বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪ | ৪ পৌষ ১৪৩১
Dhaka Prokash
Header Ad

আমার মা

আজ মায়ের ১৬তম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০০৬ খ্রিস্টাব্দের ২৫ ডিসেম্বর সকলের মায়া ত্যাগ করে তিনি এই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। পৃথিবীতে প্রতিটি সন্তানের নিকট মা পরমারাধ্য। আমার জীবনেও মা প্রিয় মানুষ, শ্রেষ্ঠ সম্পদ। মায়ের স্নেহ-আদর আর মমতায় বড় হয়েছি। মায়ের স্নেহরাজি আজও অন্তরে প্রবহমান। মায়ের পবিত্র মুখখানি যখনই চোখের সামনে ভেসে ওঠে, মনে হয়, এখনি মায়ের কাছে ছুটে যাই। জন্মলগ্ন থেকে পরিণত বয়স পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে মা যত্ন করে আমায় গড়ে তুলেছেন। মা ছাড়া এক মুহূর্তও থাকতে পারতাম না। শৈশব আর কৈশোরের সেই দিনগুলোর কথা ভাবলে দু’চোখ ভিজে যায়। প্রতিবার নির্বাচনী জনসংযোগে যাবার প্রাক্কালে কাছে টেনে পরমাদরে কপালে চুমু খেয়ে প্রাণভরে দোয়া করতেন মা। মমতাময়ী মায়ের সে সব কোমল স্মৃতি খুউব মনে পড়ে।

আমার বাবা মৃত্যুবরণ করেন ১৯৭০-এর ২৫ এপ্রিল। সেদিন আওয়ামী লীগের জনসভা ছিল চট্টগ্রামের মিরেরশ্বরাইতে। বাবার মৃত্যু সংবাদ আমার আগে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পেয়েছিলেন। তিনি চট্টগ্রামে আমাদের প্রিয় নেতা এমএ আজিজকে জানিয়েছিলেন, ‘তোফায়েলের বাবা মৃত্যুবরণ করেছে।’ মিরেরশ্বরাই’র জনসভায় এমএ আজিজ ভাইসহ যখন সভা করছি, তখন আমার বক্তৃতা শেষে আজিজ ভাই বললেন, আমি যেন অনতিবিলম্বে ভোলা চলে যাই। বিশাল সেই জনসভায় লক্ষ লোক জমায়েত হয়েছিল। বক্তৃতা শেষে প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আক্তারুজ্জামান বাবু ভাইয়ের ছোট ভাই বশুরুজ্জামান-যিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন-তার গাড়িতে চাঁদপুর অবধি পৌঁছে দেন এবং ২৬ এপ্রিল সকালবেলা গ্রামের বাড়ি পৌঁছাই। ততক্ষণে বাবার দাফন হয়ে গেছে। বাবার সঙ্গে আমার শেষ দেখা হয় ’৭০-এর ১৭ এপ্রিল।

প্রতি বছর ভোলায় গ্রামের বাড়িতে বাবা-মায়ের মৃত্যুবার্ষিকী পালন করে তাদের স্মরণ করি। আমার বাবার নাম আজহার আলী, মা ফাতেমা খানম। আমি দাদা-দাদি, নানা-নানিকে দেখিনি। মা ১৯১৪ সনে জন্মগ্রহণ করেন। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান আমি। বাবা-মায়ের সুখের সংসার। তিন ভাই, চার বোনের মধ্যে আমার অবস্থান পঞ্চম। বিদ্যালয় জীবনের সূচনাতে নিজ বাড়িতে থেকে গ্রামের একটি প্রাইমারি স্কুল কোড়ালিয়া ফ্রি প্রাইমারি স্কুলে লেখাপড়ায় হাতেখড়ি। এরপর বাড়িতে থেকেই খায়েরহাট জুনিয়র হাই স্কুল থেকে ষষ্ঠ শ্রেণি পাস করে বোরহানউদ্দিন হাই স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হই। প্রাইমারি এবং জুনিয়র স্কুলের পরীক্ষায় প্রতিটি বিষয়ে ভালো নম্বর পেয়ে প্রথম স্থান অধিকার করতাম। আজকাল গ্রামে উপজেলায় অনেক হাইস্কুল হয়েছে। তখনকার দিনে এত হাইস্কুল ছিল না। আমাদের এলাকা বোরহানউদ্দিনে একটি মাত্র হাইস্কুল ছিল, সেখানে ভর্তি হই। বোরহানউদ্দিন হাই স্কুলে আমাকে কষ্ট করে লেখাপড়া করতে হয়েছে। সেকালে আমাদের গ্রাম অনুন্নত ও অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল। স্কুলে তখন কোনো হোস্টেল ছিল না। সেই ছোট্টকালেই যখন আমার বয়স মাত্র ১৩, তখন আত্মীয়-স্বজন এবং শুভানুধ্যায়ীর বাড়িতে থেকে পড়ালেখা করতে হয়েছে। কষ্ট হলেও মা আমাকে আদর করে লেখাপড়ায় নিয়মিত উৎসাহ যোগাতেন। সপ্তম শ্রেণির পরীক্ষা শেষে যখন অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছি, সেসময় আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক মান্নান স্যার বললেন, ‘ভোলা সরকারি হাই স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে চারটি আসন খালি আছে, তুমি ভালো ছাত্র, পরীক্ষা দাও।’ ১৯৫৭’র জানুয়ারি মাসে ভোলা সরকারি স্কুলে ভর্তি হই এবং স্কুল হোস্টেলে থাকতে শুরু করি। শুরু হয় হোস্টেলে থেকে লেখাপড়ার পালা। স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে মোট ১৪টি বছর আমি হোস্টেলে ছিলাম। মা আমাকে আদর করে ‘মনু’ বলে ডাকতেন। সবসময় বলতেন, ‘মনু, মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া করো।’ মায়ের নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করতাম। মাকে ছেড়ে জীবনের প্রথম হোস্টেল জীবন। মন পড়ে থাকত মায়ের কাছে। প্রতি সপ্তাহে ছুটির আগের দিন মায়ের কাছে চলে যেতাম।

