃথিবীর পর্যটন মন্ত্রীদের মধ্যে নারী ছিল ২৩ শতাংশ। তবে পর্যটন খাতে নারীর অংশগ্রহণ কম হলেও অন্য খাতের চেয়ে এখানে বেতন বৈষম্য কম বলে জাতিসংঘ বিশ্ব পর্যটন সংস্থা জানিয়েছে। ফলে স্থানীয় অর্থনীতি, নারীর ক্ষমতায়ন এবং পর্যটন নীতি গ্রহণে নারীর অধিক অংশগ্রহণ লক্ষ্য করা যায়। পর্যটনে নারীদের অংশগ্রহণ অত্যন্ত অসাম্প্রদায়িক ও নাগরিক সমাজের সদস্য হিসাবে এরা জড়িত। নারী পর্যটন উদ্যোগের অসমতাগুলোকে দূর করে এবং সমান তালে সবাইকে নিয়ে এগিয়ে যায়। এ থেকে সহজেই বুঝা যায় যে, প্রগতিশীল সমাজ গঠনে নারীর অংশগ্রহণে স্থানীয়ভাবে পর্যটন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।

প্রত্যেকটি দেশের সরকারের রাজনৈতিক ইচ্ছা ও রাষ্ট্রীয় নীতি থাকে। পর্যটনে নারীর অংশগ্রহণ ও এইখাতে নারীর টিকে থাকা ও অবদান রাখার সুযোগ সৃষ্টি করা রাষ্ট্র পরিচালনার নীতির আওতাভূক্ত হওয়া উচিত। পর্যটনখাতে নারী-পুরুষের সমতা রক্ষা এবং পর্যটন প্রতিষ্ঠানগুলো কী করবে তা দেখভালের দায়িত্বও রাষ্ট্রের। জাতীয় পর্যটন সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডকে পর্যটনে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানোর জন্য কার্যকর পদক্ষেপ ও বিশেষ কর্মকাণ্ড গ্রহণ করতে পারে। বলতে দ্বিধা নেই যে, বাংলাদেশে এই চিত্র আশাব্যঞ্জক নয়। তবে এখন সময় এসেছে পর্যটনে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা এবং তা দিয়ে পর্যটন উন্নয়নের নতুন দিক উন্মোচন করা।

গ. নারীর সামাজিক অবস্থান
আমাদের সমাজে নারীর অবস্থান কখনোই দৃঢ় ছিল না। পারিবারিক সমর্থনের অভাব, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ব্যবস্থা, আইনি কাঠামো, ধর্মীয় ব্যবস্থা এমনকি রাষ্ট্রীয় আচরণও বহুক্ষেত্রে নারীর পক্ষে কাজ করে না। নারীর দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণে বিনিয়োগ, প্রশিক্ষণ গ্রহণে নারীর সচেতনতা বৃদ্ধি ও আগ্রহ সৃষ্টি, নারী পুরুষের সমতা রক্ষায় নারীর প্রশিক্ষণের অভাবে ইত্যাদি অনেক কারণে সমাজে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পায় না। ফলে তাদের অবস্থা ও অবদান কমতে থাকে। গবেষকরা বলছেন, সমাজে নারীর অবস্থানকে সুদৃঢ় করার প্রথম পদক্ষেপ হলো নারী-পুরুষের সমতা বিধান এবং এইজন্য স্থানীয় সরকার ও রাষ্ট্রকে পদক্ষেপ নিতে হবে।

বলা বাহুল্য, যে সমাজে নারীর দুর্বল অবস্থান সে সমাজে পর্যটনের অবস্থানও দুর্বল হয়ে থাকে। পর্যটন গবেষকদের মতে, পর্যটনের মাধ্যমে নারীকে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে ক্ষমতায়িত করা যায়। এতে করে কমিউনিটি ও সিভিল সোসাইটির মধ্যে একটি সংযুক্তি শিকল তৈরি হয় যা সুশীল সমাজ গঠনে সাহায্য করে।

