মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫ | ১৬ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

বিশেষ নিবন্ধ

ক্ষতিপূরণ আদায়ে টর্ট আইনের গুরুত্ব অপরিসীম

আমাদের দেশে টর্ট আইনের যথেষ্ট ব্যবহার ও প্রয়োগ না থাকায় অনেকেই টর্ট এবং টর্ট আইনের সঙ্গে পরিচিত নন। অথচ আমাদের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশে এমন গুরুত্বপূর্ণ আইনের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম এবং তা এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।

লাতিন শব্দ Tortum থেকে Tort শব্দটি এসেছে–যার অর্থ বাঁকা বা সোজা পথে না চলে বাঁকা পথে চলা। যদিও বাংলা ভাষায় Tort-এর কোনো উপযুক্ত আইনি প্রতিশব্দ ব্যবহার হতে দেখা যায় না। সাধারণত টর্টকে দেওয়ানি ক্ষতি বা নিমচুক্তি কিংবা কখনো ব্যক্তিগত অপকার হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে। সাধারণ অর্থে টর্ট বলতে বোঝায়, কোনো ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণ প্রদান। টর্টের কোনো বিধিবদ্ধ আইন নেই। তথাপি পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে এ আইনের প্রয়োগ এবং বিস্তার অনেক বেশি। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের দেশে টর্ট আইনের প্রয়োগ নেই বললেই চলে। অথচ গুরুত্বপূর্ণ এ আইনটির যথাযথ ও সুষ্ঠু প্রয়োগ ঘটালে একদিকে যেমন দেশ থেকে অনেক অপরাধ কমিয়ে আনা সম্ভব, তেমনি অপরদিকে এই আইনের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে সত্যিকারের আইনি প্রতিকার দেওয়াও সম্ভব। তবে এই ক্ষতিপূরণের কোনো নির্দিষ্টতা নেই।

বাংলাদেশে অন্যান্য বিধিবদ্ধ আইনের মতো টর্ট আইন বিধিবদ্ধ নয়। এখানে প্রযোজ্য টর্ট আইন ইংল্যান্ডের সাধারণ আইন অনুসারে গঠিত। টর্টের মামলা বিচারের ক্ষেত্রে পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি ও যুক্তিসঙ্গত কারণকে প্রাধান্য দেওয়া হয়ে থাকে। এ দেশে টর্টের যে দু-চারটি মামলা হয়ে থাকে, তা মূলত Defamation বা মানহানি কেন্দ্রিক। টর্টের অন্যান্য বিষয় যেমন-দায়িত্ব-কর্তব্যে অবহেলা, ভয়-ভীতি প্রদর্শন, উৎপাত, গণউৎপাত বা Public nuisance, অনধিকার প্রবেশ ইত্যাদি বিষয়ক মামলা আদালতে যেন অজ্ঞাত কারণে দায়ের হতে দেখা যায় না। ফলে আইনের এই গুরুত্বপূর্ণ শাখাটি আমাদের দেশের আইন অঙ্গনে উপেক্ষিত থাকায় এর প্রয়োগ ও প্রতিকার সম্পর্কে অনেকেরই অজানা। এ দেশের বেশির ভাগ জনগণই জানেন না যে, শারীরিক আঘাতের জন্য দোষী ব্যক্তি কারাবরণের পাশাপাশি বাদির (ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি) চিকিৎসার খরচসহ অন্যান্য ক্ষতির দায়স্বরূপ ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য। দোষী ব্যক্তিকে জেল বা অর্থদন্ড দিয়ে থাকে আদালত তথা রাষ্ট্র। কিন্তু এ ক্ষেত্রে বাদী কোনো সুবিধা পান না। কিন্তু টর্ট আইনের মাধ্যমে দোষী ব্যক্তির কাজের জন্য বাদী ব্যক্তিগতভাবে যে ক্ষতির সম্মুখীন হন, তা পুষিয়ে দেওয়া হয়ে থাকে। এতে বাদী নিজের জন্য সুনির্দিষ্টভাবে আইনি প্রতিকার পেয়ে থাকেন।

