সব বাধা পেরিয়ে এগিয়ে যাবে নারী

৯ ডিসেম্বর ২০২২ ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে একজন নারী রাজনৈতিক দার্শনিকের বক্তব্য শুনছিলাম। তিনি নারীদের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির জন্য এই দেশের মাটিতে কী কী সংগ্রাম করেছেন বা করছেন তার কিছু নির্যাস তুলে ধরার চেষ্টা করলাম-
তিনি ক্ষমতায় এসে দেখলেন নারীদের বিভিন্ন দপ্তরে নিয়োগবঞ্চিত করে রাখা হয়েছে বিশেষ করে বিচার বিভাগে নারী বিচারক ছিল না। তিনি এটা দেখে বিস্মিত হলেন। তিনি অনুধাবন করলেন নারীরা বিচারক হবে, জজ হবে, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার হবে এবং রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করবে। তিনি প্রথম নারী পুলিশ সুপার নিয়োগ দিলেন। এ পর্যায়ে নারী পুলিশ সুপার তার বিচক্ষণতা দিয়ে ভালো ভালো কাজ উপহার দিলেন। এটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ব্যাপকভাবে আপ্লুত করল। আমি ও অন্য দর্শক এ রকম বক্তব্য শুনছিলাম আর জোড়তালে হাততালি দিলাম। ভাবছিলাম এই আমরাই তো, নারী করে দেখিয়েছি ডাকাত ধরার গল্প, শেখ হাসিনা হাসছিলেন, এই হাসি আমাদের নারীদের চরম তৃপ্তির হাসি।
জাতির পিতা জাতীয় সংসদে নারীদের জন্য আসন সংরক্ষিত রাখার বিধান করেন; চাকরি ক্ষেত্রে নারীদের জন্য শতকরা ১০ ভাগ কোটা সংরক্ষণ করেন এবং ১৯৭৩ সালে তার গৃহীত প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় নারীর জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা ও কল্যাণমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করেন। কিন্তু একটা সময় এই কোটা সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা হতো না। নারীদের রাখা হয়েছিল অন্ধকারে।
কয়দিন ধরে গণমাধ্যমে একটা বিষয় লক্ষ্য করেছি তা হলো আফগানিস্তানে নারীদের উচ্চশিক্ষা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। প্রথমত, মনটা আঁতকে উঠল। এমন একটা আধুনিক বিশ্বে আমরা যখন নারী শিক্ষা নিয়ে কলরব সৃষ্টি করছি ঠিক সে সময়ে এমনই এক শিক্ষার বলিদান আমাকে চরমভাবে মর্মাহত করল। আমি মনে করি, আমার মতো অনেক মা-বোনেরাও বিষয়টি নিয়ে বিস্মিত। পর্দাপ্রথা আছে ও থাকবে পৃথিবীতে, কিন্তু সেটাকে পুঁজি করে শিক্ষার মূলে কুঠারাঘাত কতটা যুক্তিসঙ্গত সেটা অনেকটা দূরুহ মনে হলো। যুগে যুগে নারী জাগরণে অনেক মহিয়সী নারীর পদচারণা হয়েছে এই পৃথিবীতে। কেউ শিকল ছেঁড়ার অভিলাষ নিয়ে এক শ্রেণির মানুষের অন্তরচক্ষু খুলে দিয়েছেন। নারী শিক্ষাকে অবলুপ্ত করে বন্দি আত্মাকে কীভাবে ইহকাল ও পরকালের যাতনা লাঘবের শিক্ষা দেবে তা ভেবে দেখা দরকার। যে শিক্ষা মানুষের মনকে অবমুক্ত করে দেয় তা কখনো আড়াল করে রাখা যায় না। রাষ্ট্র সমাজকে আলোকিত করতে হলে পুরুষের পাশাপাশি নারীর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাকে গুরুত্ব দিতে হবে।
সব বাধা পেরিয়ে এগিয়ে যাবে নারী। আশার কথা বাংলার নারীরা আকাশ ছুঁয়েছে পাইলট হয়ে। বর্তমানে শেখ হাসিনার বিস্ময় প্রকল্প মেট্রোরেল, তার স্টিয়ারিং ঘোরাবে বাংলার নারী। একবার ভেবে দেখুন, বাংলার নারী মরিয়ম আফিজা কী সাহসী পদক্ষেপটা নিয়েছেন! নারী তোমায় জানাই স্যালুট। নারীরা আজ লাল-সবুজের পতাকার মর্যাদা রক্ষা করেছে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে। বাংলাদেশ আজ নারী উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে বিশ্বের কাছে অনুকরণীয়। আমরা দেখতে পাচ্ছি বদলে যাওয়া এক বাংলাদেশ; যেখানে নারীরা দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় শরিক হয়েছে বিভিন্নভাবে। নারীরা সমাজের অবরোধ প্রথা ভেঙে বেরিয়ে এসেছে। পুরুষের সঙ্গে সমানতালে অগ্রযাত্রায় শরিক হতে পারছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন মাস্তুলের বড় অংশ জুড়ে রয়েছে নারী মুক্তি ও নারীর ক্ষমতায়ন। অর্থনৈতিক, সামাজিক মুক্তির জন্য নারীর দরকার উদারমুখী শিক্ষা। সেই শিক্ষায় সুবাতাস আমাদের সমাজে বইয়ে দিতে পারছেন বর্তমান সরকার। আর তাই নারী মুক্তি সর্বোপরি মানবমুক্তি ঘটানোর লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত শেখ হাসিনা।
শিক্ষা ও অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য জরুরি, আজ থেকে একশ বছর আগে বেগম রোকেয়া যে নিজস্ব চিন্তার আলো জ্বালিয়েছেন তা আজকের পৃথিবীতে জেন্ডার সমতা অর্জনের এক গুরুত্বপূর্ণ অনুশীলন। আমরা যতই টেকসই উন্নয়ন বলে চিৎকার করি না কেন, এর জন্য প্রয়োজন নারী-পুরুষের সমান অংশীদারিত্ব। তবে কিছু আশার কথাও বলতে চাই সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট (কেআইবি) মিলনায়তনে ৬৪ জেলা থেকে চার শতাধিক যুব ও নারীর অংশগ্রহণে এসডিজি প্রচারাভিযান-২০২২ অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এসডিজির বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্য ও সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম। দুই মাসব্যাপী এই প্রচারাভিযানে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ঠের (এসডিজি) সুনির্দিষ্ট ছয়টি লক্ষ্য নিয়ে কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এগুলোর মধ্যে এসডিজি-৫ (জেন্ডার সমতা) একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এসডিজি বাস্তবায়নে তরুণ ও নারীদের বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর দেখে মনে হয়েছে এরাই একেকজন এসডিজি চ্যাম্পিয়ন। এগিয়ে যাক এভাবেই দেশের নারীরা। এসডিজিতে তাদের শক্তিশালী হাত একদিন লক্ষ্যপূরণে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে- সেই প্রত্যাশা রাখি।
ড. সারিয়া সুলতানা: সহকারী সম্পাদক, ঢাকা প্রকাশ ও পল্লিউন্নয়ন গবেষক।
এসএন