আমরা সবাই জানি যে, আমাদের দেশে কর্মরত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে নারীদের যোগাযোগ কম। ফলে অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও সমাজ গঠনে নারীরা পুরুষের মতো অংশ নিতে পারে না। তাই আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে নারী কর্মীদের অধিকার, তাদের ভোক্তা অধিকার ইত্যাদি মর্যাদার সঙ্গে বিবেচনা করা হয় না। পর্যটন এই সব অধিকার প্রতিষ্ঠায় অনেক কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে। পর্যটন জীবনমুখী সামাজিক কর্মকাণ্ড। তাই পর্যটনে নারীর আর্থিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইত্যাদি বহুমুখী কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করা সম্ভব।

সমাজে নারীকে সমান সুযোগের আওতায় আনলে এরা পর্যটন প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও সামাজিক যত্নের মাধ্যমে বিস্ময়কর সফলতা দেখাতে পারে বলে পর্যটন গবেষকরা মনে করেন। তাদের উদ্ভাবনী ক্ষমতা চিরায়ত। তাই এর মাধ্যমে নারীরা নতুন করে সামাজিক ক্ষমতায়নের দিকে এগিয়ে যেতে পারে। মোটকথা, লিঙ্গ বৈষম্য দূর করতে হলে সমাজের নারীর বহুমুখী অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। পর্যটনের মাধ্যমে এদের যোগ্যতা প্রমাণের মাধ্যমে নিজেদের ক্ষমতায়িত করতে পারবে। ফলে চূড়ান্তভাবে সমাজে তাদের অবস্থান দৃঢ় হবে এবং সার্বিক সামাজিক মঙ্গল ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত হবে।

ঘ. পর্যটনের মাধ্যমে নারীর নেতৃত্ব ও ক্ষমতায়ন
পর্যটনকে বলা হয় নারীর ক্ষমতায়নের বাহন। অর্থাৎ পর্যটন নারীর ক্ষমতায়নের প্রধান চালিকা শক্তি। পর্যটন নারীর ক্ষমতায়নকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে পারে। বিশ্বব্যাপী পর্যটনের এই শক্তিমত্তাকে সব দেশ ও সমাজ ব্যাপকভাবে নারীর ক্ষমতায়নে প্রয়োগ করছে। বিশেষত উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এই বিষয়ে বেশি আগ্রহ লক্ষ্য করা যায়।

নারীর ক্ষমতায়ন মানে নারীর যোগ্যতার স্বীকৃতি। নারীর ক্ষমতায়নকে লিঙ্গ সমতার একটি নির্দেশক হিসেবে ধরা হয়। কারণ ক্ষমতায়নের মাধ্যমে নারী-পুরুষ জীবনের সব ক্ষেত্রে সমান সুযোগ ও অধিকার ভোগ করে। এতে করে পরিবারে ও সমাজে শক্তির ভারসাম্য সৃষ্টি হয় এবং নিজ ইচ্ছা ও শক্তি দিয়ে নারীরা সংকট মোকাবিলায় নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারে। মানবাধিকারে এইগুলো এখন নতুন উপলব্ধির বিষয় যা প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনাকে প্রভাবান্বিত করে।

জাতিসংঘ পর্যটনের উন্নয়নে নারীর ক্ষমতায়নকে যৌক্তিক বলে বিবেচনা করছে। তারা বলছে, নারীকে দারিদ্র্য ও অপুষ্টি থেকে রক্ষা করা, চিকিৎসার অধিকার নিশ্চিত করা, সম্পদের মালিকানা বৃদ্ধি করা ইত্যাদির জন্য নারীকে পর্যটনের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। দরিদ্র নারীদের জীবনধারার পরিবর্তন, আয় বৃদ্ধি ও আত্মমর্যাদা বাড়ানোর ক্ষেত্রে পর্যটন হতে পারে গুরুত্বপূর্ণ কর্মক্ষেত্র ও ক্ষমতায়নের পথ। তবে সব ক্ষেত্রে কাজের বৈষম্য, সুবিধার সুষম বণ্টন, ক্ষমতার ভারসাম্য এবং শোষণ ও নিপীড়ন পরিহার অত্যন্ত জরুরি। তাহলে পর্যটন সুষমভাবে পরিচালিত হবে এবং পর্যটন কর্মকাণ্ড পর্যটকদের সৃজনশীল অভিজ্ঞতা প্রদান করবে।