তখন ভোলায় বিদ্যুৎ ছিল না। হারিকেনের স্বল্প আলোয় লেখাপড়া করেছি। পড়ালেখার পাশাপাশি খেলাধুলার প্রতি ছিল অপার আগ্রহ। বাবা-মায়ের আদরের ছিলাম। বিশেষ করে মা আমায় খুউব ভালোবাসতেন। কখনোই কাছ ছাড়া করতে চাইতেন না। স্কুলের শিক্ষকরা স্নেহ করতেন। পরম শ্রদ্ধাভাজন সেই শিক্ষকমণ্ডলীর কথা স্মৃতিপটে ভেসে ওঠে। সকল শিক্ষকের প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা। শিক্ষকদের অপার স্নেহ-ভালোবাসায় ধন্য আমার জীবন। দশম শ্রেণিতে আমি ক্লাস ক্যাপ্টেন থেকে হলাম স্কুল ক্যাপ্টেন। মনে পড়ে, স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু প্রধানমন্ত্রী, রাজনৈতিক সচিব হিসেবে বরিশালে তার সফরসঙ্গী হয়েছিলাম। বঙ্গবন্ধুকে অভ্যর্থনা জানাবার জন্য জেলা প্রশাসক থেকে শুরু করে সকল গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানো। প্রেজেন্টেশন লাইনে দেখি আমার স্কুলের শিক্ষক তসীর আহমেদ স্যার দাঁড়িয়ে আছেন। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে করমর্দন করবেন। তিনি তখন বরিশাল জেলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে বললাম, বঙ্গবন্ধু, আমার স্যার। বঙ্গবন্ধু সঙ্গে সঙ্গে বললেন, ‘তুমি এখনো সালাম করো নাই।’ আমি দ্রুত তার পা ছুঁয়ে সালাম করলাম। পরিবার, বিশেষ করে মা, শিক্ষালয় এবং বঙ্গবন্ধুর থেকে অর্জিত এসব মূল্যবোধ দিয়েই গড়ে উঠেছে আমার জীবন ও আচরণ।

১৯৬০ সনে ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হই। কিন্তু মায়ের কাছ থেকে দূরে থাকতে হবে এটা ছিল বেদনাদায়ক। তখন ছোট্ট একতলা কাঠের লঞ্চে গ্রামের বাড়ি থেকে ঢাকা আসতে ২৪ ঘণ্টা লাগতো। সেজন্য ঢাকা কলেজ ছেড়ে বরিশাল ব্রজমোহন কলেজে ভর্তি হই। ব্রজমোহন কলেজ থেকে সাপ্তাহিক ছুটিতে লঞ্চযোগে ভোলায় মায়ের কাছে একদিন থেকে ফিরে আসতাম। ব্রজমোহন কলেজে ছাত্র অবস্থায় ছাত্রলীগের সদস্য হিসেবে রাজনৈতিক জীবনের শুরু। তারপর ধাপে ধাপে অগ্রসর হয়ে যথাক্রমে ব্রজমোহন কলেজের ক্রীড়া সম্পাদক, পরে ইকবাল হলের (বর্তমানে শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) ক্রীড়া সম্পাদক, তারপর মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের ভিপি, হলের ভিপি, ডাকসু’র ভিপি, ছাত্রলীগের সভাপতি, এরপর ’৭০-এর ২ জুন বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ও জাতীয় নেতাদের উপস্থিতিতে আওয়ামী লীগে যোগদান। ’৭০-এর ঐতিহাসিক নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু ভোলা-দৌলতখাঁ-তজুমুদ্দী-মনপুরা আসনে মনোনয়ন দেন এবং মাত্র ২৭ বছর ১ মাস ১৫ দিন বয়সে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হই। মনে পড়ে, ’৬৯-এর ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের কথা। ’৬৯-এর ৯ ফেব্রুয়ারি পল্টন ময়দানে জীবনের প্রথম জনসভা। সেদিন ছিল ‘শপথ দিবস’; স্লোগান তুলেছিলাম, ‘শপথ নিলাম শপথ নিলাম মুজিব তোমায় মুক্ত করব; শপথ নিলাম শপথ নিলাম মাগো তোমায় মুক্ত করব।’ আমরা সেই শপথ অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়ন করেছি। ’৬৯-এর গণআন্দোলন চলাকালে যখন আসাদ-মকবুল-মতিউর-রুস্তম-আলমগীর শহীদ হয়, সেই দিনগুলোতে মা চরম উৎকণ্ঠায় দিন কাটাতেন আর প্রাণভরে আমার জন্য দোয়া করতেন। ’৭০-এর ভয়াল ঘূর্ণিঝড়ের প্রাক্কালে যখন ভোলার দাসের হাটে আমার নির্বাচনী জনসভা ছিল, সকলের নিষেধ উপেক্ষা করে জনসভার উদ্দেশে রওয়ানা করেছি, তখন মা-ই কঠোরভাবে নিষেধ করে বলেছিলেন, ‘এই দুর্যোগের মধ্যে তুমি আজ যেও না।’ মা এবং মাতৃভূমি আমার কাছে সমার্থক। মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ভারতের দেরাদুনে মুজিববাহিনীর ট্রেনিং ক্যাম্পে বক্তৃতায় আমরা বঙ্গবন্ধুকে উদ্দেশ করে বলতাম, ‘প্রিয় নেতা, তুমি কোথায় আছো, কেমন আছো জানি না! যতদিন আমরা প্রিয় মাতৃভূমি তোমার স্বপ্নের বাংলাদেশকে হানাদার মুক্ত করতে না পারব, ততদিন মায়ের কোলে ফিরে যাবো না।’ সেদিনের সেই শপথও আমরা জীবনবাজি রেখে বাস্তবায়ন করে দেশমাতৃকাকে শত্রুমুক্ত করেছি। যুদ্ধ শেষে বিজয়ীর বেশে আমি ও রাজ্জাক ভাই ১৮ ডিসেম্বর এবং স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের নেতারা ২২ ডিসেম্বর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করে। আর ২৮ ডিসেম্বর ভোলায় গ্রামের বাড়িতে অবস্থানরত আমার পরম শ্রদ্ধেয় জননীর কোলে ফিরে আসি।

