মঙ্গলবার, ১১ মার্চ ২০২৫ | ২৬ ফাল্গুন ১৪৩১
Dhaka Prokash

আমার মা

আজ মায়ের ১৬তম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০০৬ খ্রিস্টাব্দের ২৫ ডিসেম্বর সকলের মায়া ত্যাগ করে তিনি এই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। পৃথিবীতে প্রতিটি সন্তানের নিকট মা পরমারাধ্য। আমার জীবনেও মা প্রিয় মানুষ, শ্রেষ্ঠ সম্পদ। মায়ের স্নেহ-আদর আর মমতায় বড় হয়েছি। মায়ের স্নেহরাজি আজও অন্তরে প্রবহমান। মায়ের পবিত্র মুখখানি যখনই চোখের সামনে ভেসে ওঠে, মনে হয়, এখনি মায়ের কাছে ছুটে যাই। জন্মলগ্ন থেকে পরিণত বয়স পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে মা যত্ন করে আমায় গড়ে তুলেছেন। মা ছাড়া এক মুহূর্তও থাকতে পারতাম না। শৈশব আর কৈশোরের সেই দিনগুলোর কথা ভাবলে দু’চোখ ভিজে যায়। প্রতিবার নির্বাচনী জনসংযোগে যাবার প্রাক্কালে কাছে টেনে পরমাদরে কপালে চুমু খেয়ে প্রাণভরে দোয়া করতেন মা। মমতাময়ী মায়ের সে সব কোমল স্মৃতি খুউব মনে পড়ে।

আমার বাবা মৃত্যুবরণ করেন ১৯৭০-এর ২৫ এপ্রিল। সেদিন আওয়ামী লীগের জনসভা ছিল চট্টগ্রামের মিরেরশ্বরাইতে। বাবার মৃত্যু সংবাদ আমার আগে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পেয়েছিলেন। তিনি চট্টগ্রামে আমাদের প্রিয় নেতা এমএ আজিজকে জানিয়েছিলেন, ‘তোফায়েলের বাবা মৃত্যুবরণ করেছে।’ মিরেরশ্বরাই’র জনসভায় এমএ আজিজ ভাইসহ যখন সভা করছি, তখন আমার বক্তৃতা শেষে আজিজ ভাই বললেন, আমি যেন অনতিবিলম্বে ভোলা চলে যাই। বিশাল সেই জনসভায় লক্ষ লোক জমায়েত হয়েছিল। বক্তৃতা শেষে প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আক্তারুজ্জামান বাবু ভাইয়ের ছোট ভাই বশুরুজ্জামান-যিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন-তার গাড়িতে চাঁদপুর অবধি পৌঁছে দেন এবং ২৬ এপ্রিল সকালবেলা গ্রামের বাড়ি পৌঁছাই। ততক্ষণে বাবার দাফন হয়ে গেছে। বাবার সঙ্গে আমার শেষ দেখা হয় ’৭০-এর ১৭ এপ্রিল।

প্রতি বছর ভোলায় গ্রামের বাড়িতে বাবা-মায়ের মৃত্যুবার্ষিকী পালন করে তাদের স্মরণ করি। আমার বাবার নাম আজহার আলী, মা ফাতেমা খানম। আমি দাদা-দাদি, নানা-নানিকে দেখিনি। মা ১৯১৪ সনে জন্মগ্রহণ করেন। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান আমি। বাবা-মায়ের সুখের সংসার। তিন ভাই, চার বোনের মধ্যে আমার অবস্থান পঞ্চম। বিদ্যালয় জীবনের সূচনাতে নিজ বাড়িতে থেকে গ্রামের একটি প্রাইমারি স্কুল কোড়ালিয়া ফ্রি প্রাইমারি স্কুলে লেখাপড়ায় হাতেখড়ি। এরপর বাড়িতে থেকেই খায়েরহাট জুনিয়র হাই স্কুল থেকে ষষ্ঠ শ্রেণি পাস করে বোরহানউদ্দিন হাই স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হই। প্রাইমারি এবং জুনিয়র স্কুলের পরীক্ষায় প্রতিটি বিষয়ে ভালো নম্বর পেয়ে প্রথম স্থান অধিকার করতাম। আজকাল গ্রামে উপজেলায় অনেক হাইস্কুল হয়েছে। তখনকার দিনে এত হাইস্কুল ছিল না। আমাদের এলাকা বোরহানউদ্দিনে একটি মাত্র হাইস্কুল ছিল, সেখানে ভর্তি হই। বোরহানউদ্দিন হাই স্কুলে আমাকে কষ্ট করে লেখাপড়া করতে হয়েছে। সেকালে আমাদের গ্রাম অনুন্নত ও অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল। স্কুলে তখন কোনো হোস্টেল ছিল না। সেই ছোট্টকালেই যখন আমার বয়স মাত্র ১৩, তখন আত্মীয়-স্বজন এবং শুভানুধ্যায়ীর বাড়িতে থেকে পড়ালেখা করতে হয়েছে। কষ্ট হলেও মা আমাকে আদর করে লেখাপড়ায় নিয়মিত উৎসাহ যোগাতেন। সপ্তম শ্রেণির পরীক্ষা শেষে যখন অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছি, সেসময় আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক মান্নান স্যার বললেন, ‘ভোলা সরকারি হাই স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে চারটি আসন খালি আছে, তুমি ভালো ছাত্র, পরীক্ষা দাও।’ ১৯৫৭’র জানুয়ারি মাসে ভোলা সরকারি স্কুলে ভর্তি হই এবং স্কুল হোস্টেলে থাকতে শুরু করি। শুরু হয় হোস্টেলে থেকে লেখাপড়ার পালা। স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে মোট ১৪টি বছর আমি হোস্টেলে ছিলাম। মা আমাকে আদর করে ‘মনু’ বলে ডাকতেন। সবসময় বলতেন, ‘মনু, মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া করো।’ মায়ের নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করতাম। মাকে ছেড়ে জীবনের প্রথম হোস্টেল জীবন। মন পড়ে থাকত মায়ের কাছে। প্রতি সপ্তাহে ছুটির আগের দিন মায়ের কাছে চলে যেতাম।

