সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫ | ১৫ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

মার্টেক: মানবতার জন্য প্রযুক্তি

এবারের (২০২২) পদার্থবিদ্যায় নোবেল বিজয়ীরা প্রোটনকে ভেঙ্গে নতুন এক ধরনের কোয়ান্টাম কম্পিউটারের পথ নির্দেশনা দিয়েছেন। যে গাণিতিক সমস্যা সমাধান করতে বর্তমান সুপার কম্পিউটারের দশ বছর সময় লাগবে তা এই কোয়ান্টাম কম্পিউটার ১০ মিনিটেরও কম সময়ে করতে পারবে। অসম্ভব দ্রুত গতিতে প্রযুক্তির পরিবর্তন হচ্ছে। প্রযুক্তিকে মানুষের কাছে পৌঁছানোর বাহন মার্কেটিংকেও এর সাথে অভিযোজন করেই চলতে হচ্ছে। বাজারজাতকরণ প্রযুক্তি (Martech) বাজারজাতকরণের কৌশলগুলোকে উন্নততর করবে। কিন্তু মূল ভিত্তিকে বদলাতে পারবেনা। বাজারজাতকরণের মৌলিক কাজগুলো অপরিবর্তিতই থেকে যাবে। এগুলো হচ্ছে: চাহিদা ব্যবস্থাপনা, ভ্যালুর পৃথকীকরণ, এবং ক্রেতার সাথে সম্পর্ক অব্যাহত রাখার জন্য 'সম্পর্ক ব্যবস্থাপনা'। কার্যকরী এবং টেকসই বাজারজাতকরণের এই মৌলিক উপাদানগুলো প্রযুক্তির কারণে বদলাবে না। যার কারণে মার্কেটিংয়ের কাজও কমবে না। ব্যবসা-বাণিজ্যের অন্যান্য ক্ষেত্রেও একই অবস্থা, কাজ কিন্তু কমছে না।

(১৮৮৬ সালের পহেলা মে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটের শ্রমিকরা দৈনিক ৮ ঘন্টা কাজের দাবিতে আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। তখন শ্রমিকদের কোন নির্দিষ্ট কর্মঘন্টা ছিল না, মালিকের ইচ্ছা অনুযায়ী কাজ করতে বাধ্য করা হতো। বহু শ্রমিকের আত্মদানের বিনিময়ে শ্রমিকদের ৮ ঘন্টা কাজের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। নির্দিষ্ট শ্রমঘন্টা নির্ধারণ, মজুরির বৈষম্য দূরীকরণ এবং চাকরি স্থায়ীকরণের বিষয়গুলো শ্রমিকদের জোর দাবিতে পরিণত হয়। বর্তমানে মার্কেটিংয়ে এত প্রযুক্তি আসার পরেও মার্কেটিং এর সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মীদের শ্রমঘন্টা কিন্তু এখনো ৮ ঘন্টার অনেক বেশি। ব্যাংকিং খাতে সবকিছু অনলাইন হয়ে যাওয়ার পরেও ব্যাংকের কর্মীরা কিন্তু এখনো রাত অবধি অফিসেই থাকে।

কর্পোরেট জগতের মানুষগুলো যেন ১৯৩২ সালে প্রকাশিত অ্যালডাস হ্যাক্সলি রচিত উপন্যাস 'ব্রেভ নিউ ওয়ার্ল্ড' এর মানুষগুলোর মতো, ঝলমলে দুনিয়া তাদেরকে দাস বানালেও এক ধরনের কৃত্রিম সুখের প্রলোভন দেখায়, এখানটাই সবচেয়ে বড় ক্ষতি। এক সময় দাস ছিলেন এমন একজন, ফ্রেডরিক ডগলাস বলেছেন, "একজন দাস যদি দাসত্বের সুখ অনুভব করা শুরু করেন, তো বুঝতে হবে তিনি তাঁর মানবিক গুণাবলী হারাচ্ছেন। ...গৃহপালিত গরু তার পূর্বগরুর মধ্যে তুলনা করলে দেখা যাবে গরুর প্রচুর অবনতি হয়েছে।")