পর্যটনের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন নারীর স্বতন্ত্র সীমা নির্ধারণ করে এবং তাদের পুরো সমাজে ক্ষমতায়নের আলোকরশ্মি ছড়ায় এবং নারীর অর্থনৈতিক, শিক্ষাগত ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করে। পৃথিবীর প্রতিটি অঞ্চলেই পর্যটনের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়নকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। বিশেষত উন্নয়নশীল দেশের প্রান্তিক নারী জনগোষ্ঠীকে পর্যটনের সঙ্গে আর্থিক ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে যুক্ত করে ব্যয়হ্রাস ও প্রাকৃতিক সম্পদের উপযুক্ত ব্যবহার নিশ্চিত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। পর্যটনে নারীর ক্ষমতায়ন ন্যায়সঙ্গত ও টেকসই উন্নয়নের মূল বিষয়। পর্যটন নারীকে দক্ষতাদানের মাধ্যমে সংকট মোকাবিলায় গতিশীল করে এবং তার যোগ্যতাগুলো উচ্চতর রূপে প্রকাশ করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, পর্যটনের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন অঞ্চল ও রাষ্ট্রকে ক্ষমতায়িত করবে। তাই সম্পদ, নীতি ও স্বীকৃতি দিয়ে পর্যটনে নারীর সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করা উচিত।

নারীদের পর্যটনের মাধ্যমে ক্ষমতায়িত করতে হলে স্থানীয় পর্যটনকে ঢেলে সাজাতে হবে। পর্যটন আবাসন ব্যবস্থা, স্থানীয় খাদ্য উৎপাদন, বিতরণ ও সংরক্ষণ ব্যবস্থা, গাইডিং এবং পর্যটনে স্থানীয় সম্পদ ব্যবহারে নারীদের যুক্ত করতে হবে। ফলে স্থানীয় পর্যটন শক্তিশালী হবে এবং পর্যটন নারীকে তার অবদান রাখার জন্য সুযোগ সৃষ্টি করে দিবে। মজার ব্যাপার এই যে, বেশিরভাগ নারীই জন্মগতভাবে স্থানীয় শিল্পকলা ও ফোকলোরে পারদর্শী হয়। এই কাজে তাদের জুড়ি মেলা ভার। পর্যটনে নারীদের মর্যাদাদান, অবদানে উৎসাহ প্রদান, বৈষম্য দূর ও তাদের প্রাকৃতিক গুণাবলিকে বিবেচনায় রাখলেই তারা নিজ যোগ্যতায় সমাজে প্রতিষ্ঠিত হবে।

বাংলাদেশে নারীর রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের কিছু ম্যান্ডেট আছে। নারীর রাজনৈতিক অধিকার অর্জন ও প্রয়োগ, স্থানীয় সরকার পদ্ধতির সব পর্যায়ে নারীর প্রবেশ, প্রশাসনিক কাঠামোর উচ্চ পর্যায়ে নারীর সংযুক্তিকরণ এবং নীতি নির্ধারণী ও সাংবিধানিক পদে নারীর অবস্থান নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। তবে অনেক ক্ষেত্রে প্রায়োগিক পদ্ধতি বাস্তবায়নের মাধ্যমে পর্যটন নারীর ক্ষমতায়নের ধারা অব্যাহত রাখতে পারে। উল্লেখ্য যে, এটি অনেকের জন্য রোল মডেল হতে পারে। পর্যটনে নারীর চিরায়ত অভিজ্ঞতাকে ভিত্তি করে লিঙ্গ সমতাকে প্রাধান্য দিলেই নারীর ক্ষমতায়নে একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হবে।

পর্যটনে নারীর ভবিষ্যৎ
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার তথ্যমতে, বিশ্বে হোটেলখাতে শ্রমশক্তির ৬০-৭০ শতাংশ নারী। আফ্রিকার হোটেল এবং রেস্তোরাঁগুলোতে অর্ধেকেরও বেশি রয়েছেন নারীকর্মী। বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে আছে। তাই এখানে আগামীদিনে পর্যটনে নারীদের সংখ্যা, কর্মী হিসেবে ও বিনিয়োগে অংশগ্রহণ ও নেতৃত্বদানে প্রাধান্য সৃষ্টি করতে হবে। ফলে পর্যটন সম্পদের ব্যবহার, সংরক্ষণ ও পরিরক্ষণ একটি সংযুক্তিমূলক ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে পরিচালিত হতে শুরু করবে। পর্যটন শিল্পে নারী পুরুষের অসমতা কমবে এবং একটি আশাবাদী ও অবদানমুখী পর্যটন ব্যবস্থা গড়ে উঠবে যা সমাজ গঠনে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখবে।