 

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের দিন থেকে জাতীয় চার নেতাসহ আমরা ছিলাম গৃহবন্দী। ১৫ আগস্টের দু’দিন পর ১৮ আগস্ট, আমার বাসভবনে এসে খুনিদের অন্যতম মেজর শাহরিয়ার এবং ক্যাপ্টেন মাজেদ (বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় উভয়ের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে) বলপ্রয়োগে আমাকে রেডিও স্টেশনে নিয়ে গিয়েছিল। সেখানে আমার উপর অকথ্য নির্যাতন করা হয়। আমাকে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়ার সময় মা বেহুঁশ হয়ে পড়ে গিয়েছিলেন। মায়ের শরীরের উপর দিয়েই আমায় টেনে নিয়েছিল ঘাতকের দল। ২৩ আগস্ট, গৃহবন্দী অবস্থা থেকে স্পেশাল ব্রাঞ্চের প্রধান ই. এ. চৌধুরী আমাকে এবং জিল্লুর রহমানকে (প্রয়াত রাষ্ট্রপতি) বঙ্গভবনে খুনি মোশতাকের কাছে নিয়ে গিয়েছিল। সেখানে অবস্থানরত খুনিচক্র আমাকে নানাবিধ প্রস্তাব ও মৃত্যুভীতি প্রদর্শন করা সত্ত্বেও কোনোরকম আপস না করে সে-সব প্রস্তাব ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছি। ’৭৫-এর পর চরম দুঃসময়। আমি তখন কারাগারে। সারা দেশজুড়ে কারফিউ, হত্যা, গুম, গ্রেপ্তার আর ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা। দিনের পর দিন অবর্ণনীয় অবস্থায় কেটেছে। আমার স্ত্রীকে কেউ বাড়ি ভাড়া দেয়নি। তোফায়েল আহমেদের স্ত্রীকে বাড়ি ভাড়া দিলে আর্মি ধরে নিয়ে যাবে। আমার ভাগ্নি-জামাই নজরুলের নামে বাড়ি ভাড়া নিয়ে পরিচয় গোপন করে মাসিক দেড় হাজার টাকা ভাড়ায় সেই বাড়িতে আমার স্ত্রী থেকেছেন। তিনি একবছর ছিলেন কলাবাগানে। পরে বরিশালের সাবেক এডিসি এমএ রবের কল্যাণে তার আজিমপুরের বাসার দোতলায় আমার পরিবারের ঠাঁই হয়। কারামুক্ত হয়ে ফিরে সেই বাসায় থেকেছি। আমি তার কাছে কৃতজ্ঞ। সেই সময় করুণ অবস্থা গেছে আমার পরিবারের। আমার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সামান্য টাকা ছিল; জিয়াউর রহমান অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করেছিল। আমার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা দেওয়ার বহুরকম চেষ্টা করেছে। কোনো দুর্নীতি আবিষ্কার করে মামলা দিতে পারেনি। আমার বনানীর বাড়ি,-এই বাড়ির জমি বঙ্গবন্ধু দিয়েছিলেন-’৭৫-এর ৩০ জুলাই বরাদ্দ হয় আমার স্ত্রীর নামে। আমার বড় ভাই ’৭৫-এর ১১ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন। বড় ভাই যখন হলিফ্যামিলি হাসপাতালে, মা তখন অসুস্থ। আমাকে বলেছিলেন মাকে দেখতে চাইলে তাড়াতাড়ি চলে এসো। আমি গিয়েছিলাম। মা বেঁচে গিয়েছিলেন। কিন্তু বড় ভাই মায়ের আগেই মৃত্যুবরণ করেন। সংবাদ পেয়ে বঙ্গবন্ধু আমার তৎকালীন সরকারি বাসভবনে এসে আমাকে আদর করে সান্ত্বনা দিয়েছিলেন। আমার ভাইয়ের জানাজায় অংশগ্রহণ করে মৃতদেহ তিনি হেলিপ্যাডে নিয়ে হেলিকপ্টারে করে ভোলায় প্রেরণের ব্যবস্থা করেন। সে সময় যতদিন ভোলায় ছিলাম-১২ থেকে ৩০ জুলাই-প্রতিদিন বঙ্গবন্ধু আমার খবর নিতেন। তখন টেলিফোন সহজলভ্য ছিল না। থানার টেলিফোনে নির্ধারিত সময়ে অর্থাৎ সকাল ১১টায় আমাকে থাকতে বলেছিলেন। বঙ্গবন্ধু প্রতিদিন ফোন করে আমার খোঁজ নিতেন।