বর্তমানে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব কাল চলছে। ডিজিটাল বিপ্লবের ফলে প্রযুক্তির সংমিশ্রণে ভৌত বিজ্ঞান , সংখ্যা বিজ্ঞান, ও জীব বিজ্ঞানের পার্থক্য সৃষ্টিকারী রেখা ক্রমশ অস্পষ্ট হচ্ছে; আর এটা এক্সপোনেনশিয়াল, রৌখিক নয়। (প্রথম শিল্প বিপ্লব ছিল বাষ্পীয় ইঞ্জিনের আবিষ্কার ও যান্ত্রিকীকরণ। দ্বিতীয় শিল্প বিপ্লব ছিল বিদ্যুতের ব্যবহার এবং বৃহৎ স্কেলে উৎপাদন। তৃতীয় শিল্প বিপ্লব ছিল আইসিটি ও অটোমেশনের যুগ।)

মার্কেটিং ৫.০ এর সংজ্ঞায় "মানব সাদৃশ্য- প্রযুক্তির (human-mimicking technology) মাধ্যমে ক্রেতার পুরো পথ পরিক্রমায় উন্নততর ভ্যালু তৈরি, যোগাযোগ এবং অর্পণ নিশ্চিত করার উপর জোর দেয়া হয়েছে" ( Kotler and others, "Marketing 5.0: technology for humanity", 2021)। এক্ষেত্রে বলা হচ্ছে পরবর্তী প্রযুক্তির (next technology) কিছু বিষয় বাজারজাতকারীরা ব্যাপকভাবে ব্যবহার করবে, যা তাঁদের সামর্থকে বাড়িয়ে দেবে। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে- কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), NLP, সেন্সর, রোবটিক্স, আরোপিত বাস্তবতা (AR), ভার্চুয়াল বাস্তবতা (VR), ইন্টারনেট অফ থিংস (IoT), ব্লক চেইন ইত্যাদি। এই প্রযুক্তিগুলো হচ্ছে মার্কেটিংয়ের বাহন।

বিগত কয়েক বছর থেকেই মানুষের জ্ঞানগত ক্ষমতার জায়গা দখল করার মত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) তৈরি করা হচ্ছে। যার মাধ্যমে কাঠামোবিহীন ক্রেতা উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এমন অন্ত্যদৃষ্টিসম্পন্ন ব্যাখ্যা বা উপসংহার পাওয়া যাচ্ছে যা বাজারজাতকরণকারীকে ব্যাপকভাবে সাহায্য করছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে ক্রেতার জন্য সঠিক অর্পণ নির্বাচন করছে। বিগ ডাটা বিশ্লেষণের মাধ্যমে প্রত্যেক ক্রেতার জন্য তাদের উপযোগী বারজাতকরণকৌশল নিচ্ছে। এই প্রক্রিয়াটিকে প্রত্যেকের জন্য পৃথক (segments of one) বাজারজাতকরণ নামে অবহিত করা হয়।

সত্তর বছরের পরিক্রমায় শাস্ত্রীয় মার্কেটিং ১.০, ২.০, ৩.০, ৪.০ পথ অতিক্রম করে ৫.০ তে প্রবেশ করেছে। মার্কেটিংয়ের ছাত্র এবং শিক্ষক হিসেবে নিজে এই পরিক্রমায় প্রায় অর্ধ শতাব্দী জুড়ে সম্পৃক্ত থেকে অনেকের মত আমারও উপলব্ধি হচ্ছে মার্কেটিং ১.০ ছিল পণ্য-তাড়িত (product- driven), ২.০ ছিল ক্রেতা- মুখী (customer- oriented), আর ৩.০ ছিল মানব-কেন্দ্রিক (human-centric)। মার্কেটিং ৩.০ তে মানুষের ব্র্যান্ড পছন্দের ক্ষেত্রে কার্যকরী ও আবেগীয় সন্তুষ্টির বাইরেও আধ্যাত্মিক পূর্ণতার ( spiritual fulfillment) কথা বলা হয়েছে। যার কারণে কোম্পানিগুলো ভ্যালু ভিত্তিক পৃথকীকরণে মনোযোগী হয়েছে। পণ্য বিক্রয় বা কার্যক্রম থেকে কেবল লাভই আসবেনা, এ থেকে বিশ্বের চলমান কঠিনতর সামাজিক ও পরিবেশগত সমস্যাগুলোরও সমাধান আসবে।