পর্যটনে নারী ভোক্তাদের সংখ্যা বাড়বে। ফলে তাদের জন্য ব্যক্তিগতকৃত (Personalized) সেবা উদ্ভাবনের প্রয়োজন পড়বে, যা তাদের অধিকারগুলো ক্রমান্বয়ে গুরুত্ব সহকারে সামনে আনবে। সমাজে নারীর পছন্দ, চাহিদা ইত্যাদি নারীদের মানবিক উন্নয়ন ঘটাবে। পর্যটনে অধিক ও পছন্দসই কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা দূর হবে। পর্যটনে ও সম্পদের উপর নারীর মালিকানা বাড়বে এবং পর্যটনে নারীর কণ্ঠস্বর এবং নেতৃত্বদান বাড়বে। অধিকিন্তু নিচের ১০ (দশ) ধরনের উন্নয়ন দেখা যাবে:

১. পর্যটনের সঙ্গে সম্পৃক্ত অনেক নারী পেশাগত কারণে নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও ব্যবহারে এগিয়ে আসবে।
২. পেশাগত দক্ষতা ও আস্থার জন্য নারীর মালিকানাধীন বা নারী কর্তৃক পরিচালিত পর্যটন প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিনিয়োগ বাড়বে।
৩. নারীদের পর্যটন প্রতিষ্ঠানগুলো পর্যটকদের কাছে বেশি আকর্ষণীয় হবে।
৪. নারীদের পরিচালিত প্রতিষ্ঠানগুলো সমাজে অধিক বিশ্বস্ত ও মূল্যবান বলে স্বীকৃতি লাভ করবে।
৫. নারী মালিকানাধীন পর্যটন প্রতিষ্ঠানগুলো পর্যটন খাতের প্রতিনিধিত্ব করবে।
৬. নারী মালিকানাধীন পর্যটন প্রতিষ্ঠানগুলোতে নারী-পুরুষ সব কর্মী কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবে।
৭. পর্যটন প্রশিক্ষণ এবং বিষয়বস্তু বিশেষজ্ঞ হিসেবে নারীদের বিশেষ উত্থান ঘটবে।
৮. পর্যটনে নারী উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকবে।
৯. ভবিষ্যতে নারীরা পূর্ণ দায়িত্ব নিয়ে পর্যটন খাতে নিজেদের যুক্ত করবে।
১০. আগামীদিনের নারীরা পর্যটন পেশাকে সপরিবারে জীবনের অংশ হিসেবে গ্রহণ করবে।

মোখলেছুর রহমান: রেক্টর, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্যুরিজম স্টাডিজ, ঢাকা

আরএ/

Header Ad
Header Ad

ময়মনসিংহে সিনেমা হলে যান্ত্রিক ত্রুটির জেরে দর্শকদের ভাঙচুর

ছবি: সংগৃহীত

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে একটি সিনেমা হলে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে প্রচার বন্ধ হয়ে গেলে ক্ষুব্ধ দর্শকেরা ব্যাপক ভাঙচুর চালান। গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে ঈশ্বরগঞ্জ পৌর বাজারের মাছ মহালে অবস্থিত সোনালি টকিজ সিনেমা হলে এই ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে জানা যায়, ঈদ উপলক্ষে চলমান ‘বরবাদ’ সিনেমার সন্ধ্যার শো দেখতে বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রচুর দর্শক সমাগম ঘটে। ডিসি, বেলকনি এবং প্রথম শ্রেণির টিকিট বিক্রি হয়ে যায়। কিন্তু সিনেমার মাঝপথে সাউন্ড সিস্টেমে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়, ফলে সিনেমা প্রদর্শন বন্ধ হয়ে যায়। কর্তৃপক্ষ অনেক চেষ্টা করেও সমস্যার সমাধান করতে পারেনি। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর কোনো আশার আলো দেখতে না পেয়ে ক্ষুব্ধ দর্শকেরা হলে ভাঙচুর শুরু করেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, রাত সাড়ে ৮টা থেকে প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে চলা এই তাণ্ডবে সিনেমা হলের বসার বেঞ্চ, চেয়ার ও টিকিট কাউন্টার ভাঙচুর করা হয়। পাশাপাশি হলের দেয়ালে লাগানো পোস্টার ছিঁড়ে ফেলে নিচতলায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। স্থানীয় একদল যুবক বিক্ষুব্ধ দর্শকদের ধাওয়া করলে তারা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান।