আমার এপিএস ছিল শফিকুল ইসলাম মিন্টু। ১৫ আগস্টের পর আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য খুনিচক্রের অন্যতম ক্যাপ্টেন মাজেদের নেতৃত্বে কতিপয় সেনাসদস্য তাকে ধরে নিয়ে যায়। মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে রাজী না হওয়ায় ঘাতকেরা মিন্টুকে হত্যা করে। তার মৃতদেহটি পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। আমার মেজো ভাইকে গ্রামের বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে ’৭৫-এর ৫ অক্টোবর খুনি ক্যাপ্টেন মাজেদের নির্দেশে গুলি করে হত্যা করা হয়। আমি তখন ময়মনসিংহ কারাগারে ফাঁসির আসামির কনডেম সেলে বন্দী। তিন ছেলের দু’জন মৃত একজন কারাগারে। মায়ের তখন করুণ অবস্থা। এই অসহায় অবস্থায় মা জীবন কাটিয়েছেন। আমার ঢাকার বাসায় বড় ভাইয়ের ছেলে এবং মেয়ে, মেজো ভাইয়ের দুই ছেলে ও দুই মেয়ে থাকে। তারা কেউ পড়ে স্কুলে কেউবা কলেজে।

’৭৫-এ জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর আমি ৩৩ মাস ময়মনসিংহ ও কুষ্টিয়া কারাগারে বন্দী ছিলাম। সাবেক রাষ্ট্রপতি হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদ ক্ষমতায় এলে ’৮৩-এর ১৫ ফেব্রুয়ারি আমাকে গ্রেপ্তার করে প্রথমে সেনানিবাসে পরে সিলেট কারাগারে প্রেরণ করে। সিলেট কারাগারে গিয়ে মা আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। সেদিন বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আমাদের ৪০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারপর ’৮৪-এর ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে সাভার স্মৃতিসৌধে গ্রেপ্তার করা হয়। ’৮৫তে আমাকে গ্রেপ্তার করে ১৫ দিন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রেখে পরে কুমিল্লা কারাগারে দীর্ঘদিন বন্দী করে রাখা হয়। ’৮৭তে ভোলা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। আমি তখন সংসদ সদস্য। গ্রেপ্তার সংবাদে বিক্ষুব্ধ জনতা রাস্তায় নেমে এলে আমাকে এক ঘণ্টার মধ্যে বরিশালে কারাগারে একটি নির্জন কক্ষে বন্দী করে রাখা হয়। ’৯৬-এ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন চলাকালে আমাকে গ্রেপ্তার করে রাজশাহী কারাগারে পাঠানো হয়। ২০০১-এর নির্বাচনের পর বিএনপি-জামায়াত সরকার ভোলায় আমার গ্রামের বাড়িতে তাণ্ডব চালায়। আমার গাড়ি ভাঙচুর করে। বৃদ্ধ বয়সে আমার মাকে এসব দেখতে হয়েছে। ২০০২-এ সিঙ্গাপুর থেকে চিকিৎসা শেষে যখন ঢাকা বিমানবন্দরে অবতরণ করি, তখন আমাকে গ্রেপ্তার করে এক রাত ক্যান্টনমেন্ট থানায় রেখে পরে কাশিমপুর কারাগারের সেখানে রাখা হয়, যেখানে ফাঁসির আসামি কুখ্যাত এরশাদ শিকদারকে রাখা হয়েছিল। আমার পাশেই অন্তরীণ আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দীন নাছিম। পরে আমাকে কুষ্টিয়া কারাগারে প্রেরণ করা হয়। ২০০২-এ মায়ের বয়স তখন ৮৮ বছর। অসুস্থ শরীরে বৃদ্ধ বয়সে মা আমাকে দেখতে কুষ্টিয়া কারাগারে ছুটে গিয়েছেন। এক নজর মায়ের মুখখানি দেখে মনে অনাবিল শান্তি অনুভব করেছি। কাশিমপুর থেকে কুষ্টিয়া কারাগারে যাত্রাপথে গোয়ালন্দ ফেরিঘাটে একটি পতাকাবাহী গাড়ি দেখি। যে গাড়িটি ছিল জামায়াত নেতা ও খালেদা জিয়া সরকারের সমাজ কল্যাণ মন্ত্রী আলী আহসান মুজাহিদের। তার গাড়িতে পতাকা, আর আমার হাতে হাতকড়া। স্বাধীন বাংলাদেশে সর্বমোট ৭ বার আমাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং প্রত্যেকটি কারাগারে আমার বৃদ্ধা মা ছেলেকে দেখার জন্য ছুটে গিয়েছেন। সে কী কষ্ট! জেলগেটে যখন মা আমার সঙ্গে দেখা করতেন সর্বক্ষণ আমার মাথাটা মায়ের বুকে থাকত। যখন তিনি আমাকে রেখে বিদায় নিতেন, তখন তাঁর দু’চোখে অশ্রুর নদী। দুই ছেলে মৃত্যুবরণ করেছে, এক ছেলে কারান্তরালে। কি নিঃস্ব রিক্ত আমার মা!

