উপমহাদেশে শান্তি ফিরবে কীভাবে সেটাই বড় প্রশ্ন
যারা দেশে যখন সন্ত্রাসবাদ, হাতাহাতি, খুন, মানুষের জীবন কেড়ে নিচ্ছে। তখন আবার প্রমাণ হল ভারতের গান্ধী পরিবার মানবতার দিকেই। তার উপরেই এখনো ভরসা করছে। স্বয়ং সোনিয়া গান্ধী তার স্বামী প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর ঘাতকদের ক্ষমা করে দিয়েছেন। আজ থেকে একত্রিশ বছর আগে ২১ মে রাজীব গান্ধী যখন নির্বাচনী প্রচারে গিয়েছিলেন তখন ফুলের তোড়ার গোপনে বোমা রাখা ছিল। তখন গোটা বিশ্ব এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার নিন্দা জানিয়েছিল। তার আগে ১৯৮৪ সালের ৩১ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকেও আততায়ীরা গুলি করে হত্যা করেছিল। এই দুটি ঘটনার সঙ্গে আরেকটি ঘটনা জড়িয়ে আছে। বাংলাদেশের জন্মদাতা শেখ মুজিবকে পরিবারসহ হত্যা করা।
ভারতের অপরাধ তথ্যে অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা বিভিন্ন আলোচনায় বলছেন, এই তিনটি হত্যাই একই সূত্রে গাঁথা। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তৎকালীন বিদেশ সচিব হেনরি কিসিঞ্জারের একটি উক্তি আজও আমাদের মনে আছে। তিনি বলেছিলেন, এই প্রথম আমেরিকার কূটনীতি দিল্লির এক মহিলার হাতে পরাজিত হয়েছে। আমরা এর প্রতিশোধ নেব। এই নিয়ে কূটনীতিকরা গবেষণা করছেন। তাদের মন্তব্য, এই হত্যাগুলোর সঙ্গে জড়িত আছে এমন সব দেশ যারা সেদিন বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল।
সেদিন রাজীবের হাতে ফুলের তোড়া তুলে দেওয়া মাত্র ভয়ংকর বিস্ফোরণে কেপে উঠে সারা এলাকা। রাজীবের সঙ্গে ছিন্ন বিচ্ছিন হয়ে যায় ধান্নুও।পরে এই ঘটনার সহযোগি হিসেবে সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত হয়ে উঠে ধান্নুকে আশ্রয় দেওয়া নলিনী মুরুগণ ও তার স্বামী মুরুগণ ওরফে শ্রীহরণ। বাকিদের ভূমিকা ছিল বিস্ফোরক ভরা ফুলের তোড়াটি তৈরি করতে সাহায্য করা।
আদালত রাজীব গান্ধী ও সাত আসামিকে হত্যাকাণ্ডের অপরাধে মৃত্যুদণ্ড দেয়। উচ্চ আদালতে তা বহাল থাকে। রাষ্ট্রপতি প্রাণ ভিক্ষার আর্জি খারিজ করে দেওয়ার পর ২০১১সালে তাদের ফাঁসি কার্যকর করার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছিল। পরবর্তীতে ফাঁসি কার্যকরে স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়। ২০১৪ সালে সব আসামীর সাজা কমিয়ে আজীবন কারাভোগ করা হয়।
২০১৪ সালেই নলিনীদের মুক্ত করতে তৎপরতা শুরু করে দেয় তখনকার শ্রীলংকার মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা। প্রচার করা হয় যে, আসামিদের কেউই রাজীব গান্ধীর হত্যাকান্ড সম্পর্কে জানতো না। তাদের ব্যবহার করা হয়েছে।
এখনো দেখা যাচ্ছে, বিশ্বের তাবর নেতারা সাম্রাজ্যবাদী নির্মূল করার ব্যাপারে নানামুখি কর্মসূচি গ্রহণ করছে। মানবতা অহিংসা মুক্ত রাজনীতি এগুলোই ছিল স্বাধীন ভারতের অগ্রাধিকার। তারা এখন হিংস্বা ও ক্ষমতার লোভ করে চারদিকে চেপে বসেছে। এর থেকে মুক্তির উপায় কী? তা নিয়ে নানা জল্পনা থাকলেও সন্ত্রাসবাদ কমার কোন লক্ষণই নেই। রাজীব অথবা ইন্দিরা গান্ধী আর ফিরে আসবেন না। উপমহাদেশে শান্তি ফিরে আসবে কীভাবে সেটিই এখন বড় প্রশ্ন।
লেখক: ভারতের সিনিয়র সাংবাদিক