তখন ভোলায় বিদ্যুৎ ছিল না। হারিকেনের স্বল্প আলোয় লেখাপড়া করেছি। পড়ালেখার পাশাপাশি খেলাধুলার প্রতি ছিল অপার আগ্রহ। বাবা-মায়ের আদরের ছিলাম। বিশেষ করে মা আমায় খুউব ভালোবাসতেন। কখনোই কাছ ছাড়া করতে চাইতেন না। স্কুলের শিক্ষকরা স্নেহ করতেন। পরম শ্রদ্ধাভাজন সেই শিক্ষকমণ্ডলীর কথা স্মৃতিপটে ভেসে ওঠে। সকল শিক্ষকের প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা। শিক্ষকদের অপার স্নেহ-ভালোবাসায় ধন্য আমার জীবন। দশম শ্রেণিতে আমি ক্লাস ক্যাপ্টেন থেকে হলাম স্কুল ক্যাপ্টেন। মনে পড়ে, স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু প্রধানমন্ত্রী, রাজনৈতিক সচিব হিসেবে বরিশালে তার সফরসঙ্গী হয়েছিলাম। বঙ্গবন্ধুকে অভ্যর্থনা জানাবার জন্য জেলা প্রশাসক থেকে শুরু করে সকল গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানো। প্রেজেন্টেশন লাইনে দেখি আমার স্কুলের শিক্ষক তসীর আহমেদ স্যার দাঁড়িয়ে আছেন। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে করমর্দন করবেন। তিনি তখন বরিশাল জেলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে বললাম, বঙ্গবন্ধু, আমার স্যার। বঙ্গবন্ধু সঙ্গে সঙ্গে বললেন, ‘তুমি এখনো সালাম করো নাই।’ আমি দ্রুত তার পা ছুঁয়ে সালাম করলাম। পরিবার, বিশেষ করে মা, শিক্ষালয় এবং বঙ্গবন্ধুর থেকে অর্জিত এসব মূল্যবোধ দিয়েই গড়ে উঠেছে আমার জীবন ও আচরণ।