একটি উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি পরিষ্কার করা যেতে পারে। মনে করা যাক, কোনো এক ব্যক্তি অপর এক ব্যক্তির হাত বা পা কেটে ফেললো বা ভেঙ্গে দিলো। এ ক্ষেত্রে যদি দোষী ব্যক্তিকে আদালত কর্তৃক অপরাধের ধরন ও প্রকৃতি অনুয়ায়ী আইন মোতাবেক নির্দিষ্ট মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়, তাহলে এতে বাদীর বা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির তেমন কিছু আসে-যায় না। তার চিকিৎসা খরচ ও হাত-পা কাটা বা ভেঙে ফেলার কারণে তিনি যে কতদিন কাজ করতে পারলেন না এবং তার আনুষঙ্গিক ক্ষতির জন্য কেবল টর্টে মামলা করার মাধ্যমেই ক্ষতিপূরণ আদায় করা সম্ভব। টর্টে বিভিন্ন ধরনের প্রতিকারের বিধান রয়েছে। তবে এগুলোর মধ্যে আর্থিক জরিমানাই বেশি দেওয়া হয়ে থাকে। আর কিছু কিছু ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা (Injunction) জারি বা সুনির্দিষ্ট প্রতিকারের আদেশ দেওয়া হয়ে থাকে। আধুনিক বিশ্বে টর্ট আইনের মাধ্যমে মানসিক ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থাও চালু আছে।

আমাদের দেশে টর্ট আইনের প্রয়োজনীয়তা কেন? এ প্রশ্নের জবাবে বলা যায়, এ দেশে প্রতিনিয়ত আইনের লঙ্ঘন হচ্ছে। যেমন–মানুষের জীবন রক্ষাকারী ঔষধ ও খাদ্য-দ্রব্যে ভেজাল মেশানেো; হাসপাতাল বা ক্লিনিকে চিকিৎসকের অবহেলায় রোগীর মৃত্যু হওয়া; ভুল চিকিৎসায় রোগীর জীবন কেড়ে নেওয়া বা জীবন বিপন্ন করে তোলা; বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাণ্ডজ্ঞানহীন কর্মসূচির কারণে জনগণের ক্ষতি সাধিত হওয়া, বিশেষ করে রাস্তা বন্ধ করে সভা-সমাবেশ করার ফলে জনগণের ভোগান্তি ও হয়রানির শিকার হওয়া; মক্কেলের সঙ্গে আইনজীবীর অসদাচারণ; অকারণে মানুষকে হেনস্তা বা হয়রানি করা, বিশেষ করে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক); বিনা বিচারে আটক রাখা; একই নামের ভুল ব্যক্তিকে আটক করা ও কারাগারে পাঠানো; অকারণে জেল খাটানো; ডাক বিভাগের পিয়ন কর্তৃক প্রাপকের ঠিকানায় চিঠিপত্র সময়মতো না পৌঁছানো; চালকের অসাবধানতার জন্য প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটা; মালিকের অবহেলাজনিত কারণে শ্রমিকের প্রাণহানির ঘটনা, যেমন–সাভারের রানা প্লাজার ঘটনা; পণ্য কিনে প্রতারিত হওয়া ইত্যাদির ন্যায় নানা অন্যায়-অপরাধ, ঘটনা-দুর্ঘটনাসমূহ আমাদের দেশে প্রতিনিয়ত ঘটেই চলেছে।