সেই কঠিন দিনগুলোর কথা স্মৃতির পাতায় ভেসে ওঠে। মায়ের স্মৃতিকে আমি ধরে রাখতে চাই। বাবা-মায়ের নামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মায়ের স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে চাই। জীবনে স্বপ্ন ছিল বৃদ্ধাশ্রম করার। যেখানে আমার মায়ের মতো মায়েদের সেবা-শুশ্রুষা করতে পারব। মা ছিলেন ধর্মপরায়ণ, যিনি সর্বদাই অপরের কল্যাণের কথা ভাবতেন। গ্রামের বাড়িতে আত্মীয়-স্বজন প্রতিবেশী যে কারও দুঃখে তিনি ছুটে যেতেন। সাধ্যমতো সাহায্য করতেন। আমাকে সবসময় বলতেন, ‘তুমি একা বড়ো হতে পারো না। সবাইকে সঙ্গে করেই তোমাকে এগিয়ে যেতে হবে।’ মা সুখে-দুখে আমায় ছায়া দিতেন বটবৃক্ষের মতো। ’৯৬-এ সরকার গঠনের পর আমি তখন শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী। বেইলি রোডে অবস্থিত বাসভবন ‘তন্ময়’-এ থাকি। মা আমার সঙ্গেই থাকতেন। প্রতিদিন মায়ের আদর নিয়ে দিনের কাজ শুরু করতাম। বনানীর যে বাসায় এখন থাকি এই বাসাতে আমার শয়ন কক্ষের পাশেই মায়ের ঘর। সকালে ঘুম ভাঙার পর মায়ের স্নেহের আলিঙ্গন ছিল নিত্য দিনের পাথেয়। মাকে চুমু দিয়ে সকালে বের হতাম। আমি না ফেরা পর্যন্ত মা জানালার কাছে তসবিহ হাতে নিয়ে পথের দিকে তাকিয়ে থাকতেন কখন ফিরবো। ঘরে প্রবেশ করেই মাকে চুমু দিয়ে শয়নকক্ষে যেতাম। আমার বন্ধু-বান্ধব-স্বজন প্রত্যেককেই মা অন্তর থেকে ভালোবাসতেন। মা আমার জীবনে অনুপ্রেরণার নিরন্তর উৎস হয়ে সদা বিরাজমান। মা যখন অসুস্থ তখন প্রত্যেকেই তার সেবা-শুশ্রুষা করেছেন। মৃত্যুর দু’দিন আগে আমি যখন নিজ হাতে মাকে খাওয়াচ্ছি তখন তিনি ব্যথায় খুউব কষ্ট পাচ্ছিলেন। যন্ত্রণাকাতর অবস্থায় মা আমায় বলেছিলেন, ‘তুমি কী আমাকে মরতে দেবে না?’ আমি বলেছিলাম, মা আপনি যদি মৃত্যুবরণ করেন তখন আমাকে দোয়া করবে কে? মা আমায় বলেছিলেন, ‘তোমাকে আমি আল্লাহর কাছে রেখে গেলাম। আল্লাহই তোমাকে হেফাজত করবেন।’ এটাই ছিল মায়ের সঙ্গে আমার শেষ কথা। মায়ের মৃত্যুদিনে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বনানীর বাড়িতে এসে মাকে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছিলেন।

’৭৩-এ ভোলার বাংলা বাজারে মায়ের নামে প্রতিষ্ঠা করেছি একটি গার্লস হাই স্কুল। যার নাম ‘ফাতেমা খানম গার্লস হাই স্কুল’। সেখানে আজ ৬০ বিঘা জমির উপর মায়ের নামে ‘ফাতেমা খানম ডিগ্রি কলেজ’, ‘ফাতেমা খানম মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র’, ‘ফাতেমা খানম এতিমখানা’, ‘ফাতেমা খানম জামে মসজিদ’, ‘ফাতেমা খানম বৃদ্ধাশ্রম’সহ গড়ে উঠেছে সাজানো-গোছানো সুবিশাল ‘ফাতেমা খানম কমপ্লেক্স’। যা দেখে সকলেই আকৃষ্ট হয়। এই কমপ্লেক্সেই গরিব-দুখির চিকিৎসা সেবায় পিতা-মাতার নামে ‘আজহার-ফাতেমা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল’ প্রতিষ্ঠা করেছি। এর লাগোয়া স্থানে নির্মিত হয়েছে অপূর্ব স্থাপত্যশৈলীর নিদর্শন ‘স্বাধীনতা জাদুঘর’। যেখানে সংরক্ষিত আছে বাঙালির জাতীয় মুক্তিসংগ্রামে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক অবদানের স্মৃতি-নিদর্শনসমূহ। মায়ের শূন্যস্থান পূরণ হবার নয়। মায়ের নামে দৃষ্টিনন্দন একটি ‘বৃদ্ধাশ্রম’ করার মুখ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে, বঞ্চিত মায়েদের সেবাপ্রদান। ভোলা গেলে বৃদ্ধাশ্রমে অবস্থানরত মায়েদের সঙ্গে দেখা করি। সেখানে তাদের জন্য সকল সুবিধা নিশ্চিত করেছি। আর সকলের মতো আমিও মনে করি আমার মাই শ্রেষ্ঠ। মায়ের ভালোবাসার উষ্ণতা সবসময় পেয়ে থাকি। ঘুম ভাঙার পর যখন লাইব্রেরি কক্ষে আসি তখন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আমার ছবি আর পাশে মায়ের সঙ্গে আমার ছবিটি দেখি। ছবিগুলো দেখে মনে হয়, মায়ের সান্নিধ্যেই আছি। বঙ্গবন্ধু এবং মায়ের সান্নিধ্য পেয়ে জীবন আমার ধন্য।

ভোলায় গ্রামের বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে আমার পরম শ্রদ্ধেয় মা-বাবা যেখানে চিরনিদ্রায় শায়িত, সেখানে কবর-ফলকে হৃদয়ের শ্রদ্ধাঞ্জলি উৎকীর্ণ আছে এভাবে-
‘মা, বাবা চলে গেছেন অনেক আগে
চির নিদ্রায় শায়িত আছেন তোমারই পাশে
তুমিও চলে গেলে আমাদের
সকলকে কাঁদিয়ে,
তবুও তোমরা আছো সর্বক্ষণ
আমাদের হৃদয় জুড়ে।
মা, প্রতি মুহূর্ত তোমাদের অভাব
অনুভব করি।’
তোমার মনু (তোফায়েল)