১৯৬০ সনে ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হই। কিন্তু মায়ের কাছ থেকে দূরে থাকতে হবে এটা ছিল বেদনাদায়ক। তখন ছোট্ট একতলা কাঠের লঞ্চে গ্রামের বাড়ি থেকে ঢাকা আসতে ২৪ ঘণ্টা লাগতো। সেজন্য ঢাকা কলেজ ছেড়ে বরিশাল ব্রজমোহন কলেজে ভর্তি হই। ব্রজমোহন কলেজ থেকে সাপ্তাহিক ছুটিতে লঞ্চযোগে ভোলায় মায়ের কাছে একদিন থেকে ফিরে আসতাম। ব্রজমোহন কলেজে ছাত্র অবস্থায় ছাত্রলীগের সদস্য হিসেবে রাজনৈতিক জীবনের শুরু। তারপর ধাপে ধাপে অগ্রসর হয়ে যথাক্রমে ব্রজমোহন কলেজের ক্রীড়া সম্পাদক, পরে ইকবাল হলের (বর্তমানে শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) ক্রীড়া সম্পাদক, তারপর মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের ভিপি, হলের ভিপি, ডাকসু’র ভিপি, ছাত্রলীগের সভাপতি, এরপর ’৭০-এর ২ জুন বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ও জাতীয় নেতাদের উপস্থিতিতে আওয়ামী লীগে যোগদান। ’৭০-এর ঐতিহাসিক নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু ভোলা-দৌলতখাঁ-তজুমুদ্দী-মনপুরা আসনে মনোনয়ন দেন এবং মাত্র ২৭ বছর ১ মাস ১৫ দিন বয়সে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হই। মনে পড়ে, ’৬৯-এর ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের কথা। ’৬৯-এর ৯ ফেব্রুয়ারি পল্টন ময়দানে জীবনের প্রথম জনসভা। সেদিন ছিল ‘শপথ দিবস’; স্লোগান তুলেছিলাম, ‘শপথ নিলাম শপথ নিলাম মুজিব তোমায় মুক্ত করব; শপথ নিলাম শপথ নিলাম মাগো তোমায় মুক্ত করব।’ আমরা সেই শপথ অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়ন করেছি। ’৬৯-এর গণআন্দোলন চলাকালে যখন আসাদ-মকবুল-মতিউর-রুস্তম-আলমগীর শহীদ হয়, সেই দিনগুলোতে মা চরম উৎকণ্ঠায় দিন কাটাতেন আর প্রাণভরে আমার জন্য দোয়া করতেন। ’৭০-এর ভয়াল ঘূর্ণিঝড়ের প্রাক্কালে যখন ভোলার দাসের হাটে আমার নির্বাচনী জনসভা ছিল, সকলের নিষেধ উপেক্ষা করে জনসভার উদ্দেশে রওয়ানা করেছি, তখন মা-ই কঠোরভাবে নিষেধ করে বলেছিলেন, ‘এই দুর্যোগের মধ্যে তুমি আজ যেও না।’ মা এবং মাতৃভূমি আমার কাছে সমার্থক। মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ভারতের দেরাদুনে মুজিববাহিনীর ট্রেনিং ক্যাম্পে বক্তৃতায় আমরা বঙ্গবন্ধুকে উদ্দেশ করে বলতাম, ‘প্রিয় নেতা, তুমি কোথায় আছো, কেমন আছো জানি না! যতদিন আমরা প্রিয় মাতৃভূমি তোমার স্বপ্নের বাংলাদেশকে হানাদার মুক্ত করতে না পারব, ততদিন মায়ের কোলে ফিরে যাবো না।’ সেদিনের সেই শপথও আমরা জীবনবাজি রেখে বাস্তবায়ন করে দেশমাতৃকাকে শত্রুমুক্ত করেছি। যুদ্ধ শেষে বিজয়ীর বেশে আমি ও রাজ্জাক ভাই ১৮ ডিসেম্বর এবং স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের নেতারা ২২ ডিসেম্বর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করে। আর ২৮ ডিসেম্বর ভোলায় গ্রামের বাড়িতে অবস্থানরত আমার পরম শ্রদ্ধেয় জননীর কোলে ফিরে আসি।

 

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের দিন থেকে জাতীয় চার নেতাসহ আমরা ছিলাম গৃহবন্দী। ১৫ আগস্টের দু’দিন পর ১৮ আগস্ট, আমার বাসভবনে এসে খুনিদের অন্যতম মেজর শাহরিয়ার এবং ক্যাপ্টেন মাজেদ (বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় উভয়ের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে) বলপ্রয়োগে আমাকে রেডিও স্টেশনে নিয়ে গিয়েছিল। সেখানে আমার উপর অকথ্য নির্যাতন করা হয়। আমাকে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়ার সময় মা বেহুঁশ হয়ে পড়ে গিয়েছিলেন। মায়ের শরীরের উপর দিয়েই আমায় টেনে নিয়েছিল ঘাতকের দল। ২৩ আগস্ট, গৃহবন্দী অবস্থা থেকে স্পেশাল ব্রাঞ্চের প্রধান ই. এ. চৌধুরী আমাকে এবং জিল্লুর রহমানকে (প্রয়াত রাষ্ট্রপতি) বঙ্গভবনে খুনি মোশতাকের কাছে নিয়ে গিয়েছিল। সেখানে অবস্থানরত খুনিচক্র আমাকে নানাবিধ প্রস্তাব ও মৃত্যুভীতি প্রদর্শন করা সত্ত্বেও কোনোরকম আপস না করে সে-সব প্রস্তাব ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছি। ’৭৫-এর পর চরম দুঃসময়। আমি তখন কারাগারে। সারা দেশজুড়ে কারফিউ, হত্যা, গুম, গ্রেপ্তার আর ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা। দিনের পর দিন অবর্ণনীয় অবস্থায় কেটেছে। আমার স্ত্রীকে কেউ বাড়ি ভাড়া দেয়নি। তোফায়েল আহমেদের স্ত্রীকে বাড়ি ভাড়া দিলে আর্মি ধরে নিয়ে যাবে। আমার ভাগ্নি-জামাই নজরুলের নামে বাড়ি ভাড়া নিয়ে পরিচয় গোপন করে মাসিক দেড় হাজার টাকা ভাড়ায় সেই বাড়িতে আমার স্ত্রী থেকেছেন। তিনি একবছর ছিলেন কলাবাগানে। পরে বরিশালের সাবেক এডিসি এমএ রবের কল্যাণে তার আজিমপুরের বাসার দোতলায় আমার পরিবারের ঠাঁই হয়। কারামুক্ত হয়ে ফিরে সেই বাসায় থেকেছি। আমি তার কাছে কৃতজ্ঞ। সেই সময় করুণ অবস্থা গেছে আমার পরিবারের। আমার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সামান্য টাকা ছিল; জিয়াউর রহমান অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করেছিল। আমার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা দেওয়ার বহুরকম চেষ্টা করেছে। কোনো দুর্নীতি আবিষ্কার করে মামলা দিতে পারেনি। আমার বনানীর বাড়ি,-এই বাড়ির জমি বঙ্গবন্ধু দিয়েছিলেন-’৭৫-এর ৩০ জুলাই বরাদ্দ হয় আমার স্ত্রীর নামে। আমার বড় ভাই ’৭৫-এর ১১ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন। বড় ভাই যখন হলিফ্যামিলি হাসপাতালে, মা তখন অসুস্থ। আমাকে বলেছিলেন মাকে দেখতে চাইলে তাড়াতাড়ি চলে এসো। আমি গিয়েছিলাম। মা বেঁচে গিয়েছিলেন। কিন্তু বড় ভাই মায়ের আগেই মৃত্যুবরণ করেন। সংবাদ পেয়ে বঙ্গবন্ধু আমার তৎকালীন সরকারি বাসভবনে এসে আমাকে আদর করে সান্ত্বনা দিয়েছিলেন। আমার ভাইয়ের জানাজায় অংশগ্রহণ করে মৃতদেহ তিনি হেলিপ্যাডে নিয়ে হেলিকপ্টারে করে ভোলায় প্রেরণের ব্যবস্থা করেন। সে সময় যতদিন ভোলায় ছিলাম-১২ থেকে ৩০ জুলাই-প্রতিদিন বঙ্গবন্ধু আমার খবর নিতেন। তখন টেলিফোন সহজলভ্য ছিল না। থানার টেলিফোনে নির্ধারিত সময়ে অর্থাৎ সকাল ১১টায় আমাকে থাকতে বলেছিলেন। বঙ্গবন্ধু প্রতিদিন ফোন করে আমার খোঁজ নিতেন।