টর্ট আইনের ব্যাপক প্রয়োগ থাকলে উক্ত আইনের মাধ্যমে এসব ঘটনা-দুর্ঘটনা ও অন্যায়-অপরাধের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট প্রতিকার পাওয়া সম্ভব। যেমন–খাদ্যে ভেজালবিরোধী অভিযান টর্টের মাধ্যমে সফলতা আনা সম্ভব। খাদ্য মানুষের প্রথম ও প্রধান মৌলিক চাহিদা। তাই খাদ্যের ব্যাপারে মানুষ সর্বদাই সতর্ক ও সচেষ্ট থাকেন। কিন্তু আমাদের দেশে জনগণের তথা ক্রেতার বিশ্বাসকে ও অসহায়ত্বকে পুঁজি করে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বা বিক্রেতা অধিক মুনাফার লোভে প্রতিনিয়ত খাদ্যে ভেজাল মেশাচ্ছে। শুধু খাদ্যে ভেজাল নয়, প্রায় সময়ই আমরা পত্রিকায় চিকিৎসকের অবহেলা বা ভুল চিকিৎসার কারণে রোগী মারা যাওয়া বা রোগীর জীবন বিপন্ন হওয়ার খবর পড়ে থাকি। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বা তার পক্ষে কেউ পূর্ব থেকে চিকিৎসক বা হাসপাতালের সঙ্গে করে রাখা একটি চুক্তির জন্য কোনো আইনি পদক্ষেপ নিতে পারেন না। কিংবা নেওয়ার সাহস করেন কিংবা এ ব্যাপারে তেমন একটা আগ্রহ দেখান না। অথচ এ ক্ষেত্রে যদি ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অবহেলার বিষয়টি প্রমাণ করা যায়, তাহলে সহজেই ভুক্তভোগী রোগী বা রোগীর পরিবার কিছুটা হলেও সহায়তা পেতে পারেন। আমাদের দেশের সড়ক মহাসড়কগুলোতে প্রতিনিয়ত ঘটে চলা দুর্ঘটনা যেন ভাগ্যদেবীর আশীর্বাদ। সড়ক দুর্ঘটনার কারণে প্রতিনিয়ত অসখ্য প্রাণহানির ঘটনা ঘটলেও প্রতিটি দুর্ঘটনার পর দোষী ব্যক্তিরা যেন ‘দাদা ভাই’ বা ‘গড ফাদার’-এর ন্যায় পর্দার অন্তরালেই থেকে যায়। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশে যদি টর্ট আইনে মামলা (অসাবধানতার জন্য ক্ষতি হলে) হতো, তাহলে দোষী ব্যক্তিদের বড় অঙ্কের ক্ষতিপূরণ দিতে হতো। তাই জনগণের উচিৎ হবে, এ ধরণের ঘটনার ক্ষেত্রে আদালতে গিয়ে টর্ট আইনের অধীনে মামলা করা। আর এ জাতীয় মামলা সরকারের পক্ষ থেকে নয়; বরং ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পক্ষ থেকেই করতে হবে। এসব ঘটনায় মামলা না হওয়ার কারণে দোষী ব্যক্তিরা বারবার রেহাই পেয়ে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে টর্টের মামলা করলে অসাধু ব্যবসায়ী বা দায়িত্বে অবহেলাকারী চিকিৎসক কিংবা অসতর্ক গাড়ি চালক কেউ তাদের দায় এড়াতে পারবে না। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি আইনের উপযুক্ত ও যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে প্রতিকার ও সুফল পেতে পারেন। আর সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, একবার কেউ ফৌজদারী অপরাধের জন্য জেল খাটলে, জরিমানা দিলে এবং এসবের পাশপাশি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে মোটা অঙ্কের ক্ষতিপূরণ দিলে সে আর দ্বিতীয়বার ওই ধরনের অন্যায়-অপরাধ করতে চাইবে না। আমাদের দেশে এ ধরনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মামলাসমূহের বেলায় আদালত কর্তৃক দায়ী ব্যক্তির কৃত অপরাধের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে পূর্ণ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়ার রেওয়াজ প্রবল মাত্রায় বাড়ালে এবং অপরাধের সাথে জড়িত কাউকে কোনোভাবেই ছাড় না দিলে দেশ থেকে এ ধরনের অপরাধসমূহ সহজেই হ্রাস পাবে বলে আশা করা যায়।

এ প্রসঙ্গে একটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন। আর তা হচ্ছে, অসাবধানতার জন্য ক্ষতি হলে অবৈধ মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী একটি গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি হলো সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ উপার্জনের বর্তমান মূল্য বা ডিসকাউন্টেড ভ্যালু অব ফিউচার ফ্লো অব আর্নিংস পদ্ধতি। এ পদ্ধতি অনুসারে, মৃত ব্যক্তি বেঁচে থাকলে বাকি কর্মক্ষম জীবনে তিনি যে আয় করতে পারতেন, তার বর্তমান বাজার মূল্যই ক্ষতিপূরণের পরিমাণ হিসেবে নির্ধারণ করা হয়। ডিসকাউন্টিং পদ্ধতিতে নির্ধারিত ক্ষতিপূরণ মূলত: তিনটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে। তা হচ্ছে; মৃত ব্যক্তির বয়স, তাঁর ভবিষ্যৎ উপার্জনের ক্ষমতা এবং সুদের হার বা ডিসকাউন্ট রেট। মৃত ব্যক্তির বয়স অল্প হলে তাঁদের বেশি দিন বেঁচে থাকার এবং উপার্জন করার সম্ভাবনা থাকে। সে ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা, কাজের দক্ষতা ও যোগ্যতার ওপর আয় ক্ষমতা নির্ভর করে। সুদের হার বেশি হলে সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ আয়ের বর্তমান মূল্য কম হবে। সুদের হার কম হলে ভবিষ্যৎ আয়ের বর্তমান মূল্য বেশি হবে। সাভারের রানা প্লাজা ধ্বসে বা তাজরীন ফ্যাশনসের অগ্নিকান্ডেরে পর নিহত শ্রমিকদের জন্য ডিসকাউন্টিং পদ্ধতিতে ক্ষতিপূরণ নিরূপণের হিসাব করলে তার সার্বিক যোগফল কত হবে তা কি সংশ্লিষ্ট গার্মেন্টস মালিকপক্ষ একবারও ভেবে দেখেছেন? এ ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদেরই এ বিষয়ে মামলা করা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, এ সকল ক্ষেত্রে না ক্ষতিগ্রস্ত, না সরকার কোনো পক্ষকেই এই আইনের আশ্রয় নিতে দেখা যায়নি।