তোফায়েল আহমেদ: আওয়ামী লীগ নেতা; সংসদ সদস্য; সভাপতি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ

 

Header Ad
Header Ad

গুমকাণ্ডে শেখ হাসিনার সম্পৃক্ততা, যা বলল যুক্তরাষ্ট্র

শেখ হাসিনা ও বেদান্ত প্যাটেল। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে গুম বিষয়ে তদন্ত কমিশনের অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দেওয়ার বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে। গুমের ঘটনা তদন্তে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বিচার প্রক্রিয়াকে ন্যায়সঙ্গত ও স্বচ্ছ রাখার আহ্বান জানিয়েছে।

স্থানীয় সময় বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে দপ্তরের উপমুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল এসব কথা বলেন।

এদিনের ব্রিফিংয়ে গুমসহ নানান অপরাধে জড়িত থাকায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রশ্নও উঠেছে।

প্রেস ব্রিফিংয়ে একজন সাংবাদিক বলেন, বাংলাদেশে তদন্ত কমিশনের রিপোর্ট উদ্ধৃত করে গুম নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে নিউইয়র্ক টাইমস। তদন্ত কমিশন গুমের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে। বাংলাদেশে গুমের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র এর আগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এ বিষয় নিয়ে আপনার মন্তব্য কী?

জবাবে প্যাটেল বলেন, গত দুই দশকে শত শত বাংলাদেশিকে জোরপূর্বক গুম করা হয়েছে এমন প্রতিবেদনে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। জোরপূর্বক গুম একটি গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন যা ভুক্তভোগীদের অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য আটক বা নিখোঁজ হওয়ার মতো ট্রমা বা মানসিক যন্ত্রণা দেয়। এটি তাদের পরিবারের ওপর অনিশ্চয়তার ট্রমা সৃষ্টি করে। আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের এই অপরাধের তদন্তের প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানাই এবং ভুক্তভোগী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিতের জন্য ন্যায্য ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়াকে উৎসাহিত করছি।

তিনি বলেন, আমরা এই অপরাধগুলোর তদন্তের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানাই এবং বিচারের জন্য ন্যায় ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়া বজায় রাখার আহ্বান জানাই, যাতে ভুক্তভোগী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা সুবিচার পেতে পারেন।

এর আগে, গত শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেলে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন জমা দেয় গুম-সংক্রান্ত তদন্ত কমিশন। প্রাথমিক প্রতিবেদনে দেশে গত ১৫ বছরে সংঘটিত বিভিন্ন গুমের ঘটনায় নির্দেশদাতা হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেয়েছে কমিশন। গুমের ঘটনায় জড়িতদের বিচারিক প্রক্রিয়া শুরুসহ র‍্যাব বিলুপ্তির সুপারিশ করেছে এই কমিশন।

এদিনের ব্রিফিংয়ে এক সাংবাদিক সম্প্রতি বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় ঘোষণা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান জানতে চান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার ঘোষণা করেছে- তারা সম্ভবত ২০২৫ সালের শেষের দিকে বা ২০২৬ সালের শুরুর দিকে নির্বাচন আয়োজন করবে। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান কী?

জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রধান উপমুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল বলেন, নির্বাচনের প্রস্তুতির জন্য বাংলাদেশের এই অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপগুলোকে আমরা স্বাগত জানাই যা শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশি জনগণকে তাদের নিজস্ব নেতৃত্ব নির্বাচন করার সুযোগ দেবে।

তিনি আরও বলেন, নির্বাচন আয়োজনের সময় নির্ধারণ এমন একটি বিষয় যেদিকে আমাদের অব্যাহত পর্যবেক্ষণ থাকবে। অবশ্যই এই পুরো প্রক্রিয়াজুড়ে আইনের শাসন, একইভাবে গণতান্ত্রিক মূলনীতির বাস্তবায়নকে আমরা উৎসাহিত করছি। এবং যেমনটা আমরা সমগ্র বিশ্বে চাই- শান্তিপূর্ণ উপায়ে অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের পক্ষেই আমাদের অবস্থান।

Header Ad
Header Ad

কক্সবাজারে ট্রাক-অটোরিকশা সংঘর্ষ, শিশুসহ নিহত ৫

ছবি: সংগৃহীত

কক্সবাজারের পেকুয়ায় ডাম্পট্রাক ও অটোরিকশার সংঘর্ষে শিশুসহ পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন আরও দুইজন।

বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) সকাল ৭টার দিকে পেকুয়া এবিসি আঞ্চলিক মহাসড়কের ধনিয়াকাটা এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন- অটোরিকশাচালক পেকুয়ার ধনিয়াকাটার ছৈয়দ আলমের ছেলে মনিরুল মান্নান, চট্টগ্রামের হাটহাজারী এলাকার ফিরোজ ও তার স্ত্রী শারমিন এবং তাদের শিশু সন্তান। নিহত অপরজনের পরিচয় এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

কক্সবাজার জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসিম উদ্দিন চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, সকাল ৭টার দিকে পেকুয়া এবিসি এলাকায় মিনি ট্রাক (ডাম্প ট্রাক) ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলে ৫ জন নিহত হয়। আরও দুইজন আহত হন। দুর্ঘটনা কবলিত গাড়ি দুইটি জব্দ করা হয়েছে।

Header Ad
Header Ad

মাদককাণ্ডে ফেঁসে যাচ্ছেন তিন শীর্ষ নাট্যাভিনেত্রী!