আমার এপিএস ছিল শফিকুল ইসলাম মিন্টু। ১৫ আগস্টের পর আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য খুনিচক্রের অন্যতম ক্যাপ্টেন মাজেদের নেতৃত্বে কতিপয় সেনাসদস্য তাকে ধরে নিয়ে যায়। মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে রাজী না হওয়ায় ঘাতকেরা মিন্টুকে হত্যা করে। তার মৃতদেহটি পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। আমার মেজো ভাইকে গ্রামের বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে ’৭৫-এর ৫ অক্টোবর খুনি ক্যাপ্টেন মাজেদের নির্দেশে গুলি করে হত্যা করা হয়। আমি তখন ময়মনসিংহ কারাগারে ফাঁসির আসামির কনডেম সেলে বন্দী। তিন ছেলের দু’জন মৃত একজন কারাগারে। মায়ের তখন করুণ অবস্থা। এই অসহায় অবস্থায় মা জীবন কাটিয়েছেন। আমার ঢাকার বাসায় বড় ভাইয়ের ছেলে এবং মেয়ে, মেজো ভাইয়ের দুই ছেলে ও দুই মেয়ে থাকে। তারা কেউ পড়ে স্কুলে কেউবা কলেজে।

’৭৫-এ জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর আমি ৩৩ মাস ময়মনসিংহ ও কুষ্টিয়া কারাগারে বন্দী ছিলাম। সাবেক রাষ্ট্রপতি হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদ ক্ষমতায় এলে ’৮৩-এর ১৫ ফেব্রুয়ারি আমাকে গ্রেপ্তার করে প্রথমে সেনানিবাসে পরে সিলেট কারাগারে প্রেরণ করে। সিলেট কারাগারে গিয়ে মা আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। সেদিন বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আমাদের ৪০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারপর ’৮৪-এর ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে সাভার স্মৃতিসৌধে গ্রেপ্তার করা হয়। ’৮৫তে আমাকে গ্রেপ্তার করে ১৫ দিন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রেখে পরে কুমিল্লা কারাগারে দীর্ঘদিন বন্দী করে রাখা হয়। ’৮৭তে ভোলা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। আমি তখন সংসদ সদস্য। গ্রেপ্তার সংবাদে বিক্ষুব্ধ জনতা রাস্তায় নেমে এলে আমাকে এক ঘণ্টার মধ্যে বরিশালে কারাগারে একটি নির্জন কক্ষে বন্দী করে রাখা হয়। ’৯৬-এ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন চলাকালে আমাকে গ্রেপ্তার করে রাজশাহী কারাগারে পাঠানো হয়। ২০০১-এর নির্বাচনের পর বিএনপি-জামায়াত সরকার ভোলায় আমার গ্রামের বাড়িতে তাণ্ডব চালায়। আমার গাড়ি ভাঙচুর করে। বৃদ্ধ বয়সে আমার মাকে এসব দেখতে হয়েছে। ২০০২-এ সিঙ্গাপুর থেকে চিকিৎসা শেষে যখন ঢাকা বিমানবন্দরে অবতরণ করি, তখন আমাকে গ্রেপ্তার করে এক রাত ক্যান্টনমেন্ট থানায় রেখে পরে কাশিমপুর কারাগারের সেখানে রাখা হয়, যেখানে ফাঁসির আসামি কুখ্যাত এরশাদ শিকদারকে রাখা হয়েছিল। আমার পাশেই অন্তরীণ আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দীন নাছিম। পরে আমাকে কুষ্টিয়া কারাগারে প্রেরণ করা হয়। ২০০২-এ মায়ের বয়স তখন ৮৮ বছর। অসুস্থ শরীরে বৃদ্ধ বয়সে মা আমাকে দেখতে কুষ্টিয়া কারাগারে ছুটে গিয়েছেন। এক নজর মায়ের মুখখানি দেখে মনে অনাবিল শান্তি অনুভব করেছি। কাশিমপুর থেকে কুষ্টিয়া কারাগারে যাত্রাপথে গোয়ালন্দ ফেরিঘাটে একটি পতাকাবাহী গাড়ি দেখি। যে গাড়িটি ছিল জামায়াত নেতা ও খালেদা জিয়া সরকারের সমাজ কল্যাণ মন্ত্রী আলী আহসান মুজাহিদের। তার গাড়িতে পতাকা, আর আমার হাতে হাতকড়া। স্বাধীন বাংলাদেশে সর্বমোট ৭ বার আমাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং প্রত্যেকটি কারাগারে আমার বৃদ্ধা মা ছেলেকে দেখার জন্য ছুটে গিয়েছেন। সে কী কষ্ট! জেলগেটে যখন মা আমার সঙ্গে দেখা করতেন সর্বক্ষণ আমার মাথাটা মায়ের বুকে থাকত। যখন তিনি আমাকে রেখে বিদায় নিতেন, তখন তাঁর দু’চোখে অশ্রুর নদী। দুই ছেলে মৃত্যুবরণ করেছে, এক ছেলে কারান্তরালে। কি নিঃস্ব রিক্ত আমার মা!