দীর্ঘ পরিক্রমায় সনাতনী প্রথাগুলো অতিক্রম করে "STP + 4Ps" মডেল আধুনিক বাজারকারণের বৈশ্বিক রসদ হিসেবে স্থিতি লাভ করেছে। মার্কেটিং ৩.০ পর্যন্ত এখন সনাতন শ্রেণীভুক্ত করা হয়। মার্কেটিং ৪.০ তে এসে সনাতনী প্রথা ভেঙ্গে ডিজিটাল প্রযুক্তি যুক্ত হয়। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সাথে তাল মিলাতেই মার্কেটিং ৪.০ সংস্করণের কথা এসেছে। যদিও এর আগ থেকেই মার্কেটিং এ প্রযুক্তির ব্যবহার চলে আসছিল। মার্কেটিং ৪.০ তে একটি হাইব্রিড ফ্রেমওয়ার্ক এর মাধ্যমে ক্রেতার পথ চলায় (customer- journey) বস্তুগত ও ডিজিটাল 'টাচপয়েন্ট' যুক্ত করা হয়। এ পর্যায়ে এসে মার্কেটিং প্রযুক্তি (Martech) কেবলমাত্র সামাজিক মাধ্যমে উপস্থিতি এবং বহুমাত্রিক পণ্য, সেবা ও তথ্য বন্টনে সীমাবদ্ধ থাকে না। নতুন প্রযুক্তিগুলো মার্কেটিংয়ের পুরো খেলার মাঠটাকেই বদলে দেয়।

কোভিড-১৯ মার্কেটিংয়ে ডিজিটালাইজেশনকে ত্বরান্বিত করে। ঘরে আটকা পড়া মানুষ শারীরিক দূরত্বের বাধ্যবাধকতা মানতে গিয়ে বাজার ও বাজারীর নতুন স্পর্শহীন ডিজিটাল বাস্তবতা মেনে নিতে বাধ্য হয়। এই পথ ধরে চলে এসেছে মার্কেটিং ৫.০ : মানবতা ও প্রযুক্তি । জাপানিরা স্মার্ট প্রযুক্তি ব্যবহার করে টেকসই উন্নততর সমাজ বিনির্মাণের রোড ম্যাপ ধরে কাজ শুরু করেছে। তবে এক্ষেত্রে তাঁরা মার্কেটিং ৩.০ এবং মানব-কেন্দ্রীকতা ও প্রযুক্তি সমৃদ্ধ মার্কেটিং ৪.০ কে বাদ দেয়নি, বরং অন্তর্ভুক্ত করেছে। জেনারেশন গ্যাপ, অগ্রগতির বা উন্নয়নের কেন্দ্রীভুবনের কারণে সৃষ্ট আয় ও সম্পদের বৈষম্য, ডিজিটাল বিভাজন সৃষ্ট সাইবার দরিদ্রতা গ্যাপ (cyber poverty gap) এর বিষয়টাকে কেন্দ্র করেই মার্কেটিং ৫.০ এর দার্শনিক ভিত্তি রচিত হয়েছে।

মানুষের গড় আয়ু বেড়ে যাওয়ায় পৃথিবীর ইতিহাসে এই প্রথম আমরা পাঁচটি প্রজন্ম একসাথে বসবাস করছি। বিপ্রতীপ মনোভাব, অগ্রাধিকার এবং আচরণ নিয়েই আমরা একসাথে আছি। আমাদের যাদের বয়স এখন ষাটোর্ধ্ব তাদের অনেকেরই বাবা-মা বেঁচে আছে। আমাদের সন্তান , নাতি এবং নাতির সন্তানরাও আমাদের সাথেই আছে। আমাদের মা-বাবা যাদের জন্ম হয়েছিল ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসন আমলে তাঁদের অল্পসংখ্যকই বিদ্যুতের আলো দেখেছেন। আমরা যারা পাকিস্তান আমলের শেষ দিকে জন্মেছি তারাও হারিকেনের আলোতেই পড়াশোনা করেছি। হারিকেনের আলোতে পড়াশোনা করা আমরাই আবার ডিজিটাল যুগেও সকল ক্ষেত্রে নেতৃত্বের কসরত করছি। আমাদের ক্রয় ক্ষমতাও বেশি।

