সন্তান প্রতিপালনের কৌশল রপ্ত করা বাবা-মায়ের জন্য জরুরি
পৃথিবীর সব বাবা-মায়ের কাছে তাদের সন্তান প্রাণের চেয়ে প্রিয় এতে কোনো সন্দেহ নেই । সন্তান জন্মের পর থেকে প্রত্যেক বাবা -মা স্বপ্ন দেখেন যে, একদিন তাদের সন্তান মানুষের মত মানুষ হবে, সুনামের অধিকারী হবে, দেশ, জাতি এমনকি বিশ্বের জন্য একদিন অনেক কিছু করবে । এ স্বপ্নের বাস্তবায়ন কিন্তু এত সহজ নয়। এটি বাস্তবায়ন করতে হলে অনেকগুলো বিষয়ে পিতা-মাতাতে সচেতন থাকা জরুরি। পাশাপাশি পরিকল্পনা থাকা আরও গুরুত্বপূর্ণ।
সন্তান পরিপালন করার অনেক কৌশল রয়েছে। এসব যে সব বাবা-মা একবার বুঝে ফেলেন তারাই সফল হন। আর যারা সন্তান জন্মের পর তাদের গড়ে তোলার ব্যাপারে খামখেয়ালী করেন কিংবা জাগতিক নানা ভোগ বিলাস কিংবা অর্থের পেছনে ছুটেন, তারা কখনো সন্তানের গর্বিত বাবা-মা হতে পারেন না ।
শিশু স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন থাকা অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। শৈশবে কোনো শিশু প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাচ্ছে কিনা তা অনেক ধনী বাবা-মাও খেয়াল করেন না। যারা বিষয়টা জানেন তারা কিন্তু তাদের শিশু সন্তানের সুষম খাবার প্রদানে অনেক কাজ করে থাকেন। অনেকে মনে করেন যে তাদের সন্তান খেতে চায় না সে জন্য কি আর করবেন ..। আসলে ব্যাপারটা তা নয়। শিশু সন্তানটি কেন খাচ্ছে না, কীভাবে তাকে পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো যায়, ভিন্ন কোনো কৌশল অবলম্বন করে শিশুটিকে খাওয়ানো যায় কিনা— এ সব জানার আগ্রহ বাবা-মায়ের থাকতে হবে । অনেকক্ষেত্রে শিশু চিকিৎসক ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করাও দরকার। কারণ, জীবনের প্রথম ১২ বছরে কোনো শিশু প্রয়োজনীয় পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হলে বাকি জীবনে মহামূল্যবান খাবার খেয়েও কোনো লাভ হবে না।
শিশু সন্তানকে শৈশব থেকে আদর যেমন করতে হবে তেমনি খুব সচেতনভাবে শাসনও করতে হবে । মাত্রাতিরিক্ত আদর পেলে শিশু সন্তান বহু ক্ষেত্রে দেখা যায় বাবা -মায়ের অবাধ্য হয়ে যেতে থাকে দিনে দিনে। এক সময় বাবা-মাকে অবজ্ঞা করতেও দেখা যায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে। তাই বলে সবসময় কঠোর অনুশাসন একদমই করা যাবে না। শিশুদের শৈশব থেকে বিনয়ী হতে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। অন্য শিশুদের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলা, আত্মীয় স্বজনদের সাথে ভাল ব্যবহার করা, সবাইকে সম্মান করে কথা বলা, এ সব বিষয়গুলো শিশুর মাকে প্রতিনিয়ত শেখাতে হবে। বিদেশে শিশুদের বাবা-মা এবং প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকরা এ কাজটি খুবই গুরুত্ব দিয়ে করে থাকেন। তারা শিশুর মনোজগৎকে উন্নত করার কাজটি করে থাকেন। শিশুদের অধিক পড়াশুনার চাপে না ফেলে কথার ছলে, গল্প বলতে বলতে অনেক কিছু শিখিয়ে থাকেন।
মা হলো শিশুদের সব চেয়ে বড় শিক্ষক। যেসব মায়েরা বিষয়টা একবার বুঝে যান তাদের সন্তানরা আর সফল না হয়ে পারে না। মায়ের আচরণের ছাপ শিশুদের মধ্যে প্রতিফলিত হয়।
আমরা শিশুদের যতটা অবুঝ মনে করে থাকি আসলে তারা কিন্তু তা নয়। অনেক শিশু শৈশব থেকেই অনেক কিছু খেয়াল করে। সে কারণে যে সব স্বামী-স্ত্রী শিশুদের সামনে ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত হন, তাদের সন্তানরা মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে পারে না। এটি খুবই বড় একটা সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় ভবিষ্যতে। সুতরাং প্রত্যেক বাবা-মাকে এমন কাজ থেকে সচেতনভাবে বিরত থাকতে হবে । সন্তানের অগোচরে অনেক স্বামী-স্ত্রী ঝগড়া করেন। এটি মন্দের ভালো। সন্তান জানতে পারে না বাবা মায়ের মনোমালিন্য।
শিশু সন্তানকে উন্নত মানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি করানো খুবই জরুরি। এমনকি উচ্চশিক্ষার জন্যও সন্তানদের বিখ্যাত কলেজ /বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রেরণ করতে হবে। অনেক টাকা ছাড়াও এটি করা সম্ভব যদি আপনি আপনার সন্তানদের শৈশব থেকে যত্ন নিয়ে থাকেন। মনে রাখবেন, সন্তান পরিচর্যা কঠিন এক অধ্যবসায়। পৃথিবীর বহু মা -বাবা সন্তানের সফল জীবন গড়ে দিতে গিয়ে আজীবন কঠোর পরিশ্রম করে গেছেন। আর যারা তা করেন নাই তারা নিজেরা ভোগ বিলাস করে গেছেন আর সন্তানদের জীবন নষ্ট করে গেছেন ।
আপনার জীবনের যেসব স্বপ্ন পূরণ করতে পারেন নাই — সে সব পূরণ করা সম্ভব সন্তানের সফল জীবন গঠনের মাধ্যমে। অনেক বাবা-মা তা করে থাকেন। সুতরাং সন্তান প্রতিপালনের সব কৌশল রপ্ত করা বাবা-মায়ের জন্য অতি জরুরি।
লেখক: সাবেক কর কমিশনার, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও নির্বাহী পরিচালক, সেন্টার ফর ট্যাক্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ
আরএ/