শীতের হাওয়ায়…শীতের অপেক্ষায়…
শীত। গরমের হাঁসফাঁস অবস্থা থেকে শীতে জুবুথুবু হওয়ার অপেক্ষায় যেন সবাই। বিশেষ করে এদেশের জ্বালানি নীতিনির্ধারকরা প্রায়ই বলছেন, চলমান বিদ্যুৎ সংকট তথা লোডশেডিং থেকে রেহাই মিলতে শীতই ভরসা। অতএব আমরা আমজনতাও শীতকে স্বাগত জানাতে অধীর হয়ে আছি!
ইতোমধ্যে গ্রামাঞ্চলে বা শহরতলীতে শীতের কুয়াশা দৃশ্যমান। গাছের পাতায়, ঘাসে শিশির বিন্দুও। আশা জাগাচ্ছে এবার শীত জমিয়ে আসবে! আর রাজধানী ঢাকা শহরেও এখন ভোর রাতের হাওয়ায় একটু শীতলতা অনুভূত হয় বৈকি।
শরৎ, হেমন্তের পর শীত ঋতু। বাংলা সনে বইয়ের ভাষায় পৌষ ও মাঘ এই দুই মাস শীতকাল। এখন চলছে কার্তিক মাস। তারপর অগ্রহায়ণ। এই দুইমাস হেমন্তকাল। এই সময় গরমের তীব্রতা অল্প বিস্তর কমে। তারপরেই বহু প্রতীক্ষিত শীতকাল। আর ইংরেজি বর্ষে ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত শীতের আয়ু। আসলে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলা সনের এই ষড়ঋতু কি এখন সেভাবে অনুভূত হয়? বর্ষা ও শীত আগের মত তীব্র নয়। গরমকাল যেন অন্য ঋতুগুলোকে গিলে ফেলছে! গরম কাপড়ের ওম নিতে নিতেই বিদায় নিচ্ছে শীত। এরকমই হয়েছে কয়েক বছর। এবার তার চেয়ে ব্যতিক্রম হবে কি? তাই শীতে লোডশেডিং-এর ‘মুসকিল আসান’ হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
সে যাই হোক, ষড়ঋতুর এই বঙ্গবেশে শীতের আলাদা মহাত্ম্য আছে। প্রকৃতিতে আসে নব চাঞ্চল্য।
রবীন্দ্রনাথের ভাষায়—
‘শীতের হাওয়ায় লাগল নাচন আমলকির এই ডালে ডালে।
পাতাগুলো শির শিরিয়ে ঝরিয়ে দিল তালে তালে।’
নতুন ফুলে, নতুন পাতায় সজ্জিত গাছগুলো যেন উল্লসিত। অতিথি পাখিদের কলকাকলীতে মুখর হয়ে উঠে জলাশয়গুলো। শীতের সবজি, খেজুরের গুড়, মুখরোচক পিঠা, বার-বি-কিউ পার্টিসহ নানা আয়োজন দিন রাত আনন্দে ভরে উঠে। কুয়াশায় লেপ মুড়ি দিয়ে ঘুমানো, দেশ-বিদেশে বেড়ানোর মধ্যে দিয়ে শীতের আমেজকে তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করা যায়। জানি, জীবনযুদ্ধে জর্জরিত বেশির ভাগ মানুষের কাছে শীত যেন ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’। শীত উপভোগ করা দূরে থাক, গরম কাপড় কেনা, সর্দি, জ্বর, কাশির প্রকোপ, আকস্মিক শৈত্যপ্রবাহে জীবন হয়ে উঠে আরও দুর্বিসহ। ফুটপাতে বা বস্তিতে আশ্রিতদের অবস্থা হয় আরও করুণ। তাই শীত আসার আগেই পুরোনো কাপড় জমিয়ে রেখে দিতে পারি এখনই। যাতে প্রয়োজনের সময় দুস্থদের দেওয়া যায়।
পৃথিবীর এই অর্ধে আমরা অনেকে শীতকে উপভোগ করার আশায় উদ্বেলিত। আবার ইউরোপের দেশগুলোতে এবার শীত আসছে ভয়ানক আতঙ্ক নিয়ে। এখানে ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত শীত পড়ে হিমাংকের নিচে। পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোর মানুষ ঘর গরম রাখার জন্য রাশিয়ার গ্যাসের উপর অনেকটা নির্ভরশীল। চলমান রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এই গ্যাস সরবরাহ প্রায় বন্ধ। এতে তারা পড়েছে চরম বিপাকে। ইতোমধ্যে জার্মানি, ফ্রান্সসহ সেসব দেশের মানুষ গ্যাসের বিকল্প সন্ধান করছে মরিয়া হয়ে। শীতকাল পেরোনোর জন্য অনেকে কয়লা, গাছপালা কেটে কাঠ মজুত করছে। কিন্তু অনেকে এ সব মজুত করতে না পেরে চরম অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও এ সব দেশের নেতারা এই সংকট থেকে উত্তরণের কুল কিনারা খুঁজে পাচ্ছে না। আমরা চাই সব মানুষের কল্যাণ। সবার শুভবুদ্ধির উদয় হোক। যুদ্ধ থামুক। মানুষ যেন এই সংকট থেকে পরিত্রাণ পায়।
লেখক: লেখক ও সাংবাদিক
এসএন/আরএ/