আমাদের সন্তানরা জন্মেছে মোবাইল ফোনের যুগে। নাতীরা জন্মের পরেই দেখেছে ইন্টারনেট সহ কম্পিউটার। তাঁদের সন্তানরা গাণিতিক সমস্যার সমাধান করছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে। বাসা থেকে বেরিয়ে আসার আগে বন্ধ না করা AC বন্ধ করছে অনেক দূরে অফিসে গিয়ে IoT এর মাধ্যমে। ফাইভ-জি মোবাইলে ইন্টারনেটের গতি হবে বর্তমান মোবাইল এর চেয়ে ১০০ গুণ, তথ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের ক্ষমতা হবে অন্তত দশ গুণ । আমাদের অন্তর্নিহিত আয় ও সম্পদের বৈষম্যের কারণে বাজার দুই সীমান্তের দিকে ধাবিত হচ্ছে। উচ্চ আয়ের কারণে একদিকে যেমন বিলাসী মার্কেট তৈরি হচ্ছে, অন্যদিকে আয় পিরামিডের ভিত্তি অনেক বড় হচ্ছে। এতে গণ মানুষের একটি নিম্ন ভ্যালুসম্পন্ন কম দামি পণ্যের বাজার তৈরি হচ্ছে। মধ্যম বাজারটি ক্রমশ সংকুচিত হচ্ছে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে বিলুপ্ত হচ্ছে। যার কারণে শিল্পের খেলোয়াড়দের উপরের দিকে যেতে হচ্ছে অথবা নিচের দিকে নামতে হচ্ছে।

বাজারজাতকরণকারীকেই cyber poverty gap এর বিষয়টিও সমাধান করতে হবে। যারা খুব দ্রুত ডিজিটালাইজেশনের আওতায় আসবেনা বা আসতে পারবেনা তাদের কথাও ভাবতে হবে। প্রযুক্তি যত দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে সমাজ ততো দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে না। ডিজিটাইজেশন এর কারণে কর্মচ্যুতি যেমন ঘটছে, ব্যক্তিগত গোপনীয়তা বলতেও কিছু থাকছে না। যদিও প্রযুক্তিবিদরা এর মাধ্যমে উচ্চ প্রবৃদ্ধি এবং উচ্চ মানবিকতার প্রতীজ্ঞার কথা বলছেন। ব্যবসায়ীকে এই বিভক্তিকে অতিক্রম করে সকলের জন্য প্রযুক্তি সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য কাজ করতে হবে।

ব্যবসায় বাণিজ্যের সকল গবেষণা এবং প্রযুক্তি কোম্পানির স্বার্থকেন্দ্রিক। কীভাবে কোম্পানির ব্র্যান্ডের শ্রীবৃদ্ধি করে বাজারে প্রতিযোগিতায় আরো সুদৃঢ় অবস্থান নেয়া যায়, মুনাফা সর্বোচ্চকরন এবং কোম্পানির প্রবৃদ্ধিই গবেষণা এবং প্রযুক্তি উন্নয়নের মূল বিষয়বস্তু। কোম্পানি বা অর্থনীতির সার্বিক প্রবৃদ্ধির তুলনায় কর্মসংস্থানের প্রবৃদ্ধি কম এবং কোন কোন ক্ষেত্রে নেগেটিভ। সমাজে ব্যাপক বৈষম্য তৈরি হচ্ছে। নতুন করে যুক্ত হয়েছে "cyber poverty gap"। অনেক বিশেষজ্ঞ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার আশঙ্কা হচ্ছে 'ওমিক্রন' এবং 'ইউক্রেনের' প্রভাবে বিশ্বে দারিদ্র বিমোচনের প্রক্রিয়া এক দশক পিছিয়ে যাবে। যেমনটি বলেছিলেন টমাস পিকেটি তাঁর 'Capital in the 21st Century' বইয়ে , "উন্নয়ন অর্জনে সফল হওয়ার পরেও আয় ও সম্পদের বৈষম্য কমে না"।