কিছু দর্শক অভিযোগ করেন, যান্ত্রিক ত্রুটির সময় হল কর্তৃপক্ষ কোনো আশ্বস্ত না করে কলাপসিবল গেটে তালা মেরে চলে যান। এতে দর্শকেরা আরও বেশি ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন এবং হলের বিভিন্ন অংশ ভাঙচুর করেন।

ঘটনার সময় হলে উপস্থিত থাকা একজন কর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, উত্তেজিত দর্শকেরা তাকে মারধর করতে উদ্যত হন। তবে তিনি দ্রুত নিয়ন্ত্রণ কক্ষের লাইট বন্ধ করে দরজায় তালা লাগিয়ে ভেতরে বসে থাকায় অল্পের জন্য রক্ষা পান।

ঈশ্বরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) প্রজিত কুমার দাস জানান, সিনেমা চলার সময় সাউন্ড সিস্টেমে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। সেটি ঠিক করতে না পেরে কর্তৃপক্ষ বাইরে থেকে সাউন্ড সিস্টেম ভাড়া আনতে যান। কিন্তু দর্শকেরা কলাপসিবল গেটে তালা লাগানো দেখে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন এবং পরবর্তীতে ভাঙচুর চালান।

এদিকে, ঘটনার পর সিনেমা হলের দায়িত্বে থাকা হারুনুর রশিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে জানা যায়, তিনি অসুস্থ হয়ে বিশ্রামে আছেন। হলের অন্যান্য কর্মীরাও ভয়ে কথা বলতে অনীহা প্রকাশ করেন। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই ঘটনায় তদন্ত চলছে এবং দোষীদের চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Header Ad
Header Ad

সেভেন সিস্টার্স নিয়ে ড. ইউনূসের মন্তব্যে ভারতীয় রাজনীতিবিদদের তীব্র প্রতিক্রিয়া

সেভেন সিস্টার্স নিয়ে ড. ইউনূসের মন্তব্যে ভারতীয় রাজনীতিবিদদের তীব্র প্রতিক্রিয়া। ছবি: সংগৃহীত

সম্প্রতি চীন সফরে গিয়ে এক বক্তৃতায় ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাতটি রাজ্যকে (সেভেন সিস্টার্স) স্থলবেষ্টিত বলে উল্লেখ করেন এবং বাংলাদেশকে এ অঞ্চলের জন্য সমুদ্রের অভিভাবক হিসেবে বর্ণনা করেন।

ড. ইউনূস তার বক্তব্যে বলেন, ভারতের পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত সেভেন সিস্টার্স নামে পরিচিত সাতটি রাজ্য সম্পূর্ণরূপে স্থলবেষ্টিত। সমুদ্রের সঙ্গে তাদের কোনো সরাসরি সংযোগ নেই। ফলে বাংলাদেশ এই অঞ্চলের জন্য সমুদ্রের একমাত্র প্রবেশদ্বার এবং অভিভাবক হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারে।

তার এই মন্তব্য ভারতের রাজনৈতিক নেতা ও কূটনীতিকদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি এক প্রতিবেদনে জানায়, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যকে অনেক ভারতীয় রাজনীতিবিদ হতাশাজনক এবং নিরাপত্তার জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন।