আমাদের মতো একটি দেশে যেখানে প্রতিনিয়ত-প্রতি মুহুর্তে-প্রতিদিন আইন লঙ্ঘিত হচ্ছে নানাভাবে; যেখানে সাধারণ মানুষ নিত্য হেনস্তা ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন; যেখানে প্রতারণা প্রবলমাত্রায় বিরাজমান, সেখানে টর্টের মতো কার্যকর একটি আইন কেন যে আজও উপেক্ষিত রয়েছে তা বোধগম্য নয়। বলার অপেক্ষা রাখে না, টর্ট আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ হলে তা আমাদের সমাজ ব্যবস্থার ধরণ পাল্টে দিতে পারে। টর্টের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে সাধারণ মানুষের আইনি অধিকার। পাশাপাশি এই আইনের যথাযথ প্রয়োগ ঘটলে সমাজ থেকে অপরাধ প্রবণতা উল্লেখযোগ্যহারে কমে যাবে।

সর্বোপরি দেশের সব মানুষকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল করতে টর্ট আইন এক অনন্য ভূমিকা পালন করতে পারে। সুতরাং টর্ট আইনের প্রয়োজনীয়তার দিকে লক্ষ্য রেখেই এই আইনটির ব্যাপক প্রচার দরকার। সেইসঙ্গে এর সুষ্ঠু প্রয়োগ ও ব্যবহারের লক্ষ্যে সাধারণ জনগণ, বিভিন্ন গণমাধ্যম, সরকার, আইন সংশ্লিষ্টসহ সবাই একযোগে এগিয়ে এসে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ ও পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তাহলেই আমাদের দেশে টর্ট আইনের গণ্ডি কেবল মানহানির মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে তা মানুষের নানামুখী প্রয়োজনে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতে পারবে বলে আশা করা যায়।

লেখক: অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, আইন বিভাগ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
kekbabu@yahoo.com

এসএ/

Header Ad
Header Ad

এই মুহূর্তে ইমরানকে দরকার পাকিস্তানের, মুক্তি ও সর্বদলীয় বৈঠক নিয়ে আলোচনা!

ছবি: সংগৃহীত

ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। এর মধ্যে সোমবার রাতেও দু’দেশের সেনাদের মধ্যে সীমান্তে গোলাগুলি হয়। এমন পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও কারাবন্দি নেতা ইমরান খানের মুক্তি দাবি করেছে প্রধান বিরোধী দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)।

পাকিস্তানি ইংরেজি দৈনিক দ্য ডন-এর বরাত দিয়ে মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) এমনটি জানানো হয়।

সোমবার সিনেটে পিটিআইর পক্ষ থেকে জানানো হয়, এ জাতীয় সংকটময় পরিস্থিতিতে সর্বদলীয় সম্মেলন (Multi-Party Conference) আহ্বান করা প্রয়োজন, যাতে দেশের রাজনৈতিক নেতারা একসঙ্গে বসে জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুতে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। এই বৈঠকে ইমরান খানের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে তার জেল থেকে মুক্তিরও দাবি জানানো হয়।

পিটিআইয়ের সিনেটর আলী জাফর বলেন, “রাজনৈতিক মতভেদ ভুলে এখন দেশের স্বার্থে ঐক্য প্রয়োজন। ইমরান খানের উপস্থিতি বিশ্বকে দেখাবে— পাকিস্তান ঐক্যবদ্ধ।” তিনি আরও বলেন, ইমরান যদি অংশ নেন, তাহলে তা হবে শক্তিশালী কূটনৈতিক বার্তা।

