২০২৩-এ নতুন স্বপ্ন-আশা, নতুন চ্যালেঞ্জ
সময় চলে যায়। সেই হিসাবে ২০২২ সাল শেষ হতে চলেছে। নতুন ২০২৩ সমাগত। নতুন আশা-আকাঙ্ক্ষা আর চ্যালেঞ্জ নিয়ে হাজির ২০২৩। নতুন বছর কেমন যাবে— তার আগাম পূর্বাভাস ইতোমধ্যে বিভিন্নভাবে আমরা জেনেছি। তার মধ্যে সবচেয়ে বড় নেতিবাচক হলো— রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির জন্য সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা আরও খারাপ হওয়া। এই দু’টি বিষয়ের সঙ্গে রাজনীতি, অর্থনীতি, দুর্নীতিসহ আরও অনেক উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো বিষয় জড়িয়ে আছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, উন্নত অনুন্নত সব দেশই পুড়ছে এই সংকটে।
ফ্রান্সের বিখ্যাত ভবিষ্যৎ দ্রষ্টা নস্ট্রাডামাস ২০২৩ সালে চরম অর্থনৈতিক সংকট, গৃহযুদ্ধ, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের কথা বলেছেন। এমনকি পৃথিবীর শেষও দেখেছেন। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে তা অবশ্যম্ভাবী কি না ভবিষ্যৎ তা বলতে পারে! একই সঙ্গে তিনি মঙ্গলগ্রহে মানুষ বসবাস করবে বলেও জানিয়েছেন। আমেরিকা ও চীনের মঙ্গল যাত্রা সে দিকেই যাচ্ছে। নস্ট্রাডামাস ৫০০ বছর আগে ৬৩৩৮টি ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। যার অনেকগুলোই সত্য প্রমাণিত হয়েছে। তবে আমরা চাই, মঙ্গলে মানুষের অভিযান ছাড়া নস্ট্রাডামাসের অন্য ভবিষ্যদ্বাণী যেন সত্যি না হয়। তাহলে মানুষ বেঁচে থাকবে, পৃথিবী রক্ষা পাবে!
২০২৩ সাল কি শুধুই দুর্দশাগ্রস্ত হবে, নাকি আশার আলোও কিছু আছে— তা খুঁজে দেখা যেতে পারে।
বলা হচ্ছে, নতুন বছরে প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বিশাল অগ্রগতি হবে। কোভিড মহামারির সময় থেকে প্রযুক্তির উন্নতির গতি ত্বরান্বিত হয়েছিল। নতুন বছরে তা আরও বেগবান হবে। প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ জীবনযাত্রার বিভিন্ন ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অনেকটা বাস্তব হয়ে উঠবে। বিশেষ করে, ২০২৩ সাল হবে ভার্চ্যুয়াল জগৎ ‘মেটাভার্স’-এর সামাজিকীকরণ ও দিক নির্দেশনার বছর। কারণ এই প্ল্যাটফর্ম ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্ব অর্থনীতিতে পাঁচ ট্রিলিয়ন ডলার যোগ করবে।
প্রকৃতিকে নিজেদের মতো করে সাজাতে এবং মানুষের শরীরের স্ব-নিরাময় ক্ষমতা বাড়াতে নতুন বছরে ব্যাপক সাফল্য আসতে পারে। ন্যানোটেকনোলজি এবং জিন ও ডিএনএ পরিবর্তন করে গাছপালা এমনকি মানুষের শরীরেও পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে। এতে ফসলের পুষ্টি উপাদান ও উৎপাদন আরও বাড়বে। মানুষের শারীরবৃত্তীয় বৈশিষ্ট্য, যেমন— চোখ, চুলের রংসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিবর্তন করা যাবে। যেমন, আমরা কোনো একটি লেখা লিখলে সম্পাদনা করে কোনো বাক্য বা শব্দ যেভাবে পরিবর্তন করি অনেকটা সেভাবে এ সব ঘটবে।
২০২৩ সালে রোবট চেহারা ও সক্ষমতায় আরও বেশি মানুষ হয়ে উঠবে। কারখানা বা গুদামে জটিল কাজ ছাড়াও এ সব রোবট মানুষের পাশাপাশি গৃহস্থালির সাধারণ কাজও করবে। এক্ষেত্রে ‘রোবট বাটলার’ বা ঘরের কাজের সহযোগী কিনতে পাওয়া যেতে পারে!
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে ২০২৩ সালে ‘গ্রিন এনার্জি’ বা ‘সবুজ শক্তি’ তথা বায়ু ও সৌর শক্তির উপর মানুষ আরও বেশি আগ্রহী হয়ে উঠবে। এক্ষেত্রে বিনিয়োগ ও ব্যবহার অনেক বাড়বে। দেশে দেশে বৈদ্যুতিক গাড়ি ব্যবহারের প্রচলন শুরু হবে। এ ছাড়াও আরও নানা ক্ষেত্রে উন্নতির আশা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ২০২৩ সালে কি আশা করা যেতে পারে? সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে সংসদ নির্বাচন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে বা ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে হতে পারে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তীব্র মতবিরোধ সত্ত্বেও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার জন্য এই নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ। তাই আশা সুষ্ঠু নির্বাচন, আর সবার অংশগ্রহণ। এ ছাড়া ডলার সংকটসহ যে অর্থনৈতিক সংকটে সাধারণ মানুষ নিষ্পেষিত হচ্ছে তার থেকে কিছুটা মুক্ত হওয়ার আশা করা হচ্ছে। এ বছর একাধিক মেগা প্রকল্পের উদ্বোধন হতে পারে। এতে উন্মোচিত হবে দেশের চলমান উন্নয়নের নতুন রূপ ।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ২০২৩ সাল নিয়ে নানা নেতিবাচক খবরে এমনিতে মানুষ আতঙ্কিত। কোনো আশা-ভরশা ভাবায় না। কীভাবে দু’মুঠো খেয়ে বছরটা কাটিয়ে দিতে পারবে তারই চিন্তায় যেন সবাই অস্থির। তবুও নতুন দিনে, নতুন স্বপ্ন, নতুন কিছু প্রত্যাশা করা, শুভ কিছু কামনা করা হয়। এটাই চিরাচরিত নিয়ম। অবশ্য বেশিরভাগ মানুষের কাছে স্বপ্ন আর বাস্তবতা দুরতিক্রম্য। পূর্ণেন্দু পত্রী যেমন বলেছেন—
মানুষের ভাঙা-চোরা ভুরুর উপরে
চাঁদের ফালির মত
আজ কোনো স্থির আলো নেই।
ছাতার দোকানে ছাতা যেরকম ঝোলে
সেভাবে মানুষের রক্ত ও চন্দনমাখা স্বপ্নগুলো
হ্যাঙ্গারে রয়েছে।
(স্বপ্নগুলো হ্যাঙ্গারে রয়েছে, প্রিয় পাঠক), তারপরও নতুন বছর সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে, সব মানুষের জন্য কল্যাণময় হয়ে উঠুক— এই আশা বুকে বাঁধতে পারি।
ইব্রাহিম আজাদ: লেখক ও সাংবাদিক
আরএ/