ভারতের আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা মন্তব্য করেছেন, ড. ইউনূসের বক্তব্য ভারতের ‘চিকেনস নেক’ করিডোরের দুর্বলতা নিয়ে পাকিস্তান ও চীনের দীর্ঘদিনের প্রচারণাকে উসকে দিতে পারে। তিনি আরও বলেন, উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে মূল ভূখণ্ডের সংযোগ আরও জোরদার করতে শক্তিশালী রেল ও সড়ক অবকাঠামো নির্মাণ অত্যন্ত জরুরি।

ত্রিপুরার আদিবাসী দল টিপ্রা মোথার নেতা প্রদ্যোত মানিক্য বলেন, ‘১৯৪৭ সালে চট্টগ্রাম ভারতের অংশ হলে আজ এ সমস্যা হতো না। আমাদের বাংলাদেশের পরিবর্তে নিজস্ব সমুদ্রবন্দর প্রয়োজন।’

বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সাবেক হাইকমিশনার বীণা সিক্রি বলেন, ‘উত্তর-পূর্ব ভারতের সমুদ্র প্রবেশাধিকার নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে ইতোমধ্যেই চুক্তি রয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের মন্তব্য অত্যন্ত হতাশাজনক এবং তিনি এ ধরনের মন্তব্য করার অধিকার রাখেন না।’

ড. ইউনূসের বক্তব্য নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন একাধিক কংগ্রেস নেতা। কংগ্রেসের শীর্ষ নেতা পবন খেরা মন্তব্য করেছেন, ‘বাংলাদেশের এ ধরনের অবস্থান উত্তর-পূর্ব ভারতের নিরাপত্তার জন্য হুমকি সৃষ্টি করতে পারে।’

Header Ad
Header Ad

মিয়ানমারের ভূমিকম্পে এক ইমামের ১৭০ স্বজনের মৃত্যু

সাবেক ইমাম সোয়ে নেই ওও। ছবি: সংগৃহীত

পবিত্র ঈদুল ফিতর আসন্ন। বিদায় নিচ্ছে রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের মাস রমজান। শেষ জুমার নামাজ আদায় করতে মুসলমানদের মধ্যে আগ্রহ ছিল চরমে। কিন্তু কে জানত, এই জুমাই শত শত মুসল্লির জীবনের শেষ জুমা হয়ে উঠবে!

গত ২৮ মার্চ, শুক্রবার স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ৫১ মিনিটে মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চলে ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হানে। সাগাইং অঞ্চলের পাঁচটি মসজিদে তখন নামাজ আদায় করছিলেন অসংখ্য মুসল্লি। শক্তিশালী ভূমিকম্পে তিনটি মসজিদ ধসে পড়ে, যার মধ্যে অন্যতম ছিল মায়োমা মসজিদ। এই মসজিদে নামাজরত প্রায় সবাই প্রাণ হারান।

মায়োমা মসজিদের সাবেক ইমাম সোয়ে নাই ওও তখন মিয়ানমার-থাইল্যান্ড সীমান্তবর্তী শহর মায়ে সোতে অবস্থান করছিলেন। সেখানেও তিনি ভূমিকম্প অনুভব করেন, তবে বুঝতে পারেননি কী পরিমাণ বিপর্যয় তার অপেক্ষায় রয়েছে।

সোয়ে নাই ওও একসময় মিয়ানমারের ইমাম ছিলেন, তবে ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর দেশ ছেড়ে থাইল্যান্ডে পালিয়ে যান এবং বর্তমানে একটি মানবাধিকার সংস্থায় কাজ করছেন। ভূমিকম্পের পরের দিনগুলোতে একের পর এক শোকসংবাদ পেতে থাকেন তিনি। এখন পর্যন্ত তিনি জানতে পেরেছেন, তার প্রায় ১৭০ জন আত্মীয়, বন্ধু ও প্রাক্তন মুসল্লি মারা গেছেন। তাদের বেশিরভাগই মসজিদে অবস্থান করছিলেন, অনেকেই মুসলিম সম্প্রদায়ের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে সোয়ে নাই ওও বিবিসিকে বলেন, ‘আমি প্রাণ হারানো সব মানুষের কথা ভাবছি। তাদের শিশুদের কথা ভাবছি... এই শোক সহ্য করা অসম্ভব।’

