পরিস্থিতি প্রতিকূল হলে আরও কড়া বিধিনিষেধ জারি হবে
দৈনিক আক্রান্ত ১৫ হাজার, কলকাতায় প্রতি ২ টেস্টে পজিটিভ এক! এ যেন সুনামির ঢেউ। রকেটের গতিবেগে রাজ্যে বাড়ছে সংক্রমণ। আরও ঊর্ধ্বমুখী কোভিডগ্রাফ। একলাফে রাজ্যে দৈনিক সংক্রমণ আরও বেড়ে পৌঁছল ১৫ হাজারে। একইভাবে আতঙ্ক কয়েকগুণ বাড়িয়ে ঊর্ধ্বমুখী কলকাতা, উত্তর চব্বিশপরগনাসহ বেশ কয়েকটি জেলা। সংক্রমণ বাড়ায় আরও বাড়ল মাইক্রোকন্টেইনমেন্ট জোন।মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে রাজ্যে মোট মাইক্রো কন্টেইনমেন্ট জোন-এর সংখ্যা ৪০৩।
বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, বিগত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১৫ হাজার ৪২১ জন। যা নিয়ে এদিন অবধি মোট ১৬ লাখ ৯৩ হাজার ৭৪৪ জন মরণ ভাইরাসে আক্রান্ত হলেন। জানা গিয়েছে, এই মুহূর্তে রাজ্যে সক্রিয় করোনা আক্রান্তের মোট সংখ্যা ৪১ হাজার ১০১। নমূলা পরীক্ষা হয়েছিল ৬২ হাজার ৪১৩ জনের। এই মুহূর্তে রাজ্যের পজিটিভিটির হার অর্থাৎ সংক্রমণের হার ২৪ দশমিক ৭১ শতাংশ। এদিকে রাজ্যে কোভিড মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১৯। এদিনের হিসাব অনুযায়ী, রাজ্যে মোট কোভিড মৃত্যুর সংখ্যা ১৯ হাজার ৮৪৬| এদিকে সুস্থ হয়েছেন ৬ হাজার ৪৩৮ জন। যা নিয়ে এদিন অবধি মোট সুস্থ হয়েছেন ১৬ লাখ ৩২ হাজার ৭৯৭ জন।
অন্যদিকে,ভয়াবহ অবস্থা কলকাতার। গত ২৪ ঘণ্টায় কলকাতায় আক্রান্ত ৬ হাজার ৫৬৯ জন। মহানগরে পজিটিভিটি রেট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৮ দশমিক ০৯ শতাংশ। অর্থাৎ কলকাতায় প্রতি দুজনে সংক্রমিত এক জন। আক্রান্তের নিরিখে দ্বিতীয় স্থানে উত্তর চব্বিশপরগনা। ওই জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ২ হাজার ৫৬০। হাওড়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার২৪৮ জন। দক্ষিণ চব্বিশপরগনায় ৭৮৭ জন আক্রান্ত হয়েছেন। হুগলিতে ৫৩১ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমানে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন যথাক্রমে ৩৯৪ এবং ৯১৯ জন। পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর আক্রান্তের সংখ্যা যহাক্রমে ১১৩ এবং ২৬৩। ঝাড়গ্রামে আক্রান্তের সংখ্যা ৬৬। বাঁকুড়ায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১২০ জন। পুরুলিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ১৭১। বীরভূমে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৫৩৯ জন। নদিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ৩০৮ জন। মুর্শিদাবাদে কোভিড আক্রান্ত হয়েছেন ১৮৩ জন।