অভেনেত্রী মুমতাহিনা চৌধুরী টয়া, সাফা কবির এবং তানজিন তিশা। ছবি: সংগৃহীত

দেশের শোবিজ অঙ্গনে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকা কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নাট্যাভিনেত্রী ও মডেল মাদক সম্পৃক্ততার অভিযোগে আলোচনার কেন্দ্রে। অভিযোগের তালিকায় রয়েছে সাফা কবির (আনাতোনি কেলি সাফা) ও মুমতাহিনা চৌধুরী টয়ার নাম, যাদের বিরুদ্ধে মাদক সংশ্লেষের অকাট্য প্রমাণ পাওয়া গেছে।

এছাড়া, নাট্য জগতের আরেক পরিচিত মুখ তানজিন তিশা এবং সংগীতশিল্পী সুনিধি নায়েকের বিরুদ্ধে মাদক সংশ্লেষের বিষয়ে বিশেষ অনুসন্ধান চালাচ্ছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (নারকোটিক্স)। বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ে একটি প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে, যা শোবিজে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।

সম্প্রতি দেশের একটি গণমাধ্যমে এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- সূত্রে জানা গেছে, মাদকসহ গ্রেফতার হওয়া বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এক ছাত্রকে জিজ্ঞাসাবাদের সূত্র ধরে তথ্য-প্রমাণসহ সাফা, টয়া, তিশা এবং সুনিধির নাম বেরিয়ে আসে। একটি বিশেষ হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে তারা নিয়মিত মাদক সংগ্রহ করে আসছিলেন। ওই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের অ্যাডমিন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী অরিন্দম রায় দীপকে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে।

অভেনেত্রী তানজিন তিশা। ছবি: সংগৃহীত

ঘটনা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নারকোটিক্সের সহকারী পরিচালক রাহুল সেন গণমাধ্যমকে বলেন, দীপকে গ্রেফতারের পর তার কাছ থেকে আমরা কয়েকজন প্রথম সারির অভিনেত্রী ও মডেলের মাদক সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেয়েছি। এ বিষয়ে এখনও তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অভেনেত্রী মুমতাহিনা চৌধুরী টয়া। ছবি: সংগৃহীত

এ বিষয়ে নারকোটিক্স বলছে, মাদক সম্পৃক্ততার অভিযোগে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের সাবেক ছাত্র দীপের ওপর বিশেষ নজরদারি করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে তার গতিবিধি অনুসরণের ধারাবাহিকতায় ১৭ অক্টোবর ঢাকা বিমানবন্দরে গ্রেফতার হন দীপ। এ সময় তার কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ সিসা, এমডিএমএ, এলএসডি ও কুসসহ বেশ কিছু মাদক উদ্ধার করা হয়। পরে নারকোটিক্সের একটি বিশেষায়িত টিম দীপকে ২ দিনের রিমান্ডে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করে।

তদন্তসংশ্লিষ্টরা জানান, মাদক ব্যবসার বিষয়ে মৌখিক স্বীকারোক্তির একপর্যায়ে দীপের মোবাইল ফোনের কললিস্ট ও হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটিং পরীক্ষা করা হয়। এতে জনপ্রিয় কয়েকজন অভিনেত্রীর মাদক সম্পৃক্ততার তথ্য মেলে। এমনকি তাদের পক্ষ থেকে দেওয়া মাদকের অর্ডারসংক্রান্ত কয়েকটি সুনির্দিষ্ট হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটিং রেকর্ডও পাওয়া যায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, দীপের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে সাফা, টয়া, তিশা এবং সুনিধি নায়েকের নামে সেভ করা কয়েকটি নম্বর থেকে নিয়মিত মাদকের অর্ডার দেওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়। পরে নম্বরগুলো যাচাইয়ের জন্য ফোন নম্বরের রেজিস্ট্রেশন রেকর্ড সংগ্রহ করা হয়। এতে দেখা যায়, সংশ্লিষ্ট নম্বরগুলো সাফা কবির এবং টয়ার নামেই রেজিস্ট্রেশনকৃত। তবে তানজিন তিশার নম্বরটির রেজিস্ট্রেশন রয়েছে তার মা উম্মে সালমার নামে।

অভেনেত্রী সাফা কবির। ছবি: সংগৃহীত

গণমাধ্যমের হাতে আসা কয়েকটি চ্যাটিং রেকর্ডে দেখা যায়, ২৩ এপ্রিল সাফা কবির তার মোবাইল নম্বর থেকে ৩টি এমডিএমএ অর্ডার দেন। এজন্য দীপের হোয়াটসঅ্যাপে তিনি সংক্ষেপে লেখেন ‘ই’ দিতে পারবা আমাকে ৩টা।’ পালটা বার্তায় দীপ লেখেন দাঁড়াও বলি। সাফা লেখেন ‘ওকে’। এরপর দীপ লেখেন কিভাবে নিবা? যাওয়ার পথে? সাফা লেখেন ‘আমি চেষ্টা করব।’

এছাড়া ৫ সেপ্টেম্বর আরেক চ্যাটিংয়ে মাদকের অর্ডার দেন অভিনেত্রী টয়া। তিনিও সাংকেতিক ভাষায় লেখেন ‘ই’ লাগবে ৫টা। ফিরতি বার্তায় দীপ লেখেন ‘ফর বাংলা ফ্রুট?’ (সম্প্রতি কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত প্রাইভেট পার্টি)। এরপর টয়া লেখেন ‘ইয়াপ (ইয়েস)।’

মাদক বিক্রির এই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে আরও কয়েকজন অভিনেত্রী ও সংগীত শিল্পীর চ্যাটিং পাওয়া যায়। এদের অন্যতম হলেন অভিনেত্রী তানজিন তিশা এবং সংগীত শিল্পী সুনিধি নায়েক। চ্যাটিংয়ে সুনিধি নায়েক কয়েকটি ব্র্যান্ডের এমডিএমের প্যাকেট শেয়ার করে অর্ডার দেন।