মার্কেটিংয়ের বদৌলতে সফট ড্রিংস ও বোতলজাত পানির রমরমা ব্যবসা হলেও এখনো পৃথিবীর অনেক জায়গাতেই মানুষ সুপেয় পানি তো দূরের কথা, পানিই পাচ্ছে না। বিদ্যুৎ পৌঁছানো যায়নি এখনো সকলের কাছে। বিজ্ঞানের আবিষ্কার সমূহ প্রযুক্তি হয়ে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়লেও সকলের কাছে কয়টার প্রাপ্যতা নিশ্চিত হয়েছে? একমাত্র মোবাইল ফোনই কিছুটা গণতান্ত্রিক প্রযুক্তি । এর বাইরে খুব কম প্রযুক্তির উদ্ভাবন সাধারণ মানুষ ব্যবহার করতে পেরেছে (Jagdish Sheth, 2018) । ব্যক্তিগত ব্যবহারের প্রযুক্তি যত সহজলভ্য হয়েছে, পাবলিক পণ্য ততটা বাড়েনি, বরং সীমিত হয়েছে । বড় ব্র্যান্ডের পণ্যগুলো ধনীদের কাছে বিক্রির জন্য যত গবেষণা করেছে দরিদ্রদের নিকট তাদের পণ্য পৌঁছে দেয়ার জন্য ততটা সচেষ্ট হয়নি । তাই প্রয়োজন সোশ্যাললি রেস্পন্সিবল মার্কেটিং।

বিগত ৬০ বছর যাবত ফিলিপ কটলার মানুষকে শিখিয়েছেন সমাজের ক্ষতি না করে ক্রেতাকে সর্বোচ্চ সন্তুষ্টির মাধ্যমে সর্বোচ্চ মুনাফা করতে হবে। কটলার তাঁর ৯০ তম জন্মদিনে এসে এক বক্তৃতায় যে বিষয়টার উপর জোর দিয়েছেন সেটা হচ্ছে "better marketing for better world -BMBW "। এর দুটি কনসেপ্ট: প্রথমটি হচ্ছে "gross domestic happiness", যা তিনি ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে ধার করেছেন বলে উল্লেখ করেছেন। অপরটি হচ্ছে "Gross domestic well-being"।

দরিদ্রতা, পরিবেশ দূষণ, পানি ও প্রাকৃতিক পণ্যের স্বল্পতা, জলবায়ু পরিবর্তন, সামাজিক অন্যায্যতা এবং সম্পদের কেন্দ্রীভূবনের মত অস্বস্তিকর বিষয়গুলো থেকে পরিত্রাণের চেষ্টাকে মার্কেটিং সিদ্ধান্তের আওতাভুক্ত করতে হবে। এর কারণ হচ্ছে মার্কেটিং আমাদের সমাজকে সামগ্রিকভাবে প্রভাবিত করে। প্রযুক্তি নির্ভর বাজজাতকরণের প্রভাব সমাজের উপর আরো বেশি। যেমন, পৃথিবীতে প্রায় আড়াইশো কোটি মানুষ ইউটিউব ব্যবহার করে। তাঁদের রুচি, ন্যায়-অন্যায়, নান্দনিকতা, মানবিকতা, মানসিকতা, খাদ্যাভ্যাস, খাদ্য গ্রহণ প্রক্রিয়া (floodways), সামাজিকতা, জ্ঞান, দৃষ্টিভঙ্গি, মূল্যবোধ ইত্যাদি সবকিছু নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে কয়েকশ নেট ইঞ্জিনিয়ার (ইউটিউব মার্কেটার) তাঁদের কেন্দ্রীয় অফিসকক্ষে বসে; কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে। অনেকটা সমাজবিজ্ঞানীদের বর্ণিত "hundredth monkey effect" এর মতো।

