মেট্রোরেল এক বিস্ময়
বাংলাদেশের প্রথম ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর মেট্রোরেল চালু হচ্ছে আজ ২৮ ডিসেম্বর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটি উদ্বোধন করবেন। দিয়াবাড়িতে এ উপলক্ষে অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন তিনি। এরপর মেট্রোরেলে চড়ে আগারগাঁও স্টেশনে আসবেন। মেট্রোরেল সেবার প্রথম ট্রেনটির স্টিয়ারিং একজন নারী চালকের হাতেই শোভা পাবে। বিজয়ের মাসে এ যেন আরেক বিজয়। যানজটের কারণে নাভিশ্বাসসহ নগরবাসীর দুঃসহ যন্ত্রণা লাঘব করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার প্রত্যয় নিয়ে মেট্রোরেলের কর্মযজ্ঞ। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করে প্রকল্পের অবকাঠামো থেকে শুরু করে সবকিছুই তৈরি করা হয়েছে। সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়া রয়েছে এই প্রকল্পটিতে।
যোগাযোগ ব্যবস্থায় মেট্রোরেল সরকারের একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। ১০ মিনিট ১০ সেকেন্ডে উত্তরা থেকে আগারগাঁও! ভাবা যায় প্রযুক্তি আমাদের কোথায় পৌঁছে দিয়েছে। যাত্রীদের যাতায়াত সম্পর্কিত দিকনির্দেশনা মানতে হবে। সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে ঢাকায় ছয়টি মেট্রোরেলের লাইন নির্মাণ করার পরিকল্পনা নিয়েছে। যোগাযোগ খাতের কাঙ্ক্ষিত এই স্বপ্নের রেল সাধারণ নগরবাসীও যেন ছুঁয়ে দেখতে পারে সেজন্য বহুমুখী পদক্ষেপ মাথায় রাখাও জরুরি। দিয়াবাড়ি থেকে আগাওগাঁও পুরো প্রকল্প এলাকাতেই বিরাজ করছে সাজসাজ রব। নানা ধরনের ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে সড়ক বিভাজক ও স্টেশনগুলোর নিচের অংশ। পৃথিবীর বহুদেশে মেট্রোরেল প্রায় সবই মাটির নিচে। আমাদের দেশেও এমন পরিকল্পনা রয়েছে।
দেশের প্রথম মেট্রোরেল হওয়ার কারণে মানুষের প্রত্যাশাও কম নয়। মেট্রোরেল চালু হলে মানুষের জীবনমানে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। সময় বাঁচবে, অর্থের সাশ্রয় হবে। ট্রেনটিতে এনার্জি স্টোরেজ সিস্টেম রয়েছে। বিদ্যুতে চলা এই রেলে থাকছে ব্যাটারির ব্যাকআপ। বিদ্যুৎ বিপর্যয় ঘটলে তখন ট্রেনটিকে পরবর্তী স্টেশন পর্যন্ত পৌঁছে দেবে এর ব্যাটারির শক্তি। এই প্রযুক্তিকে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম বলছেন নির্মাতা জাপানি প্রকৌশলী।
বিদ্যুৎচালিত যানবাহনের যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। যে যাত্রায় যাত্রীকে আর দীর্ঘসময় সিগন্যালে আটকে থাকতে হবে না, ঘড়ির কাটার যথার্থ নিয়মে পৌঁছে যাবে তার নিজস্ব গন্তব্য। লাল-সবুজের পতাকা উড়িয়ে মেট্রো বহু স্বপ্নকে পৌঁছে দেবে যার যার গন্তব্যে। আর্থিক কৃচ্ছ্রসাধনে মেট্রোরেলের উদ্বোধন অনুষ্ঠান পদ্মাসেতুর মতো জাকজমক হবে না। অনেকটা সাদামাটা হলেও মানুষের দেখার প্রত্যাশাও কম না। আকাঙ্ক্ষা থাকবে সেরা অত্যাধুনিক প্রযুক্তি দেখার বাসনা নিয়ে। যা উন্নত দেশেই অনেক আগেই এসেছে, আমাদের দেশে তা নবশিশু।
মেট্রোরেল চালুর মাধ্যমে নগরের যানজট যেমন কমবে তেমনি জিডিপিও ১ শতাংশ বাড়বে। ঢাকার পরিবেশে যে কার্বন নিঃসরণ হচ্ছে তা অনেকটাই কমবে অর্থাৎ দুই লাখ টনের মতো। রাজধানীবাসীর কর্মঘণ্টারও ক্ষতি কমবে। অত্যাধুনিক এই গণপরিবহনের ব্যবস্থার কারণে ঢাকা মহানগরীর যানজট নিরসন অনেকাংশে কমবে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত, বিদ্যুৎচালিত পরিবেশবান্ধব ও নিরাপদ হওয়ার কারণে মানুষের এই যানে চলাচলের আগ্রহও বাড়বে। মেট্রোরেলের প্রভাবে নগরবাসীর জীবনধারারও পরিবর্তন আসবে, সেই সঙ্গে অর্থনৈতিক উৎপাদনশীলতা বাড়িয়ে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। মেট্রোরেলের জন্য দুই প্রান্তে নামা যাত্রীদের জন্য বিআরটিসি শার্টল বাস সার্ভিস চালু করবে। ৫০টি বাস এ যাত্রায় যাত্রীসেবা দেবে যা আধুনিকযানের আধুনিক স্পর্শ ! ২০৪১ সাল নাগাদ জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের নতুন রূপকল্পে চিন্তা বিনিয়োগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একজন স্বপ্নবাজ রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার বহুল আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন আমরা আজ বাংলার মাটিতে দেখতে পাচ্ছি। একের পর এক মেগা প্রকল্প দিয়ে দেশকে পৌঁছে দিয়েছেন অন্যন্য উচ্চতায়। মেট্রোরেল এক বিস্ময়, সমৃদ্ধির আরেক সোপান। দেশ ও মানুষের কল্যাণে এ যেন নতুন দিগন্ত।
ড. সারিয়া সুলতানা: সহকারী সম্পাদক, ঢাকাপ্রকাশ ও পল্লিউন্নয়ন গবেষক।
এসএন