পিটিআই নেতা শিবলি ফারাজ আরও একধাপ এগিয়ে ইমরান খানকে টেলিভিশনে ভাষণ দেওয়ার অনুমতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তার দাবি, ইমরান টিভির মাধ্যমে জনগণকে মিনার-ই-পাকিস্তানে জমায়েত হওয়ার এবং ওয়াগা সীমান্তে পদযাত্রা করার ডাক দিলে এক কোটির বেশি মানুষ সাড়া দেবে।

তার ভাষায়, “শুধু জনগণের প্রকৃত প্রতিনিধি ভারতকে যথাযথ বার্তা দিতে পারেন।”

ক্ষমতাসীন পাকিস্তান মুসলিম লীগ (নওয়াজ) বা পিএমএল-এন–এর সিনেটর ইরফানুল হক সিদ্দিকী ভারতের প্রতি কঠোর সমালোচনা করে বলেন, “পেহেলগামের হামলা আসলে একটি ফলস ফ্ল্যাগ অপারেশন— যা ভারতের নিজস্ব সংস্থারই পরিকল্পিত, পাকিস্তানকে হেয় করার উদ্দেশ্যে।”

তিনি বলেন, পাকিস্তান বরাবরই সন্ত্রাসবাদের শিকার, বরং ভারত এখন নাৎসি চিন্তাধারায় বিশ্বাসী সরকার দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে।

পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী করেছে। যদিও পাকিস্তান এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং বলছে, তারাই বরং দীর্ঘদিন ধরে চরমপন্থী হামলার শিকার। দুই দেশের মধ্যে এই উত্তেজনা বিশ্ব রাজনীতিতেও উদ্বেগ তৈরি করেছে। বিশ্লেষকদের মতে, পরিস্থিতি যুদ্ধাবস্থার দিকে গড়াতে পারে।

Header Ad
Header Ad

টাঙ্গাইলে এলজিইডিতে দুদকের অভিযানে অর্থ আত্মসাতের পাওয়া গেছে প্রমাণ

ছবি : ঢাকাপ্রকাশ

প্রকল্প বাস্তবায়ন না করেই বিভিন্ন প্রকল্পের বরাদ্দকৃত অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে টাঙ্গাইল এলজিইডিতে অভিযান পরিচালনা করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এই অভিযানে তারা বিভিন্ন প্রকল্পের নামে আসা বরাদ্দকৃতের অর্থ আত্মসাতসহ নানা অনিয়ম, দুর্নীতির প্রাথমিত প্রমাণ পেয়েছেন।

মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) দুপুরে টাঙ্গাইল এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ কামরুজ্জামানের উপস্থিতিতে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। 

প্রাথমিকভাবে অভিযোগের দুদক জানায়, বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে নানাবিধ অনিয়ম ও দুর্নীতি, একাধিক প্রকল্পের কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন না করেই বিধিবহির্ভূতভাবে অগ্রিম বিল উত্তোলন, এলজিইডি'র তত্ত্বাবধানে গ্রাম-গঞ্জের রাস্তা এবং ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণকাজে নিম্নমাণের সামগ্রী ব্যবহার ও কাজের গুণগতমান বজায় না রাখা এবং উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে এলজিইডির বিভিন্ন কর্মকর্তাগণ কর্তৃক নানাবিধ অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে অভিযান পরিচালনা করা হয়।

টাঙ্গাইল দুদকের সহকারী পরিচালক মো. নুর আলম জানান, দুদকের প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশ মোতাবেক টাঙ্গাইল এলজিইডিতে আমরা অভিযান পরিচালনা করেছি। অভিযানে প্রাথমিকভাবে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। সেগুলো সরেজমিনে মাঠ পর্যায়ে গিয়ে যাচাই-বাছাই করব এবং পরে এ বিষয়গুলো কমিশনকে জানাবো।

তিনি আরও জানান, একদিনে জেলার সবগুলো উপজেলায় যাওয়া সম্ভব না। তাই পরবর্তীতে অন্যান্য উপজেলাগুলোতে অভিযান পরিচালনা করা হবে।

Header Ad
Header Ad

লক্ষাধিক নতুন রোহিঙ্গাকে আশ্রয়ের অনুরোধ জানাল জাতিসংঘ

ছবি: সংগৃহীত

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান সহিংসতার কারণে নতুন করে বাস্তুচ্যুত প্রায় ১ লাখ ১৩ হাজার রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশকে অনুরোধ জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রেফিউজি রিলিফ অ্যান্ড রিপ্যাট্রিয়েশন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।