মার্কেটারদের কর্মকাণ্ডে ন্যায়-নীতি, পরিবেশ, আইনি ও সামাজিক প্রেক্ষিতকে অবশ্যই বিবেচনায় নিতে হবে। কোম্পানীগুলো তাদের প্রতিযোগীর তুলনায় ক্রেতাকে সর্বোচ্চ সন্তুষ্টি প্রদান করবে, কিন্তু একই সাথে ক্রেতার এবং সমাজের দীর্ঘমেয়াদি কল্যাণও নিশ্চিত করবে। পণ্য যখন দ্রব্যে (commoditized) পরিণত হচ্ছে, ক্রেতা সচেতনতা যখন বাড়ছে, তখন অনেক কোম্পানি সামাজিক দায়িত্বশীলতাকে তাদের পৃথকীকরণের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করছে এবং সফলতা পাচ্ছে।

লেখক: অধ্যাপক, মার্কেটিং বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

Header Ad
Header Ad

জামিন পেলেন মডেল মেঘনা আলম

মডেল মেঘনা আলম। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর ধানমন্ডি থানায় প্রতারণা ও চাঁদাবাজির অভিযোগে দায়ের করা মামলায় জামিন পেয়েছেন মডেল মেঘনা আলম।

সোমবার (২৮ এপ্রিল) ঢাকার অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. ছানাউল্ল্যাহ শুনানি শেষে তার জামিন মঞ্জুরের আদেশ দেন। আদালত সূত্রে জানা গেছে, মামলার অভিযোগপত্র পর্যালোচনা এবং মেঘনা আলমের আইনজীবীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়।

এর আগে গত ১০ এপ্রিল মডেল মেঘনা আলমকে ডিটেনশন আইনে ৩০ দিনের জন্য কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। সেদিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে তাকে আটক করে আদালতে হাজির করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এরপর আদালতে তাকে আটক রাখার আবেদন করলে সেটি মঞ্জুর হয়।

মামলার এজাহারে বলা হয়, মেঘনা আলম ও দেওয়ান সমিরসহ অজ্ঞাতনামা আরও ২-৩ জন মিলে একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সক্রিয় সদস্য। এই চক্রটি বিভিন্ন সুন্দরী মেয়েদের ব্যবহার করে বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি কূটনীতিক ও দেশীয় ধনাঢ্য ব্যবসায়ীদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপনে উৎসাহিত করত। এরপর এসব সম্পর্কের দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে ভিকটিমদের সম্মানহানির ভয় দেখিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হতো।

 

মডেল মেঘনা আলম। ছবি: সংগৃহীত

এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, আসামি দেওয়ান সমির 'কাওয়ালি গ্রুপ' নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সিইও এবং 'সানজানা ইন্টারন্যাশনাল' নামে একটি ম্যানপাওয়ার প্রতিষ্ঠানের মালিক। এর আগে তার 'মিরআই ইন্টারন্যাশনাল ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড' নামের একটি প্রতিষ্ঠান ছিল।

চক্রটি 'ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর' নিয়োগের নামে সুন্দরী ও আকর্ষণীয় মেয়েদের ব্যবহার করে সহজে বিদেশি কূটনীতিক ও ধনাঢ্য ব্যবসায়ীদের কাছে যাতায়াতের সুযোগ তৈরি করত। উদ্দেশ্য ছিল ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে বড় অঙ্কের চাঁদা আদায় এবং দেওয়ান সমিরের ব্যক্তিগত ব্যবসাকে লাভজনক করা।

Header Ad
Header Ad

জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তর গঠন করলো সরকার

ছবি: সংগৃহীত

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ইতিহাস সংরক্ষণ, আন্দোলনে নিহতদের পরিবার ও আহতদের পুনর্বাসন এবং এই গণ-অভ্যুত্থানের আদর্শকে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে 'জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তর' গঠন করেছে বাংলাদেশ সরকার।

সোমবার (২৮ এপ্রিল ২০২৫) সরকারের পক্ষ থেকে গেজেট আকারে এ সংক্রান্ত ঘোষণা প্রকাশ করা হয়েছে। এর আগে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে এই অধিদপ্তর গঠনের জন্য একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, গত বছরের ১২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নতুন অধিদপ্তর গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনেই এই নতুন অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

এর পাশাপাশি, অধিদপ্তর গঠনের প্রক্রিয়ায় গত ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজমের সভাপতিত্বে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তর গঠনের নীতিগত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পরে উপদেষ্টা পরিষদে বিষয়টি উপস্থাপিত হলে চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।

সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এই অধিদপ্তর শুধু ইতিহাস সংরক্ষণের কাজই করবে না, বরং জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের চেতনা ও আদর্শকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন গবেষণা, প্রকাশনা এবং সচেতনতামূলক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবে। একইসঙ্গে, নিহত এবং আহতদের পরিবারদের যথাযথ পুনর্বাসন ও সহায়তার ব্যবস্থাও করা হবে।

Header Ad
Header Ad

নিরীহ কাউকে মামলা দিয়ে হয়রানি করা যাবে না: আইজিপি

ছবি: সংগৃহীত

নিরীহ কাউকে মামলা দিয়ে হয়রানি করা যাবে না বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম।


তিনি বলেন, “৫ আগস্টের পর একটি মহল উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মূল আসামির পাশাপাশি নিরীহ মানুষকেও মামলায় আসামি করছে। এটি আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এ ধরনের হয়রানি সহ্য করা হবে না। পুলিশ নিরপেক্ষভাবে মামলার তদন্ত করবে এবং নিরীহ কাউকে হয়রানির শিকার হতে দেওয়া হবে না।”

সোমবার (২৮ এপ্রিল) রাজধানীর বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে আইজিপি জানান, আগামীকাল মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) থেকে তিন দিনব্যাপী পুলিশ সপ্তাহ-২০২৫ শুরু হচ্ছে। এবার পুলিশ সপ্তাহের উদ্বোধন করবেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

আইজিপি বাহারুল আলম বলেন, “এবার আমরা অনাড়ম্বরভাবে নয়, বরং বাস্তবসম্মত ও কার্যকরভাবে পুলিশ সপ্তাহ পালন করতে চাই। শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়, বাস্তবসম্মত পরিকল্পনার মাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের দক্ষতা ও দায়িত্ববোধ বাড়ানো হবে।”

তিনি আরও জানান, মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন কার্যকর পরিকল্পনা ও মতামত সংগ্রহ করে সেগুলো বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে। এ ছাড়া এবারের পুলিশ সপ্তাহে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ও বিশিষ্টজনদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তারা সরাসরি পুলিশের বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়ে তাদের মূল্যবান মতামত ও পরামর্শ প্রদান করবেন।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

জামিন পেলেন মডেল মেঘনা আলম
জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তর গঠন করলো সরকার
নিরীহ কাউকে মামলা দিয়ে হয়রানি করা যাবে না: আইজিপি
পাকিস্তানে সামরিক হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে ভারত: নিউইয়র্ক টাইমস
ঢাকায় অটোরিকশা ও চার্জিং স্টেশন বন্ধে ডিএনসিসির অভিযান শুরু হতে যাচ্ছে
চাঁদা না দিলে রেলের কমান্ড্যান্টকে বদলির হুমকির অভিযোগ দুই ছাত্র প্রতিনিধির বিরুদ্ধে (ভিডিও)
বলিউডে সেনারা হিরো, বাস্তবে কেন জিরো ভারতীয় বাহিনী!
কুমিল্লায় বজ্রপাতে স্কুলছাত্রসহ নিহত ৪
মে মাসে শেখ হাসিনার বিচার শুরু হচ্ছে: প্রধান উপদেষ্টা
ঢাকাসহ সারাদেশে বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে
সবাই মিলে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করাই লক্ষ্য: আলী রীয়াজ
ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ
কাশ্মীর সীমান্তে ভারত-পাকিস্তানের ফের গোলাগুলি
টস হেরে ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ, একাদশে ৩ পরিবর্তন
দেশে ফিরেছেন প্রধান উপদেষ্টা
টটেনহামকে উড়িয়ে প্রিমিয়ার লিগের চ্যাম্পিয়ন লিভারপুল
শেখ হাসিনাকে ‘চুপ’ রাখতে পারবেন না মোদি
রেফারির কাছে ক্ষমা চাইলেন মাদ্রিদের ডিফেন্ডার আন্তনিও রুদিগার
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীন শিক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা উপহার দিলেন ছাত্রদল নেতা
দুর্নীতির অভিযোগ তুলে দুই উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি