স্বল্প আয়ের মানুষ আগামীতে পণ্য ক্রয়ের ক্ষমতা হারাবে
খাদ্য উৎপাদনে এখন অব্দি আমরা পুরোপুরি স্বয়ংসম্পূর্ণ নই। যদিও চাল, শাক-সবজি ইত্যাদি উৎপাদনে আমাদের অবস্থান ভালো। তবে কিছু কিছু খাদ্য যেমন তেল, চিনি, গম, পেঁয়াজ ইত্যাদির জন্য আমাদের আমদানি বাজারের উপর নির্ভর করতে হয়। মানুষের আয় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চাহিদা বাড়ছে এবং আমদানিকৃত পণ্যের উপরও চাপ বাড়ছে। ফলে দেশের ভেতর উৎপাদিত পণ্যের সাহায্যে আমাদের আগামী বছরের চাহিদা মিটাতে পারব।
যে সমস্ত পণ্য উৎপাদনের জন্য আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবহার করতে হবে সেই জায়গাটিতে যেহেতু বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে আসছে, প্রতি মাসেই গড়ে প্রায় ৮৩৩ মিলিয়ন ডলার কমছে, সেটি যদি অব্যাহত থাকে সেক্ষেত্রে আগামী বছরও আমদানি ক্ষেত্রে আমাদের চাপ বাড়বে। অবশ্য সরকার এক্ষেত্রে আমদানির ক্ষেত্রে সরকার খাদ্যপণ্যকে প্রাধিকারের কথা ঘোষণা করেছেন। আমদানিতে যেন বাধার সম্মুখীন হতে না হয় সেটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একইসঙ্গে অন্যান্য ধরনের আমাদানির সঙ্গে পর্যাপ্তভাবে বৈদেশিক মুদ্রাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করা যাবে কি না তার একটি চ্যালেঞ্জ আমাদের রয়েছে। ফলে সেটি হলে যেটি হতে পারে, আমদানিতে আমাদের একটি চাপ পড়বে। সাম্প্রতিক সময়গুলোতে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন, বিশেষ করে ধানের উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সেটি স্বাভাবিক মাত্রায় রাখাটিই একটি চ্যালেঞ্জের মধ্যে থাকতে পারে। প্রতিবছর যে কারণে ফসলহানি হচ্ছে। সেটিতেও উৎপাদন কিছুটা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সেক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর যে ঘোষণা,অব্যবহৃত জমি ব্যবহার করে উৎপাদন বাড়ানো সেটি একটি ইতিবাচক ঘোষণা।
বাংলাদেশে এমনকিছু অংশ রয়েছে যেখানে জমি পতিত থাকে। সিলেট অঞ্চলের জমি, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের জমি ইত্যাদি জমিগুলো সারাবছর ব্যবহার করা যায় না। এখানে আবার অনুপস্থিত কৃষক অর্থাৎ অনুপস্থিত জমির মালিক রয়েছেন। যারা এ সমস্ত জমিগুরো ব্যবহার করেন না। বছরের খুবই অল্প সময় ব্যবহার করেন। ফলে এ ধরনের জমিগুলোকে চিহ্নিত করে যদি ব্যবহার করা যায়, ফলে উৎপাদন বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখতে পারে। আরও একটি বিষয় হলো উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধির ফলে খাদ্যপণ্যেরও ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাধারণ আয়ের এবং নিম্ন আয়ের মানুষ তাদের প্রকৃত আয় কমে যাওয়ার কারণে তাদের বাজার থেকে পণ্য আয়ের সক্ষমতা কমছে। ফলে বাজারে হয়তো আগামীতে পণ্য থাকতে পারে, কিন্তু পণ্য ক্রয়ের সক্ষমতা ভোক্তার থাকবে কি না এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সেটি আগামী বছরের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। সেক্ষেত্রে সরকারের যে খাদ্য বিতরণ কর্মসূচি চলছে, যে ১ কোটি পরিবারকে খাদ্য কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসা সেটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
তবে এক্ষেত্রে কার্ডের বিতরণ নিয়ে প্রশ্ন আছে। যারা প্রকৃত ভোক্তা তারা নিয়মিত পাচ্ছেন কি না। যারা পাচ্ছেন তারা অনেকে যোগ্য কি না? অনেকক্ষেত্রে রাজনৈতিকভাবে অনেকেই প্রভাব বিস্তার করে থাকেন, কার্ড বিলির ক্ষেত্রে আমাদের এসব বিষয়গুলো নজর রাখা দরকার। আমার কথা প্রকৃতরা যেন এর অন্তর্ভুক্ত হয়। এখন যেটি দেওয়া হচ্ছে দরিদ্র শ্রেণির ক্ষেত্রে । কিন্তু উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে শুধুমাত্র দরিদ্র শ্রেণির চাহিদা তৈরি হচ্ছে না। আগামিতে নিম্ন আয়ের মানুষ অথবা দরিদ্র আয়ের মানুষ যারা দারিদ্র সীমার নিচে নয়, তাদেরও হয়তো এটির দরকার হবে। সেদিক থেকে সরকারের যে উন্মুক্ত বাজার, ট্রাকে করে বিক্রয় ইত্যাদি যেগুলি সারাদেশে চলছে, সেগুলির কলেবর বৃদ্ধি করা দরকার হবে।
সরকারকে বর্ধিত মাত্রায় টিসিবির মাধ্যমে খাদ্য আমদানি করা এবং সেটির জন্য বাজেট বরাদ্দ রাখা এবং সেভাবে বিতরণের কাঠামো তৈরি করা বর্ধিত আকারে, সেটির প্রস্তুতি থাকা দরকার। এটা আগামী বছরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হবে।
লেখক: গবেষণা পরিচালক, সিপিডি