সেই কঠিন দিনগুলোর কথা স্মৃতির পাতায় ভেসে ওঠে। মায়ের স্মৃতিকে আমি ধরে রাখতে চাই। বাবা-মায়ের নামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মায়ের স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে চাই। জীবনে স্বপ্ন ছিল বৃদ্ধাশ্রম করার। যেখানে আমার মায়ের মতো মায়েদের সেবা-শুশ্রুষা করতে পারব। মা ছিলেন ধর্মপরায়ণ, যিনি সর্বদাই অপরের কল্যাণের কথা ভাবতেন। গ্রামের বাড়িতে আত্মীয়-স্বজন প্রতিবেশী যে কারও দুঃখে তিনি ছুটে যেতেন। সাধ্যমতো সাহায্য করতেন। আমাকে সবসময় বলতেন, ‘তুমি একা বড়ো হতে পারো না। সবাইকে সঙ্গে করেই তোমাকে এগিয়ে যেতে হবে।’ মা সুখে-দুখে আমায় ছায়া দিতেন বটবৃক্ষের মতো। ’৯৬-এ সরকার গঠনের পর আমি তখন শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী। বেইলি রোডে অবস্থিত বাসভবন ‘তন্ময়’-এ থাকি। মা আমার সঙ্গেই থাকতেন। প্রতিদিন মায়ের আদর নিয়ে দিনের কাজ শুরু করতাম। বনানীর যে বাসায় এখন থাকি এই বাসাতে আমার শয়ন কক্ষের পাশেই মায়ের ঘর। সকালে ঘুম ভাঙার পর মায়ের স্নেহের আলিঙ্গন ছিল নিত্য দিনের পাথেয়। মাকে চুমু দিয়ে সকালে বের হতাম। আমি না ফেরা পর্যন্ত মা জানালার কাছে তসবিহ হাতে নিয়ে পথের দিকে তাকিয়ে থাকতেন কখন ফিরবো। ঘরে প্রবেশ করেই মাকে চুমু দিয়ে শয়নকক্ষে যেতাম। আমার বন্ধু-বান্ধব-স্বজন প্রত্যেককেই মা অন্তর থেকে ভালোবাসতেন। মা আমার জীবনে অনুপ্রেরণার নিরন্তর উৎস হয়ে সদা বিরাজমান। মা যখন অসুস্থ তখন প্রত্যেকেই তার সেবা-শুশ্রুষা করেছেন। মৃত্যুর দু’দিন আগে আমি যখন নিজ হাতে মাকে খাওয়াচ্ছি তখন তিনি ব্যথায় খুউব কষ্ট পাচ্ছিলেন। যন্ত্রণাকাতর অবস্থায় মা আমায় বলেছিলেন, ‘তুমি কী আমাকে মরতে দেবে না?’ আমি বলেছিলাম, মা আপনি যদি মৃত্যুবরণ করেন তখন আমাকে দোয়া করবে কে? মা আমায় বলেছিলেন, ‘তোমাকে আমি আল্লাহর কাছে রেখে গেলাম। আল্লাহই তোমাকে হেফাজত করবেন।’ এটাই ছিল মায়ের সঙ্গে আমার শেষ কথা। মায়ের মৃত্যুদিনে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বনানীর বাড়িতে এসে মাকে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছিলেন।