নারকোটিক্স বলছে, ভারতীয় নাগরিক সুনিধি নায়েক দীর্ঘদিন ধরে মাদকাসক্ত। বাংলাদেশের নামকরা সংগীত শিল্পী এবং কোক স্টুডিওর অন্যতম উদ্যোক্তা শায়ান চৌধুরী ওরফে অর্ণবকে বিয়ে করে তিনি ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। তবে সম্প্রতি অর্ণবের সঙ্গে তার বিচ্ছেদ হয়েছে এমন কথা বিভিন্ন মিডিয়ায় শোনা যায়।

সংগীতশিল্পী সুনিধি নায়েক। ছবি: সংগৃহীত

তদন্তসংশ্লিষ্টরা জানান, দীপ গ্রেফতারের পরপরই সংশ্লিষ্টদের কেউ কেউ তাদের মোবাইল ফোন থেকে গোপন চ্যাটিং রেকর্ড মুছে ফেলার চেষ্টা করেন। কিন্তু এতে তারা পুরোপুরি সফল হননি। গ্রেফতারের পর তাৎক্ষণিকভাবে দীপের মোবাইল ফোনের ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। এতে মাদক কেনাবেচাসংক্রান্ত চ্যাটিং রেকর্ড মুছে ফেলা সম্ভব হয়নি।

সূত্র জানায়, বর্তমানে রাজধানীর গুলশান এবং বনানীকেন্দ্রিক ধণাঢ্য পরিবারের সন্তানদের অনেকেই এমডিএম, এলএসডি এবং কুশ নামের উচ্চ আসক্তি সম্পন্ন মাদকের দিকে ঝুঁকছে। চোরাইপথে অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং থাইল্যান্ডসহ আরও বেশ কয়েকটি দেশ থেকে এসব মাদকের চালান আসছে। স্ল্যাপচ্যাট, মেসেঞ্জার বা হোয়্যাটসঅ্যাপ গ্রুপে এগুলো বিক্রি করা হয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গোপনীয়তার জন্য বিভিন্ন সাংকেতিক নামে এসব মাদক বিক্রি করা হয়ে থাকে। যেমন এমডিএম ‘ই’ নামে, এলএসডি ‘এসিড’ এবং এক ধরনের তরল গাঁজা টিএসসি নামে কেনাবেচা হয়। ইলেকট্রিক সিগারেটের মতো ভেপ আকারে তরল গাঁজা সেবন করা হয়।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রধান রাসায়নিক পরীক্ষক দুলাল কৃষ্ণ সাহা গণমাধ্যমকে জানান, এমডিএমএ পরীক্ষাগারে তৈরি এক ধরনের কৃত্রিম ওষুধ। এটি অনেক দেশে এস্টাসি বা সুখানুভূতির মাদক হিসাবে পরিচিত। এটি ইয়াবার উপকরণ মেথাএমফিটামিনের মতোই অতি উত্তেজক মাদক। এটি মানবদেহে এমন একটি শক্তিশালী প্রভাব তৈরি করে যাতে সময় এবং উপলব্ধি জ্ঞানের বিচ্যুতি ঘটে। তবে অনেক সময় এটি শান্তি, আনন্দ, সহানুভূতি এবং এক ধরনের আত্মবিশ্বাসের বর্ধিত অনুভূতি তৈরি করে।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

গুমকাণ্ডে শেখ হাসিনার সম্পৃক্ততা, যা বলল যুক্তরাষ্ট্র
কক্সবাজারে ট্রাক-অটোরিকশা সংঘর্ষ, শিশুসহ নিহত ৫
মাদককাণ্ডে ফেঁসে যাচ্ছেন তিন শীর্ষ নাট্যাভিনেত্রী!
গুম-খুনে জড়িত ২০ কর্মকর্তার পাসপোর্ট স্থগিত, দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
ভাইরাল ভিডিওটি ছিল ‘যেমন খুশি তেমন সাজো’, ব্যবহৃত হয়েছে ডামি অস্ত্র
শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের দুর্নীতি অনুসন্ধানে ৫ কর্মকর্তা নিয়োগ
৫ বছর পর চালু হচ্ছে রংপুর চিনিকল, এলাকায় খুশির বন্যা
মোদির বিতর্কিত পোস্ট: যে বার্তা দিলো পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
ভারত থেকে ৫০ হাজার টন চাল কিনবে সরকার
তনুর গ্রাফিতির ওপর পোস্টার সাঁটালেন মেহজাবীন, সমালোচনার ঝড়
ফ্যাসিস্ট সরকার দেশটাকে ধ্বংস করে দিয়েছে: তারেক রহমান
আবারও বাড়ল স্বর্ণের দাম, ভরিতে কত?
তাবলিগ ইস্যুতে যা বললেন মিজানুর রহমান আজহারী
নির্বাচনের জন্য ৬ মাসের বেশি সময় লাগার কথা নয়: সালাহউদ্দিন আহমেদ
এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালক জিয়াউলের দুর্নীতির অনুসন্ধানে দুদক
দিনাজপুরে অর্ধকোটি টাকার নিষিদ্ধ ট্যাবলেটসহ আটক ২
রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা থেকে খালাস পেলেন তারেক রহমান
শামা ওবায়েদকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য, কনটেন্ট ক্রিয়েটর ইলিয়াসের বিরুদ্ধে ঝাড়ু মিছিল
প্রধান উপদেষ্টা মিসরের আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষণ দেবেন
সাকিবকে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