রাজ্যর জন্য আগামী ১৫ দিন খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই নিয়ে সকলকে সতর্ক করলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। একইসঙ্গে তিনি জানালেন, পরিস্থিতি প্রতিকূল হলে আরও কড়া বিধিনিষেধ জারি করা হতে পারে। বৃহস্পতিবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, ‘নিজেই জানি না কার কার কোভিড হয়েছে। করোনা আক্রান্তদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করি। দ্রুতহারে বাড়ছে সংক্রমণ। তবে ভয় পাবেন না। সতর্ক থাকুন।’ এরপরই তিনি বলেন, ‘হাত জোড় করে আপনাদের অনুরোধ করছি, মাস্কটা দয়া করে পরুন।গ্লাভস, স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন। প্রয়োজনে মাথায় টুপি, কাগজ ব্যবহার করুন। তবে যদি সংক্রমণ আরও বাড়তে থাকে তবে আরও কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হতে গারে।' পাশাপাশি বিধিনিষেধ না মানলে পুলিশকে আরও কড়া হওয়ার বার্তা দিয়েছেন তিনি।
নীরবেই প্রাণঘাতী হয়ে উঠছে অমিক্রন। একে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠক করে এমনটাই জানালেন WHO র প্রধান Tedros Adhanom Ghebreyesus। তিনি জানিয়েছেন, বিশ্বে দাপট দেখাচ্ছে অমিক্রন। বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। সংক্রমণও দ্রুত ঘটছে। যেসব দেশে এতদিন ডেল্টা এর দাপট ছিল, সেসব জায়গা এখন অমিক্রন জ্বরে কাঁপছে। হাসপাতালগুলিতেও ঠাঁই নেই রব শোনা যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে WHO র চিফ বলেন, ডেল্টার তুলনায় অমিক্রন কম ক্ষতিকারক। তবে এর প্রভাবকে কোনওভাবেই 'মৃদু' বলা চলে না! আগের সমস্ত ভ্যারিয়েন্টের মতোই অমিক্রন এ আক্রান্ত হয়েও মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। মানুষ মারাও যাচ্ছেন। সর্বোপরি অমিক্রন অত্যন্ত দ্রুত সংক্রমিত হচ্ছে। ফলত বিশ্বে করোনার সুনামি আছড়ে পড়েছে। খুব দ্রুত হারে বাড়ছে সংক্রমণ। এতে কিছুদিনের মধ্যেই স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে।”
WHO জানিয়েছে, গত সপ্তাহে বিশ্বের ৯ দশমিক ৫ মিলিয়ন মানুষ করোনা আক্রান্ত হয়েছেন!যা রেকর্ড সংখ্যক। তার আগের সপ্তাহের তুলনায় ৭০ শতাংশ বেড়েছে সংক্রমণ!ফলত উদ্বিগ্নতা বাড়ছে প্রতি মুহূর্ত। অবিলম্বে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে WHO। কোনওভাবেই এই ভ্যারিয়েন্টকে মাইন্ড তকমা দেওয়া যায় না, মনে করিয়ে দিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার চিফ।
কিছুদিন আগেই WHO চীফ বিশ্বকে সতর্ক করে বলেছিলেন, অমিক্রনের-এর ট্রাসমিশন খুব দ্রুত হচ্ছে। এই কারণেই আমার ভয়টা বেশি। একসময় ডেল্টা ভেরিয়েন্ট যেভাবে ছড়িয়ে পড়ছিল, তার চেয়েও দ্রুত হারে ছড়াচ্ছে করোনাভাইরাসের নয়া স্ট্রেন। এতে করোনার সুনামি আসতে পারে। এই পরিস্থিতি বজায় থাকলে আবারও বিশ্বের প্রতিটি দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিৎসকদের উপর চাপ বাড়বে।'
কোভিড ভেক্সিন যাঁরা নেননি, তাঁদের ক্ষেত্রে ভীষণভাবে প্রাণঘাতী। তাও আগেই জানিয়েছিলেন আধানম। তাঁর কথায়, 'যাঁরা এখনও পর্যন্ত করোনা টিকা নেননি, তারা যদি অমিক্রন বা ডেল্টা দ্বারা আক্রান্ত হন, তাহলে মৃত্যুর ঝুঁকি অনেকটাই বেশি।' অমিক্রনের পাশাপাশি ডেল্টা -এর সংক্রমণও বাড়ছে সে কথাও মনে করিয়ে দিয়েছিলেন তিনি।
লেখক: ভারতের সিনিয়র সাংবাদিক