’৭৩-এ ভোলার বাংলা বাজারে মায়ের নামে প্রতিষ্ঠা করেছি একটি গার্লস হাই স্কুল। যার নাম ‘ফাতেমা খানম গার্লস হাই স্কুল’। সেখানে আজ ৬০ বিঘা জমির উপর মায়ের নামে ‘ফাতেমা খানম ডিগ্রি কলেজ’, ‘ফাতেমা খানম মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র’, ‘ফাতেমা খানম এতিমখানা’, ‘ফাতেমা খানম জামে মসজিদ’, ‘ফাতেমা খানম বৃদ্ধাশ্রম’সহ গড়ে উঠেছে সাজানো-গোছানো সুবিশাল ‘ফাতেমা খানম কমপ্লেক্স’। যা দেখে সকলেই আকৃষ্ট হয়। এই কমপ্লেক্সেই গরিব-দুখির চিকিৎসা সেবায় পিতা-মাতার নামে ‘আজহার-ফাতেমা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল’ প্রতিষ্ঠা করেছি। এর লাগোয়া স্থানে নির্মিত হয়েছে অপূর্ব স্থাপত্যশৈলীর নিদর্শন ‘স্বাধীনতা জাদুঘর’। যেখানে সংরক্ষিত আছে বাঙালির জাতীয় মুক্তিসংগ্রামে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক অবদানের স্মৃতি-নিদর্শনসমূহ। মায়ের শূন্যস্থান পূরণ হবার নয়। মায়ের নামে দৃষ্টিনন্দন একটি ‘বৃদ্ধাশ্রম’ করার মুখ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে, বঞ্চিত মায়েদের সেবাপ্রদান। ভোলা গেলে বৃদ্ধাশ্রমে অবস্থানরত মায়েদের সঙ্গে দেখা করি। সেখানে তাদের জন্য সকল সুবিধা নিশ্চিত করেছি। আর সকলের মতো আমিও মনে করি আমার মাই শ্রেষ্ঠ। মায়ের ভালোবাসার উষ্ণতা সবসময় পেয়ে থাকি। ঘুম ভাঙার পর যখন লাইব্রেরি কক্ষে আসি তখন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আমার ছবি আর পাশে মায়ের সঙ্গে আমার ছবিটি দেখি। ছবিগুলো দেখে মনে হয়, মায়ের সান্নিধ্যেই আছি। বঙ্গবন্ধু এবং মায়ের সান্নিধ্য পেয়ে জীবন আমার ধন্য।

ভোলায় গ্রামের বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে আমার পরম শ্রদ্ধেয় মা-বাবা যেখানে চিরনিদ্রায় শায়িত, সেখানে কবর-ফলকে হৃদয়ের শ্রদ্ধাঞ্জলি উৎকীর্ণ আছে এভাবে-
‘মা, বাবা চলে গেছেন অনেক আগে
চির নিদ্রায় শায়িত আছেন তোমারই পাশে
তুমিও চলে গেলে আমাদের
সকলকে কাঁদিয়ে,
তবুও তোমরা আছো সর্বক্ষণ
আমাদের হৃদয় জুড়ে।
মা, প্রতি মুহূর্ত তোমাদের অভাব
অনুভব করি।’
তোমার মনু (তোফায়েল)

তোফায়েল আহমেদ: আওয়ামী লীগ নেতা; সংসদ সদস্য; সভাপতি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ

 

Header Ad
Header Ad

সাভারের পাওয়ার গ্রিডের আগুন ২ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে

সাভারের পাওয়ার গ্রিডের আগুন ২ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকার সাভারের আমিন বাজার পাওয়ার গ্রিডে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। ফায়ার সার্ভিসের ৯টি ইউনিটের চেষ্টায় প্রায় ২ ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

মঙ্গলবার (১১ মার্চ) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা স্টেশন অফিসার মো. তালহা বিন জসিম।

জানা যায়, সকাল সোয়া ৭টার দিকে লাগা ওই আগুন সকাল সোয়া ৯টার দিকে নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, আনসার ও র‍্যাবের সদস্যরা সহযোগিতা করেন।

এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা স্টেশন অফিসার মো. তালহা বিন জসিম বলেন, সকাল সোয়া ৭টার দিকে ওই পাওয়ার গ্রিডে আগুনের খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। ৭টা ২০ মিনিটে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় ফায়ার সার্ভিসের প্রথম ইউনিট। সকাল সোয়া ৯টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

তিনি আরও বলেন, প্রথমে সাভার ও ট্যানারি ফায়ার স্টেশন থেকে মোট ৫টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। পরে আগুনের তীব্রতা বেশি থাকায় আশপাশের স্টেশন থেকে আরও ৪টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌছে আগুন নিয়ন্ত্রণে যোগ দেয়।

Header Ad
Header Ad

সীমান্তে দশ বছরে ৩০৫ বাংলাদেশিকে হত্যা করেছে বিএসএফ: এইচআরএসএস

ছবি: সংগৃহীত

ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) গত ১০ বছরে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে ৩০৫ বাংলাদেশিকে হত্যা করেছে। মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচআরএসএস) এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

এইচআরএসএস’র তথ্য মতে, ২০১৫ সালে ৪৩ জন, ২০১৬ সালে ২৮, ২০১৭ সালে ৩০, ২০১৮ সালে ১৫, ২০১৯ সালে ৪২, ২০২০ সালে ৫১, ২০২১ সালে ১৭, ২০২২ সালে ২৩, ২০২৩ সালে ৩০ ও ২০২৪ সালে ২৬ জন বাংলাদেশি নাগরিক বিএসএফ’র গুলিতে নিহত হয়েছে। এছাড়া এই দশ বছরে সীমান্তে সংঘর্ষের ঘটনায় ২৮২ বাংলাদেশি আহত হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক শুধু ২০২৪ সালে ৫৭টি হামলার ঘটনায় ঘটে। ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে ৮ মার্চ পর্যন্ত বিএসএফ কর্তৃক ১৫টি হামলার ঘটনায় ৪ জন বাংলাদেশি নিহত, ১০ জন আহত, ৫ জন গুলিবিদ্ধ হয়। এসময় সীমান্তে ভারতীয় নাগরিক ও খাসিয়াদের হামলায় ৩ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন।

সীমান্তে হত্যাকাণ্ড বন্ধের আহ্বান জানিয়ে মানবাধিকার সংস্থাটি জানিয়েছে, বিভিন্ন সময়ে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে সীমান্তে হত্যাকাণ্ড শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসার ব্যাপারে বাংলাদেশ ও ভারত সিদ্ধান্ত নিলেও এই ধরনের ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে। আমরা উভয় দেশের কর্তৃপক্ষকে এই সংকটের স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে গঠনমূলক সংলাপ এবং কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের মধ্য দিয়ে সীমান্তে হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা প্রকৃতপক্ষে শূন্যে নিয়ে আসার বিষয়ে আহ্বান জানাই।

এছাড়া সীমান্তে পূর্ববর্তী সব হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচার নিশ্চিত করতে আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।

Header Ad
Header Ad

হাসিনার সময়ে মানুষের নামাজ পড়ারও অধিকার ছিল না: আব্দুস সালাম পিন্টু

বক্তব্য রাখছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু। ছবি: ঢাকাপ্রকাশ

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু বলেছেন, শেখ হাসিনার সময় এ দেশে কথা বলার অধিকার ছিল না, নামাজ পড়ারও অধিকার অনেকের ছিল না। মানুষের বিপদের কথাটাও মানুষের কাছে বলতে দিতো না। একটা ভয়াবহ অস্থিরতার মধ্যে দেশ চলছিল। এই দেশকে হাসিনার হাত মুক্ত করেছে পরম করুণাময় আল্লাহ তাআলা। তবুও ষড়যন্ত্র থেমে থাকে না। যেদিন স্বাধীন হয়েছে, স্বাধীন হওয়ার পরের দিন থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র চলছে।

সোমবার (১০ মার্চ) সন্ধ্যায় টাঙ্গাইল ভূঞাপুর উপজেলার নিকরাইল ইউনিয়ন বিএনপির উদ্যোগে মাটিকাটা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত আলোচনা সভা, দোয়া ও ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু বলেছেন- মৃত্যুর মুখে থেকে ফিরে এসেছি। আমি একটা মৃত মানুষ, জীবিত অবস্থায় ফিরে এসেছি। আমার জীবন তো শেষ হয়ে যেতো। এখন শেখ হাসিনা থাকলে আমি আর কথা বলতে পারতাম না। যেহেতু মুক্ত হয়েছি জালিমের কারাগার থেকে সেই জালিমের কারাগারে রিমান্ডের নামে অত্যাচার, জুলম, নির্যাতন যেভাবে আমি ভোগ করেছি সেইভাবে আপনারাও বাইরে থেকে অনেকে ভোগ করেছেন।

তিনি বলেন, আপনারা জানেন- শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এই বাংলাদেশকে একটি শক্তিশালী দেশ গড়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। তিনি কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থা উন্নত করা, সঙ্গে সঙ্গে বেকার সমস্যা সমাধান পাশাপাশি শিল্প বিপ্লবের ডাক দিলেন। একদিকে কৃষি উৎপাদন, আরেক দিকে শিল্প বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশকে শক্তিশালী অর্থনীতির দাঁড় করানোর জন্য চেষ্টা করলেন।

পিন্টু বলেন- এই দেশ যখন উন্নতি হবে, সামনের দিকে এগিয়ে যাবে, বিশ্বের বুকে একটি নেতৃত্ব স্থানীয় দেশ হিসেবে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হবে সেই সময় চক্রান্তের পর চক্রান্ত, ষড়যন্ত্রের পর ষড়যন্ত্র করে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে হত্যা করা হয়েছি। জিয়াউর রহমানকে হত্যা করার পর এই দেশে কি হয়েছিল আপনারা জানেন। আপনারা জানেন, জিয়াউর রহমান এই দেশে গণতন্ত্র উপহার দিয়েছিল। বহুদলীয় গণতন্ত্রের কথা বলেছিলেন, সবাইকে নির্বাচন করার কথা বলেছিলেন, শেখ হাসিনাকে বিদেশ থেকে ফেরত এনেছিলেন।

টাঙ্গাইল-২ (ভূঞাপুর-গোপালপুর) আসনের সাবেক এই সংসদ সদস্য বলেন, দীর্ঘ ১৭ টি বছর এ দেশের মানুষ আন্দোলন করেছে, সংগ্রাম করেছে যার শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের সমস্ত সম্পদ লুট করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমাদের সম্পদ দিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশকে সাহায্য সহযোগিতা করা হয়েছে। আমি অন্যায়ের কাছে মাথানত করিনি। ভারতের দালালি করিনি। ভারতের কাছে বাংলাদেশকে বিক্রি করে দেয়ার ষড়যন্ত্রের জালে লিপ্ত হয়নি। বর্তমানে চক্রান্ত হচ্ছে, ষড়যন্ত্র হচ্ছে।

এ নেতা আরও বলেন, এ দেশে শুধু ছাত্ররা জীবন দেয়নি। রিকশাওয়ালা, শ্রমিক, এ দেশের খেটে খাওয়া মানুষ প্রাণ দিয়েছে। যারা প্রাণ দিয়েছে তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। যারা প্রাণ দিয়েছে কী কারণে দিয়েছে? এ দেশের মানুষের ভোটাধিকারের জন্য দিয়েছে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য প্রাণ দিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, যতদিন বেঁচে থাকব সাধারণ মানুষের পাশে থাকব, মানুষের সেবা করব। আমার জন্য আপনারা নামাজ পড়ে, তাহাজ্জুদ পড়ে দোয়া করেছেন এ জন্য আল্লাহর রহমতে মুক্তি পেয়েছি। কোনোদিন অন্যায় করিনি আর অন্যায়ের কাছে মাথানত করিনি। আপনারা অন্যায়ভাবে যমুনা নদী থেকে বালু উত্তোলন করবেন না। সততার সঙ্গে ব্যবসা করবেন। অন্যায় করা যাবে না দুর্নীতি করা যাবে না। নিজেদের মধ্যে দলাদলি ভালো না। ভালো কিছু বয়ে আনবে না।

এ সময় নিকরাইল ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন মণ্ডলের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন- উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট গোলাম মোস্তফা, সাধারণ সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলু, পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান গিয়াসসহ বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। এরআগে উপজেলা ও আশপাশের বিভিন্ন ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা ইফতারে অংশ নেন।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

সাভারের পাওয়ার গ্রিডের আগুন ২ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে
সীমান্তে দশ বছরে ৩০৫ বাংলাদেশিকে হত্যা করেছে বিএসএফ: এইচআরএসএস
হাসিনার সময়ে মানুষের নামাজ পড়ারও অধিকার ছিল না: আব্দুস সালাম পিন্টু
বিএনপির সাবেক এমপি নাজিম উদ্দিন মারা গেছেন
এমবিবিএস-বিডিএস ছাড়া ডাক্তার পদবি নয়: এনডিএফ
সাভারে পাওয়ার গ্রিডে ভয়াবহ আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৯ ইউনিট
সালমান এফ রহমানের লন্ডনের সম্পদ জব্দ, দুটি ব্যাংক হিসাবও অবরুদ্ধ
পাগল বেশে নারীদের উত্ত্যক্ত করা সেই কন্টেন্ট ক্রিয়েটর খালিদ গ্রেপ্তার
একাকিত্বের কষ্টে ভুগছেন পরীমণি, জানালেন আবেগঘন অনুভূতির কথা
বিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তি ঘোষণা: কে কত বেতন পাবেন
ভারতকে ব্যবহার করে শেখ হাসিনার প্রচারণা চালানো বিপজ্জনক: গার্ডিয়ানকে ড. ইউনূস
বাড়ি ফেরার পথে টাঙ্গাইলে গাড়ি চাপায় ২ মোটরসাইকেল আরোহী নিহত
নির্বাচন বিলম্বিত করার চেষ্টা মানে ফ্যাসিবাদের প্রেতাত্মাদের সহযোগিতা করা: টুকু
বিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে নাম প্রত্যাহার রিয়াদের
আগামী ৮ বছর বিশ্বকে শাসন করতে প্রস্তুত ভারত: কোহলি
এনআইডিতে ডাকনাম-একাধিক স্ত্রীর নাম যুক্তের নীতিগত সিদ্ধান্ত
হাতের ইশারায় পলকের সালাম, বললেন মুখ খুললেই বাড়ে মামলা
দলীয় নেতাকে খুনের অভিযোগে চুয়াডাঙ্গায় বিএনপির তিন নেতা বহিষ্কার
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী
কাফির বাড়িতে আগুনের ঘটনায় নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ২ কর্মী গ্রেপ্তার