সাগাইং অঞ্চল মূলত বৌদ্ধ মন্দিরের জন্য পরিচিত হলেও এখানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মুসলমান দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছেন। নানা নিপীড়ন ও নির্যাতন সত্ত্বেও তারা এ অঞ্চলে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছেন।

মিয়ানমারের জান্তা সরকারের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ভূমিকম্পের সময় মসজিদে নামাজরত অবস্থায় প্রায় ৫০০ মুসলমান মারা গেছেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মসজিদ সংলগ্ন মায়োমা স্ট্রিট ও শহরতলি। ভূমিকম্পে বহু ভবন ধসে পড়েছে, রাস্তাঘাট বিধ্বস্ত হয়েছে।

এই ভূমিকম্পে মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর সাগাইং ও মান্দালয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। উদ্ধারকর্মীরা এখনো ধ্বংসস্তূপ থেকে মৃতদেহ উদ্ধার করছেন। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

দেশটির জান্তা সরকার জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৭১৯ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছেন ৪৪১ জন এবং আহত হয়েছেন ৪ হাজার ৫২১ জন। জান্তা প্রধান মিন অং হ্লাইং এক টেলিভিশন ভাষণে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, নিহতের সংখ্যা ৩ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে।

মিয়ানমারের ভূমিকম্পটি ছিল ৭ দশমিক ৭ মাত্রার। এর কেন্দ্রস্থল ছিল মান্দালয় শহর থেকে ১৭.২ কিলোমিটার দূরে এবং ভূ-পৃষ্ঠ থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার গভীরে। প্রথম কম্পনের ১২ মিনিট পর ৬ দশমিক ৪ মাত্রার আফটারশক হয়, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে।

এই বিধ্বংসী ভূমিকম্পে দেশজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। উদ্ধারকর্মীরা নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, তবে ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও অনেকের আটকে থাকার আশঙ্কা রয়েছে।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

ময়মনসিংহে সিনেমা হলে যান্ত্রিক ত্রুটির জেরে দর্শকদের ভাঙচুর
সেভেন সিস্টার্স নিয়ে ড. ইউনূসের মন্তব্যে ভারতীয় রাজনীতিবিদদের তীব্র প্রতিক্রিয়া
মিয়ানমারের ভূমিকম্পে এক ইমামের ১৭০ স্বজনের মৃত্যু
ঈদের আনন্দে যমুনার দুর্গম চরে গ্রাম-বাংলার ঘুড়ি উৎসব, আনন্দে মেতে উঠে বিনোদনপ্রেমীরা!
ইমামকে ঘোড়ার গাড়িতে রাজকীয় বিদায়, দেওয়া হলো ৯ লাখ টাকার সংবর্ধনা
লন্ডনে একসঙ্গে দেখা গেলো সাবেক চার আওয়ামী মন্ত্রীকে
ঢাকায় ফিরছে ঈদযাত্রীরা, অনেকে ছুটছেন শহরের বাইরে
চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় আবারও সড়ক দুর্ঘটনা, নিহত ৭
বিটিভিতে আজ প্রচারিত হবে ঈদের বিশেষ ‘ইত্যাদি’
ঈদের ছুটিতে ফাঁকা ঢাকা, নেই যানজটের চিরচেনা দৃশ্য
মাদারীপুরে তিন মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে নিহত ৪, আহত ২
থানায় জিডি করলেন ভোক্তা অধিকারের জব্বার মন্ডল
রাশিয়া আমাদের চিরকালের বন্ধু, কখনো শত্রু নয়: চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী
গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান খালেদা জিয়ার
দ্বিতীয় দফায় মিয়ানমারে ত্রাণ সহায়তা পাঠালো বাংলাদেশ
ভারতে প্রশিক্ষণ প্লেন বিধ্বস্ত, পাইলট আহত
এপ্রিলে ঢাকায় আসছে আইএমএফ প্রতিনিধি দল
জাপানে মেগা ভূমিকম্পের শঙ্কা, প্রাণহানি হতে পারে ৩ লাখ
জুলাই কন্যাদের সম্মানজনক পুরস্কার নিয়ে যা জানাল যুক্তরাষ্ট্র
দুপুরের মধ্যে ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের সম্ভাবনা