তুরস্কভিত্তিক রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আনাদোলু এজেন্সিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মিজানুর রহমান জানান, ইউএনএইচসিআরের পক্ষ থেকে সম্প্রতি পাঠানো একটি চিঠিতে বাংলাদেশের প্রতি এ অনুরোধ জানানো হয়েছে।

তিনি বলেন, “নতুন আসা রোহিঙ্গাদের অনেকেই কক্সবাজারের সীমান্তবর্তী এলাকায় অস্থায়ী তাঁবু, স্কুল ও মসজিদে আশ্রয় নিয়েছে। এখন ইউএনএইচসিআর চায়, এদেরকে শরণার্থী শিবিরে স্থানান্তর করা হোক।”

গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, নতুন আসা এই রোহিঙ্গাদের পরিবার সংখ্যা প্রায় ২৯ হাজার ৬০৭টি, যার মধ্যে গত সপ্তাহেই ১ হাজার ৪৪৮টি পরিবার নাফ নদী পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।

কমিশনার মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, “নতুন রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার বিষয়ে এখনো সরকার কোনো আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নেয়নি। কারণ, বারবার নতুন শরণার্থী গ্রহণ করলে পুনর্বাসন ও প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া জটিল হয়ে পড়বে।”

মিয়ানমারের জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে চলমান লড়াইয়ে ‘আরাকান আর্মি’ রাখাইন রাজ্যের সীতওয়ে ব্যতীত অধিকাংশ অঞ্চল নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। এর ফলে রাখাইনে মানবিক সংকট আরও ঘনীভূত হয়েছে এবং রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নতুন করে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

২০১৭ সালের আগস্টে আরসা কর্তৃক পুলিশের ওপর হামলার জেরে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রাখাইনের রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর দমন-পীড়ন চালায়। তখন প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। বর্তমানে কক্সবাজারের বিভিন্ন শিবিরে প্রায় ১৫ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছে, যা বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী বসতি।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

এই মুহূর্তে ইমরানকে দরকার পাকিস্তানের, মুক্তি ও সর্বদলীয় বৈঠক নিয়ে আলোচনা!
টাঙ্গাইলে এলজিইডিতে দুদকের অভিযানে অর্থ আত্মসাতের পাওয়া গেছে প্রমাণ
লক্ষাধিক নতুন রোহিঙ্গাকে আশ্রয়ের অনুরোধ জানাল জাতিসংঘ
ডাকাত দেখে আতঙ্কে অসুস্থ গৃহকর্তা, পানি খাইয়ে সেবা করল ডাকাতরা, পরে লুট
‘মানবিক করিডর’ নিয়ে নানা প্রশ্ন : স্পষ্ট করলেন প্রেসসচিব
ভারতীয় ড্রোন ভূপাতিত করল পাকিস্তান সেনাবাহিনী
মাদরাসার শিক্ষকদের জন্য বড় সুখবর
দীপ্ত টিভির সংবাদ কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা
সব রুফটপ রেস্তোরাঁর ট্রেড লাইসেন্স বাতিল
মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে পুলিশের প্রতি প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান
নিলামে তুলেও এস আলম গ্রুপের সম্পত্তি বিক্রি করতে পারছে না ব্যাংকগুলো
সেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই চার বছর পর সাদমানের সেঞ্চুরি
স্টারলিংকের লাইসেন্স অনুমোদন প্রধান উপদেষ্টার, মাসিক খরচের বিষয়ে যা জানা গেল!
রাখাইনের সঙ্গে মানবিক করিডরের বিষয়টি স্পষ্ট করুন: জামায়াত আমির
প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা পাচ্ছেন দশম গ্রেড, সহকারী শিক্ষক ১২তম
এনসিপির সঙ্গে আমার কোনো ধরনের সম্পর্ক নেই: উমামা ফাতেমা
আওয়ামী লীগ সরকার পুলিশকে দলীয় বাহিনীতে পরিণত করেছিল: প্রধান উপদেষ্টা
আত্মসমর্পণ করলেন তারেক রহমানের খালাতো ভাই
চার শতাধিক যাত্রী নিয়ে ঢাকা ছাড়ল বছরের প্রথম হজ ফ্লাইট
রাখাইনে মানবিক করিডর দেওয়া নিয়ে আলোচনা করা উচিত ছিল: ফখরুল